ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত।
কী? খুব রোমান্টিক লাগছে, তাই না?
আচ্ছা, কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের এই কবিতাটা পড়া আছে তো? জানি, পড়া নেই আপনাদের। কারণ কবিতাটা পড়া থাকলে এই লাইন টার মধ্যে জীবনেও রোম্যান্স খুজে পেতেন না, খুঁজে পেতে ন হাহাকা!
আপনাদের জন্যে কবিতার কিছু অংশ দিচ্ছি, পড়ে দেখুন-
ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।
আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে -
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে -
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।
গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
– তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।
লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল -
ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি !
তারপর দড়াম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।
..... কী? কবিতার ভেতরের হাহাকার টের পাচ্ছেন? নাকি এখনও রোম্যান্টিক লাগছে??
"আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হব।"
এই লাইনটাকেও খুব রোম্যান্টিক মনে হচ্ছে?
হ্যা, জহির রায়হানের "আরেক ফাল্গুন" পড়া না থাকলে লাইনটাকে রোম্যান্টি-ই মনে হবে। ওহ হ্যা, আপনারা কেন ওসব পড়বেন?! আপনারাতো "কুল ড্যুড" প্রজন্ম! আপনাদের বাবা মায়েরাই তো গর্ব করে বলেন- "জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না!"
"আরেক ফাল্গুন"-এ জেলখানার উর্দুভাষী ডেপুটি জেলারের নির্মম অত্যাচারকে উপেক্ষা করে অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে তার চোখের দিকে তাকিয়ে এক তরুণ রাজবন্দী দৃপ্তকণ্ঠে বলেছিলো- "আসছে ফাগুনে আমরা দ্বিগুণ হব!"
হ্যা প্রজন্ম, এটা কোনো প্রেমের প্রস্তাব নয়, বিপ্লবের ডাক! তোমরা এখন প্রেমিকার প্রতি তোমাদের তথাকথিত ভালোবাসা দেখাতে এই লাইনটা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দাও, তোমাদের বন্ধুরা সেই স্ট্যাটাসে হাহা রিএ্যাক্ট দেয়, কমেন্টবক্সে ট্রল করে! কিন্তু তখন এই লাইন টা তোমাদেরই বয়সী হাজার হাজার তরুণের ভেতরে বিপ্লবের বীজ বুনেছিলো!
ভাগ্যিস জহির রায়হান কিংবা সুভাষ মুখোয়াধ্যায়- কাউকেই এই নির্বোধ প্রজন্মের নির্বুদ্ধিতা দেখে যেতে হয় নি...