সকাল ১১টা! টুপটুপ বৃষ্টির মধ্যে বাঙ্গালির ঐতিহ্য পাঞ্জাবী পরে নেমে পড়লাম নিউইয়র্কের রাস্তায়। ম্যানহাটনে সাধারণত কাউকেই পাঞ্জাবী পরতে দেখা যায় না।(যদিও ব্রংক্সে পাবেন) তাই রাস্তাঘাটে মানুষের চোখ ফিরিয়ে বার বার আমার পাঞ্জাবীর দিকে তাকানোটা বেশ উপভোগই করছিলাম। ট্রেন ধরে ৮১স্ট্রীট সাবওয়েতে এসে নামলাম। ট্রেন স্টেশনটা ছোটখাটো একটা মিউজিয়াম এর মত লাগছিল, কারণ চারদিকে খোদাইকরা চমৎকার দৃশ্য। যাই হোক এখানে এসেই বেশ উত্তেজিত অনুভব করছিলাম কারণ যদি ট্রেন স্টেশনটাই এমন হয় তাহলে না জানি মিউজিয়ামটা কতো ভালো হবে। ভেতরে বিশাল লাইন। একদিকে সামার এর ছুটি আর অন্যদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। সব মিলিয়ে ঘুরার জন্য উপযুক্ত সময়। চাইনিজ এবং রাশিয়ার মানুষের উপস্থিতিটা একটু বেশিই চোখে পরছিল। টিকেট মোবাইলের মাধ্যমে অনেক আগেই কিনে রেখেছিলাম তাই লাইনে দাঁড়ানোর মতো বিরক্তিকর কাজটা করা লাগলো না। বেশ সস্তাই মনে হচ্ছে এখন ঘুরার পর, যদিও কেনার সময় হাত কাঁপছিলো দাম শোনে।
মিউজিয়ামে প্রবেশ করার পরই Barosaurus নামক তৃণভোজী ডাইনোসর তার অতিকায় গলা প্রসারিত করে স্বাগত জানাবে আপনাকে। আর এর পাদদেশে দেখতে পাবেন সর্বশেষ বরফযুগের দুর্লভ পাথর।
প্রবেশ করার পর প্রথমেই পাওয়া যাবে এশিয়ান স্তন্যপায়ী প্রাণী। হাতি, হরিণ, ওকাপি সহ আরো অনেক।
২৪৫ মিলিয়ন বছর আগে জন্ম নেওয়ার ডাইনোসর মিউজিয়ামের অন্যতম মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ডায়নোসর গুলো তাদের বিশাল আকার আকৃতির জন্য পৃথিবীর অন্য প্রাণীদের উপর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যদিও তারা ৬৬ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে মিউজিয়ামের এর কাছে ডাইনোসরের এখনো অবলুপ্ত হয় নি। তারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন গবেষণা করে যাচ্ছে। বেশ আশ্চর্যজনক সত্য যে মিউজিয়ামের বেশিরভাগ ডাইনোসরের ফসিল গুলো প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় না এগুলো মিউজিয়ামের অত্যাধুনিক ল্যাবে বিশেষভাবে গবেষণার জন্য সংরক্ষিত করে রাখা আছে। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালওয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় ল্যাবগুলো দেখার সৈভাগ্য হয় আমার। এযেনো এক ভিন্ন দুনিয়া। খুবই অল্পসংখ্যক ডাইনোসর বাইরে প্রদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা রয়েছে।
উপরের ছবিটি হলো Titanosaur নামে এক বিশাল ডায়নোসর। অতিকায় আকৃতির জন্য মিউজিয়ামের ৪র্থ তলার মূল আকর্ষন এটিই। অতিকায় এই কঙ্কালটি ১২২ ফুট লম্বা এবং উচ্চতায় ৪৬ ফুট(যার মধ্যে শুধুমাত্র ঘাড়টাই ৩৯ ফুট) উচ্চতা আসলে কতটুকু বিশাল তা আরো ভালো করে বুঝতে হলে উদাহরণ হিসেবে বর্তমানে সবচেয়ে উঁচু স্থলচর প্রাণী জিরাফের কথা বলা যায়, যার গড় উচ্চতা ১৬-২০ ফুট। (যা কঙ্গালটির ঘাড়ের উচ্চতা থেকেও খাটো।) এতো বিশালকার কঙ্গালটির পুরো ছবি ক্যামেরা দিয়ে তোলা প্রায় অসম্ভব। তাই নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন
উপরের কঙ্কালটি একটি ম্যামথ এর, বর্তমানে বিলুপ্ত। এশিয়া, আফ্রিকা ও উত্তর আমেরিকায় প্রায় ৫ মিলিয়ন থেকে ৪,৫০০ বছর পূর্বে বসবাস করত।
উপরের ছবিটি হচ্ছে Giant Sequoia Tree নামক একটি গাছের কাণ্ডের। কাটাও আগে পর্যন্ত গাছটি ১৪০০ বছর বেঁচে ছিলো। গাছটি লাগানো হয় ৫০০ খ্রিস্টাব্দ এবং কাটা হয় ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে। মিউজিয়ামের জন্য গাছের এই অংশটি ক্যালিফর্নিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং গাছটি প্রায় ৩০০ ফুট লম্বা ছিলো!
বেশ আকর্ষনীয় দেখতে।
পুরো মিউজিয়াম ঘুরে আমার সবথেকে ভালো এটাই লেগেছে।
সূর্যে আমার ওজনঃ :
ধাঁধাঃ বলতে হবে ছবিটা আসল না নকল। আর পিছনের পানিও কি আসল না নকল?
আর এ হচ্ছে আমার বন্ধু। দেখতে অনেকটা আমার মতো।
বিশাল মিউজিয়াম। তাই বেশ কয়েকটা পর্ব করার ইচ্ছা। সময় স্বল্পতার জন্য বেশি লেখাও সম্ভব হলো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৪৭