somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেয়াল

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(এক)
অপা অর্ণবের উপর প্রচণ্ড রেগে আছেন, অপা কোথায় যেন একবার দেখেছিলেন দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালালে রাগ কমে, মুশকিল হচ্ছে গুলশান এ্যাভিনিউয়ের মধ্যে কোথায় দেশলাই কিনতে পাওয়া যায় অপা তা জানেননা। সামান্য একটা দেশলাই কোথায় কিনতে পাওয়া যায় অপা তা জানেননা ভেবে অপার আরও মেজাজ খারাপ হতে লাগলো। অনলাইনে খুঁজতে গিয়ে দেশলাইয়ের নানান ধরনের বানান দেখে অপার আরও মেজাজ খারাপ হচ্ছে। সব ধরনের বানান প্রয়োগ করে গুলশানের সবগুলো সুপারশপের ওয়েবসাইটে গিয়ে সার্চ বক্সে দেশলাই লিখে সার্চ দিলেন কিন্তু সবক্ষেত্রে একটাই ফলাফল আসল Sorry! We could not find any products to match your search।

বাসা থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন দোকানে দেশলাই খুঁজতে লাগলেন কিন্তু ছোট বড় কোন দোকানেই দেশলাই খুঁজে পেলেন না। একবার এক দোকানীতো বলেই বসলেন, ম্যাডাম আপনি লাইটার নিতে পারেন লাইটারে ভাল সিগারেট ধরানো যায় অথবা আপনি চাইলে আপনার গ্যাসের অটো চুলা ব্যাবহার করেও আপনি সিগারেট ধরাতে পারবেন, দোকানির কথা শুনে অপার আরও মেজাজ খারাপ হলো। অত্যন্ত রাগে তুতলাতে তুতলাতে দোকানী কি বল্লেন অপা নিজেও তা বুঝতে পারলেন না। দেশলাই কেনার চিন্তা বাদ দিয়ে রাগ কমানোর নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে ভাবতে বাসার দিকে ফিরতে শুরু করলেন।

বাসায় ঢুকতে গিয়ে সদর দরজার পাশে গাছের নিচে এক বৃদ্ধ চা সিগারেট বিক্রি করছে। অপা লক্ষ্য করলেন তার কাছে বেশকিছু দেশলাই আছে। অপা বৃদ্ধ লোকটিকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘আপনার কাছে কতটি দেশলাই আছে?’
‘বারটি’
‘সবগুলো দেশলাই আমাকে দেন’
পার্স থেকে একশ টাকার একটি নোট দোকানিকে দিয়ে হাটতে লাগলেন।
‘ম্যাডাম বায়ান্ন টাকা ফেরত পাবেন, নিয়ে যান’

অপা ইতিপূর্বে অনেকবার লক্ষ্য করে দেখেছেন রিক্সার ভাড়া বা খুচরা ক্রয়ের বিল মেটাতে গেলে সব সময় তারা পাওনা টাকার চেয়ে একটু বেশি টাকা প্রত্যাশা করে কিন্তু নিজে থেকে যখন সময় বাঁচানোর জন্য বেশি ভাড়া বা বিল পরিশোধ করতে চান তখন তারা পুরো টাকা ফেরত দিতে চায়। এই ভাবনাটাও অপার খারাপ মেজাজ আরও খারাপ করে দিচ্ছে।

অপা দুই তিন বার বাসার কলিং বেল বাজালেন কিন্তু কাজের মেয়েটি দরজা খুলতে আসল না। মেজাজ খারাপের সময় সবাই সম্ভবত: দেরী করেই বাসার দরজা খোলে।
‘তোমার দরজা খুলতে এত দেরি হলো কেন?’
‘দেরীতো করি নাই আপা, রান্না ঘর থেকে দরজা পর্যন্ত আসার সময়তো দেবেন’
‘মুখে মুখে এত তর্ক কর কেন? আর তুমি কাজের মেয়ে তোমাকে এত শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে হবে কেন?’
‘এসব কি বলেন আপা? আমি কাজের মেয়ে বলে শুদ্ধ করেও কথা বলতে পারব না’
‘সরি, যাও তুমি সব সময় শুদ্ধ করে কথা বলো’

দেশলাইয়ের কাঠি বের করে একে একে আগুন জ্বালাতে গিয়ে একটা কাঠি জ্বলে তো আর একটি জ্বলেনা, আবার জ্বালাতে গিয়ে কয়েকবার হাত ও পুড়ে গেছে। দেশলাইয়ের কাঠি জ্বালিয়ে রাগ কমানোর এই কৌশল পুরোটাই জলে গেছে, বরং রাগ আর বেড়ে গেছে। অপা অত্যন্ত বিরক্তে দেশলাইয়ের কাঠিগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দিয়ে আরাম করে সোফায় চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলেন।

...কত যে তুমি মনোহর মনই তাহা জানে,
হৃদয় মম থরোথরো কাঁপে তোমার গানে!!
আজিকে এই প্রভাতবেলা মেঘের সাথে রোদের খেলা,
জলে নয়ন ভরোভরো চাহি তোমার পানে!!
আলোর অধীর ঝিলিমিলি নদীর ঢেউয়ে ওঠে,
বনের হাসি খিলিখিলি পাতায় পাতায় ছোটে।
আকাশে ওই দেখি কী যে- তোমার চোখের চাহনি যে।
সুনীল সুধা ঝরোঝরো ঝরে আমার প্রাণে।।

ঘুমের ঘোরেইে ৫:১ চ্যানেলের হোম থিয়েটারে গানটি শুনতে লাগলেন। অপার প্রচন্ড ভাল লাগতে শুরু করল। অপা বুঝতে পারছেন না যে এখন তিনি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে মধুর কোন স্বপ্ন দেখছেন নাকি সত্যি তার হোম থিয়েটারে গানটি বাজছে। একটু আগে যে তার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল তাও তিনি ভুলে গেছেন। অপা ঘুমের ঘোরেই উপলব্ধি করলেন কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। অপার প্রচন্ড ভাল লাগছে। স্ব-স্নেহে হাত বুলানোর এই সুখ অপা অনেকদিন ধরে পেয়ে আসছেন। এটাকে শুধু সুখ বললে কম বলা হবে বরং এটাকে স্বর্গী আশ্রয় বলা উচিৎ।

‘তুমি? তুমি কখন এলে? তুমি আমার মাথায় হাত দেবেনা’ অপা বিরক্তির স্বরে অর্ণবের উদ্দেশে বললেন।
‘ওকে, ঠিক আছে মাথায় হাত দিচ্ছিনা’ বলে অর্ণব অপাকে ডান হাতের বাহুর মধ্যে জড়িয়ে অপার বাম পাশে বসে পড়লেন।
‘না তুমি জড়িয়েও ধরবেনা’
‘আচ্ছা ঠিক আছে জড়িয়েও ধরছি না’
বলে অর্ণব অপার চুলের গোছা এক হাত ধরে চেপে ধরে নিজের ঠোঁটের মধ্যে ঠোঁট নিয়ে অপাকে চুমো খেতে লাগলেন। অপা ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেও তা পারলেন না। সেটা শক্তি প্রয়োগের অপেক্ষাকৃত প্রতিযোগিতার কারণে নয়। সেটা এই ভালবাসাকে উপেক্ষা করার অসামর্থ্যরে কারণে।
‘আমাকে আদর করতে তোমার লজ্জা করে না?’ কান্না হাসির সংমিশ্রণের অভিমানি অভিযোগে প্রশ্ন করে অর্নবকে।
‘তুমি এতগুলো মানুষের সামনে কেন আমাকে অপায়া বললে? তুমি জানোনা একথাটি শুনলে আমি খুব কষ্ট পাই’
‘সরি, দশ বছর আগের সেই কথাটা আমি ভুলে যেতে চাই, তুমি কেন ভুলতে পারনা?’
‘আমি কেন পৃথিবীর কোন নারীই সেই ঘটনা ভুলতে পারবে না’

(দুই)
‘১৫ নভেম্বর ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম আপনাদের মধ্যে প্রথম পূর্ণাঙ্গ ও সফল শারীরিক সম্পর্ক সংঘঠিত হয় এবং সেখান থেকে অপা একটি বাচ্চাও ধারণ করেন। অত:পর পরের ঘটনা আমার সার্ভারে সংরক্ষিত না থাকলেও আপনার জিনেটিক এ্যাভিডেন্স সার্চ করে ঢাকার সবচেয়ে নামকরা হাসপাতালে দূর্ঘটনার চিকিৎসা নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে এবং সেই দূর্ঘটনায় অপা তার গর্ভে ধারন করা তিন মাসের গর্ভের সন্তান হারান সাথে মা হবার সক্ষমতাও এবং আপনি হারান বাবা হবার ক্ষমতা।’ এরপর পাঁচ বছর পরে আপনারা আমার কাছে চেক-আপ করতে আসেন। ’

চিকিৎসক রোবটের উপরোক্ত কথাগুলো শুনে অপা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করেছেন এবং অর্ণবও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। বাংলাদেশের সর্বাধুনিক চিকিৎসার এই হাসপাতালটিতে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ডিপ লার্ণিং রোবট দ্বারা চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। নমুনা সংগ্রহের সাথে সাথেই সমস্ত স্বাস্থ্য প্রতিবেদন দেওয়া হয় এবং সকল তথ্যই স্থায়ী ভাবে ক্লাউড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে।

‘আমাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সমস্যা হলো মানুষ কোন্ কথায় কাঁদতে পারে এটা আমরা এখনও পর্যন্ত শিখতে পারিনি, বলতে পারেন আমাদেরকে শেখানো হয়নি, তবে বর্তমানে এটা আমাদেরকে শেখানো হচ্ছে।’
‘ওকে, আপনি বলে যান মি. রোবট’
‘গুচ্ছ গুচ্ছ এ্যালগারিদমের মাধ্যমে জটিল জটিল সমস্যার সমাধান করতে পারি কিন্তু একজন অতি সাধারণ শিশু যা বুঝতে পারেন আমরা তা বুঝতে পারিনা, মি. অর্ণব আপনি ভাবছেন, আমরা যে খুবই সামান্য বুঝি সেটা আমি কিভাবে বুঝলাম? এটা মানবীয় গুণ তাইতো?, এটা কোন ব্যাপার না, আমি সার্চ ইঞ্জিন থেকেই এই তথ্য পেলাম। আমার মেধার দু’টি মাত্র উৎস এক নাম্বার প্রিলোডেড প্রোগ্রাম, দুই সার্চ ইঞ্জিন, তবে বর্তমানে আমরাও কিন্তু করতে করতে শিখি, তবে সেটাও অন্য একটি সফওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেখানো হয়।’

কথা শেষ করেই ডিপ লার্ণিং রোবটটি অপার শরীরের দিকে তাকালেন, এ বছরের বিশ্ব সুন্দরী যিনি হয়েছেন তার ছবি সার্চ ইঞ্জিন থেকে সার্চ করে এবং অপার শরীরের একটি ছবি নিয়ে ডিপলার্ণিং রোবটটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখলেন তার সাথে উচ্চতা ছাড়া ৯১.৩৭ % মিল রয়েছে। রোবটের চাহনীতে অপা কিছুটা ব্রিবত হয়ে স্তন জোড়া ওড়না দিয়ে ঢেকে দিলেন। রোবটি প্রিলোডেড প্রোগ্রামিং থেকে এর কোন কারণ খুঁজে পেলনা। সার্চ ইঞ্জিন থেকে ভিডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করে রোবটটি খেয়াল করে দেখলো কোন পুরুষ তাদের বুকের দিকে তাকালে সাধারণত: বাংলাদেশের নারীরা বুকে ওড়না দিয়ে ভালো করে ঢাকার চেষ্টা করেন। সাথে সাথে রোবটটি তার অবয়ব পরিবর্তন করে নারী রুপ ধারণ করে ফেললো। সাধারণ বাংলাদেশের ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুশাসনের কারণে নারী পুরুষদের ব্যাপারে পারস্পারিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়টি মাথায় রেখেই রোবটটি এই ভাবে তৈরী করা হয়েছে।

‘মি. অর্ণব কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনি কখনও বাবা হতে পারবেন না, এমনকি মিসেস অপাও কখনও মা হতে পারবেন না’
রোবট চিকিৎসকের এই কথা শুনে অপা আরও উচ্চ স্বরে কাঁদতে লাগলেন।
‘মিসেস অপা বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিংহোমের সিসিটিভি ফুটেজের ইমেজ ও ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখলাম একজন নারী যখন মা হন তখন তিনি সবচেয়ে বেশি সুখি অনুভব করেন, আপনার জীবনেও সেই সর্বোচ্চ সুখি সময় স্বাভাবিক ভাবে আর কখনও আসবেনা ’
অর্ণব একটু বেশি বিরক্ত হয়ে বল্লেন
‘রোবট যে সত্যিই খুব মূর্খ হয়, সেটা আপনাকে দেখে বুঝতে পারছি’
‘মি. অর্ণব আপনার আবেগ বিশ্লেষণ করে বুঝতে পারছি আপনি এমন কিছু বল্লেন, যা মানুষ প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বলেন; মি. অর্ণব আমি এইযে আপনার সাথে বেশি বেশি কথা বলছি এটা আমার প্রোগ্রামার দ্বারাই করা হয়েছে, যাতে আমরা বেশি বেশি শিখতে পারি।’
‘আপনি আপনার চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করুন, মি. রোবট’
‘মি. অর্ণব আপনার বাবা হবার একটি পথ অবশ্যই খোলা আছে’
অপা রোবটের এই কথাটি শুনে নির্ভার বোধ করতে লাগলেন, হঠাৎ করে মনে হলো তার বুক থেকে পাহাড়সম এক পাথর সরিয়ে নেওয়া হলো।
‘কিন্তু সেই চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে কিছু ভ্যালিডেশনা প্রয়োগ করা আছে, নামের শুরুতে মো:, মোছা: ইত্যাদি বসানো থাকলে বা আব্রাহামী ও কিছু ধর্মের অনুসারী হলেই সে চিকিৎসা আমার দ্বারা দেওয়া সম্ভব হয়না। ’
‘কি সেই ব্যবস্থা?’
‘সেই ব্যবস্থার নাম হলো in vitro fertilization যার মধ্যে Embryo transfer পদ্ধতিটি আপনাদের জন্য একমাত্র অগ্রহণযোগ্য কার্যকরী পদ্ধতি,
‘পদ্ধতিটি অগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি কেন?’
‘মি. অর্ণব সঠিক পদ্ধতিতে Algarithom সেট করে কোডিং ও ট্রেনিং অভিন্ন হলে ভূখণ্ড, ধর্ম, বর্ণ, সমাজ নির্বিশেষে আমরা রোবটরা একই ফলাফল প্রদর্শন করে থাকব কিন্তু মানুষ এমন এক প্রাণী যারা ধর্ম ভুখণ্ড ইত্যাদি কারণে তাদের আচরণ, জীবন চর্চা, এ্যাপ্রোচ এমনকি মানবিক গুণাবলীরও সীমাহীন তারতম্য হয়ে থাকে যা একটি পশুর ক্ষেত্রেও তা হয়না, আপনারা যারা মানুষ তারা গালমন্দ করে অন্য মানুষকে কোন কোন প্রাণীর নামে যে গালি দেন এমনকি সেই প্রাণীও মানুষের মত বর্ণবাদ, ধর্মবাদ হয়না।’
অর্ণব বুঝতে পারছেন না এই যন্ত্রের যন্ত্রণায় আরও যন্ত্রণা বোধ করবেন নাকি, হাসবেন। অর্ণবের এই ভাবনার দৈর্ঘ্য মি. রোবটিক ডাক্তার আর বাড়তে দিলেন না, আবারও বকবকানি শুরু করলেন।

‘মানুষ এমন এক অদ্ভুত প্রাণী যারা ভূখণ্ডের কাল্পনিক সীমা নিয়ে একদল মানুষ আর একদল মানুষকে হত্যা করে, অন্যের সীমানার সীমাবদ্ধ তৈরী করার মধ্য দিয়েই নিজের সীমানা সঙ্কুচিত করে, শুধু সীমানাই সঙ্কুচিত করেনা জ্ঞান আহরণের সীমা পরিসীমাও সঙ্কুচিত করে, মানুষ এতটায় নির্বুদ্ধিতার চর্চা করে যে, একটা কুকুর বা একটা শুকরকেও একদেশ থেকে আর দেশে যেতে ভিসা বা পাসপোর্ট লাগেনা কিন্তু মানুষের লাগে, অর্থাৎ মানুষ চরম আত্ম-পরিচয় সঙ্কটে ভোগা এক প্রাণী’

অর্ণব অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে বল্লেন-
‘মি. রোবট আপনি চুপ করবেন? আপনার বকবকানি আর ভালো লাগছে না’
রোবট চুপ করে গেলেন এবং বল্লেন
‘আপনি আমাদের চিকিৎসা নিয়ে কথা বলুন, মি. রোবট’
‘আপনাকে একজন ডোনার নারী খুঁজতে হবে; যান্ত্রিক বা যৌন প্রক্রিয়ায় তার ডিম্বানুর সাথে আপনার স্পার্ম মিলিত করতে হবে এবং সেখান থেকে ভ্রুণ তৈরী হবে এবং সেই সেই ভ্রুণ আপনার স্ত্রী অপার গর্ভের স্থানান্তর করা হবে এবং সেখান থেকে গড়ে উঠবে আপনার ও অপার ভবিষ্য স্বপ্ন, কিন্তু আপনার স্পার্ম যদি ভ্রুণ তৈরীর জন্য অনুপোযোগী হয়ে থাকে তাহলে অন্য পুরুষের স্পার্ম নেওয়া হবে অত:পর....., এই প্রক্রিয়াটি কোন ভাবেই আপনার ধর্মীয় সংস্কৃতি সমর্থন করে না বা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় সংস্কৃতির বলয়ে গড়ে উঠা আপনার চল্লিশ বছরের আরোপিত অভিজ্ঞতার ফলে তা আপনি মানতে পারবেন বলে মনে হয়না।

রোবটের এহেন কথা শুনে অর্ণবের কপালে দুঃশ্চিন্তার ছাপ পড়তে শুরু করলো। অপার দু;চোখ বেয়ে পানি ঝরতে শুরু করলো।
‘মি. অর্ণব আমি অপার এই কান্নার ইমেজ নিয়ে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে অনুরূপ ইমেজের ডেটা বিশ্লেষণ করে কান্নার কারণ বুঝতে গিয়ে তাতে বিপরীত ধর্মী ফল পেলাম, তাতে অপা কেন কাঁদছে তার আবেগিক কারণের দ্বন্দহীন কোন কারণ খুঁজে পেলাম না’
অর্ণব পূর্বের মতই বিরক্ত হয়ে বল্লেন
‘তুমিতো এমনিতেই জিরো ও ওয়ানের বেশি কিছু বোঝনা, তোমার দ্বারা এটি বোঝা সম্ভব নয়, অথচ আজ থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বেও কোন মানুষ যদি অপার এই কান্না দেখতো তাহলে অপার কান্নার কারণ বুঝতে পারতো’
‘মি.অর্ণব আপনি কি আমাকে অপার কান্নার কারণ বিশ্লেষণ করে আমাকে সমৃদ্ধ করবেন?’
‘সেটাকি আমাদের কোন কাজে আসবে?’
‘আপনার ক্ষেত্রে এটা হয়তো কোন কাজে আসবেনা তবে আগামীতে নারীদের ইমোশোনাল ডিটেক্ট করতে কাজে আসবে’
‘তার মানে তুমি কি নারীদেরকে বুঝতে চাইছো?’
‘ঠিক তাই, মি. অর্ণব’
‘এইবার তাহলে তুমি মরছো, তোমার ক্লাউড স্টোরেজের অসীমত্ত্ব শেষ হবে, কিন্তু নারীদের মন বোঝা সম্ভব হবেনা’
‘মি. অর্ণব আপনি কি লজিকের বাইরে কিছু বল্লেন?’
‘আগেই তো বলেছি, তুমি শুন্য আর এক এর অংক ছাড়া কিছু বোঝনা’
এইরকম একটি পরিস্থিতিতে অর্ণবের এই ধরনের কৌতুক করা দেখে অপা হাসবে না রাগ করবে তা বুঝতে পারছে না। অর্ণব আবার সিরিয়াস হয়ে গেলেন এবং বলতে শুরু করলেন
‘আজ থেকে প্রায় দশ বছর পূর্বের কথা, তখন আমরা একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তাম, পড়তাম বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পড়া প্রায় শেষ’
‘চুপ কর তুমি, আমি এই ঘটনার কোন গল্প আর শুনতে চাইনা, চুপ কর তুমি, চুপ কর’ বলে অপা কাঁদতে লাগলো।’
‘ওকে ঠিক আছে, আমি আর বলছিনা, তুমি শান্ত হও, প্লিজ’

(তিন)
২০০৮ সাল। অপা ও অর্ণব তখন এক সাথে পড়া লেখা করতেন। দু’জন দু’জনের প্রতি আফিমের মত টান ছিল। এটাকে সাধারণ ভাবে প্রেম বল্লে কম বলা হবে। অপার দিক থেকে আপত্তি থাকলেও অর্ণবের দিক এইরূপ প্রেমে নিবিড় কোন সম্পর্ক অপরাধ বলে গন্য হতে পারে অর্ণব তা কখনও আমলে নেননি। কোন এক সময়ের অসতর্কতামূলক নিবিড় সেই সম্পর্কের কারণেই অপা সগর্ভা হন। অত:পর অপার কান্না-কাটি; আর অপার কান্নাকাটি থামাতেই সাথে সাথে অর্ণব ও অপা বিয়ে করেন। স্বাভাবিক ভাবে দুইজনই কেউই তাদের পরিবারকে জানাতে পারেননি। যদিও তাদের দুই পরিবারের সদস্যদের পুরো ঘটনা জানতে দুইদিনও সময় লাগেনি।

সঙ্গত কারণেই অপার পরিবারের লোকজন এই বিয়ে মানতে সময় নেননি। যদিও বিয়ের স্বাভাবিক ক্যালকুলেশন অনুযায়ী অতি প্রেমীয় ঘটনা না ঘটলে অপার পরিবার থেকে এই বিয়ে মেনে না নেওয়ার আর্থিক সঙ্গতি বিষয়ক যথেষ্ঠ যৌক্তিক ঘটনা ছিল। অপরদিকে বিয়ের পূর্বেই মাতৃত্বের স্বাদ আস্বাদনের অপরাধে অর্ণবের পরিবারের কেউ কেউ এবং অর্ণবের পরিবারের চার পাশের মানুষ এই বিয়ে মানেননি। এমনকি এই বিয়ে মেনে না নেওয়ার জন্য অর্ণব অপার কোন দেষ দেখেননি বরং তার পরিবার ও সমাজকে তার ভুলটাকে সকলের দৃষ্টিগোচরীভূত করার চেষ্টা করেছিলেন।

অর্ণব সব সময় বলতেন, অপা যদি অপরাধ করে থাকে তাহলে সেই অপরাধের সমস্ত ঘটন পটিয়সী হিসেবে আমিই প্রধান এমনকি আমিই একমাত্র ভূমিকা পালন করেছি। তাহলে শাস্তি কেন অপা পাবে? এই সমস্ত অপরাধের (!) ক্ষেত্রে পুরুষদের পুরুষ হওয়ার গুণে তার সমস্ত অপরাধ প্রায় ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধু ক্ষমা করেই দেওয়া হয়না বরং পুরুষের সমস্ত অপরাধ নারীর অপারাধের সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়। সমাজের এই অদ্ভুত আচরণ অর্ণব মানতে পারেননি। তাই অর্ণবের পরিবার সামাজিক প্রথা মেনে অপাকে বউ হিসেবে ঘরে না তুললেও, অর্ণব অপাকে স্ত্রী’র সামাজিক মর্যাদা প্রদানের মাধ্যমে নিয়মিত অপার বাড়ীতে যাতায়াত করতেন।

স্ত্রী’র এহেন মর্যাদা প্রদানের সময়ে ধর্মীয় মর্যাদায় পালিত হওয়ার জন্য ঈদ প্রায় সমাগত। বাংলা সংস্কৃতির স্বাভাবিক ধারায় ঈদ উপলক্ষে অপার বাবা অপার মাধ্যমে অর্ণবের হাতে বেশকিছু টাকা দেন। শিশুদের প্রতি দু’জনের অপরিসীম ভালাবাসা ও নিজেদের অনাগত শিশুর সম্ভাব্য আগমনের আনন্দে ও তার মঙ্গল কামনার্থে অপার বায়নাতেই চারপাশের সকল শিশুদের ঈদের দিন খাওয়াবে বলে তারা দু’জন সিদ্ধান্ত নেন।

মধ্যম স্বরে গান বেজে চলেছে। শিশুরা গান শুনছে ও নাচানাচি করছে, অপা পরম আনন্দে রাস্তার পাশে চেয়ারে বসে দৃশ্যগুলো অবলোকন করছে। অপা এতটাই আনন্দ পাচ্ছেন যে, অপার কাছে একবার মনে হলো এই আনন্দ পাবার পর তার যদি মৃত্যু হয়ে থাকে তাহলে মানুষ হিসেবে যে স্বল্প কয়েকদিন পরমায়ু তিনি পেয়েছেন সেটাই যথেষ্ঠ। অর্ণব রাস্তার পাশের খেলার মাঠটিতে বাচ্চাদের সাথে আনন্দ করছেন আর কিছুক্ষণ পরপর মাঝে মাঝে রান্নার খবর নিচ্ছেন এবং অপাকে দেখে আসছেন।

অপা যেখানটিতে বসে ছিলেন অর্ণবও অপাকে দেখতে এসে অপার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটি ট্র্যাক বিপরীত দিক এসে ধীর গতিতেই তাদেরকে ক্রস করছিল হঠাৎ করে একটি শিশুকে দৌঁড়ে অর্ণবের দিকে ছুটে আসছিল, অপা দ্রুত গিয়ে বাচ্চাটি আটকাতে গিয়ে পা ফসকে ট্র্যাকের পাশে প্রচন্ড জোরে ধাক্কা লাগে সাথে সাথে অর্ণব অপাকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনিও ট্র্যাকের সাথে ধাক্কা মারেন। অত:পর অর্ণব ও অপাকে বাবা ও মা হবার সক্ষমতা হারাতে হয় এবং ঘটনার অব্যবহিত পরেই অপাকে অপায়া খ্যাতি নিয়েই গ্রাম ছাড়তে হয়।

(চার)
‘সার্চ ইঞ্জিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী মি. অর্ণব আপানার কাছে আমি আবারও জানতে চাইছি, Embryo transfer করে যে সন্তান অপার গর্ভে বড় হবে সেটা আপনি মানতে পারবেন কিনা?’
‘আমার মানতে সমস্যা কেন হবে? সমস্যা যেটুকু হবে তার চেয়ে পিতৃত্ত্বের আনন্দ অনেক বেশি’
‘অপা মানে আপনার স্ত্রী কি মানতে পারবেন? ’
‘হুমম, কথা সত্য অন্যের স্পার্ম ও ডিম্বানু সমন্বয়ে কৃত্রিম উপায়ে গঠিত ভ্রুণ অপার গর্ভে স্থানান্তরে অপার যথেষ্ঠ আপত্তি ছিল কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে আমরা দু’জনে একমত হয়েছি যে, এই বিষয়ে আমাদের দু’জনের কারও কোন আপত্তি নেই’
‘মি. অর্ণব সামাজিক জীব হিসেবে আপনার নিজের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোর খুব সামান্য অধিকারই আপনার রয়েছে’
‘মি. রোবট আমি সমাজকে খুব একটা তোয়াক্কা করিনা’
‘ঠিক আছে, তাহলে আজকেই Embryo transfer করে অপার গর্ভের স্থাপন করা হবে’

এই হাসপাতালটি আর একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানে কোন রুমে কোন প্রকার এসি স্থাপন করা হয়নি। হাসপাতালের বিল্ডিং-এর ছাদের উপরে এবং চারপাশে সবুজ তৃণ গাছ লাগানো হয়েছে যা হাসপাতালের রুমগুলোর সর্বোত্তম তাপমাত্র বজায় রাখতে সহায়তা করছে। বিশেষ গবেষণার মাধ্যমে প্রস্তুতকৃত ঔষুধগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধুমাত্র অতিপ্রয়োজনীয় ক্ষুদ্রাকারের কক্ষগুলোতে কিছু বিশেষ জাতীয় ঔষধ সংরক্ষণের জন্য বা বিমেষ কিছু কক্ষে এসি বসানো আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে অপাকে যে কক্ষে Embryo transfer করে অপার Uterus এ বসানো হবে সেটি মূলত: এসি কামরা।

মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই Embryo transfer করে অপার Uterus এ বসানো হয়েছে। আর মাত্র মাস খানেক বাদেই অপা মাতৃত্ব স্বাদের যন্ত্রণা উপভোগ করতে শুরু করবেন।

(পাঁচ)
রাত সাড়ে বারোটা বাজে। অপার ফোনে রিংটোন বেজে উঠে, আমার মুক্তি আলোয় আলোয় গানটি বেজে উঠলো। সাধারণত অপার ফোনে এত রাতে কেউ ফোন করেনা। অপা মনে মনে ভাবতে লাগলো এত রাতে আবার কে ফোন দিল। সাধারণত বন্ধুর ছদ্মবেশে পুরোনো প্রেমিকরা নস্টালজিক হবার জন্য কখনও কখনও রাতে ফোন দিয়ে থাকে। যদিও সেসব নিয়ে অর্ণবের কোন মাথাব্যাথা নেই। কারণ অর্ণব মনে করে প্রেমকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করলে তা নদীর স্রোতকে বাঁধ দিয়ে রাখার মত হবে, সেই বাঁধ ভেঙ্গে সম্মুখপানে যাবেই বরং প্রেমকে মনের জানালার মুক্ত বাতাসে উড়তে দেওয়া উচিৎ যাতে সে বিশুদ্ধ বাতাসের আশে আবার সেই মনের জানালাতেই ফিরে আসবে।

‘বাবা এত রাতে তুমি? ভালো আছোতো বাবা?’
‘অপা তোমার কি মনে হয়? আমি ভালো থাকলে এত রাতে তোমাকে ফোন দেই?’
‘বাবা আমি তো ভাবছি তুমি খুশিতেই আমাকে ফোন দিয়েছো’
‘আমার তো খুশি হবারই কথা, দেখো অপা, যে কথা শুনে আমার খুশি হবার কথা সেই কথা শুনে আমি খুব রাগ করেছি’
‘বাবা তুমি আমার নাম ধরে ডাকছো?’
‘হ্যাঁ আমি তোমার উপর খুবই বিরক্ত’
‘কিন্তু বাবা, এছাড়া আমার কি করার ছিল? আমাদের হাতে অন্য উপায় থাকলে আমরা সেটাই করতাম’
‘আমাদের ধর্ম, আমাদের সংস্কৃতি এটাকে তো কোন ভাবে উপেক্ষা করা যায়না’
‘আমরা কারও কোন ক্ষতি না করে, সমাজের কোন ক্ষতি না করে শুধুমাত্র Parents হতে চেয়েছি’
‘তোমার সামাজের কোন ক্ষতি করনি কথা সত্য কিন্তু ধর্মের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছো’
‘না বাবা আমরা ধর্মের বিরুদ্ধে কোন সিদ্ধান্ত নেইনি’
‘তোমরা ধর্ম সমর্থন করেনা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছো’
‘সমর্থন করেনা আর বিরুদ্ধ আচরণ এক কথা নয়’
‘তুমি কি তোমার বাবার সাথে তর্ক করছো?’
‘তোমার শেখানো মতে যৌক্তিক মতামতের বহি:প্রকাশ তর্ক বা বেয়াদবি নয়, যদি তুমি এটাকে তর্ক বা বেয়াদবি বল, তাহলে আমি ক্ষমা চাইছি, বাবা তুমি যখন আমার নাম ধরে ডাকো আমি তখনই বুঝি তুমি আমার উপর কতটা রাগ করেছো, নাম ধরে ডাকাটাই আমার জন্য বিরাট শাসন’ অপা কাঁদতে শুর করলো।

‘তোমরা কেন বোঝনা, আমাদেরকে এমন এক সংস্কৃতির মধ্যে বাস করতে হয়, যে সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে আমরা অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ি; কথা সত্য যে, এই সংস্কৃতি আমাদের শুধুমাত্র কিছু সংস্কারই দেয়, সাথে দেয় বেঁচে থাকার কিছু অস্তিত্ব, দেয় কিছু অভিন্ন আত্ম-পরিচয়’
‘বাবা তোমাদের কাছে যদি, আমাদের থেকে তোমাদের সমাজ সংস্কৃতি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে তাহলে আমরা এমন সংস্কৃতিতে গিয়ে থাকতে চাই, যেখানে আমাদের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হবে। ’
‘মা, সংস্কৃতি একটা ফলদায়ী বৃক্ষের মত, আমরা প্রতিটি ব্যক্তি বৃক্ষের পাতার মত, যদি কোন পাতা তার বৃক্ষের পোকামাকড় বহন করে তাহলে সেই বৃক্ষের স্বার্থে হয় তাকে পোকা মুক্ত করতে হয়, অথবা সেই পুরো পাতাটাকেই ফেলে দিতে হয়, যাতে সেই পাতা থেকে পুরো বৃক্ষে পোকা না ছড়িয়ে পড়ে’
‘বাবা তুমি এত বড় কথা বলতে পারলে?’
‘আমাকে ক্ষমা করে দিও মা, আজ মসজিদেও খুতবার আগে তোমাদের এইসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যার যা খুশি তাই বলছে, তোমার মা সারাদিন কান্নাকাটি করেছে, তাকেও যে যা খুশি শুনিয়ে গেছে। তোমরা আমাদের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাইলে তোমাদের এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে অথবা তোমার বাবার সংস্কৃতি থেকে বিচ্ছিন হয়ে অন্য কোথাও বাস করতে হবে, যেখান থেকে তোমার বাবার কাছে তোমাদের ফিরে আসা সহজ কোন কাজ হবে না’

(ছয়)
‘মি. অর্ণব Embryo transfer এর বাহাত্তর ঘন্টার পূর্বে এইরকম সিদ্ধান্ত অপার শরীরের জন্য অনেক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। মানুষের মানুষিক যন্ত্রণা উপলব্ধি করার কোন ক্ষমতা আমাদের প্রোগ্রামারগণ আমাদেরকে দিতে পারেননি। তাই আমি জানিনা যে অপা কতটা কষ্ট পাবে। আমার বুদ্ধি দেওয়া হয়েছে অনেক কিন্তু হৃদয় দেওয়া হয়নি। কারণ মানুষ কারও হৃদয় দিতে পারেনা। মানুষ শুধু যৌক্তিক কিছু বৃত্তীয় বুদ্ধি দিতে পারে, হৃদয় প্রেম এগুলো শুধু প্রকৃতিই দিতে পারে। যেটাকে আস্তিকগণ ঈশ্বর বলে থাকেন আর আপনারা বলে থাকেন প্রকৃতি। তাই সমাজ, ধর্ম, রাজনীতি ইত্যাদি ব্যবস্থার মধ্যে আছে কিছু শৃঙ্খলা, আছে কিছু নিয়ম-কানুন, যা শুধু শৃঙ্খলার নামে শেকল পরায়, পুরো বিষয়টাই হৃদয়হীন, এতটায় হৃদয়হীন যে, অনার কিলিং-এর নামে নারকীয় হত্যাকাণ্ডও ঘটানো হয়ে থাকে। পুরো ব্যবস্থাটাই প্রেমহীন একটি দেওয়াল। যে দেওয়াল ভেদ করে বিজ্ঞানের মহান আবিস্কার, মানবীয় মহান উদারতা কারও কারও মাথায় প্রবেশ করে কিন্তু কারও হৃদয়ে প্রবেশ করেনা। আমি সার্চ ইঞ্জিন থেকে প্রাপ্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করে বলতে পারি, আজকের এই ঘটনার পর থেকে অপা আত্মহননের মত সিদ্ধান্তও নিতে পারে।

অর্ণব এই প্রথম রোবটিক এই ডাক্তারে কথার প্রেক্ষিতে কোন কথা বল্লেন না, অর্ণবের সমস্ত আর্ত-চিৎকার অশ্রু হয়ে তৃণ পল্লবে ঘেরা এই হাসাপাতালের মেঝেতে ঝরতে লাগলো।
-------------------সমাপ্ত-------------------
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×