প্রথম পর্ব: বাংলাদেশে সমকামিতা: আমার ছোট ভাই আমাকে তার হাত ধরতে দেয় না
সমকামিতা বাংলাদেশে রয়েছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বোধহয় মানব সভ্যতা এমন কোন সময় অতিক্রম করে নি যে সময় কেউ সমকামিতায় লিপ্ত ছিল না। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে যখন একজনের সমকামিতা আরেকজনের বিনোদনের খোরাকে পরিণত হচ্ছে, সেখানে সমকামিতার বিস্তার ঘটবে না সেটা অস্বাভাবিক হবে। সুতরাং, এ কথায় আমার আপত্তি নেই যে সমকামিতার বিস্তার ঘটছে এবং তা সমাজের প্রায় সকল স্তরেই।
ইন্টারনেটে সমকামিতার পক্ষে যথেষ্ট রিসোর্স রয়েছে। সমকামিতা নিয়ে কাজ করছে এ ধরনের বেশ কিছু বাংলাদেশী সঙগঠনের ওয়েবে এ সঙক্রান্ত তথ্য উপাত্ত পাওয়া যায়। সিডনির সমকামিদের কোন এক পত্রিকায় ডেইলী স্টার পত্রিকার বরাত দিয়ে জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যালজির সহযোগী অধ্যাপক ড: সাইফুল আজমের মতে, বাংলাদেশে সমকামিতা বৃদ্ধির হার প্রায় বছরে প্রায় ৩.৫%। বাংলাদেশের সমকামিতা নিয়ে ওয়েব সাইটগুলোতে সমকামিদের সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। এ সকল সাইটগুলোতে ভুল ভ্রান্তিতে ভরপুর। একটি সাইটের তথ্যানুসারে দেশে ৫-১০ শতাংশ সমকামী। পনেরো কোটি মানুষের দেশে এর পরিমান দাড়ায় ৭৫ লক্ষ থেকে দেড় কোটি। অথচ ১০০ কোটি মানুষের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত যেখানে সমকামিতাকে ২০০৯ সালে আইনগত বৈধতা দেয়া হয়েছে সেখানে নাকি সমকামিদের সংখ্যা মাত্র ২৫ লক্ষ (বিপ্লবকান্তির ব্লগ থেকে নেয়া) ।
সমকামিতার প্রসঙ্গ আসলেই স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে দুটো পক্ষ দাড়ায়। এক পক্ষ সকল দিক থেকে ঘৃন্য সমকামিতার বিপক্ষে অবস্থান নেয় যেখানে গুটিকতক ব্যক্তি অধিকারের ধুয়া তুলে সমকামিতার পক্ষে অবস্থান নেয়। আমি অবশ্যই প্রথম দলে।
সমকামিতাকে মানসিক সমস্যা/বিকৃতি হিসেবে ব্যক্ত করা হয়েছিল একসময়। পরবর্তীতে অবশ্য লবী গ্রুপের প্রচেষ্টায় একে তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। বাদ দেয়া হলেও মানসিক বিকৃতি ছাড়া আর কিছু মনে হয় না বিশেষ করে শারীরিকভাবে পুরুষ হবার পরেও যারা এ ধরনের সংস্পর্শে জড়ায়। সমকামিতা নিষিদ্ধ সব দিক থেকে। পারিবারিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং আইনী - সব দিক থেকে নিষিদ্ধ সমকামিতা। বিশেষ করে বাংলাদেশে ক্রিমিনাল পেনাল কোডের ৩৭৭এ ধারায় একে যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং জরিমানার শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রায় সকল ক্ষেত্রের মতোই আইনের সঠিক প্রয়োগ এখানে অনুপস্থিত।
অনলাইনে সমকামিদের প্রচেষ্টাগুলো অকৃত্রিম, তবে ধোকায় পরিপূর্ণ। সমকামিতাকে বৈধ করার জন্য তারা বেশ ভালোই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। উদাহরন দেই। এই আর্টিকেলে সমকামিতাকে a practice so harmless and personal in practice বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ উইকি সহ প্রায় সব মেডিকেল সাইটেই একে ক্ষতিকর বলে বর্ননা করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, এর প্রতিবাদ জানিয়ে বিভিন্ন সাইটের লিংক সহ আমি মন্তব্য করেছিলাম যা মডারেশন বোর্ডে গিয়ে আটকে গিয়েছে, প্রকাশের মুখ দেখে নি। তাদের আরেকটি প্রচেষ্টা হলো বিভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে বর্ননা করা। কোন মসজিদের কোন ইমাম একজন সমকামি এবং তিনি মনে করেন সমকামিতা পাপ নয়, যদিও তা কোরআনে সরাসরি নিষিদ্ধ - এই ভিত্তিতে সমকামিতার বৈধতার চেষ্টা করা হচ্ছে। সবচে' নিকৃষ্ট হলো, ধর্মীয় লেবাসসমৃদ্ধ সাইটে সমকামিতার বৈধতার চেষ্টা করা। এমন একটি ঘৃণিত সাইট হলো আল-ফাতিহা যার নাম শুনে বোঝার কোন উপায় নেই যে এরা ধর্মের নাম ব্যবহার করছে মাত্র। বিশ্বের ১২৬ টি দেশে সমকামিতাকে আইনগত বৈধতা দেয়া হয়েছে, বিপ্লবকান্তির তথ্যানুসারে। ব্যক্তি অধিকারের ধুয়া তুলে আর সমকামিদের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে এর বৈধতা দানের ঘটনা নিতান্তই আহাম্মকি ছাড়া আর কিছু কি? চিন্তা করুন তো, দেশে ধর্ষন কিংবা ইভটিজিং এর পরিমান বেড়ে গেলে ব্যক্তি অধিকারের ধুয়া তুলে তারা যদি বৈধতা দাবী করে তবে এর বিপক্ষে যুক্তি কি হবে? হয়তো তখন সরকার ধর্ষকামীদের সুবিধার্থে বিশাল ফান্ড থেকে বিনামূল্যে কনডম সরবরাহ করবে যেমনটি সমকামিদের সচেতনতা বৃদ্ধির নিমিত্তে কনডম এবং লুব্রিকেশন সরবরাহের জন্য ৫৬০ কোটি টাকা ব্যবহার করা হচ্ছে।
সিনেমার ভূমিকা
সিনেমার ছাত্র বলেই বোধহয় এ ব্যাপারটিকে সমালোচনা না করে পারছি না। আমার সেই ভাইটি নিজেই জানিয়েছিল, পরবর্তীতে আলোচনার সময় আরও কয়েকজনের কাছে রেফারেন্স পেয়েছি। সমকামিদের অধিকার নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে 'মিল্ক' অস্কার এ লড়াই চালিয়েছে বেশ শক্ত হাতে। দীপা মেহতার "ফায়ার " কিংবা "গার্লফ্রেন্ড " ছবিগুলো যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনা সৃষ্টি করেছিল। তবে, এ সকল ছবির পেছনে আমার ততটা ক্ষোভ নেই, কারণ অন্তত: এটা বুঝি যে সমকামিতাকে সমর্থন নয়, বরং আলোচিত দৃশ্যগুলো দেখার জন্যই অনেক দর্শক ছবিটি দেখেছিল। কিন্তু "দস্তানা " ক্ষেত্রে বিষয়টা কিন্তু ভিন্ন। ছবিটিতে অভিনয় করেছে অভিষেক বচ্চন, জন আব্রাহাম এবং প্রিয়াঙকা চোপড়া। তরুন মানসুখানী কর্তৃক পরিচালিত হলেও বিজ্ঞাপনে ব্যবহৃত হয়েছে করন জোহরের নাম, কারণ তরুন করন জোহরের সহকারী। আমার ছোট ভাইয়ের বক্তব্য: ভাইয়া, এই যুগে হিন্দী ভাষা জানে না এমন মানুষ একটাও খুজে পাবেন না, আর দস্তানা দেখে নাই সেরকম মানুষও বিরল। সুতরাং কেউ যদি এ ব্যাপারে কিছু নাও জেনে থাকে, দস্তানা একাই যথেষ্ট। যদি কিছু করতে চান, তবে হিন্দী সিনেমা দেখা বন্ধ করেন।
আমি হয়তো হিন্দী সিনেমাই দেখানো বন্ধ করতে বলবো না, তবে নিয়ন্ত্রনের কথা অবশ্যই বলবো। আপনার ছোট ভাইটি, কিঙবা ছেলেটি তার গ্রহণক্ষমতার বেশী কিছুর দর্শক হয়ে যাচ্ছে নাতো?
সবশেষে, আমার ছোট ভাইদেরসহ সকলের উদ্দেশ্যে
সমকামিতা খারাপ - এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এদেশের সকল মানুষই কি সমকামী হয়ে গেল? অবশ্যই না। এটা এমনই একটা জঘন্য ব্যাপার যা একজন স্বাভাবিক মানুষ মাত্রই ঘেন্না করে। সুতরাং, সমকামিতাকে ঘেন্না করতে গিয়ে নিজস্ব সংস্কৃতিকে, পারস্পরিক সম্পর্ককে সর্বোপরি আন্ত:ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দেয়া কতটুকু যৌক্তিক হবে?
এ ধরনের আচরনের একটি উল্টো প্রভাবও ঘটতে পারে। যে ছেলেটি সমকামিতা সম্পর্কে এখনো জানতে পারেনি, সে ভুল জানবে, অথবা একটি দিক সম্পর্কে জানবে মাত্র। এই অল্প জানা তাকে সেই ঘৃণিত পথেই ঠেলে দিতে পারে, হতে পারে সম্পর্কের অবনতির। কে না জানে, নিষিদ্ধ জিনিষের প্রতি দুর্বার আকর্ষনই তার ব্যবহার বৃদ্ধির সবচে' বড় কারণ।
সমকামিতা নিয়ে জানার দরকার আছে, তার থেকেও বেশী দরকার এর ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে জানার। আর সবচে' বেশী প্রয়োজন এর বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃনা ধরে রাখার।
আইনগত বৈধতাই শেষ কথা নয়, সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতাই আসল কথা।