শিশু-কিশোরদের জন্য মজার মজার ছড়া, গল্প, কবিতাসহ ভৌতিক, সায়েন্স ফিকশান কতো কিছু তো লিখছেন। বইমেলা কিংবা অন্য সময়ে আপনার বই বেরোচ্ছে, এ তো ভারী আনন্দের খবর। আর এ আনন্দের খবর আরো আনন্দের হয়ে উঠতো যদি আপনার মজার লেখা এবং সুন্দর বইটি শিশুরা পড়তে পারতো। শিশু-কিশোরেরা কি তাহলে শিশুতোষ বই পড়ে না, অবশ্যই পড়ে। তবে ঠিক শতকরায় কতজন, তা হিসেব করতে গেলে মন খারাপের একটা তথ্য ভেসে ওঠবে আমাদের সামনে। তাই মন খারাপের কথা না বলে, চলুন আমরা মন ভালো করার কিছু কথা জেনে নিই।
অধিকাংশ শিশু-কিশোরেরা পাঠ্যবইয়ের কবিতা, গল্প, সহপাঠের কয়েকটি নীতি গল্প ছাড়া আর বেশি পড়ার সুযোগ পায় না। যদিও বর্তমানে স্কুলে স্কুলে লাইব্রেরী আছে, কিন্তু নেই বই সরবরাহের ব্যবস্থা। আর শিক্ষকেরা তো বাচ্চাদের সিলেবাস এর পড়া ছাড়া অন্যসব পড়ার ক্ষেত্রে তেমন উৎসাহ দেন না। ফলে প্রতিবছর এতো এতো শিশু সাহিত্য প্রকাশিত হচ্ছে কিন্তু শিশু-কিশোরদের নাগালের বাইরে রয়ে যাচ্ছে।
এখন আসি আমরা যারা শিশু সাহিত্য নিয়ে কাজ করি, তারা কি করতে পারি। তারা একটু ভিন্ন কাজ করতে পারি। আর সে ভিন্ন কাজটা হলো শিশুদের কাছে যাওয়া। যেসব ছেলেমেয়েরা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে, তাদের আমরা আমাদের সুন্দর বইটি পড়তে দিতে পারি। সিলেবাসের বাইরের কোন বই পেলে তাও আবার উপহার হলে দেখবেন ছেলেমেয়েরা লুফে নিবে, কাড়াকাড়ি করবে, আপনার বইটা আনন্দ নিয়ে পড়ে শেষ করবে। যাদের জন্য রান্না করলেন, তারা যদি খুব তৃপ্তি নিয়ে, আনন্দ নিয়ে খায়; মা হিসেবে নিশ্চয় আপনার খারাপ লাগবে না।
এখন আসি, এতো এতো বাচ্চা, এতো বই পাবো কই? প্রকাশক তো বই-ই দেয় না! সৌজন্য কপি যে পঁচিশটা পায়, তাও আবার বন্ধুবান্ধব নিয়ে যায়। এখন উপায়? উপায় একটা আছে। আমাদের দেশে এতো এতো ছেলেমেয়ে তাহলে একজন শিশু সাহিত্যিকের ২০০ বই বিক্রি হতে কেন ফেসবুকের ইনবক্সে ইনবক্সে টোকা মারতে হয়? তার কারণ তারা শিশুদের বই বড়দের পড়তে অনুরোধ করে, বড়রা সেসব বই পড়েন না, শিশুরা বঞ্চিত হয়। অবশ্যই এ নিয়ে শিশুরা একটা আন্দোলন করতেই পারে, সেই আন্দোলন হলো তাদের মজার মজার বইগুলো না পড়েত দেওয়া।
সমস্যার সমাধান পরে জানাচ্ছি, তার আগে আসি আমাদের দেশের লেখকদের আসল সমস্যাটা কি? আমাদের দেশে যারা লিখেন, তারা লেখাটাকে শখ হিসেবে নেন, আনন্দের জন্য লিখেন কিংবা অবসরে সময় কাটানোর জন্য লিখেন। কেউ দায়বদ্ধতা থেকে লিখেন না। সেই দায়বদ্ধতা হতে পারে- আথিকভাবে স্বচ্ছলতা, সাহিত্য উৎকর্ষ এবং পাঠকের জন্য। যারা তরুণ লেখক, তারা লিখতে গিয়ে প্রথমে হোঁচট খায় বই প্রকাশ নিয়ে। কোন রকম বই প্রকাশ হলে দায়িত্ব শেষ। এ বই কে পড়লো, এ বই লেখককে কী দিলো, এ বই সাহিত্যের জন্য কী লাভ হলো- সেসব হিসাবের ধারে কাছেও কেউ নেই। অবশ্যই একজন সচেতন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সেসব রাখা দরকার। নিজের বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নতির জন্য তার সাহিত্য মানের পাশাপাশি চারপাশ সম্পর্ক ভালো ধারণা থাকা দরকার।
এবার আসি ভিন্ন কাজটা কি অর্থাৎ সমাধান
প্রথম কাজ> আপনার শিশু-কিশোর উপযোগী বইটি ভালোভাবে প্রকাশ করা।
দ্বিতীয় কাজ> আপনার প্রকাশকের কাছ থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু বই কিনে নিতে পারেন।
তৃতীয় কাজ> আপনি যে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়তে পড়াশোনা করেছেন, সেই স্কুল গুলোতে প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রি বইটি পড়তে দিবেন। খুব সম্ভব হলে তাদের বলবেন, তারা যেন পড়ে পরের দিন বা এরপরে আপনাকে জমা দিয়ে দেয়। আপনি দুইদিন পরে আপনার গ্রামের অন্য একটা স্কুলে এই বইগুলো পড়তে দিতে পারেন। তারপর তাদের কাছ থেকে নিয়ে অন্য স্কুলে দিবেন। বড়জোড় একমাসের পরিশ্রম, একটা থানা বা উপজেলায় আপনি এ কাজটা করতে পারেন। এক্ষেত্রে দাঁড়িকমা প্রকাশনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোন লেখক যদি এমন উদ্যোগ নিতে চাই, প্রকাশনী থেকে ফ্রি বই প্রকাশ করে লেখককে প্রয়োজন অনুযায়ী বই দিয়ে সাহায্য করবে।
আমার লাভ? হ্যাঁ লাভের কথা বলছি। একটা থানা বা উপজেলায় কমপক্ষে বিশ-পঁচিশ হাজার ছেলেমেয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলে পড়ে। আপনি যদি তাদের আপনার বইটি পড়াতে পারেন, তাহলে ঐসব ছেলেমেয়ে আপনার পাঠক হয়ে যাবে। আপনার পরবর্তী বই কমপক্ষে দশ হাজার কপি বিক্রি হবে। ফেসবুকের লাইক কমেন্টস ও ফ্রেন্ডদের অনুরোধ বা তেল মাখামাখি করতে হবে না। আপনি হয়ে যাবেন, আসল দুনিয়ার সেলিব্রেটি লেখক। দশ হাজার বই বিক্রি হলে আপনি যদি দশ টাকা করে রয়্যালিটি পান, তাহলে একটা বই প্রকাশ করে পাবেন, এক লক্ষ টাকা। যখন সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবেন, বই প্রকাশে কোন ঝামেলা থাকবে না, ভালো বই কিনে পড়তে পারবেন, তখন আপনার লেখা হবে আট দশ জনের চেয়ে আলাদা।
লেখক: আবদুল হাকিম নাহিদ,
সম্পাদক, সাপ্তাহিক কিশোর শিখা ও প্রকাশক দাঁড়িকমা প্রকাশনী
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:২৬