somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

্সিআর রাকিব
আমার পরিচয় !! নিজেকেই আমি পাইনি আজো খুজে ।আমি এখনো নিজেকে বুঝতে পারেনি, জানতে পারেনি । প্রতিনিয়ত জানার চেষ্টা করছি । হয়তো একদিন খুজে পাব নিজেকে, সাথে আমার অদৃশ্য 'আমি' টাকে ।তখন না হয় লিখব ।

লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড!!

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমি সচরাচর ট্রেনে যাতায়াত করি । দূরত্ব কম থাকায় লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করতে হয় । অভিজ্ঞতায় দেখেছি,লোকাল ট্রেনে সাধারনত দুই শ্রেণীর মানুষ যাতায়াত করে-১.খেটে খাওয়া মানুষ,যাদের কাছে বাস ভাড়া অনেকটা ব্যয়বহুল ২. শিক্ষার্থী,ছাত্র বয়সে যাদের টাকা বাচানো অতীব জরুরি । লোকাল ট্রেনে উঠার প্রথম শর্ত হলঃ ষাড়ের মত গুতিয়ে পাশের জনকে ধাক্কায়ে উঠে যেতে হবে ,না হলে আপনার ট্রেনে উঠা হবে না । টিকিটের টাকাটাই মার যাবে । আমি যেহেতু ধাক্কানোতে এক্সপার্ট না তাই ডিফারেন্ট অপশন ফলো করি । লোকাল ট্রেনে চলাফেরা করা মহিলারা বেশ ধাক্কানোতে উস্তাদ । তারা ধাক্কাধাক্কি করে উঠে ,পেছন দিয়ে আমি চামে-চিকনে উঠে যাই । মাঝে মাঝে মহিলাদের পেছন থেকে আওয়াজ দেই,’ভাইলোগ,মহিলা মানুষ উঠতাছে একটু সইরা দাড়ান’
সব সময় অবশ্য এই ট্রিকস কাযে লাগে না,তখন জানালায় উকি দিয়ে দেখি কোনো কামরায় পরিচিত মুখ আছে কি না । পেয়ে গেলে জানালা দিয়ে আমারে টেনে তুলতে বলি । এবার যখন বাড়ি যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম,ঠিক করেছিলাম ট্রেন দিয়েই আসবো । বই-পত্তর,কাপড়-চোপর ব্যাগে ভরার পর দেখি ব্যাগখানা ঈশপ সাহেবের গল্পের হিংসুক ব্যাঙের মত ফুলে এমন আকার ধারন করেছে যে ,এই বিশাল সাইজের ব্যাগ নিয়ে কিছুতেই ট্রেন ভ্রমনের আগের ধাক্কাধাক্কিতে অংশ নেওয়া সম্ভব না । জ্যামের চিন্তা একসাইডে ফেলে তাই সকাল-সকাল বাসে উঠে গেলাম । বাসে আসার সুবিদা হল ঝামেলা বিহীন ভাবে আরামে বসে বই পড়তে পড়তে চলে আসা যায়,যদিও একটু সময় বেশি লাগে এই যা ! বাসে উঠেই সিটে বসে সাথে থাকা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের হিউজ সাইজের ‘পূর্ব পশ্চিম’ খুলে বসে পড়লাম । একটু পর খেয়াল করলাম,বাসের পুরাতন যারা ছিল তারা বটেই যারা নতুন উঠছে তারাও আর চোখে একবার তাকাচ্ছে এদিকে । সম্ভবত হ্যাংলা পাতা একজন প্রায় তারই সমকক্ষ একটা বই আগলে বসে আছে কেন সেটাই বুঝার চেষ্টা করছে । কিছুক্ষনের মধ্যেই অবশ্য লোকজন আমার থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলল । বাস হালকা টাইপের একটু জ্যামে পরতেই জানালার কাছে এক হকার ‘পেপার,পেপার’ বলে ছুটে আসলো । বাসের মধ্যে দাড়িয়ে থাকা একব্যক্তি আমার পাশের জনকে দশ টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলল,’বলেন তো একটা বাংলাদেশ প্রতিদিন দিতে...’
হকার পত্রিকা দিতেই পেছনে থাকা এক ভদ্রলোক ছু মেরে আমার পাশের জনের হাত থেকে নিয়ে বলল,’ভাই,হেডলাইন টা একটু দেখবো...
এটা বাসে নতুন না । আগেও দেখেছি,যে পত্রিকা কিনে সবার আগ্রহ যখন শেষ হয় তখনই উনি পত্রিকার নাগাল পান ,এর আগে নয় । সবার মনোভাব এমন-যার পত্রিকা সে তো যে কোনো সময় পড়তে পারবে,আমরা একটু চোখ বুলিয়ে নেই আগে ।
যে লোক পত্রিকা কেনার টাকা দিয়েছিল তিনি বললেন,’বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা তো পাঁচটাকা,আর পাঁচটাকা তো ফেরত দিল না তো ‘
পেছন থেকে একজন বলল,’দুইটা দিছে মনে হয়,চ্যাক কইরা দেখেন’
এবার সবাই ঘুরে তাকালো ‘হেডলাইন দেখতে চাওয়া’ লোকের দিকে ,বেচারা চশমা চোখে দিয়ে ভেতরের পাতায় কোনো কলাম খুজছিলেন । উনি তাড়াতাড়ি উল্টে পাল্টে বললেন,কই নাতো......
বাস বেশিদূর আগায়নি । জানালার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখা গেল হকার একটু পেছনেই আরেকটা বাসের জানালার দিকে ছুটে যাচ্ছে । বাম পাশের জানালার কাছে থাকা যাত্রীরা হঠাৎ হকারকে উদ্দেশ্য করে ‘এই পাঁচ টাকা,এই পাঁচটাকা ‘ বলে চিল্লানি শুরু করলো । হকার হয়তো ভাবলে সবাই পত্রিকা নেওয়ার জন্য ডাকছে,কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমাদের বাসের এখানে এসেই একটা পত্রিকা বাড়িয়ে দিল ।
একজন জারি দিয়ে বলল,’আরে ভাই পাঁচটাকা দেন,পত্রিকা দিয়ে কী করমু । দশ টাকা নিয়ে পাঁচটাকা ফেরত দেননি ‘
হকার পকেট চ্যাক করে সাথে সাথে পাঁচটাকা ফেরত দিয়ে দিলে । আমাদের বাস যাত্রী সবার মুখে বিজয়ের হাসি,যাই হোক পাঁচটাকা তো উদ্ধার করা গেছে । এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল হকার সম্পর্কে মন্তব্য । কেউ বলল,’বাটপার,এগুলাই করে হালারা’
আরেকজন বলল,’আরে নাহ ভুল করে এমন করছে । দেখেন বলার সাথে সাথে পকেট চ্যাক কইরা দেইখা টাকা দিয়া দিছে ‘
আগের জন বলল,’এগুলা আপনে বুঝবেন না ভাই । আমরা সারাদেশে ঘুরি,আমরা জানি’
পাশ থেকে একজন বলল,’ভাই আমারে ভেতরের একটা পাতা দিয়েন তো....’
পত্রিকা যার হাতে উনি ব্যস্ত হয়ে বললেন,’দুই মিনিট,প্রথম পাতাটা পড়েই দিয়ে দিচ্ছি’
-ভাই আজকের শিরোনামটা কী ?
চশমাটা ঠিক করে উচ্চ কন্ঠে বললেন, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ শেখ হাসিনার
সাথে সাথে বাসের অধিকাংশ যাত্রী উচ্চস্বরে হেসে উঠলো । আস্তে করে কে যেন বলল,’মানুষ খুন করে আবার ক্ষমা’
- যাই বলেন ভাই,শেখের বেটির কিন্তু বুদ্ধি আছে বেশ । বিএনপির মেরুদন্ড কীভাবে ভেঙ্গে দিল দেখলেন ?
আমি বইয়ের দিকে মুখ করে বসেছিলাম । বাসের যাত্রীদের কথা শুনছিলাম,আবার দুয়েক লাইন করে পড়ছিলামও । বই থেকে মুখ তুলে আমি লোকটার দিকে তাকালাম । শেখের বেটি’ টাইপের বিশেষন সচরাচর কাউকে ব্যবহার করতে দেখি না । লোকটাকে দেখে আন্দাজ করলাম বয়স-৩০-৩২ আশে পাশে হবে হয়তো,পত্রিকা উনিই কিনেছেন । দেখলেই মনে হয় হাসি-খুশি,আড্ডাবাজ টাইপের মানুষ । কিছুক্ষনের মধ্যেই আড্ডা জমিয়ে ফেললেন । শেখ হাসিনা থেকে আলোচনা ঐক্যফ্রন্ট,ড. কামাল ,হিরো আলম হয়ে মাশরাফিতে এসে পৌছেছে ।
কথা বেশিরভাগ বলছেন পত্রিকা কেনার ব্যক্তিটি । বাকিরা বেশির ভাগই তাকে সমর্থন জানাচ্ছেন বা তার মন্তব্য সম্পর্কে ছোটো খাটো মন্তব্য করছেন । উনার মন্তব্য হল মাশরাফির ক্রিকেট ছেড়ে রাজনীতিতে আসা উচিত হয়নি । রাজনীতি করতে চাইলে আলাদা পার্টি গঠন করতেন । তা না হলেও অন্তত পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারতেন । একটা দলের আন্ডারে আসলেন কেন ?
বেশির ভাগের একই মত । তারাও তাই মনে করে । বাসের আড্ডাটা আমার ভালই লাগছিল ,ভাবলাম আমিও যোগ দেই উনাদের সাথে । আমি তাদের দিকে মুখ করে বললাম
-শুনলাম আওমালীগ নাকি জায়গায়-জায়গায় বিপক্ষ প্রার্থীদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে । কোথাও কোথাও মারধোরও করছে । পোস্টার ছিড়ে টিড়ে ফেলসে ।
রাস্তার পাশে দেখিয়ে বললাম
-এদিকেও দেখেন শুধু নৌকা প্রতীকের পোস্টার ,বাকিদের পোস্টার নেই বললেই চলে । এটাকে কী লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড বলা যায় ? শেখ হাসিনা কী একনায়কতন্ত্রের দিকে আগাচ্ছে না ?
আমার কথাতে তাদের আড্ডা বাধাপ্রাপ্ত হল । হঠাৎ করে সবাই থেমে গেল । এতক্ষন আওয়ামীলীগ সম্পর্কে ভাসা ভাসা সমালোচনা হচ্ছিল ,এখন স্পষ্ট করে মতামত প্রকাশের ক্ষেত্রে দেখা গেল কেউ আগ্রহী না । যার ছবি পরিষ্কার করলেই ব্যাংকের চাকরি হয়ে যায় ,সমালোচনায় জেলের ভাত তার সম্পর্কে পাবলিক প্লেসে সরাসরি কেউ কিছু বলতে আগ্রহী না । রাস্তার পাশে লম্বা একটা সুতায় ভেজা ,অর্ধেক ছেড়া হাতপাখা মার্কার একটা পোস্টারের দিকে তাকিয়ে একজন শুধু বলল
-কালকে ভালই বৃষ্টি হইছে তাহলে...
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৪০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×