মুভি সম্পর্কে বলার আগে মুভি দেখার প্রেক্ষাপটটা বলে নেই । আমাদের গ্রাম অনেকটা অজপাড়াগা টাইপের । অজপাড়াগা বলতে আবার মনে কইরেন না কারেন্ট,টেলিভিশন,মোবাইল এসব নাই ।। টেলিভিশন আছে ,তবে সবার বাড়িতে নাই আরকি । এ কারনে যাদের বাড়িতে টেলিভিশন থাকে আশে-পাশের মানুষজন সেখানে মুভি দেখতে জড়ো হয় । আমি বাড়িতে গেলে তাই আমার আশে-পাশেও বাচ্চা-কাচ্চা-মহিলারা জড়ো হয় মুভি দেখার জন্য । এজন্য আমি আগে ভাগেই তাদের সেখার মত মুভি নিয়ে যাই । এবার নিয়ে গেছিলাম সুপার-ডুপার মেগাস্টার দেবের “আমাজন অভিযান”
.
মুভির প্রথমেই দেখা যায় দেব দৌড়াচ্ছে তার পিছনে দৌড়াচ্ছে কয়েকটা কালো চিতা । দেব উসাইন বোল্ট স্টাইলে দৌড় দিয়ে পাহাড় থেকে পানিতে লাফ দেয় । ডাঙায় বাঘ জলে কুমির একটা কথা আছে না ,দেবের অবস্থাও সেই রকমই। জলে বেচারাকে ধাওয়া করে ইয়া বড় বড় কুমির । এক কুমির ঘাড় বাকিয়ে ডাউনোসর স্টাইলে একটা চিল্লানি দেওয়ার পরই দেখি দৃশ্যপট চ্যাঞ্জড । দেব আসলে ,কিসের কিসের দেব-দেব করছি । মুভিতে দেবের চরিত্রের নাম হল শঙ্কর । শঙ্কর আসলে আগের অংশটুকু স্বপ্নে দেখেছিলো । শঙ্কর অজপাড়াগায়ে (বিদ্যৎ,মোবাইল,টেলিভিশন নেই টাইপের অজপাড়া ) গাছের নিচে একটা পাঠশালার পন্ডিত মশায় । তার পরের কাহিনীগুলো একটু দ্রুত বলে ফেলি । এনা নামের এক ইটালিয়ান মহিলা (সরি মেয়ে ) শঙ্করের কাছে আসে ,তার বাপের আমাজন অভিজানের বিফল হওয়ার গপ্প শোনায়,শঙ্করকে আমাজন অভিজানে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়,শঙ্কর রাজি হয়ে যায় এবং এনার সাথে পর্তুগালে চলে যায় । ও, ভালো কথা ,এনা আর এনার বাপ বর্তমানে পর্তুগালে থাকে । এনার বাপ,মার্কো,যখন জানতে পারে বাঙ্গালি জ্যান্টেলম্যান শঙ্কর কে সুদূর ভারত থেকে আনা হয়েছে তাদের সফর সঙ্গী হওয়ার জন্য তখন সে তার মেয়ে এনাকে বকাঝকা করে । একটা বাঙ্গালি পুলা নিয়া আসছে এনা তাদের সফরের জন্য,ব্যাপারটা মার্কো সহজে মেনে নিতে পারে না । যাই হোক,বিদেশিদের ইমপ্রেস করার ক্ষেত্রে আমাদের দেব (এই মুভিতে যে শঙ্কর) খুবই দক্ষ,আগে কয়েকটা মুভিতে দেখেছিলাম । এখানেও সে ব্যাতিক্রম নয়, বাংলা না জানা মার্কোকে সে বাংলায় ডায়লগ মেরে ইম্প্রেস করে ফেলে । পর্তুগালে বর্ষাকাল অনেক দীর্ঘ ,এজন্য দীর্ঘদিন ঘরে বসে থেকে অবশেষে ওরা আমাজন অভিজানে বের হয় । সঙ্গে নেয় তিনটা তেজি ব্রাজালিয়ান হর্স । বা**,আমার কাছে লিখতে ফালতু লাগতাছে । একঘেয়ে ডঙ্গে কী বালছাল লিখতেছি । শুধুমাত্র অনেকটুকু লিখে ফেলেছি বলে ব্যাকস্পেস চাপতে মনচাইতাছে না । আচ্ছা বাদ দেন ,চলেন আরেকটু আগায় । ব্রেয়ার গ্রিলস স্টাইলে মাংস পুরাইয়া খাইতে খাইতে তারা আস্তে আস্তে আমাজনের গভীরে যেতে থাকে । স্থলপথ ছাইড়া নদীপথ,নদীপথ ছাইরা হাটাপথ,হাটাপথ ছাইড়া আবার নদীপথ,আবার হাটাপথ-এভাবে চলতে চলতে তারা আমাজনের গহিনে যেতে থাকে । পথিমধ্যে তাদের সাক্ষাৎ হয় জঙ্গলে বাস করা বিভিন্ন গোষ্ঠীর সাথে,মুখোমুখি হয় শত্রুদের সাথে । পথিমধ্যে অবশ্য বিশাল আকৃতির এক সাপ মার্কোরে ‘ডিচ্চিকাঊ’ করে দেয় । দূর ! স্পয়লার দিয়ে ফেলতেছি । থাক,মুভির কাহিনী সম্পর্কে আর আগাবো না,এমনিতেই এট্টু স্পয়লার দিয়ে ফেলেছি ( ইয়ে,আপনারা যদি ‘ডিচ্চিকাউ’ মানে কী বুঝাইছি তা বুঝে থাকেন আরকি ) রিভিওতে ( যদিও আমারটা রিভিও হইছে বলে দাবি করছি না,তারপরও চেষ্টা তো করেছি ,নাকি ) শেষের দিকে একটু টুইস্ট রাখতে হয়,যাতে মানুষ জন মুভি দেখার প্রতি আগ্রহী হয় আরকি । মুভিতে শঙ্কর ম্যাপের সাহায্যে ‘এলদারদো’ নামে এক জায়গা খুজে পেতে চায়,যে জায়গার সবকিছুর সোনার তৈরি । পাঠক,আপনার কী খুব জানতে ইচ্ছা হচ্ছে জায়গাটা কী শঙ্কররা খুজে পায় কি না ? ইচ্ছা হলে দেখে ফেলুন মুভিটা ( টুইস্ট দিয়েছি )
.
সতর্কীকরনঃএই অংশটুকু ব্যক্তিগত মন্তব্য,আপনি চাইলে নাও পড়তে পারেন
মুভির গ্রাফিক্স খুবই বাজে হয়েছে । একটা দৃশ্যের কথা বলছি তাহলে বুজতে পারবেন-
এনা নদীর তীরে বিশাল এক সাপের মুখোমুখি হয় । সাপটা একটা গাছের ডালে ঝুলছে । সাপ গাছের ডালে ঝুলতেই পারে এখানে অস্বাভাকিতার কিছু নেই । অস্বাভাবিক তখনই মনে হবে যখন দেখা যাবে গাছের সমান বিশাল একটা সাপ সেই গাছেরই একটা ডালে ঝুলছে । একটূ কল্পনা করুন,থাক কল্পনা করতে হবে না আপনি বরং মুভিতে দেখে নিয়েন ।
পুরোনো একটা ব্রীজ,ব্রীজ না বলে সাকো বললেই বেশি মানাসই হয় । যে সাকোটা জঙ্গলে থাকা মানুষরা খাল পারাপারের জন্য তৈরি করেছে জংলী লতা ও কাঠের সাহায্যে । সে লতা দিয়ে বানানো সাকোতে দেখলাম নাট-বল্টু (কার্টুনের নাট-বল্টু নাহ ) ও ব্যবহার করা হয়েছে। লতা দিয়ে বানানো সাকোর মধ্যে নাট-বল্টুর কী কাজ
পুরোনো সাকো দিয়ে যাওয়ার সময় শঙ্কর আর মার্কো মাঝপথে থাকার সময় সাকোটা ভেঙ্গে যায় । শঙ্কর আর মার্কো ভাঙ্গা সাকোতে ঝুলে থাকে । শঙ্কর উপরে ,শঙ্করের পায়ের থেকে ১ ফুটের মত নিচে মার্কো সাকোর একটা কাঠ ধরে ঝুলে আছে । মার্কো যেই কাঠ ধরে ঝুলে থাকে সেটা হঠাৎ করে ভেঙ্গে যায়,মার্কো পরে যেতে থাকে আর তখনি শঙ্কর এক হাতে মার্কোকে ধরে ফেলে । হিরোদের শরীরে অনেক শক্তি থাকে,এক হাতে কাউকে ধরে ঝুলিয়ে রাখা তাদের জন্য ব্যাপার নাহ । কিন্তু সমস্যা একটা রয়ে গেছে এই জায়গায়, তোমার পায়েরও প্রায় ১ ফুট নিচে ঝুলে থাকা এক ব্যক্তি নিচে পরে যাওয়ার সময় তার হাত খপ করে ধরে ফেললা কেমনে ম্যান, কেমনে !!!!!!!!
.
আর অভিনয় থাক বেশি বলবো নাহ । পরে আবার আপনারা বলবেন,আমি নেগেটিভ ,আমার দৃষ্টি ভঙ্গি নেগেটিভ, আমার চৌদ্দগোষ্ঠী নেগেটিভ ! তারপরও অল্প ইট্টু বলি, না হলে আমার কী-বোর্ড নিশপিশ করবো আবার টাইপ করার জন্য । মার্কো ,হা হা ,তার মত হাসি দিলে আমারে মানুষ মনে করবো পাবনা থেকে পালাইয়া আসছি কিছুক্ষন আগে । আর দেব মুভিতে কতক্ষন পর পরই গরিলার মত চিল্লানি দেয় । দেবের চিল্লানো দেখে আমার পাশে বসে থাকা আমার চাচী বলল,” এই ব্যাড্যা এমুনবা গর্জন দে কা
.
- আচ্ছা মুভিতে পজিটিভ কিছুই পাননি ?
- পেয়েছি তো । আমার ছোট বেলার হিরো বিভূতিভূষণের ‘চাদের পাহাড়’ এর শঙ্করকে রূপালি পর্দায় প্রতিষ্ঠিত রূপে পেয়েছি । এই মুভির এন্ডি ং দেখে মনে হয়েছে শঙ্করকে নিয়ে আরো কাজ হবে । ভালো লাগার কারন , বাংলা মুভিতে কোনো চরিত্র নিয়ে একাধিক কাজ করা হয় না , সে ক্ষেত্রে শঙ্কর ব্যতিক্রম । আশা করবো, শঙ্করকে নিয়ে পরবর্তীতে ভালো কাজ হবে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৩