আপনার থেকে আপনার ছোট বোনের বয়সের ব্যবধান চার বছর। ভারী লক্ষ্মী মেয়ে,শান্ত শিষ্ট। তারচেয়ে বড় কথা খুবই ধার্মিক। সাত বছর হওয়ার পরে কখনো রোজা ভাঙ্গেনি,নামাজও কাজা হয় না কখনো। স্হানীয় মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। পড়াশোনাতেও ভালো,প্রচন্ড মেধাবী। এমনিতে বাড়ি থেকে খুব একটা বের হয় না। অত্যন্ত সুন্দরী হওয়ার কারনে পাড়ার ভন্ড ছেলেরা প্রায়ই একনজর দেখার জন্য বাড়িতে উঁকিঝুঁকি মারে। বাড়িতে একা পেয়ে একদিন ধর্ষন করলো দানবরা,পর্দানশীনতা তাকে রক্ষা করতে পারেনি।
★★★
ফেসবুকে নিউজফিডে স্ক্রল করছিলেন। একজনের একটা পোস্টে চোখ আটকে গেল। কোন জায়গায় মসজিদে সম্ভবত ইমামের হাতে একটা বাচ্চা মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে' সেই খবরের লিংক শেয়ার করে একটা নাস্তিক হাবিজাবি লিখেছে। হাবিজাবি পড়ার সময় নেই। কমেন্ট বক্সে গিয়ে লিখলেন,"আপনাদের কী ইসলামের বিরুদ্ধে অপ্রপ্রচার চালানো ছাড়া আর কোনো কাজ নেই? পত্রিকার পাতায় এতসব ধর্ষনের খবর আসে,সেগুলোতো শেয়ার দিতে দেখি না। মসজিদ,ইমাম দেখে লাফাইয়া শেয়ার দিয়েছেন। নাস্তিক বলে কিছু নেই,সবই ইসলাম নিয়ে চুলকিয়ে জার্মানি যাওয়ার ধান্ধা'। এসব নিউজ লিংকে সাধারনত ডুকা হয় না। আজকে কী ভেবে জানি ডুকলেন। একটা সাত বছরের শিশু মক্তবে গিয়ে হুজুর দ্বারা ধর্ষিত হয়েছে। মেয়েটির নাম রোকেয়া। রোকেয়া নামটা দেখে একটু থেমে গেলেন। আপনার বড় ভাইয়ের মেয়ের নাম রোকেয়া। ভারি মিষ্টি দেখতে,পুতুল পুতুল চেহারা। আপনি ডাকেন 'পুতুল মামনি'। আপনার সাথে খুবই ভাব,কাকা বলতে একেবারে অজ্ঞান। বাড়িতে যাওয়ার সময় চকলেট নিতে কখনো ভুল হয় না। ধুরু ধুরু বুকে আপনি রিপোর্টের নিচের দিকে নামতে থাকলেন। ধর্ষিতা বাচ্চা_মেয়েটা আপনাদের গ্রামেরই। আপনার বুকের ভিতর হাপর-টানা শুরু হয়ে গেছে। মেয়েটার বাবার নাম আজমত আলী,মায়ের নাম রোকসানা। আপনার হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেল। মনে হচ্ছে,আপনি কিছুক্ষণের জন্য অনুভূতি শূন্য হয়ে গেছেন, চোখটা প্রচন্ড জ্বালা করছে। কানের মধ্যে শো-শো আওয়াজ হচ্ছে। আজমত আলী আপনার বড় ভাইয়ের নাম....
★★★★★
আপনার মায়ের বয়স পঞ্চাশ পার হয়েছে। দুই বছর আগে আপনার বাবা মারা গেছে। আপনার মা বর্তমানে বাতজ্বর,ডায়বেটিসে ভুগছে। প্রতিদিনি বিকেলে নিয়ম করে হাটতে বের হয়। হাটাহাটি, মায়ের বয়সিদের সাথে গল্পগুজ করে সন্ধ্যায় বাড়িতে ফেরে। রাত্রে বসে টিভি দেখার সময় জানতে পারলেন মা এখনো বাসায় ফেরেনি। মাঝে মাঝে আপনার মা বড় মেয়ের বাসায়ও চলে যায়,বাড়িতে ফিরে না। বড় বোনের বাসায় ফোন দিলেন,সেখান থেকে জানলেন আপনার মা বড় বোনের বাসায় যায়নি। আত্মীয় স্বজন সব জায়গায় খোজ করলেন,না পেয়ে থানায় জিডি করলেন। তিনদিন পর পুলিশ অফিসার আপনাকে ফোন দিয়ে একজায়গায় যেতে বলল,আপনার মায়ের খোজ পাওয়া গেছে। পচা গলা একটা লাশ,বাম হাতের আংটিটা দেখে চিনতে পারলেন, এটাই আপনার মা। মাথার ভিতরটা খালি হয়ে গেল,আপনার মাকে কেউ কেন মারবে? ময়নাতদন্তে উত্তর বেরিয়ে এল,আপনার মাকে খুন করার আগে ধর্ষন করা হয়েছিল।
★★★★★★
লিনা,বড়ই চঞ্চল মেয়ে। মাত্র কলেজে পড়ে। বেশ ভালো লাগে আপনার। একদিন তাকে ভালো লাগার কথাটা জানিয়েও দেন। দুষ্টু হাসি দিয়ে চলে গেছে,কিছু বলেনি। ভাবসাব দেখে মনে হয়েছে রাজি,লজ্জায় কিছু বলেনি। গ্রামের মেয়েতো,যতই চঞ্চল হোক 'বুক ফাটে তো মুখ ফাটে না ' টাইপ। দুইদিন যাবৎ কলেজে আসছে না লিনা,আপনি চিন্তিত। সন্ধ্যায় বাজার দিকে বাড়ি ফিরছিলেন। স্কুলের পাশে মাঠটায় জটলা দেখে এগিয়ে গেলেন,একটা মেয়ে, মেয়ে বলা ঠিক হবে না- একটা লাশ পরে আছে ক্ষেতের মধ্যে,উপর হয়ে। দেখে বুঝা যাচ্ছে,ধর্ষন করার পর হয়তো কেউ হত্যা করে ফেলে গেছে। আপনি মেয়েদের ইচ্ছানুযায়ী পোশাক পরার বিরোধী। ধর্ষনের খবর দেখার পর 'মেয়েটার শরীরের একটা লোম ঢাকা হয়নি,ঐ লোম দেখেই ধর্ষক উত্তেজিত হয়েছে। তাই ধর্ষন হয়েছে 'টাইপ বক্তব্য পোস্ট করেন। আজকেও এরকম পোস্ট দেবেন,তাই মশার কামড় খেতে খেতে শেষ দেখার জন্য ঐখানে দাড়িয়ে আছেন। পুলিশ এসে লাশ টা উল্টালো,আপনির লাইটের আলোতে যা দেখলেন তা দেখার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন না। চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে করছে। লিনার লাশটা তখন এম্বুলেন্সে তুলা হচ্ছে......
___________________________________________________
আপনি কী পর্দা না করলে ধর্ষণ হইবোই মনে করেন ? ধর্ষিত কারো ছবির উপর ক্ষুদার্ত কুকুরের মত ঝাপিয়ে পরেন দোষ বের করার জন্য ? বোরকা-হিজাব না পরলে ধর্ষন হইবোই বইলা তৃপ্তির ঢেকুর তুলেন ? তাহলে নিচের অংশটুকু আপনার জন্যই
যতক্ষণ না আপনার বোরকা পরা বোন
বয়স্কা মা
আদরের ভাতিজি
চঞ্চলা প্রেমিকা ধর্ষিত না হইবো,
উপরের কোনো একটা ঘটনার সাথে আপনি পরিচিত না হইবেন
ততক্ষণ পর্যন্ত মোশারফ করিমরা 'ধর্ষন পোশাকের জন্য হয় না' টাইপ বক্তব্য দেওয়ার পর আপনার আহত অনুভূতি নিয়া তাদের উপর ঝাপাইয়া পরবেন,ফাসি চাইবেন,কল্লা নামানোর হুমকি দিবেন। ধর্ষনের মহামারি শুরু হয়ে গেছে। এই ধর্ষনের মহামারি শুরু হওয়ার পেছনে আপনি বা আপনাদের মতো 'পর্দা না মানলে ধর্ষন হইবোই' 'রাতে মেয়েদের বাইরে কী' 'মেয়েরা ক্যান এইটা পরবে,ঐটা পরবে' মানসিকতা ওয়ালারা অনেকাংশে দায়ী। ধর্ষনের পর আপনারা ধর্ষকের দোষের থেকে বেশি ব্যস্ত থাকেন ধর্ষিতার কোন জায়গা খোলা থাকতো,কোন পোশাক পরা দরকার, কোনটা দরকার না ঐটা লইয়া। ধর্ষকের চেয়ে ধর্ষিতার দোষ খুজে পান বেশি,ভিক্টিম-ব্লেমিং করে ধর্ষনরে লঘু করার চেষ্টা করেন। উপরের কল্পিত যে ঘটনাগুলো উল্লেখ্য করলাম,এখন অহরহ এরকম ঘটছে। হয়তো আপনার সাথে না, আপনার মত কারো সাথে। যতদিন না আপনার সাথে ঘটছে,ততদিন আপনাদের মতো 'অনুভূতিওয়ালা' প্রজাতিদের হয়তো কারো পক্ষে 'ধর্ষন কেন হয়' ঐটা বুঝানো সম্ভব হইবে না.....আমি চেষ্টাও করবো না। শুধু আশে পাশে তাকাইয়া কারা ধর্ষন হইতেছে তা দেখার অনুরোধ করবো,তার সাথে মিলিয়ে দেখতে বলবো আপনার বোরকা পরা বোন,বয়স্কা মা,আদরের ভাতিজিরা এই লিস্টে পরে কী না....
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৮