হে প্রিয়তমা আমার,
তুমি আটপৌরে সাদাসিধা, আমি খুবই অসভ্য। ইচ্ছে ছিল অন্যরকম হওয়ার, প্রাচীন পৃথিবীর আদিম মানব-মানবীর মতো। তুমি নিমরাজি হলেও গন্ধমটা কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত ঠিকই গিলেছিলাম। নিষিদ্ধতার জাল ছিঁড়ে চেয়েছিলাম হারিয়ে যেতে, কিন্তু- মানুষতো পরাধীন, পাঁজরে বেঁধে রাখা শিকলে টান লেগে থেমে গেছি। দণ্ডিত আমরা পুড়ছি সভ্যতার নন্দিত নরকে। নির্বাসিত কারাগারে আমরা সবার থেকে একঘরে- বিভাজিত। আমি তোমায় দেখতে পাই, ছুঁতে পাই না- চুমুগ্রস্থ বুভুক্ষ দুই জোড়া ঠোঁটের আগ্রাসনের মাঝে প্রহরী হয়ে আটকে দেয় একটা স্বচ্ছ কাঁচের দেয়াল। তবুওতো আমরা বেঁচে আছি তুমি-আমি, আমি-তুমি ভাবনায়। আমার বিষাদভারী পায়চারি আর তোমার গালে হাত- রাতগুলো গুনে গুনে কেটে যায়। আমাদের দীর্ঘশ্বাসে জল্লাদ আকাশটা কখনো কখনো ভারী হয়ে ওঠে। মেঘলা আকাশ দেখলে গন্ধমের নেশাটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, কোন কোন মানুষকে খুব মনে পড়ে। আমাদের মাঝের কাঁচের দেয়ালটার গায়ে বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে গড়িয়ে ঝাপসা হয়ে আসে। ঝাপসা দেয়ালের ওইপাশে তুমিও কি তখন কাউকে মনে করে বৃষ্টি নামাও??
এপাশ থেকে তা বোঝা যায় না- বুঝতে চাই ও না, আমি তো অসভ্য। এই নরকের মাঝে দু ফোঁটা নোনা জল আমার চাওয়া না। নগরীর বর্ষণবিকেলের নীড়সন্ধানী কোলাহল জমজমাট হয়। বৃষ্টির ঝাপটায় দমকে দমকে কখনও দেয়ালের ওপাশ থেকে তোমার খোলাচুল ছুঁয়ে আসা বাতাসেরা উড়িয়ে নিয়ে আসে কিছু হাস্নাহেনার গন্ধ। এই নরকে এইটুকুই আমার উল্লসিত চাওয়া-বেহাত পাওয়া। এই নগরীতে আমার নীড় আমি ঠিক করে ফেলেছি, তোমার ঐ এলোচুলের দিগন্তশুন্য বাঁক।
আমরা একদিন আমাদের মাঝের দেয়ালটা ভেঙ্গে ফেলব- ফুল কিংবা রক্ত ছুড়ে। একসাথে স্বাধীন হয়ে যাব আবার। আমাদের স্বপ্ন সত্যি হবে, জাল আমরা ছিঁড়বই। তখন তোমাকে বলতে পারব,- অ্যাই, আঙ্গুল চালিয়ে চুলগুলো সাজিয়ে নাও তো। সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখো আমার সাধ-সাধনার নীড়। আমি টা একটা অসভ্য, বারবার অগোছালো করে ফেলি।"