"হয়তোবা এই পৃথিবী অন্য কোন গ্রহের নরক"- কথাটা আমার নয়, অ্যালডস হাক্সলী নামের একজন বিখ্যাত ব্যক্তির। বিখ্যাত বলার কারন তাঁর উক্তি ডায়েরীর পাতার নীচের দিকে ছাপা হয়। তবে পার্থিব জীবন সম্বন্ধে আমার শেক্সপিয়ার এর কথাটাই বেশি মনে ধরে- "জীবন ই হল শ্রেষ্ঠ নাটক"। যদিও আমি নিতান্তই দাঁড়কাকধর্মী মানুষ, আমার জীবনে তেমন কোন নাটকীয়তা নেই। শুধু মাঝে মাঝে গভীর রাতে হঠাত ঘুম থেকে উঠে বসে হাঁ করে নিঃশ্বাস নেই, এইতো। এছাড়া আমার কাছে বাকী সব ই স্বাভাবিক লাগে, আমি অনুভূতিশূন্য মানুষ।
আমি যে অনুভূতিশূন্য- এই উপলব্ধিটা আমার নয়, রিশিতার। ৪ বছর উথাল-পাথাল প্রেম করার পর যখন আমার বেকার জীবনের মাঝে ওর বিয়ের কথা ঠিক হয়ে গেল, আমাদের সম্পর্কে দাঁড়ি টানা হল। এক বিকেলে ফুলার রোড এ শেষ দেখা হল আমাদের, খুব কান্নাকাটি করল। আমি বিচলিত হই নি, নাটক-সিনেমায় এই দৃশ্য দেখে অভ্যস্ত। আমার হাত ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে ব্যাকুলভাবে সেদিন ও বলেছিল ওর শেষ কথাগুলো- "তুমি কিছু বলছ না কেন, তোমার কি কোন অনুভূতি হচ্ছে না। এমন অনুভূতিশূন্য তুমি কীভাবে হলে? বলো, বলো..."। আমি শুধু একটাই কথা বলেছিলাম, বেকারদের কোন অনুভূতি থাকতে নেই। এই কথা শুনেই ও আর দেরি করে নি, কঠিন পায়ে হেঁটে চলে গেল। জমজমাট বিকেলের ভাঁজে শুধু রেখে গেল ওর কাজলধোয়া কিছু মুক্তোদানা।
একদিন জানতে পারলাম যে আজ নাকি ওর বিয়ে হচ্ছে, সেদিন ও কেন যেন দুঃখ পাই নি। সে রাতে ও করছিল বাসর, আর আমি শুধু সারারাত ফুলার রোড এর বুক ধরে হেঁটেছি আর হেঁটেছি। প্রতি পায়ে পায়ে উচ্চারন করেছি- রিশিতা, রিশিতা। এটা করেছি ওকে মনে করে কিছুটা কাঁদার জন্য, পারি নি। শুধু রাস্তার মানুষেরা অবাক হয়ে আমাকে দেখছিল। তারা আমার মত অনুভূতিশূন্য নয়, তাদের সংসার আছে, ঘর আছে।
তারপর থেকে কোনদিন আর কাঁদতে চেষ্টা করিনি। জানি আসবেনা, কারন আমি তো অনুভূতিশূন্য। কিন্তু যখন রাত দুপুরে ওকে কাঁদতে দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়, যন্ত্রণায় বুক ফেটে হাঁ করে নিঃশ্বাস বের হয়, তখন মনে হয়-- এইতো আমার অনুভূতিগুলো বুঝি বেরিয়ে যাচ্ছে, হ্যা হ্যা, এরাই।