আশেপাশে অনেক শব্দ হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমি কোন বাজারে। কৃতদাস হিসেবে আমাকে নিলামে বিক্রি করা হবে। এ নিয়ে আমার কোন চিন্তা নেই । আমি চুপচাপ চোখ বন্ধ করে ধ্যানের মতো বসে আছি, আমাকে নিয়ে দুজন নিলাম ডাকতে ডাকতে গোলমাল বাধিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষন পর হাতাহাতি শুরু হয়ে গেলো। সবাই খুব মজা করে দেখছে। আমিও খানিকটা দেখার জন্য চোখ খুলি। চোখ খুলতেই দেখি সামনে সিলিঙের সাদা দেয়াল। একবার রুপা বলেছিল, ও ঘুম থেকে উঠে সবার আগে ঘড়ি দেখে, পেন্ডুলাম দুলতে থাকা রাজকীয় ঘড়ি। আমি হিমু, তাই সময়ের হিসাব আমি রাখি না। আমি ঘুম থেকে চোখ খুলেই ছাদের দেয়াল দেখি। আমরা সবাই ই দেয়ালের মাঝে বন্দি, এই দেয়াল ভেদ করে স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে যাওয়া যায় না।
ঘুম থেকে উঠে দেখি বাইরে মরুভুমির মতো অবস্থা, পানির জন্য দুই মেসমেম্বারের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গেছে। ভাদ্র মাস, এলাকায় পানি নেই। একবেলা সকালে পানি আসে, ঐ সময়ের মধ্যেই সবাইকে যাবতীয় কাজ সেরে নিতে হয়। কে আগে বাথরুমে যাবে এই নিয়ে বাকযুদ্ধ। কিছু করার নেই। সিগারেট ধরাতেই পেটে মোচড় দিলো, চেপে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই। আজ দেশে পানি না খেয়ে কোন মানুষ মারা গেলে সেটা পত্রিকার নিউজ হতো, কিন্তু আমাদের মেসে পানির এমন অভাবে টয়লেটের চাপে কেউ মারা গেলে সেটা পত্রিকায় আসবে না। কারণ এর মধ্যে নাটকীয়তা নেই, আর সব মানুষ ই নাটকীয়তা পছন্দ করে।
এমন সময় সেলিম আসলো, ওকে দেখেই সব চুপচাপ হয়ে গেলো। এলাকার বিশিষ্ট ভাই, সংসদ সদস্যের খুব আপনা লোক। অস্ত্রের ব্যবসা করে আন্ডারগ্রাউন্ডে ব্যপক পরিচিতি পেয়েছে। এলাকায় আসা-যাওয়া করতে হলে সেলিমকে সালাম দিয়ে চলতে হয়। সেলিম এসে বলল, "হিমুভাই, উইঠা গেছেন। আমি সকাল থেইক্কা আপনের লাইগা বইসা আছি। আইজকা বহুত কথা আছে আপনের লগে। আগে আপনে কাম সাইরা আসেন, আরামে কথা কমু। ঐ, তরা সব যা এখন। হিমু ভাই আগে বাথরুম থেইক্কা বাইর হইব, তারপর তরা যাবি। এইখানে হাউকাউ করবি না।" সবাই চলে যায়, আমি বাথরুমে ঢুকি।
বাথরুম থেকে বের হতেই সেলিম আমার সাথে আমার ঘরে আসে, ওর ছোটভাইদেরকে দিয়ে নাস্তা আনায় আমার জন্য। এরপর খাঁটি গরুর দুধের চা আর সিগারেট। আরামে সিগারেট টানতে টানতে বলি, "কীজন্যে খুঁজছিলে সেলিম? প্রেমে-টেমে পড়েছ নাকি? আমি কিন্তু এসব আমার কম বুঝি। আমি লাভগুরু না, হিমু।" সেলিম, মাথা চুলকে বলে, "হিমুভাই, একটা বিরাট সমস্যা হইয়া গেছে। আমারে পরী আছর করছে।" আমি সিগারেট টানতে টানতে বলি, "বুঝলে কিভাবে? লক্ষন কি?" "ভাই, প্রথম প্রথম বুঝতে পারি নাই যে এইটা পরী, ভাবছিলাম মাইয়া মানুষ। ডেইলি বিকালে গাঁজা খাইয়া ঘুড্ডি উড়াইতে খইল্লাগো ছাদে উঠি। একটা মাইয়া দেখি পাশের মান্নান মিয়ার ছাদের থেইক্কা আমার দিকে সোজা তাকাই থাকে, ডেইলি ভাই। আমার রাইতে ঘুম হয় না, চোখ বন্ধ করলেই খালি ঐ মাইয়াটারেই দেখি। ভাই, পরে আমি বুঝলাম যে, ওইটা কোন মাইয়া না, পরী। আমার উপ্রে আছর করছে। মানুষ হইলে তো আর আমার দিকে এইভাবে তাকাইতে পারতো না। এলাকার সবাই আমারে একনামে চিনে "সেলিম", আমার দিকে চোখ তুইলা তাকানোর কারো সাহস নাই।"
"তাতো অবশ্যই।"
সেলিম কাচুমাচু করে বলে, " ভাই, এইটা নিয়া খুব সমস্যায় আছি, আপনে একটা সমাধান দেন ভাই।"
"হুম, নারী জাতি আসলেই অনেক রহস্যময়। সেটা মানুষ ই হোক আর পরী ই হোক। আমি ভেবে দেখছি কি করা যায়।"
সেলিম খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে। " আমি জানতাম হিমু ভাই, আপনেই এইটার সমাধান দিতে পারবেন। ভাই তাইলে যাই আজকে। আমি আবার তিনদিন পর আসুম নে।"- বলে সেলিম চলে যায়।
আমি হাঁটতে বের হই। কড়া রোদে হাঁটতে হাঁটতে পা ব্যাথা হয়ে আসছে। রাস্তাটা যদি একা চলতো আলাদিনের গালিচার মতো তাতে সমস্যা কি! রাস্তায় একটা ফোনের দোকান দেখে ফোন করতে ইচ্ছা করলো। দোকান থেকে মাজেদা খালাকে ফোন দিলাম,
-হ্যালো
-আসসালামু আলাইকুম খালা।
- আরে হিমু, তুই টেলিপ্যাথি জানিস নাকি? আমি মনে মনে তোর কথা ভাবছিলাম
- কেন কি হয়েছে?
- শোন, তোকে একজন গৃহশিক্ষক ঠিক করে দিতে হবে।
আমি খালার কথা শুনে খানিকটা অবাক হই। আজকাল ঢাকার প্রতিটা দেয়াল "বাসায় গিয়ে পড়াই" শীর্ষক পোস্টারে ভরে গেছে। এর মাঝে খালা একজন গৃহশিক্ষক খুঁজে পাচ্ছে না??
-কি বললে? গৃহশিক্ষক, মানে বাসায় গিয়ে যারা পড়ায়?
- হ্যাঁ, কিন্তু তাকে ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে এবং বার্লি পদ্ধতি জানতে হবে। আমার ছোটবেলার এক বান্ধবী, বহুদিন পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরেছে। ওর একটাই মাত্র মেয়ে, তাও আবার জন্মান্ধ। মেয়েটাকে বাংলা লেখা আর বাংলায় কথা বলা শিখাতে হবে। মানি ইজ নো প্রব্লেম। কিন্তু ভালো ছেলে খুঁজে বের করতে হবে।
-এতো খুব প্যাঁচের কাজ। আচ্ছা খালা, আমি তোমাকে ৩ দিন পর জানাবো। পাওয়া গেলেও যাকে-তাকে তো আর তোমার বান্ধবীর মেয়ের জন্য দেয়া যায় না। আজকালকার গৃহশিক্ষকদের চরিত্র খুব খারাপ।
-এইজন্যই তো তোকে বললাম।
-আচ্ছা খালা রাখি এখন
- ভুলে যাস নে। তুই তো সব গুলিয়ে ফেলিস।
আমি ফোন রেখে দিলাম। আবার হাঁটা শুরু। গরমের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে খুব ক্লান্ত হয়ে গেছি, এইদিকে মানুষের বসবাস কম। অনেক গাছপালা আছে। কোন কলোনী-টলনী হবে বোধ হয়। আমি রাস্তার পাশেই একটা গাছের নিচে ছায়ায় বসি। বলা হয়, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। আসলে কিন্তু তা নয়। গাছ আমাদের কৃতদাসের মতো। মানুষ প্রজাতির বন্ধু শুধু মানুষেরাই হতে পারে। গাছের চেয়ে মানুষ সেরা, তাই গাছ তাদের সাহায্যকারী কৃতদাস। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাতাস ভেসে আসছে। একটা কাক আমার পাশে ঘোরাফেরা করছে। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
স্বপ্নে বাবা আসলো। আমরা একটা ট্রেনে। ট্রেনের জানালার পাশে আবছা অন্ধকারে বাবা বসে আছে।
-কেমন আছো হিমু?
-বাবা আমার ভালো লাগছে, আমি কখনো ট্রেনে উঠি নি।
-হিমু, এতদিন পর তুমি ট্রেনে উঠবে কারণ এখন আমি তোমাকে আদেশ করেছি। তুমি ট্রেনে উঠে শিক্ষা নিবে। ট্রেন মানুষের জীবনের মতোই। কখনোই পিছু ফেরে না। ভবিষ্যতের স্টেশনের দিকে ছুটে চলে। এর মধ্যে তুমি কোন স্টেশনে কিছু ফেলে গেলে তুলে নেয়ার সুযোগ নেই তোমার। তোমাকে লাইন ধরে সোজা ছুটে চলতেই হবে, নয়তো থেমে যেতে হবে। মানুষ তারপরেও তাদের অতীত নিয়ে ঘাটায়। তুমি কখনো তোমার অতীত ঘাটাবেনা। যেটা ফেলে এসেছ সেটা ভুলে যাবে।
আমাদের ট্রেন ছুটে চলছে। হঠাৎ ট্রেনটা একটা লাফ দিয়ে উপর থেকে উড়ে এসে আমার গায়ে পড়ল, ব্যথা লাগছে। চোখ খুলতে দেখি, একটা মেয়ে আমার উপর হোঁচট খেয়ে পড়েছে। সৃষ্টিকর্তা কখনো খুঁতহীন সৌন্দর্য সৃষ্টি করেন না। কিন্তু এই মেয়েটার কোন খুঁত আমি বের করতে পারছি না। খুব অবাক হলাম। টেলিভিশনে একটা বডি স্প্রের বিজ্ঞাপনে দেখেছি, ওটা গায়ে মাখলে নাকি পৃথিবীর মেয়ে তো কোন ছাড়, পরীরা পর্যন্ত সব উড়ে এসে সামনে উশটা খেয়ে পড়ে প্রেম নিবেদন করবে। আমি গায়ের গন্ধ শুঁকলাম, হলুদ পাঞ্জাবী থেকে তো ঘামের গন্ধ ছাড়া কোন বডি স্প্রের গন্ধ আসছে না।
রূপবতী মেয়েরা অহংকারী হয়। আরেকদিকে তাকিয়ে মেয়েটা বলছে, "Help me please?"
সুন্দরী মেয়ের অভদ্রতার চেয়ে রূপের আপেক্ষিক গুরুত্ব বেশি হওয়ায় আমি বললাম,
"জী বলুন।"
-I am a blind. I can't speak in Bangla. Would u help me to reach my home?
আমি ধাক্কা সামলে জিজ্ঞেস করি- Have u the address with?
- yeah.
আর কোন কথা বলতে পারলাম না। ঠিকানাটা দেখলাম, সামনের গলিতেই, খলিলদের বাড়ির অপরদিকে। আমি মেয়েটার হাত ধরে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ঘরে ফিরলাম। পাঞ্জাবীটা খুলেই ঘুম।
এক সপ্তাহ পরের একটা সকাল। সেলিম আসলো মেসে, ওর চোখ লাল।
-হিমুভাই, সমাধান কন। আমি খুব বিপদে আছি। এই কয়দিন বোতল বোতল ফেন্সি খাইলাম। তাও রাইতে ঘুম হয় নাই। খালি সেই পরীটা। বুক ধড়ফর করে।
-শোন সেলিম, ঐ মেয়েটা কোন পরী না, মানুষ। তোমার সমস্যা হল তুমি মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেছো।
- কি কন ভাই। মাইয়া এতো সুন্দর হয় নাকি! আর আমার দিকে কোন মাইয়া তাকাইয়া থাকতে যাইব কেন।
-মেয়েটা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে না। মেয়েটা জন্মান্ধ। তোমার ছাদ থেকে প্রতিদিন ঐ মেয়েটার ছাদের দিকে বাতাস বয়। এজন্য মেয়েটা বাতাস অনুভব করে হয়তো ঐ দিকেই মুখ ফিরিয়ে থাকে। মেয়েটা তোমাকে দেখার জন্য তাকায় না।
সেলিমের মুখটা মৃত মানুষদের মতো ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো।
-কি কন ভাই। এতো সুন্দর একটা মাইয়া অন্ধ!
- শুধু অন্ধ না, একদম পুরা "কানা"। নাহলে তো তোমার সাথে প্রেম করিয়ে দিতাম। কিন্তু যত সুন্দরী ই হোক, একটা কানা মেয়েকে তো আর তোমার মতো সেলিমের প্রেমিকা বানান যায় না। হাজার হলেও, এলাকায় তোমার একটা পরিচিতি আছে। পরে মানুষ কি বলবে।
সেলিম খোঁচা খোঁচা দাড়ি চুলকে বলল, "আপনার কথা ঠিক।"
সেলিম দাড়ি চুলকাতে চুলকাতেই চলে গেলো। সেইদিন রাতে আমার প্রচণ্ড জ্বর আসলো, জ্বরের ঘোরে পৃথিবী রঙ্গিন হয়ে গিয়ে দুলতে থাকল। তারপরের কয়েকদিন জ্বরের ঘোরেই পেরিয়ে গেলো। এক সন্ধায় ঘুম ভেঙ্গে গেলো, আমার ঘরে ঘড়ি নেই। আলতার মতো লাল আকাশ দেখে সন্ধ্যা বুঝে নিলাম। আরো দেখলাম আমার হাতে স্যালাইন লাগানো। সেলিম হাতে একটা হালকা নীল রঙের খাম নিয়ে বসে চেয়ারে ঘুমাচ্ছে। তারপর আবার ঘুমিয়ে তলিয়ে যাই। রাতে বেশ কয়েকবার মনে হল কি যেন একটা বাজছে। জোরে জোরে শব্দ আসে।
তারপরদিন সকালে চোখ খুলে দেখি আমি হাসপাতালে। পাশে রুপা বসে আছে। আমাকে চোখ খুলতে দেখে, ওর ঠোঁটটা বুঝি একটু কেঁপে উঠলো। রুপা বলল, -"কেমন লাগছে এখন।"
-ভালো। খুঁজে পেলে কিভাবে?
-পুলিশ তোমাকে নিয়ে এসেছে। আমি সকালে এক বান্ধবীর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম পাশের ওয়ার্ডে, যাওয়ার সময় দেখলাম তোমাকে।
-আমি থানায় গিয়েছিলাম নাকি??
-না, গতকালকে রাতে খুব গোলাগুলি হয়েছে তোমার বাসার পাশে। পুলিশ আর এলাকার সন্ত্রাসীর মধ্যে। একটা গুণ্ডা ক্রসফায়ারে পড়ে মারা গেছে তোমার বাসার পাশে। সেলিম নাকি তোমার বাসায়ও তুমি অসুস্থ থাকা অবস্থায় আসা-যাওয়া করতো। তোমার কোন ক্ষতি করতে চেয়েছিল হয়তো। পুলিশ অন স্পট তদন্ত করতে গিয়ে তোমার বাসায় ঢুকে তোমাকে অসুস্থ দেখে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে।
- গুণ্ডাটার নাম কি সেলিম?
-আমি জানি না।
ভারী চেহারার সুন্দর একজন পুলিশ এসে পড়ল, চোখে সানগ্লাস। এসেই আমাকে কিছু প্রশ্ন করলো, আমি হালকা গলায় উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে একজন নার্স এসে পুলিশের হাতে একটা হালকা নীল রঙের খাম দিয়ে বলল, "স্যার, ডেডবডিটি যার উনি বেঁচে থাকতে উনার চোখ দুটি একজনকে স্বেচ্ছায় দান করে দিয়ে গেছেন। এইযে দেখুন তার ফর্ম।" পুলিশ অফিসার চোখ কুঁচকে সানগ্লাস খুলতে খুলতে বলল, "O my god. একজন ক্রিমিনাল অর্গান ডোনেট করেছে। It's incredible." আমি জোরে কথা বলতে পারছি না। আস্তে করেই বললাম," স্যার, ক্রিমিনালের নাম কি সেলিম?" পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, "হ্যাঁ"
এর পরদিন খুব ভোরে, আলো ফুটছে এমন সময় ঘুম থেকে উঠে দেখি রুপা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছে খুব নিচু গলায়। গানটা শেষ হলে ফিরে চাইলো আমার দিকে। "রুপা, একটা ফোন করবো। তোমার মোবাইলটা দাও।"
আমি খালাকে ফোন করলাম।
-হ্যালো
-ভালো আছো খালা
খালার কণ্ঠ খুব ই উৎফুল্ল।
-তুই কোথায় ছিলি হিমু এতদিন? তোর না ফোন করার কথা ছিল? আচ্ছা যাই হোক, তোকে যে শিক্ষক খুঁজতে বলেছিলাম সেটা আর লাগবে না।
-কেন? মেয়ে কি চোখে দেখতে শুরু করেছে।
-তোর সবকিছুতেই ফাজলামি।
-আচ্ছা আর করবোনা
- কোন একজন মহাত্মা ঐ মেয়েটাকে তার চোখ দুটো দান করে গেছেন! কি ভালো মানুষ!
- তাই নাকি!
- আরে তাহলে বলছি আর কি! আর অবাক ব্যপার কি জানিস? লোকটা একটা অদ্ভুত শর্ত করে গেছেন যে, তার পরিচয় গোপন রাখতে হবে।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ফোন কেটে দিলাম। আমি মনে মনে কৃতজ্ঞতা অনুভব করলাম সেই পুলিশ অফিসারের প্রতি সেলিমের নাম প্রকাশ না করে দেয়ার জন্য, সেলিমের শেষ ইচ্ছাটার মূল্যায়ন করা হয়েছে।
............
............
(ঘণ্টা খানেক পর)
এখন আমি ট্রেনে। জানালার পাশে বসে আছি। মনে হচ্ছে আমি থেমে আছি, সবকিছু পেছনে ছুটে চলছে। ঝিকঝিক ঝিকঝিক শব্দ হচ্ছে। আসলে আমরা সবাই ই নিজ নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, শুধু ছুটে চলে সময়, আমাদেরকে পেছনে ফেলে। আমি চুপচাপ বসে সময়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছি, সময়কে একটা চিঠি পাঠাতে হবে, যে চিঠির কখনো উত্তর আসবে না। চিঠিতে লেখা আছে-
"হে সময়,
তোমরা সেলিমদেরকে এভাবে অন্তরালে গিলে নাও কেন?
ইতি-
আমি হিমু"