আজ আষাঢ় মাসের এক তারিখ। পরিবেশ বেশ শান্ত। শান্ত হবারই কথা। এ মাস যে রহমতের মাস। যদিও আষাঢ়ের প্রথম দিনে এখনো বৃষ্টি নামেনি এই শহরে। কালো মেঘের আনাগোনা দেখা যাচ্ছে আকাশে । হয়তো আচম্বিতে ঝরঝরিয়ে আষাঢ় নামবে ধরায়। আষাঢ় শ্রাবণ মাস আমার খুব প্রিয় কারণ বৃষ্টি যে ভালবাসি। কখনো কখনো অতিবৃষ্টিতে অনেকেই তেতো হয়ে যান কিন্তু আমার কখনো খারাপ লাগে না বৃষ্টি। বৃষ্টির দিনগুলোয় গান শুনতে কবিতা লিখতে বেশ লাগে। গাছের পাতাগুলো কি স্নিগ্ধ সবুজ। ধূলোবালির প্রহর পেরিয়ে পাতাগুলো যেনো প্রাণ ফিরে পায়। বর্ষাকালের গ্রাম আরো সুন্দর লাগে। চারিদিকে থই থই পানি। মাছ ধরার ঝুম পড়ে তখন। বন্যাও দেখা যায় তখন । মেয়েবেলা কলাগাছের ভেলা বানিয়ে চারিদিনই জলের মাঝেই থাকতাম। আহা কি মজার দিনগুলো। শহরে তো আর থই থই পানি নেই। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাট ডুবে যায় ফলে নর্দমার কালো ময়লা পানি মিশে একাকার তখন মন খারাপ হয়ে যায়। কে চায় এমন পানির মাঝে হাঁটতে বা দিন যাপন করতে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের শহরের আজ এই অবস্থা। আর বৃষ্টির দিন এলেই চলে রাস্তা খুঁড়াখুড়ির কাজ।
আষাঢ় মাসের সবচেয়ে সুন্দর ফুল হলো কদম। আমি যখন ব্যাংক কলোনীতে থাকতাম বাসার সামনেই একটা কদম গাছ ছিল । ফুল ফুটা মাত্রই মানুষের ঢল নামতো গাছের তলায়। ছোট ছোট ছেলেরা গাছে উঠে ডাল ভেঙ্গে ফুল ছিঁড়ে আনতো। একটা ফুল পাওয়ার আশায় কত দাঁড়িয়ে থেকেছি গাছের তলায়। কিন্তু পরিচিত মানুষ না থাকায় কারো কাছে চাইতেই পারতাম না। অনেক চেষ্টার পর কয়েকটা ফুল পেয়েছিলাম একদিন বাসায় এনে ফুলগুলির ছবি তুলে রেখেছিলাম। আহ কি শান্তি তখন মনে ছিল। এখন বাসা পরিবর্তন করায় আর কদম ফুলের দেখা পাইনা।
আষাঢ় নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনেক গান কবিতা আর ফটোগ্রাফারদের নান্দনিক হাজার ছবি। রবীন্দ্রনাথের একটা লেখা আছে নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহিরে,
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
আষাঢ়ে ফুলে ফুলে শোভিত থাকে প্রকৃতি। কদম, জারুল কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়া আরো অসংখ্য ফুল ফুটে থাকে আষাঢ়ে। বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো আমায় দান এই গানটি এখন সবার মুখে মুখে থাকবে।
পুরো গানটি...........
বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান,
আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান ।
মেঘের ছায়ায় অন্ধকারে রেখেছি ঢেকে তারে
এই-যে আমার সুরের ক্ষেতের প্রথম সোনার ধান ।।
আজ এনে দিলে, হয়তো দিবে না কাল-
রিক্ত হবে যে তোমার ফুলের ডাল ।
এ গান আমার শ্রাবণে শ্রাবণে তব বিস্মৃতিস্রোতের প্লাবনে
ফিরিয়া ফিরিয়া আসিবে তরণী বাহি তব সম্মান ।।
কদম ফুল ভালবাসেনা এমন মানুষ নেই। সবাই চায় একটা ফুল তার হাতে আসুক। নেটে সার্চ দিলেই দেখা যায় কদম ফুলের প্রতি মানুষের ভালবাসা। কদম ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম Anthocephalus indicus যা কিনা নীপ নামেও পরিচিত। আচ্ছা একটা গান আছে রবী বাবুর ....... এসো নীপ বনে ছায়াবীথি তলে এসো করো স্নান নবধরা জরে। সেই কদম গাছের কথাই তো মনে হচ্ছে। এই ফুলগুলো ভারত, চীন আর বাংলাদেশে বেশী দেখতে পাওয়া যায়। ঢাকায় রমনা পার্ক,বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বিভিন্ন পার্ক ও উদ্যানে কদম ফুলের গাছ আছে আর সে গাছ থেকেই টুকাইরা ফুল এনে রাস্তার ধারে বিক্রি করে।
কদম গাছও কিন্তু অনেক সুন্দর অনেক বড় গাছ । যার অনেক শাখা থাকে পাতাগুলো ইয়া বড় বড় ডিমের মতো, উজ্জ্বল সবুজ, পাতা ঝরে যাওয়ার আগে আরেকটি মিষ্টি কালারে পরিণত হয় ..... আমি প্রায়ই লাল কমলা পাতাগুলো কুঁড়িয়ে নিয়ে আসতাম অথবা হাঁটার সময় মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে হাতে তুলে নিতাম।
কদম গাছ ছায়া দেয়ার জন্য এক নম্বর রোদ্দুরবেলা আশ্রয়স্থান। কদম গাছের অযস্র শাখা যা ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। শীতে গাছের পাতা ঝরে যায় আর বসন্তে কচি পাতা গজায় কদম গাছে। কচিপাতার রং হালকা সবুজ। কদমের গাছে যখন কুঁড়ি আসে তখন শাখায় শাখায় দেখা যায় যেনো ছোট ছোট বল ঝুলে আছে যা সাদা আর হলুদে মেশানো তবে সাদা অংশটাই বেশী দেখা যায়। মাংসল ফুলটিতে অযস্র সরু সরু ফুলের বিকির্ণ বিন্যাস। একটু পূর্ণ ফুলের পাপড়ির মাথায় সাদা সাদা ফোটা। মাঝে মাঝে ফুলগুলি বাদুড় আর কাঠবিড়ালীও খেয়ে ফেলে। ওরাই নাকি কদমের বীজ ছড়ানোর বাহন। তবে একেকটি ফুলকে যেনো সোনার বলের মতই মনে হয়। এত্তগুলা সুন্দর।
কদম গাছের ছাল জ্বরের ঔষধ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাতার রস কৃমিনাশক হয়। ছালা আর পাতা আবার ব্যথানাশক হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। মুখের ঘা হলে পাতার রস উপকারী। কাঠ দিয়ে তৈরী হয় নরম বাক্সপেটরা।
কদম ফুল ফুটুক আর নাই ফুটুক আজ কিন্তু আষাঢ় মাস। কদম ফুলের ঘ্রানে মাতাল হবে শহরবাসি...... গ্রামবাসি। বষা হলো কবিদের ঋতু কারণ বর্ষাকে নিয়ে কদম ফুল নিয়ে কবিরা রচনা করে যান/যাবেন কবিতা ছড়া আর গান, গল্প উপন্যাস।
কদম ফুলের একটা মিষ্টি ঘ্রাণ আছে...... খুব ভাল লাগা ঘ্রাণ। মাতাল করা ঘ্রাণ। গ্রামে কদম গাছ আমি কমই দেখেছি। যদিও এ গাছগুলো গ্রামে অনাদরেই বড় হতে শুনেছি।
বর্ষা শেষ হওয়ার আগেই কদম ফুলের মৌসুম শেষ হয়ে যায়....... রয়ে যায় টুকরো স্মৃতি। প্রিয়রা প্রিয়দের কদম ফুল উপহার দেন। প্রতি বছরই এ মৌসুমে কিশোর কিশোরীদের চোখে মুখে উল্লাস ছড়িয়ে থাকে কদম গাছকে ঘিরে।
তবে বর্ষার আগমনী বার্তায় মন নিমেষেই ছুটে যায় গ্রামে। হারিয়ে যায় মন কলাগাছের ভেলায় ভাসানো দিনে। বৃষ্টিতে ভেজা আর হয়ে উঠেনা । আর হয়ে উঠেনা পুকুরে ডুব দিয়ে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ শুনা। কাগজের নৌকাও ভাসানো হয় না আর মধ্য বেলায়।
সবই মধুর স্মৃতি। ভালবাসার স্মৃতি যা মনে হলেই আনন্দ লাগে । মনে করে সুখে হাসি দু:খে কাঁদি। আষাঢ়ের আগমনে শুভেচ্ছা জানাই। প্রত্যাশা তবে মনে বর্ষার জলে ধুয়ে যাক যত অশুদ্ধতা মনের কালিমা। সুখে থাকুন প্রতিটি প্রাণী মনে আনন্দ নিয়ে।
কদম ফুলের শুভ্চেছা সবাইকে ভাল থাকুন সুন্দর থাকুন
কদম ফুলের ছবিগুলো আমার উঠানো আর এক দুইটা নেট কালেকটেড
বাকি ছবিগুলো নেট সংগ্রহ।
কিছু তথ্য বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে নিয়েছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:০৮