জন্ম-হুয়া হুয়া ছাড়া আর কি!, হয় পেট ব্যথা, কান ব্যথা, অন্যের ইচ্ছেয় খাওয়া দাওয়া। ঘুম, হাগা মুতা। কেউ হেসে দিলে হেসে ফেলা। ঘরে খুশির বন্যা বইয়ে দেয়া, চোখের মণি, বুকের ধন, ভবিষ্যতের লাঠি, পরনির্ভরশীল, গায়ে মিষ্টি গন্ধ।
শিশু-বায়না, আহ্লাদি আহ্লাদি ভাব, না পেলে কান্না, ইচ্ছে স্বাধীন দোঁড়ানো, যা ইচ্ছে তাই করে যাওয়া, ঘর এলোমেলো, কোলে, কাঁধে, পিঠে, আদর ছিনিয়ে নেয়া, যা ইচ্ছে ভেঙ্গে ফেললেও বকা না খাওয়া। নতুন কিছু দেখে অবাক দৃষ্টি, অনুকরণ, দেখে শেখার চেষ্টা, নতুন ভাবভঙ্গিতে অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা। আরো কত কি...
কিশোর-মনের ভিতর স্বপ্নের বাসা, স্বপ্ন ছুঁই ছুঁই, আবেগে টইটুম্বুর, ঘাওড়ামি, বিটলামি, অযস্র বকা খাওয়া, এমন করোনা তুমি বড় হইছ, চুপিসারে নিষিদ্ধ জিনিসে আকৃষ্টতা। নিয়ম ভাঙ্গা, ইচ্ছেস্বাধীন চলার মানসিকতা,এডভেঞ্চারের চেষ্টা, বয়োসন্ধি, খিটখিটে মেজাজ, অভিমানি মন।
তরুন-আমিই দুনিয়ার রাজা/রাণী, পড়াশুনায় অবহেলা, বিড়ি চুরুটে আকৃষ্ট, প্রেম ছেড়ে প্রেম, সিজনাল প্রেমের ভাইরাস মনে বাসা, সুন্দর মানুষের প্রতি দুর্বলতা। বেটাগিরি দেখানোর মনমানসিকতা।
যুবক- প্রেমের তুফান তুঙ্গে অথবা চুপষে, চাকুরি, বিষন্নতা ছ্যাকা, স্বপ্ন মুখ থুবড়ে, ভবিষ্যত চিন্তা, বিয়ে, বউ/জামাই হন্যে হয়ে খুঁজা, বয়স সময় চলে যাওয়ার চিন্তা। স্যুট টাই, অফিস, বস, ঘুস, প্রমোশন, তেল মারা, স্বার্থপরতা, গম্ভির ভাব। চোখে তৃষ্ণা কেউ আপন হোক, ভালবাসুক,... স্বপ্ন স্বপ্নই।
মধ্যবয়স- বউ/জামাইয়ের খুঁনসুটি, ঝগড়া, সাপে-নেউলে, ভালবাসা, ছাড়লে বাঁচি, থাকলে বাঁচি, বাচ্চা, বাচ্চার ভবিষ্যত, বাচ্চার স্কুল,কলেজ। তৃষ্ণার্থ চোখ, আরামের জল খোঁজা... ভবিষ্যতের চিন্তা, কোথায় হবে ঠাঁই, বাসস্থান, স্বপ্ন ছোঁয়ার হাতছানি। অতিরিক্ত ব্যস্ততা। সবকিছুতেই অশান্তি, রেগে যাওয়া, উদাসীনতা, বিষন্নতার দুয়ারে মাথা ঠোকা ইত্যাদি ইত্যাদি।
অন্তিমের যাত্রী-নাতি/নাতনি নিয়ে সময় কাটানো, নামায রোজায় মন দেয়া, নাতি/নাতনিই যেনো পৃথিবী আমার, পুতের বউয়ের গড়ড় গড়ড় অপমান, থালা বাসন আলাদা, নাতি/নাতনিদের মিশতে না দেয়ার কষ্ট, দৃষ্টি ঝাপসা, খুকখুক কাশি, পরিবারের নতুন সদস্যদের ঘৃণার চোখে দেখা বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান, লাঠি, বাতের ব্যথা, গিড়ায় গিড়ায় ব্যথা, ক্যালসিয়ামবিহীন সময়, পাওয়ারী মোটা ফ্রেমের চশমা, অল্পতেই খুশি হয়ে যাওয়া, দাঁতবিহীন মিষ্টি হাসি, ছেলের/মেয়ের হাত ধরে ডাক্তারের কাছে যাওয়া, ঔষধ, অপারেশন, হাসপাতালের বেডে নিথর দেহ, গৃহবন্দি, চলতে ফিরতে কষ্ট, পা না চলা, চামড়া ঝুলে পড়া, ঠাণ্ডা দেহ, ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যাওয়া অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, পরনির্ভরশীলতা, গল্পগুজবে মত্ত থাকার ইচ্ছা, অতিরিক্ত অবহেলা পাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, বেশি কথা বলা, চোখের কোণ সিক্ত, উদাসিনতা, রিক্ততা, ভালবাসা পাওয়ার আখাঙখা, ঝিমিয়ে পড়া সসময়, যৌবনের সকল অহংকার চূর্ণ করে অবশেষে অন্তিমের যাত্রী হয়ে অপেক্ষার প্রহর গোনা...... কবে হবে সেই যাত্রা!!