প্রখ্যাত লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কে না চিনি...কিন্তু তার মৃত্যুর সাথে যে একটি আধিভৌতিক ঘটনা জড়িত আছে তা কিন্তু আমরা খুব কম মানুষই জানি ।
লেখক নির্জনে বসবাস করতে পছন্দ করতেন । তাই বিহারের ঘাটশিলার বাড়িটিকে বাকি জীবন কাটাবার জন্য বেঁছে নিয়েছিলেন । বাড়িটির বৈশিষ্ট্য ছিল - এর চারপাশে বেশ ঘন বনাঞ্চল ছিল আর এলাকাটি প্রায় জন-মানবশূন্য ছিল । স্থুলকায় আক্রান্ত হবার কারণে ডাক্তার লেখককে প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে দুবার হাটার পরামর্শ দিয়েছিলেন । তাই তিনি প্রতিদিন বনাঞ্চলের পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার করে হাঁটতেন । এমনই একদিন সন্ধ্যার সময় হাঁটা শেষ করে বাড়ি ফেরার পথে তিনি দেখতে পান কয়েকজন লোক একটি মৃতদেহকে কাঁধে করে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে । তিনি এগিয়ে গিয়ে তাদের প্রশ্ন করেন - কে মারা গিয়েছেন এবং তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ...... তারা কোন কথা না বলে মৃতদেহটিকে কাঁধ থেকে নামান এবং তার মুখের ওপরের কাপড়টি সরিয়ে দেখান । লেখক প্রচণ্ড অবাক হয়ে দেখতে পান মৃতদেহটি আর কারো নয় বরং তার নিজের । এটা দেখার পর তিনি প্রচণ্ড ভয় পান এবং দৌড়ে বাড়ির সামনে চলে আসেন । বাড়ির সামনে এসে তিনি চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে পরে যান । প্রচণ্ড ভয়ের কারণে তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হন এবং সেই কালাজ্বরেই মাত্র ৫৬ বছর বয়সে এই মহান লেখকের মৃত্যু হয় ।
একজন নিকটস্থ লোকের প্রশ্নের জবাবে তিনি একবার বলেছিলেন - তিনি ভৌতিক সাহিত্য পছন্দ করেন না, কারণ ভূত বা অতিপ্রাকৃত বিষয়ে তার কোন বিশ্বাস বা কৌতুহল কিছুই নেই , বরং তিনি এসব প্রচলিত গালগল্প ও অন্ধবিশ্বাসকে ঘৃণা করেন ।
যে লেখক আধিভৌতিক ঘটনাকে আজীবন ঘৃণা করে গেছেন তার এমন মৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক । আমরা কেউই চাইনা মৃত্যুর আগে আমাদের সাথে এমন কিছু ঘটুক যার জন্য আমাদের সারা জীবনের পালিত বিশ্বাসকে পুনরায় বিবেচনা করতে বসতে হয় ।
উৎসঃ ঘটনাটি আমি কলকাতায় লেখকের একজন আত্মীয়ের কাছ থেকে শুনেছি । ইনি আমার কাছে উৎস হিসাবে অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য । তার মতে - লেখকের পরিবারের অনুরোধে এই ঘটনাটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয়নি । এই ব্যাপারে কোন বইতে সরাসরি কিছু লিখা আছে কিনা আমি জানিনা - আমি অবশ্য এই পর্যন্ত পাইনি । তবে হুমায়ূন আহমেদ তার আত্মজীবনীতে একটি অতিপ্রাকৃত অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এই ঘটনাটিকে অল্প কথায় উল্লেখ করেছিলেন ।
** আমি এমন ঘটনা গ্রাম বাংলায় আরও শুনেছি । ঘটনাটির একটি লৌকিক ব্যাখ্যা অবশ্য আমার কাছে আছে । পরে অন্য কোনদিন তা শেয়ার করা যাবে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৭ রাত ৯:০০