(বিয়ের পর ৪)
বিয়ের প্রায় তিন মাস পর, অফিস থেকে একদিন বাসায় ফি্রে রেজাঃ “১০ দিন পর মালয়েশিয়া যাচ্ছি, অফিস থেকে পাঠাচ্ছে ট্রেনিং এ, আগামী কাল লাঞ্চ টাইমে আমার অফিসের সামনে এসো, আমার কিছু শপিং করতে হবে ।“ পরদিন রেজার সাথে শপিং এ গিয়ে অবাক নীরা । আন্ডার গার্মেন্টস থেকে শুরু করে টাই পর্যন্ত কিনল রেজা । “বিয়ের জন্যও মনে হয় এত শপিং রেজা করেনি, প্লেনের ভিতর কি আন্ডার গার্মেন্টস চেক করে নাকি?” দৃশ্যটা কল্পনা করে অনেক কষ্টে হাসি চাপলো নীরা । মা’কে ফোনে রেজার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা বলতেই মা বলে উঠলঃ “তোকে নেবেনা সাথে? মানুষ তো বিয়ের পর বাইরে কোথাও গেলে বউকে সাথেই নিয়ে যাই, নতুন বিয়েতে বাবার জন্মেও তো কাউকে একা যেতে দেখিনি।“ নীরাঃ “অফিস থেকে পাঠাচ্ছে তো” । মাঃ “অফিস থেকে পাঠাক, তারপর ও তো মানুষ বউ নিয়েই যায়, কেন ডোরাকে ওর বর নিয়ে গেল না সিঙ্গাপুর? সাজিদ (বর আপার বর) কি নিজের টাকা খরচ করে বেরাতে যাবে ভেবেছিস, সেও তো অফিসের কোন ফাক ফোকর বের করে বউ নিয়ে গেছে বেড়াতে । শোন, কেউ কিন্তু কম না, টাকা পয়সার বেলায়, সবাই সেয়ানা। কিন্তু রেজার ব্যপারটা তো বুঝলাম না। এই বুড়া বয়সে বিয়ে করে বউকে না নিয়ে ফুর্তি করে বেড়াচ্ছে?” নীরা এসব কথায় তেমন পাত্তা দিল না কারন, প্রথমতঃ রেজাকে অফিস থেকে পাঠাচ্ছে, আর দ্বিতীয়তঃ প্লেনে উঠতে ভীষণ ভয় তার । তার থেকে ভাল রেজা একাই ফুর্তি করে আসুক (মায়ের ভাষায় ফুর্তি) । কয়েকদিনের মধ্যেই একই ধরনের পরিস্থিতি হল যখন নীরা তার বান্ধবীকে বলল রেজার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা । সেও তাকে খোটা দিয়ে বললঃ “ভাইয়া একা যায় কেন, ঘটনা কি? হানিমুন তো মালয়েশিয়া তে করে আসলেই পারতা।“ নীরা অবশ্য একটা ব্যপার আসলে ও খেয়াল করেছে । বিয়ের পর পরই যখন ওর দেবর ননদ, মুনিয়া, এমনকি রেজার কলিগ রা রেজাকে জিজ্ঞেস করেছে “হানিমুন যাচ্ছেন কবে?” অথবা “কোথাই” । রেজা নানাভাবে সেই উত্তর এড়িয়ে গেছে । নীরা ও কখন এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেনি । কিন্তু সবার এমন মন্তব্য শুনে সে রেজাকে বলেই বসলঃ “সবাই তো বলছে, আমরা হানিমুন মালয়েশিয়াতেই করতে পারি।“
রেজা (বিরক্ত হয়ে, কিছুটা রাগ রাগ গলায়)ঃ আমরা টা কে?
নীরাঃ মা আর আমার এক বান্ধবী ।
রেজাঃ আমি তো বেড়াতে যাচ্ছি না, কাজে যাচ্ছি । আমি থাকব সারাদিন ট্রেনিং এ, আর তুমি হোটেলে বসে বসে কি করবা? আর বিয়ের সময় কত খরচ হয়েছে জানো? টাকা থাকলে তোমার বলার আগেই হানিমুন এ যেতাম । আর শুন, সারা দুনিয়ার মানুষকে বলে বেড়ানোর কোন দরকার নেই আমি বিদেশ যাচ্ছি । বিদেশ যাওয়া আমার কাছে এমন কোন বড় ব্যাপার না । আমেরিকাতে আমি ছিলাম ১৬ বছর, মালয়েশিয়াতেও এবার দিয়ে ৬ বার । এইসব ছোট খাটো ব্যাপার । আর তোমার মা কি সবখানে প্যাচ লাগানোর জন্য বসে থাকে?”
নীরা অবাক , লজ্জিত এবং রাগতঃ । ছোটলোকের মতো হানিমুনের কথা রেজাকে না বল্লেও হত । আর এই বেরোমান্টিক বুড়া ভামের সাথে কোথাও গিয়েই বা কি হবে? কোন কথা তো বলাই যাবে না, তার উপর আবার কথা শুনাবে ।
রেজা এয়ারপোর্টে যাওয়ার আগে নীরাকে বলে গেল, সে যেন যেই ৫ দিন রেজা মালয়েশিয়া থাকবে সেই সময় নীরার মায়ের বাড়িতে থাকে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৪৪