(বিয়ের পর ৩)
রেজা অফিসে যাওয়া শুরু করার পর থেকে নীরার খুব একা একা লাগে বাসায় থাকতে । শাশুড়ির সেদিনের ব্যাবহারের পর থেকে নীরা ওর মায়ের বাসায় যেতে চাইলেই রেজা বিরক্ত হয় । নীরা সারাদিন অপেক্ষা করে কখন রেজা বাসায় ফিরবে । কিন্তু বাসায় ঢোকার পরের ১ ঘন্টা রেজার সাথে কথা বলা যায়না । তার নাকি ১ ঘন্টা লাগে ওয়াইন্ড ডাউন করার জন্য (এই সব নতুন নতুন টার্ম নীরা রেজার কাছ থেকে শিখেছে )। আবার আজকাল নীরা যখন কোন কথা বলতে যায়, রেজা সব কিছুতেই তাকে হেয় করে কথা বলে এটাও নীরার খুব খারাপ লাগে । নীরার রুচি নাকি খুব খারাপ। যে সব কামিজ সে পরে সেগুলা নাকি গ্রামের মানুষের মতো (রেজার ভাষায় গ্রামের বাড়ির মানুষের মতো) । রেজা তাকে বলেই দিয়েছে যে নীরার উচিৎ শুধু আড়ং থেকে জামা কেনা, কারন আমেরিকা থেকে যারা আসে তারা শুধু আড়ং এর জামায় পরে । নীরা ভাবে আড়ং থেকে জামা কিনতে যে টাকা লাগে, সেটা কি রেজার মোটা মাথায় ঢুকে না? রেজা নীরাকে যে ৫,০০০ টাকা হাত খরচ বাবদ দেয়, কোথাও গেলে সেটা থেকেই সব খরচ করতে হয় রেজার । যেমন কিছুদিন আগে একটা মেলায় গিয়েছিল ওরা। সেখানে গিয়ে রেজার ২ টা শার্ট পছন্দ হল এবং শার্ট কেনার সময় দেখা গেল রেজা মানিব্যাগ আনতে ভুলে গেছে, তাই নীরার কাছ থেকে ৩,০০০ টাকা নিয়ে শার্টের দাম দিতে হল রেজা কে । সি এন জি, বা রিকশা তে কোথাও গেলে দেখা যায়, রেজার কাছে কখনই ভাংতি থাকে না, ফলে নীরার কাছ থেকেই রিকশা বা সি এন জির ভাড়া দিতে হয় । এসব টাকা নেয়ার পর এসব টাকা ফেরত দিতে ও ভুলে যায় রেজা, আর ছোটলোকি হবে ভেবে নীরা ও লজ্জায় চায়না । সে কারনে এই কয় মাসে রেজা নীরাকে যে টাকা দিয়েছে তার প্রায় পুরোটায় রেজাই খরচ করেছে । আড়ং থেকে জামা কেনার টাকা পাবে কোথাই নীরা? সেদিন অনেক আহ্লাদ করে রেজার জন্য ডিমের হালুয়া বানিয়েছিল আর মনে মনে ভেবেছিল, রেজা নিশ্চয় অনেক পছন্দ করবে ওর রান্না। রেজা খেয়ে বলেছে “একদম গ্রামের বাড়ির মতো” । নীরার চোখে পানি চলে এসেছিল শুনে ।
এর মাঝে একদিন যখন নীরার শ্বশুর ওদের বাসায় এসেছিল, চা দিতে যাওয়ার সময় নীরা শুনেছে, রেজা তার বাবার কাছে তার নামে বদনাম করছিল, “ কেমন মেয়েকে বিয়ে করালেন, হাত ধরলে লজ্জা পায়, রান্না পারেনা, বাপ মা মনে হয় পড়া লেখা ছাড়া কিছু শিখায়নি। কিছু না শিখায় বিয়ে দিয়ে দিয়েছে মেয়েকে, আর সেই মেয়ে পরসে আমার ঘাড়ে” । শ্বশুর আবার নীরার পক্ষ নিয়ে বলছিল “ এখন ছোট তো, কিছুদিন পর ঠিক হয়ে যাবে । তুমি ভাল মেয়ে পাইসো বাবু (রেজার বাবা রেজাকে বাবু বলে ডাকে, রেজার মতো বুড়া ভামকে বাবু বলার মানে কি?” নীরা অবশ্য কিছু দোষ ও করেছে , যেমন ফ্রীজের সব্জির ডালা খোলা রেখেই কথা বলতে বলতে ফ্রিজের দরজা বন্ধ করায়, ফ্রিজের ডালায় ফাটল ধরিয়ে ফেলেছে, বেড কভার উঠাতে গিয়ে বিছানার সাথে টান লাগিয়ে বেড কভারের সেলাই খুলে ফেলেছে । আর এসব করে নীরা যখন ভীষণ অনুতপ্ত, তখন রেজা বলেছে “ হায় হায় এই মেয়ে দেখি, আমার বাড়ি ঘর সব কিছু ধ্বংস করে দিল”।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৮:৫৬