somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীরার বিয়ে

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১১তম অংশের পর)
(বিয়ের পর ২)

নীরার বিয়ের ঠিক সাতদিন পর নীরার সব থেকে প্রিয় মামা মারা গেলেন । এই মামাই একমাত্র মানুষ, যাকে নানা বাড়ির সব মানুষের মধ্যে নীরা পছন্দ করত । নীরার বিয়ের কিছুদিন আগে থেকেই উনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা নিয়ে । নীরারা উনাকে যখন দেখতে গিয়েছিল, তখন উনি আধা চেতন, আধা অচেতন । ঘোরের মধ্যে থেকে উনি কি যেন আবোল তাবোল বলে যাচ্ছিলেন, যেটাকে প্রলাপ ও বলা যাই । বাড়িতে ফিরে মা হাসতে হাসতে বলেছিলঃ “ এই পুরান পাগলা কে আবার নতুন করে হাসপাতালে নেয়ার কি আছে?” নীরা মাঝে মাঝে ভাবে, মা কি কাউকেই ভালবাসেনা অথবা ভালবাসেনি কোনোদিন? নিজের ভাইকে নিয়েও তাই এমন মন্তব্য ?
মামা মারা যাওয়ার খবর পাওয়ার পর, রেজা সাহেবকে বলার সাথে সাথে উনি ও মামা কে দেখতে গেল ওর সাথে নানা বাড়িতে। ওই বাড়িতে বসেই ছোট বেলার কতো কথা মনে পড়ে গেল নীরার । এই মামার নাম মাইকেল (জানি পাঠক এই নাম পড়ে খুব অবাক হবে । কিন্তু নীরার নানা বাড়ি এক আজব যায়গা, যেখানে সবাই এক একজন “ কি হনুরে ধরনের” (মায়ের ভাষা) । নানা বাড়ির প্রতিটি মানুষ বিশাল নাক উচু মানুষ (যদিও তাদের এই উচু নাক শুধু মাত্র তারা নিজেরাই দেখতে পারে, অন্য আর কেউ পারে না। সেই গল্প পরে অন্য কোন গল্পে বলা যাবে । তো সমাজের সাধারন মানুষের থেকে নিজেদের আলাদা করার প্রয়াসেই তারা ছেলে মেয়েদের অন্য সমাজের নাম রাখতে পছন্দ করে, যদিও শুধু নীরার নামটাই কিভাবে যেন বাংলা! যাই হোক মুল গল্পে ফিরে যাই।) এই মামা একদিন সব ভাগ্নে ভাগ্নীর হাত দেখছিলেন । নীরার হাত দেখতে গিয়ে উনি হাসতে হাসতে বলেছিলেন “ মারে তোর জীবনের সব কিছুই তোকে নিজেকে করতে হবে । বাবা মা জামাই কারও কাছেই কিছু পাবি নারে মা ।“ সবাই এই কথা শুনে হেসেছিল সেদিন ।
মাইকেল মামার বউয়ের নামে মিলি । মিলি মামীকে দেখে উনার এই বাড়িতে বউ সাজে ঢোকার কথা টা মনে পড়ল নীরার । মাত্র সাত বছর আগে নতুন জীবন, নতুন সংসারের স্বপ্ন নিয়ে এই বাড়িতে ঢোকার সময় কি উনি এই রকম একটা দিনের কথা একবার ও ভেবেছিলেন? জীবন এত অদ্ভুত কেন? আমাদের জন্ম কি প্রতিটা মুহূর্তে একবার করে হয়? সাত বছর আগের সেদিনের বউ হয়ে জন্ম নেওয়া মেয়েটা আজকে বিধবা হিসেবে জন্ম নিল ।
নীরার এইসব চিন্তাই ছেদ পড়ল রেজা সাহেবের ডাকে ।
রেজাঃ শুনো, আম্মা ফোন করেছে, এখনি যেতে হবে ।
নীরাঃ কি হয়েছে?
রেজাঃ জানিনা, কিন্তু ব্যাপারটা জরুরি ।
................................................................................................................................................................................................
শ্বশুর বাড়িতে ঢুকেই নীরা বুঝল, পরিবেশ খুবই গম্ভির । শ্বশুরের মুখ থম্থমে ।
শ্বশুরঃ যাও তোমার আম্মার সাথে দেখা করে আসো ।
শাশুড়ি আম্মা তার বেড রুমে বিছানায় বসা । নীরার পিছনে পিছনে রেজা ওই ঘরে ঢুকল । ওই ঘরে আগে থেকেই মুনিয়ার মা (নীরার দেবরের বউ মুনিয়া) বসে ছিল ।
নীরাঃ ভাল আছেন আম্মা?
শাশুড়ি আম্মা সে কথার জবাব না দিয়ে, নীরাকে উপেক্ষা করে, রেজার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়েঃ ও বউ পেয়ে তুই সব ভুলে গেছিস তাই না? এখন তুই আমার বাড়িতে না এসে, শ্বশুর বাড়িতে পড়ে থাকিস ! বাপ মারে এখন আর চিনিস না তাই না? বউ পেয়ে গেসিস এখন আর বাপ মা লাগবে কেন? বাপ মার তো কোন সম্মান নাই । বউ নিয়েই সারা রাত দিন পড়ে থাক ।
ঘটনার আকস্মিকতাই সবাই হতভম্ব ।
রেজাঃ (ঝাজাল গলায়) আমি কবে সারাদিন শ্বশুর বাড়ি পড়ে থাকলাম? আজকে শুধু গেলাম ওর নানী বাড়িতে, কারন ওর মামা মারা গেছে । একটা মানুষ মারা গেলে দেখতে যাবনা?
এই বলেই রেজা হাত ধরে টান দিয়ে নীরাকে অন্য ঘরে নিয়ে আসলো ।
রেজাঃ এখনি বাসায় চলো ।
শাশুড়ি তখনও চেচিয়ে যাচ্ছে । শ্বশুর ওদের পথ রোধ করেঃ তোর বউ প্রতিদিন এই বাসাই আসে না কেন? হ্যা? তুই অরে বলবি প্রতিদিন এই বাসাই আসতে । রোজ রোজ নিজের মায়ের বাড়ি যেতে পারে আর এখানে আসতে পারে না, তাই না?
রেজাঃ এখানে এইসব শুনার জন্য ওকে এই বাড়িতে পাঠাব ? আমি ওকে বলেছি প্রতিদিন এখানে আসার দরকার নেই । দূরে থাকাটাই ভাল । ঝামেলা কম । (কথা সত্য, রেজাই নীরাকে বলেছে এই কথা । )
নীরা হতবাক হয়ে পুরো ঘটনা গুলোকে নাটকের মতো দেখতে থাকে ।
রেজাঃ আব্বা, পথ ছাড়েন । আমাদের যেতে দেন ।
নীরাকে নিয়ে বাসাই চলে আসে রেজা । বাসায় ঢোকার পর, রেজাঃ আহ, চলতো ছাদে যাই । আম্মা মেজাজটাই খারাপ করে দিল ।
নীরা রেজার হিরো গিরিতে কিছুটা পুলকিত । পাগল বুড়ির (মা নীরার শাশুড়ি কে আগেই পাগল বুড়ি বলেছিল । আর মা যে মাঝে মাঝে একদম ঠিক কথাই বলে, নীরা আজকে সেটা স্বীকার করল মনে মনে ) হাত থেকে রেজা সাহেব তাকে রক্ষা করাই, সে রেজার প্রতি কিছুটা মুগ্ধ ও কৃতজ্ঞ ।
ছাদ টা অসম্ভব সুন্দর । মাঝে মাঝে বসার জায়গা বানানো । আবার কে যেন এখানে বাগান ও করেছে। আকাশে বিশাল চাঁদ, পূর্ণিমা মনে হয় । নীরা রেজার কাধে মাথা রেখে চাঁদ দেখে । জীবন টা কেন যেন খুব সুন্দর মনে হয়।

(চলবে............................................................................................................)
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৪:৪০
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×