(১০ম অংশের পর)
(বিয়ের পর ১)
সকাল বেলা নীরার ঘুম ভাঙল রেজা সাহেবের হাতের আঘাতে । ঘুমের মধ্যে হাত সরাতে গিয়ে নীরার মাথার উপর হাত ফেলে দিয়েছে রেজা । নীরা “উহঃ” করে ওঠাতে রেজা সাহেব ঘুম ঘুম চোখে ভাবলেশ হীন মুখ করে বললেনঃ “ওহ সরি। আমি ক্লামসি ।“ নীরা অবাক এবং বিরক্ত । সে যে উনার পাশে শুয়ে আছে, সেটা নাহয় উনি ভুলে যেতে পারে, কিন্তু এতো জোরে আঘাত করার পর ও উনি বিকারহীন সেটা দেখেই নীরা অবাক । নীরা বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ড্রয়িং রুমে বসল ।
এই বাসাটা কিন্তু নীরার খুব পছন্দ হয়েছে । এখন তেমন কোন ফার্নিচার নেই, শুধু বেড রুমের বিছানা, ফ্রিজ, ড্রয়িং রুমের তিন সীটের একটা সোফা কাম বেড (এটাকে ড্রয়িং রুম সোফা বলা যায় না । রেজা সাহেব বলেছে এটা কে নাকি বারান্দায় রাখার জন্য কেনা হয়েছে) আর আরেক বেড রুমের জন্য আরেকটা ছোট বিছানা । নীরার কাছে এটা ভেবে খুব অদ্ভুত লাগলো যে, ফ্রিজ ছাড়া বাকি সব ফার্নিচারই বিছানা । (রেজা সাহেব বিয়ের ৭/৮ মাস আগে থেকেই এই বাসায় একা আছে । একা থাকার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অদ্ভুত ) । তারপর ও এই বাসাটা নীরার খুব পছন্দ হয়েছে । আর বারান্দা গুলো চমৎকার । নীরা মনে মনে ভাবে এই বাসাটাকে ও কিভাবে সাজাবে ।
রান্নার কোন ব্যবস্থা এখন ও এই বাসায় নেই । রান্নাঘরে শুধু ২টা মগ আর একটা কফি মেকার । দুপুর বারোটার দিকে রেজা সাহেব ঘুম থেকে উঠে কফি হাতে ড্রয়িং রুমে এসে নীরার পাশে বসলো ।
রেজাঃ তোমাকে একটা খুশীর খবর দেই । আমার কিন্তু কোন লোণ নেই ।
নীরাঃ লোণ কেন থাকবে?
রেজাঃ অনেকেই তো লোণ নিয়ে বিয়ে করে । আরো কত লোণ থাকে মানুষের ! আমার কোন লোণ নেই।
নীরাঃ আমার তো লোণ শুনলেই ভয় লাগে । আমি কোন দিন লোণ নিতে চাই না । আচ্ছা, এই বাড়িটা কি আপনি কিনেছেন?
রেজাঃ নাহ লীজ নিয়েছি ২ বছরের জন্য । কিন্তু খুব শিগগীর একটা গাড়ি কিনে ফেলব ।
নীরাঃ যেই গাড়িতে করে এই বাসায় আসলাম, ওইটা কার গাড়ি?
রেজাঃ ঐটা তো কবিরের (রেজার বোনের জামাই) ।
নীরার খুব হাসি পেল, কবিরের সম্পর্কে মায়ের মন্তব্য (লুঙ্গি ফুঙ্গির মডেল) মনে করে ।অনেক কষ্টে হাসি চাপল ও ।
রেজাঃ আমি মাসে ১৫০০০ টাকা আব্বা আম্মাকে দেই । উনাদের হাত খরচ। তোমাকে হাত খরচের জন্য প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা দিবো।
নীরাঃ আচ্ছা ।
রেজাঃ আর শোনো, একটা কথা বলে রাখি । হাসব্যান্ড কে কোনোদিন কোন ব্যাপারে সন্দেহ করবে না ।
নীরাঃ সন্দেহ করব কেন?
রেজাঃ নাহ মানে অনেক ওয়াইফ আছে যারা জামাই কে সন্দেহ করে । কেন দেরি হল বাসায় আসতে, কেন ফোন ধরনি, কোন মেয়ের সাথে এতক্ষণ কথা বলছ, এই সব বলে ঝামেলা করে । যখন ওয়াইফরা সন্দেহ করে, তখনি কিন্তু জামাইরা চিটিং করে, বুঝলে? কোনোদিন আমাকে কোন ব্যাপারে সন্দেহ করবে না ।
নীরাঃ আমি শুধু শুধু কেন সন্দেহ করব?
রেজাঃ গুড । আগে থেকেই বলে রাখলাম ।
দুপুরে শ্বশুর বাড়িতে খেতে যাওয়ার সময় রাস্তায় রেজা সাহেব নীরার হাত ধরল । নীরা ত লজ্জায় লাল । সাথে কেমন একটা অপরাধ বোধ, একটা ছেলে ওর হাত ধরেছে! সারা জীবন শুনেছে নাঙ্গ দের (মায়ের ভাষা) কাছে যাওয়া খুবই পাপের, খুবই অপরাধের, সেই থেকেই মনে হয় এই অপরাধ বোধ । নীরার কেমন যেন বমি বমি লাগে । এটা কি টেনশন?
রাতে বাসায় আসার পর, রেজা সাহেব বললঃ এখানে আমার পাশে একটু শুয়ে থাকো, আমরা গল্প করি ।
নীরা রেজা সাহেবের পাশে গিয়ে বসলো । ঠিক তখনি রেজা সাহেবের একটা কল আসলো । রেজা সাহেব কল কেটে দিল ।
নীরাঃ কি হল? ফোন কেটে দিলেন কেন?
রেজাঃ আরে এই নম্বর থেকে একটা মেয়ে কল দিয়ে শুধু কথা বলতে চায় । বিরক্ত করে ছাড়ল । আর এখন তো আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে, আপনি করে বল কেন? তুমি করে বললেই তো পার ।
নীরা চুপ । মনে মনে ভাবে, এই আঙ্কল টাইপ লোক টাকে কি ভাবে তুমি করে বলবে ।
আবার রেজা সাহেবের কল আসে ।
রেজা (হাসি মুখে) ফোনেঃ হ্যালো ।
ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে কেউ কিছু বলে ।
রেজাঃ শুনেন এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে । যখন তখন ফোন দেন কেন?
আবার ওপাশ থেকে মহিলা কণ্ঠে কেউ কিছু বলে ।
রেজাঃ আমি আমার ওয়াইফের সাথে আছি । ফোন রাখছি ।
ফোন রেখে রেজা সাহেব বলেঃ অনেক রাত হয়েছে, এই মহিলা মেজাজটাই খারাপ করে দিল ।
নীরাঃ কি বলে মহিলা?
রেজাঃ আরে গল্প করতে চায় । বাদ দাও তো । চল ঘুমাতে যাই ।
ওরা ঘুমাতে গেল
চলবে...........................................................................
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:৩৮