৮ম অংশের পরঃ
(বিয়ের প্রথম সকাল ১)
সকাল বেলা নীরার ঘুম ভাঙল বড় আপার ফোনে । এই সেল ফোন টা নীরার নামেই কেনা হয়েছিলো । ইউনিভার্সিটি তে যাওয়ার সময় ফোন টা থাকতো ওর সাথে কিন্তু ফোনে রিচারজ করার অনুমতি ছিল না।“নীরার কখনো দরকার ও মনে হয়নি । কাকে কল করবে ও? বাবা মা দরকার হলে ওকে কল করত । শেষ কিছুদিন থেকে ফোন টা মায়ের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে ঢুকানো ছিল । বিয়ের দিন নীরা মাকে বলেছিল “ ফোন টা ড্রয়ারে রাখা আছে। “ (মা যেন না মনে করে নীরা এই বাড়ির কিছু চুরি করে নিয়ে গেছে) । একথা শুনে কি মনে করে বাবা বলেছিল “ফোন টা তুমি নিয়ে যাও।“
সকাল বেলা ফোন করেই বর আপা বললঃ “কিরে রেজা কি হাত ধরেছিল নাকি রাতে? আমি তো ভাবলাম একা বাড়িতে সারা রাত রেজা তোকে তাড়া করে বেরাইসে ধরার জন্য, আর তুই দউরাই বেরাইসিস পালানোর জন্য। তুই আবার চিৎকার চেচামেচি করে মানুষ জড় করিস নিত? হাহাহা”
নীরাঃ না আপা, হাত ধরেনি ।
আপাঃ তুই হাত ধরিস নি?
নীরাঃ আমি হাত ধরব কেন?
আপাঃ আচ্ছা বুঝসি। হাত তাত ধরলে আমাকে জানাবি, মা আমাকে বলেছে তোকে জিজ্ঞাসা করতে । ছেলে আবার নপুংসক কিনা জানা দরকার।
নীরা মনে মনে ভাবে ছেলে নপুংশক হলে কি বাবা মা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে? ছেলে কি কেমন এটা এখন জানা কি আসলেই মায়ের দরকার নীরাকে উদ্ধার করার জন্য? বরং নীরার ধারনা মা এমন একটা খবর পেলে সবাইকে ডেকে ডেকে জানাবে । মায়ের মধ্যে কিছু পৈছাশিক উল্লাসের ব্যাপার আছে ।মানুষের দুঃখে মা কেন যেন খুশী হয় । মায়ের পাগলের গুষ্টির মধ্যে সব থেকে বড় পাগল (নীরার মতে) যেই মামা (পাভেল মামা) সে নাকি প্রতিদিন রাতে বউ পেটায় ( ভয়ংকর রাগের কারনে এই মামাকে সবাই ভয় করে। অন্যের জন্য কাজ করা মানে সম্মান হানি ভেবে এই উনি কোনদিন চাকরি করেনি । সারা জীবন বাবার রেখে যাওয়া টাকাতেই জীবন চালিয়েছেন আর জীবনের সব না পারার গ্লানি মিটাতে চেয়েছেন বউকে মারধর করে। নীরা মাঝে মাঝে ভাবে মামী এই বদ লোকটার সাথে থাকে কেন? বড় আপাকে জিজ্ঞাসা করায় বড় আপা বলেছিল, “মামীর যাওয়ার কোন জায়গা থাকলে অবশ্যই যেত ।“ এই মামীটার জন্য খুব খারাপ লাগে নীরার । কেন মানুষের জীবন এত কঠিন হয়? )
তবে মায়ের ভাষ্যমতেঃ “চোরের মেয়েরে আমাদের বাড়ির বউ করা হয়েছে, এটাই তো ওর সাত জন্মের ভাগ্য । এখন কি ওকে মাথায় করে রাখতে হবে? ওই রকম বেড়াল মুখো মেয়েদের জীবন এমনই হয়।“(পাভেল মামার কেন এই চোরের মেয়ের ( মায়ের ভাষ্যমতে) সাথে বিয়ে হল, সেটাও এক বিরাট ইতিহাস, পাঠকদের সেই গল্প ও না হয় আরেকদিন শুনাব)।
গোসল করে আসার পর নীরা লুকিয়ে রেজা সাহেবের দিকে কয়েকবার তাকাল । রেজা সাহেব কি ভাবছে বউ বদলায় গেছে? কিন্তু রেজা সাহেবের মুখে তেমন একটা ভাবান্তর দেখা যাচ্ছে না, মনে হয় খেয়াল করেনি । একটু পরে নীরার দেবর ননদেরা সকালের নাস্তা আর সাথে একটা হারমোনিয়াম নিয়ে আসল । খাওয়া দাওয়ার পর নাকি এখানে গান বাজনা হবে ।
একটু পরেই নীরা বুঝল, এটা একটি একক সংগীত সকাল, যেখানের একমাত্র শিল্পী ছোট ননদ পাপড়ি । তার সেই তাল লয় ছাড়া একের পর এক গানের সময় নীরার কেন যেন শুধু মায়ের কথা মনে পরছে । মা এখানে থাকলে কি বলত এখন? নীরার কোন কারন ছাড়াই মায়ের জন্য মন কেমন করা শুরু হল ।
....................................................................................চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৮