ষষ্ট অংশের পর
(বিয়ের দিন ২)
পার্লারে সাজুগুজুর সময় নীরার কেমন যেন অনুভূতি হীন লাগে নিজেকে। চারপাশে যা কিছু হচ্ছে সব কিছু যেন অন্য কারো জীবন। ও যেন অনেক দূর থেকে দেখছে এসব। রাজীবের জন্য আবার মনটা কেমন করে। পাগল টা কি করছে কে জানে! রাজীবের কথা বড় আপাকে বলেছিল নীরা বিয়ের ২/৩ দিন আগে। শুনে বড় আপা বলেছে “ সব ছেলেগুলাই হারামজাদা, তাই একটা হারামজাদাকে বিয়ে করলেই হলো। কিন্তু হারামজাদাদের মধ্যে যেই হারামজাদার টাকা পয়সা বেশী, তাকে বিয়ে করাটাই ভাল, কম পক্ষে একটু ভালো থাকতে পারবি।“ আপা হয়তো ঠিক ই বলেছে। বিয়ের পরে সব ছেলেরাই নাকি বদলে যাই। অনলাইনের রাজীব আর সত্যি কারের রাজীবের মধধে যদি অনেক পার্থক্য থাকে, তখন কি করবে ও? মায়ের বাড়িতে ও তো আর ফিরে আসা যাবে না।
কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়ার গাড়িটা কিন্তু সুন্দর সাজিয়েছে। এমন সাজানো একটা গাড়িতে উঠে নিজেকে একটু রুপকথার রাজকন্যা টাইপ মনে হয় নীরার। আচ্ছা রাজীব যদি সিনেমার নায়কদের মত ওর বিয়েতে এসে ওকে নিয়ে যেত, তাহলে কেমন হতো? আবার হাসি পায় নীরার। ওই গাধাটা যদি সত্যি সত্যি আসতো, তাহলে মা যে এমন একটা সিন বানাত, দেখার মত হত বেপারটা। মায়ের এক ফুয়ে উড়ে যেত রাজীব। মা এত ভয়ঙ্কর হল কিভাবে?
বিয়ে করাটা যে খুব একটা মন্দ না, সেটা কমেউনিটি সেন্টারে ঢোকার সময় মনে হল নীরার। সব ক্যামেরাম্যান, সব অতীথিরা ওর জন্যই অপেক্ষা করে ছিল যেন। এখানে বলে রাখা ভাল নীরার বাবা নীরার বিয়েতে যতটা সম্ভব খরচ কমানোর চেষ্টাই কোন ভিডিওর ব্যবস্তা রাখেননি। এখানে ওদের পক্ষ থেকে শুধু একজন স্টিল ক্যামেরাম্যান এসেছে, আর রেজা সাহেবের বাড়ি থেকে একজন স্টিল আর একজন ভিডিও ক্যামেরাম্যান এসেছে। সকাল বেলা আঁকত এর সময় রেজা সাহেবের বাবা সবার সামনেই তার ক্যামেরাম্যানদেরকে বলছিলেন, গহনার ছবি যেন ঠিক মত তোলা হয়, পরে যেন কেউ অস্বীকার না করতে পারে যে কত টাকার গহনা দেওয়া হয়েছে। নীরা খুব অবাক হয়েছে মায়ের চুপ থাকা দেখে। ওরা চলে যাওয়ার পর অবশ্য মা বলেছে “দুই পয়সার গয়না দিয়ে আবার কত কথা। ফকিরের বাচ্চাদের সাথে মেয়ের বিয়ে দেওয়াটায় ভুল হয়েছে।“ নীরার আমেরিকা থেকে আসা দেবরের বউকে দেখে মা বলেছে “এই বান্দরনীকে ধরল কোথা থেকে? আমাদের কাজের বেটি হামিদার মা ও তো এই আমেরিকা থেকে আসা পেত্নির থেকে দেখতে ভাল। আবার উনি আম্রিকান বাংলা শুনায়!“ “মা অবশ্য এই কথাতা মিথ্যে বলেনি” মনে মনে বলে নীরা।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৮