(পঞ্চম অংশের পর)
বিয়ের দিনঃ (১)
সকাল বেলা থেকেই নী রার মনটা কেমন করছে । যেই মানুষ গুলার কাছে সে সব সময় মেয়ের ছাই ছিল তাদের জন্য মনটা কেমন হু হু করে যাচ্ছে । কম্পিউটার, পড়ার টেবিল , জানালার পাশের রাস্তার ধারের গাছ গুলো সব কিছু কে ছেড়ে একটু পরে চলে যেতে হবে , এই সব ভাবতে ভাবতেই নীরা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা । ডুকরে কেদে ওঠে। ( মা বলে বিয়ের পরে মেয়েরা অন্য বাড়ির মানুষ হয়ে যায়, তখন বাবা মায়ের বাড়িতে তারা নাকি পর )আচ্ছা মানুষের মৃত্যু কতবার হয়? এই যে এই বাড়ি ছেড়ে , এই বাড়ির সব মানুষদেরকে ছেড়ে একটু পর সে অন্য বাড়ির মানুষ হয়ে যাবে, এটা কি এক ধরনের মৃত্যু না?
এর মধ্যেই মায়ের চিৎকার চেচামেচি শুরু । “ এই নীরা তাড়াতাড়ি মুখ টুক ধুয়ে একটা শাড়ী পরে নে । এখনি তো কুত্তার বাচ্চা গুলা সব বিয়ে করার জন্য হাজির হবেন । এই বুড়া বয়সে বিয়ে করতেসে, এখন কি উনার আর বিয়ের জন্য তর সইবে ?” নীরা বুঝতে পারেনা, মা কেন রেজা সাহেবের বাড়ির লোক জনের উপর হঠা ৎ খেপে উঠল । তারাই তো নীরার মা বাবাকে কন্যা দায় গ্রস্থতার মহা বিপদ থেকে রক্ষা করছে । আর এই বুড়ার সাথে তো তারাই নীরাকে বিয়ে দিচ্ছে !
কিছু ক্ষণের মধ্যেই রেজা সাহেবের সাথে নীরার বিয়ে হয়ে গেল । বিয়ের অনুষ্ঠান রাতে । কবুল বলার সময় নাকি রেজা সাহেব ভাল মত বাংলা বলতে পারছিলো না এবং সে যে বিদেশে অনেকদিন থেকে এসেছে বলেই বাংলা পারেনা, সেটা নাকি উনার বাবা বারবার সবাইকে শুনিয়েছে । সবাই চলে যাওয়ার পরে মায়ের গজ গজ শুরু হয় “ উহহহ বাংলা বলতে পারেনা, ঢঙ কত ! আসছে ফরেনিয়ার । মনে হয় পাগল বুড়ীর পেটে আরেক পাগলের জাত জন্মাইসে ।এই সব আলগা পীরিতের কথা শুনলেই গায়ে একদম আগুন ধরে যায় আমার । আমাদের ছোট বেলার এক মাষ্টার ছিল, হাস্নার (নীরার খালা) বিয়ে ভাঙ্গার জন্য বিয়ের দিন সবাইকে বলেছিল : উহু উহু এরা সব পাগলের গুষ্টি । কিরে নীরা,তোর কপালেও কি পাগলের গুষ্টি জুটল নাকি?” মা হাসে । নীরার ও হাসি পায় । মায়ের ফ্যামিলি তে যে আসলেই পাগলামির ধাচ আছে, আর ওই মাস্টার যে আসলে ও কিছু বাড়িয়ে বলেনি হাস্না খালার বিয়ের সময়, সেটা বোধ হয় মা ছাড়া আশে পাশের সবাই জানে । ( হাস্না খালার বিয়ের ওই ঘটনা টা অন্য একদিন বলা যাবে পাঠক দের, আজকে না হয় নীরাকে নিয়েই কথা বলি) ।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০