(৩) ২য় অংশের পর:
নীরার এঙ্গেজমেন্ট:
মায়ের ধাক্কা ধাক্কিতে ঘুম ভাঙ্গে সকালে নীরার । “ তারাতারি ওঠ । ছেলের মা আংটি পরাতে আসবে তোকে ।“ সদ্য ঘুম ভাঙ্গা চোখে নীরা বুঝতে পারেনা, কি হচ্ছে । মা আবার ঠেলা দেন । তাড়া তাড়ি যা এই শাড়ীটা পরে আয় ।
ঠিক আগের বছর বিয়ে হয়েছে মেঝো আপার । মেঝো আপার বয়স ৩০ পার হলেও বিয়ে হচ্ছিলো না । তাই এই নিয়ে মায়ের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার দশা । “ বুড়ী ধাড়ির বিয়ে আর কবে হবে? আয়বুডো হয়ে বাডিতে বসে আছে । কয়েকদিন পর মানুষ ত আমাদের গায়ে থুথু দেবে ।“(আচ্ছা মেঝো আপা এত সুন্দর হওয়ার পরেও তার বিয়ে কেন হচ্ছিলো না? অতি বড় সুন্দরী না পায় বর? আর সে যদি বিয়ে না করে বাডিতে বসে থাকে তাতে মানুষ আমাদের গায়ে থুথুই বা দিতে যাবে কেন? ) । তো সেই মেঝ আপার যখন বিয়ে হলো তখন বেশ ঘটা করেই বিয়ে দিতে হলো । পাত্র পক্ষ থেকে যা যা বলা হলো, সব কিছু মেনে নেওয়া হলো । মেঝ ছাইয়ের (মায়ের ভাষ্য মতে মেয়েরা হল মেয়ের ছাই) জন্য ও অনেক বড়ো রেস্টুরেন্ট ভাড়া করে এঙ্গেজমেন্ট অনুষ্ঠান করা হয়েছিল । তাই নীরার কাছে এঙ্গেজমেন্ত মানে রেস্টুরেন্ট ভারা করে বিশাল অনুস্থান করা, এমন সকাল বেলা, ওঠ ছুরি তোর বিয়ে লেগেছে টাইপ না । মেঝ আপার বিয়েটা তিক লো না বলেই কি নীরার বিয়ের বেলায় এমন বেহাল দশা? এমনকি বাবা কালকে ঘোষণা দিয়েছেন, এই বিয়েতে কোনো বাহুল্য চলবে না । তাই হয় স্টিল ছবি অথবা ভিডিও এই দুইটার একটা নিরাকে বেছে নিতে হবে । নিরা স্টিল ছবি বেছে নিয়েছে । কারন, অনেক বছর পরে, রেজা সাহেব কে বলা যাবে, “ দেখেন রেজা সাহেব আমাদের বিয়ের ছবি” । ভিডিও চালিয়ে আর কয়বার ই বা দেখা হবে । শাড়ি পরতে পরতে এসব চিন্তাগুলো মাথায় আসে আবার ।
বড় আপাকেও খবর দেওয়া হয়েছে । সে ছাড়া সাজাবে কে? পারলারের খরচ কে দিবে মেয়ের ছাইয়ের জন্য? তাও আবার তিন নাম্বার মেয়ের ছাই । আবার হাসি পায় নীরার ।
ঠিক দুপুর ১২ টায় রেজা সাহেবের মা বাবা আসলেন, সাথে তার বেয়াই বিয়াইন । মা চোখ মটকে বললেন” দেখলি ঠিক খাওয়ার সময় ই চলে এসেছে । ছোট লোকের গুষ্টি ।“ একটু পরেই সেই ছোট লোকের গুষ্টির সামনে নীরাকে নিয়ে যাওয়া হল । রেজা সাহেবের মা বললেন, “ রান্না পারো?” নীরা কিছু বলার আগেই ওর মা ই জবাব দিল “ সব রান্না পারে ।“ রেজা সাহেবের মা সাথে সাথে “ ও রেজার বাপ, যাকে জিজ্ঞেস করসি সে উত্তর না দিয়ে অন্য কেউ উত্তর দেয় কেন? এই মেয়ে তুমি বল, রান্না পারো কিছু?” মায়ের রক্ত চক্ষু উপেক্ষা করে নীরা জবাব দিল “ নুডলস রান্না করতে পারি।“ এবার আবার নীরার মা বলে বসলো “ নুডলস পারা মানেই সব পারা”। রেজা সাহেবের মাঃ “ থামেন । মেয়ের মার বেশি কথা বলা ঠিক না ।“ মা কোনমতে ওই সময়ে নিজেকে সামলে নিলেন । রেজা সাহেবের মা এবার নীরা কে কাছে ডাকলেন। “ আমি আংটি পরানোর পরে আমাকে সালাম করবা, বুঝলে?” । আংটি পরানোর পর সালাম করার সময়, নীরার হাত থেকে আংটি খুলে মেঝেতে পড়ে গেল । আংটিটা ওর আঙুলের তুলনায় অনেক বড় । কোথায় নিরা যেন পড়েছিল, “ যে তোমার আংটি চেনে না, সে তোমাকে চিনবে কি করে?”
খাবার পরিবেশ নের আগে্ নীরারা তিন বোন মিলে যখন টেবিল সাজাচ্ছিল, তখন মা এসে বললেন, “ পাগল বুড়ির কথা শুনলি? ইচ্ছা হচ্ছিলো তখনি একটা লাথি লাগায় বুড়ির মুখে । মেয়ের বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর বুড়িকে একদিন ইচ্ছা মতো শাটা নি দিব ।“
খাবার খাওয়ার সময় পাগল বুড়ি আবার ঝামেলা বাধাল । কোন খাবারই সে মুখে দিতে পারছে না । সব খাবারেই নাকি লবন বেশী ।
রাতে নীরা আবার ইয়াহু মেসেঞ্জারে বসল । আগামি কাল ওর গায়ে হলুদ , তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া দরকার । কিন্তু রাজিবের সাথে কয়েক মিনিট কথা না বলে ঘুমানো যায় নাকি? কিন্তু আজকে অনলাইনে রাজিব নেই । এমন তো হওয়ার কথা না । .......................................চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪