(2)
(প্রথম অংশের পর)
নীরা –“ হ্যালো । কে বলছেন?”
“আমি রেজা । চিন্তে পেরেছ? “
নীরা – “জী “
রেজা- “ কেমন আছ?”
নীরা –“ ভালো আছি । আপনি কেমন আছেন?”
রেজা- “কয়দিন পরে তো আমাদের বিয়ে, এখন আপনি করে বললে তো ভালো শোনায় না”
নীরা – “জী”
রেজা – “হাহা । শুনো আমি একটা বারি নিয়েছি । শুধু আমাদের জন্য । আম্মা আব্বার বাসার কাছেই । “
নীরা – “ওহ আচ্ছা ।“
রেজা- “ কি করছিলে?”
নীরা –“ কিছুনা, বসে ছিলাম”
রেজা- “তুমি কি আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করতে চাও?”
নীরা – “জি না”
রেজা- “হা হা । ঠিক আছে । তাহলে ফোন রাখছি ।“
নীরা – “বাই”
রেজা- “বাই”
ফোন রাখার সাথে সাথে মা –“ কি বল্লরে? “
নীরা –“তেমন কিছুনা”
মা-“ কি বলল ঠিক করে বল”
নীরা –“ বলল একটা বাড়ি নিয়েছে । উনার আব্বা আম্মার বাসার কাছেই ।“
মা- “কি!!! দেখলি ছেলের কত টাকা পয়সা?বিয়ের আগেই বাড়ি কিনে ফেলল, তাও আবার গুলশানের মত জায়গায়!!! বিদেশে থাকা ছেলে,মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি তে কাজ করে, এই ছেলের কি কম টাকা নাকি? দেখবি বিয়ের পর শুধু দেশে বিদেশেই ঘুরে বেড়াচ্ছিস । দাড়া তোর বাপকে বলি ।“
নীরা – “ মা দাড়াও । উনি শুধু বলেছে বারি নিয়েছে ।বাড়ি ভাড়া নিয়েছে না কিনেছে এটা তো বলেনি ।“
মা- “ তুই এক টু বেশি বুঝিস । কেউ বাড়ি ভাড়া নিলে আবার ফোনে সেটা জানায় নাকি? তোর বাপ মা কে কি গাধা ভাবিস? যেন তেন ছেলেকে আমরা পছন্দ করেছি? তাড়া তাড়ি তোকে বিয়ে দিয়ে বিদায় করতে পারলেই শান্তি, না হলে কবে কোন ছেলের সাথে অঘটন ঘটাই বসে থাকবি কে জানে?”
মায়ের এই সব কথা গুলা নীরা আসলেও বুঝেনা । যে কোনদিন কোন প্রেম করেনি, ছেলেদের কে দেখলেই যার গলা শুকিয়ে আসে, সে কি ভাবে কোন ছেলের সাথে অঘটন ঘটাবে?
হটাৎ নীরা ‘র মনে হয়, দিন গুলা খুব দ্রুত যাচ্ছে । যেই বাড়িতে সে জন্ম নিয়েছে সেই বাড়ির মানুষ গুলা তাকে চিনে না, অথবা সে তাদেরকে এখনো চিনেনি । মা বাবা তাকে বিদায় করার জন্য যেন অস্থির হয়ে উঠেছে । এমন না যে নীরা রা গরিব । ওর বাবা বেশ ভালোই টাকা পয়সা জমিয়েছেন জীবনে । ওদেরকে উচ্চবিত্ত না বল্লেও উচ্চ মধধবিত্ত বলা যায় । তবুও সব কিছুতে তার জন্য অবহেলা । কেন যেন মনে হয় তাকে বাবা মা জন্ম দিয়েছে ছোট ভাই টাকে পাওয়ার আশায় ।এই কথাটা মনে হলে নীরা’র হাসি পায় “ আচ্ছা বাবা মা এতো বোকা কেন? তার জন্ম তো বাড়িতেই হয়েছিল, তাহলে যখন তারা দেখল একটা মেয়ের ছাই ( মেয়ের ছাই এই শব্দটা ও মায়ের আবিষ্কৃত) জন্ম নিয়েছে তখন তারা সেই ছাই টাকে পুড়িয়ে আসল ছাই ই কেন বানিয়ে দিলেন না?” । আবার দু:খ ও লাগে এই ভেবে যে এই দেশের সমাজ ব্যাবস্থা কি এখন ও একটুও পাল্টা ইনি? এখন ও বাড়ির তিন নাম্বার মেয়েটাকে সবার গলার কাটাই মনে হয়? “ চোখের বালি” একটা প্রবাদ আছে না? আজকাল প্রবাদ প্রবচন গুলা কি ভাবে যেন জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া যাচ্ছে ।
নীরা আবার ভাবে সত্যি কি এই আঙ্কল টাইপ লোকটাই ওর জামাই হবে? যে লোকটাকে ওর কোন প্রশ্ন করার নেই? যার সাথে কথা বলতে হয় মায়ের ইচ্ছা মত? সেই লোক টার সাথে কিভাবে ও ঢাকার অলিগলিতে রিকশায় হাত ধরে ঘুরবে? ঘুরতে যাওয়ার আগে কি মাকে ফোন করে বলতে হবে, “ মা, আমি কি রেজা সাহেবকে আমাকে রিকশা নিয়ে ঘুরতে যেতে বলতে পারি ?” নীরা’র আবার হাসি পায় । ও আসলেও জানে না এই রেজা সাহেবের সাথে সে কি নিয়ে গল্প করবে ।
মায়ের ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ে নীরা র । খাবার ঘরে ঢুকে দেখে মা –বাবা, বড় আপা আর মেঝ আপা বসে আছে খাবার টেবিল এ । বাবা এম্নিতে হাসেন কম । কিন্তু আজকে তার মুখ হাসি হাসি ( নিরা ভাবে এটা কি কন্না দায়গ্রস্থতা থেকে মুক্তির হাসি?) । “শোন ডোরা, নিরার ভাগ্য ত রাজ রানী ভাগ্য । বিয়ের আগেই জামাই ওর জন্য নাকি গুলশানের মত জায়গায় বিশাল বাড়ি কিনে বসে আছে । “ নীরা জানে এটা মা বড় আপাকে শোনানোর জন্যই ইচ্ছে করে বল্লেন । সাথে বাবাকে নিয়ে বসেছেন যেন তার দল ভারি থাকে । বড় আপার শ্বশুরের একটা বাড়ি আছে বনানী, তাই সেটাকে ছোট করার জন্যই মায়ের এমন কথা । কেন যেন মা সারাজীবন ভাই বোনদের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি করতে পারলেই খুশি হন ।নীরা এতা আগেও খেয়াল করেছে । বড় আপার মুখে একটু কাস্ঠ হাসি দেখে নীরা ভাব লো একবার বলে যে ,আসলেই কিনেছে না ভাড়া নিয়েছে সেটা এখন ও পরিস্কার না, মা বারিয়ে বলছে । কিন্তু বাবার সামনে এই কথা বলাটা কেমন হবে ভেবে নীরা চুপ করেই থাকে ।
রাতে নীরা নিজের পড়ার টেবিল এ বসে । এই পড়ার টেবিলে তার একটা কম্পিউটার আছে , ওর ছোট ভাই এর নতুন কম্পিউটার আসার পরে ওর পুরান কম্পিউটারটা নীরা কে দেওয়া হয়েছে । বড় আপার পর এই বাড়িতে যদি কাউকে ওর সত্যি কারের আপন মনে হয়, সেটা এই প্রাণহীন যন্ত্রটা । কম্পিউটারের উইন্ডো টা সত্যি যেন এই বড় পৃথিবীটার একটা জানালা ওর কাছে । নীরা অপেক্ষা করতে থাকে কখন রাত ১২ তা বাজবে , কারন তখন তার ইন্টারনেট পাকাজ টা চালু হবে । এই রাতের বেলার ৩০ মিনিটের ইন্টারনেট চালু করার জন্য নিরা ইউনিভার্সিটি টে দুপুরে না খেয়ে থাকে । দুপুরের লাঞ্চ এর টাকা জমিয়েই ইন্টারনেট কার্ড কিনে সে । কারন বাবা মা মেয়েদের ইন্টারনেট ব্যাবহার পছন্দ করেনা, মায়ের ভাষ্য মতে, “ মেয়েরা বদমাইশি করার জন্য ই ইন্টারনেট ব্যাবহার করে ।“
ইয়াহু মেসেঞ্জারে ঢোকার সাথে সাথে রাজিবের মেসেজ “ কি খবর পাগলী ?” হ্যাঁ, রাজিব হল সেই ছেলে যার সাথে নীরার প্রেম প্রেম ভাব । এটাকে প্রেম বলা যায় না, কারন ওরা একে অন্যকে কখনো দেখেনি সামনা সামনি, শুধু ইয়াহু মেসেঞ্জারেই কথা হয়েছে । রাজিবকে বুঝতে পারেনা নীরা, মাঝে মাঝে মনে হয় রাজিব ওকে ভালবাসে, মাঝে মাঝে কেমন যেন পাত্তা ও দেয়না । কিন্তু তারপরেও কেন এই ছেলেটার জন্য একটা মায়া মায়া লাগে । রাজিব ওকে নিজের ছবি দেখিয়েছে মেসেঞ্জারে । নীরা মায়ের ভয়ে ছবি পর্যন্ত দেখাইনি রাজিবকে ।
রাজিবঃ পাগলী কয়েকদিন থেকে শুধু সারাদিন তোমার কথায় মনে হয় ।
নিরাঃ হাহা । তাই নাকি? কি মনে হয়? পাগলি তোমাকে পিটান দিচ্ছে?
রাজিবঃ হাহা । আরে না। তুমি দিবা আমাকে পিটান ? তাইলেই হইসে । পিঁপড়া আসে হাতির সাথে যুদ্ধ করতে!!!!!! এমনি এমনি তোমাকে পাগ লি বলি?
নিরাঃ আমি পাগলী? তাহলে তুমি একটা গরু । গরু গরু গরু । হাহা ।
রাজিবঃ ওই শুনোনা যা বলছিলাম । সারাদিন রাত তোমার কথা শুধু মনে হয় । আমার বোনকে বলসি তোমার কথা , তোমার নাম জানতে চায়, কিন্তু তুমি তো তোমার সত্যি নামটাও আমাকে বলো নাই । এত ভিতু কেন তুমি? এই শুন, তুমি আমার বউ হবা? আমার পাগ লি বউ?
নীরা: আমার আগামি শুক্রবার বিয়ে ।
রাজিবঃ ধুর, ফাজলামি করোনা তো । আমি সিরিয়াসলি বলছি ।
নীরা: সত্যি বলছি । ছেলেটা কেমন যেন আঙ্কল আঙ্কল ভাব । আমার থেকে ১১ বছরের বড় ।
রাজিবঃ ৩৫ বছরের বুড়ার সাথে বিয়ে করবা? তোমার কি মাথা খারাপ?
নীরা: হুম
রাজিবঃ আমি গেলাম । ধুর কিছু ভাল লাগে না ।
নীরা: রাজিবকে দাড়াও বলার আগেই, রাজিব অফ লাইন হয়ে গেল । নীরার রাজিবের জন্য খুব খারাপ লাগতে থাকে । কিন্তু ও আসলেও জানে না, এখন ওর কি করা উচিৎ । এই রাজিব ছেলেটাকে কেন ও এত পছন্দ করে তাও জানে না । কেন যেন মনে হয় রাজিব সেই ছেলে যার সাথে বৃষ্টিতে ভেজা যায়, পূর্ণিমার রাতে এক কাপ কফি হাতে চাঁদ দেখতে দেখতে সারা জীবন পার করা যায় । কিন্তু রাজিব ও কি তাই ভাবে ওকে নিয়ে? নীরা জানে না । আর এসব কথা রাজিবকে জিজ্ঞেস ও করা যায় না । হয়ত পাগলী পাগলী বলে হেসেই উড়িয়ে দিবে কথা গুলা । এই সব হাবি জাবি চিন্তা করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ে নীরা।........................................চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪