(১) নীরা ‘র বিয়ের আগে:
“ছেলে তোকে একটু পরে ফোন দিবে । ভালো করে কথা বলবি, বুঝলি?” মায়ের এমন গদ গদ গলার কথা শুনে নীরা চমকে উঠল । এমনিতে ইউনিভার্সিটি র কোন ছেলে পড়াশুনা বিষয়ক ফোন দিলেই মায়ের মেজাজ দেখানো শুরু হয় । সাথে চলে আবোল তাবোল গালাগালি । যেমন – “ উনার নাঙ্গরা উনার জন্য সব পাগল হয়ে থাকেন । সারাদিন ইউনিভার্সিটি তে ক্যাঁতরা কেত রি (ক্যাঁতরা কেত রি এই ওয়ার্ড টা মা কোথা থেকে পেয়েছে সেটা নিয়ে নীরা অনেকদিন চিন্তা করেছে । কারন এই ওয়ার্ড টা মা ছাড়া আর কারো কাছে সে কোনোদিন শোনেনি । আচ্ছা এই ওয়ার্ড টার আসল মানে টাই বা কি, সেটাও সে জানে না) করে মন ভরেনা । বাড়িতে ঢোকার সাথে সাথে আবার ফোন ও দেওয়া লাগে “ । ইত্যাদি ইত্যাদি । সেই মা আজকে যখন একটা ছেলের ফোন দেওয়া নিয়ে এমন আহ্লাদী গলাই কথা বলছে, তখন নীরা র চমকে ওঠাই স্বাভাবিক । একটু দ্বিধান্বিত গলায় সে বললঃ “কোন ছেলে?” এবার মা তার আসল রুপে ফিরে আসলেন । ঝাঝালো গলায় বললেন, “ কোন ছেলে মানে? কয়জন তোকে ফোন দিবে বলে রেখেছে? আরে যেই ছেলের সাথে তোর সামনের শুক্রবার বিয়ে সেই ছেলে তোকে একটু পর ফোন দিবে । আজ বাদে কাল বিয়ে, আর এখন উনার মাথার মধ্যে দুনিয়ার সব ছেড়ারা ঘুরে বেরায় । যা এখনি চোখে কাজল দিয়ে চুল ভাল করে বেধে আয় , ছেলে কল দিল বলে।“ গালাগালি পার্ট টা নীরা গায়ে লাগাল না । কিন্তু সাজ গোঁজ করে ছেলের সাথে ফোনে কথা বলার মানে তার কাছে কিছুতেই বোধগম্য হলোনা । ছেলের কি কোন সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আছে নাকি যে ফোনের মধ্যে থেকে ওর চেহারা দেখে ফেলবে? মায়ের আজব আজব সব কথায় নীরা হতভম্ব হয়ে যায় । কিন্তু মায়ের কথার বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করার সাহস তার কোনদিন ছিলনা, আর আজকেও নেয় । তাই সুবোধ বালিকার মত চোখে কাজল দিয়ে চুল বেধে ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে ।
এই ফাকে নীরার পরিচই দিয়ে নেওয়া যাক । নীরার বয়স ঠিক তেইশ বছর ছয় দিন । একটা পাব লিক ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্রী সে । সারা জীবন বই খাতা নিয়েই থেকেছে । তাই এই বয়সে ও সত্যিকারের প্রেম করা হয়ে উঠেনি তার । প্রেম করার ইচ্ছে যে তার কোনদিন হয়নি, তা না;(কখনো বৃষ্টি হলে অথবা প্রেমের কোন গান শুনলে বা সিনেমা দেখলে, অথবা চুপ চাপ কোন দুপুরে বুকের মধ্যে কেমন যেন করে ওঠে । কেমন যেন উথাল পাথাল ভাব । ) কিন্তু মায়ের রক্তচক্ষুর ভয় আর সাথে পরাশুনার চাপে সেই সপ্ন শুধু সপ্নই থেকে গেছে । এই বয়সেও ছেলেদের দিকে তাকাতে অথবা তাদের সাথে কথা বলতে গেলে নীরার গলা কাপে, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এখানে পাঠকদের একটা গোপন কথা বলে রাখি । নীরা ‘র একটা গোপন প্রেম আছে । এটা ঠিক প্রেম না, আবার না প্রেম ও না। এই ঘটনা টা একটু পরে বলছি । আগামি শুক্রবার যেই ছেলের সাথে নীরা ‘র বিয়ে, সেই ছেলেকে নীরা শুধু একদিন দেখেছে । বাবা মা এই পাত্র একজন ঘটকের কাছ থেকে পেলেও, পরে জানা গেছে এই ছেলের বাবা, নীরা ‘র বাবার বাল্যকালের বন্ধু । তাই দুই পরিবার (নীরা ও সেই ছেলে সহ) একদিন এক রেস্টুরেন্ট এ দেখা করতে গিয়েছিল, আসল উদ্দেশ্য নীরাকে এই পাত্র পক্ষের কাছে দেখানো । ছেলেটাকে ও ভাল করে দেখেওনি । যতটুকু দেখেছে তাতে তার কাছে ওই ছেলে টাকে কেমন যেন বেমামান ই মনে হয়েছে । ছেলেটা বেটে ও মোটা । ছেলের বয়স ও নীরা ‘র থেকে ১১ বছর বেশি । প্রেমের সিনেমা অথবা গল্পের বই গুলোতে , যেমন নায়ক সে দেখে / পড়ে এসেছে , তাদের সাথে এর কোন মিল নেই । নীরা আহামরি সুন্দরি না । কিন্তু এই ছেলেটাকে নিজের হবু স্বামী হিসেবে ভাবতে তার একটু হাসিই পেয়েছিল । (এখানে হয়তো পাঠকরা নীরার চিন্তাকে অপরিপক্ক ভাবছেন । এখানে বলে রাখি, নীরা বয়সের দিক থেকে ২৩ বছরের তরুণী হলেও, জীবনের অভিজ্ঞতার দিক থেকে এখনো তাকে তের বছরের কিশোরী বললে ভুল হবে না ।) কিন্তু বাবা মা যেহেতু পছন্দ করেছেন, সেখানে নীরা ‘র মতামতের আর কি বা গুরুত্ব আছে, এটাই তার ভাগ্য, আর এটাকে মেনে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় ও তার কাছে খোলা নেই, এরকমই ভেবেছে সে । এখন চলেন আবার নীরার ফোনের জন্য অপেক্ষার কথায় ফিরে যাই ।
নীরা ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । ছেলেটার চেহারা মনে করার চেষ্টা করে । না ভালো মতো মনে নেই ।মোটা, বেটে আর ফরসা , এটুকুই মনে আছে । কেমন একটা আঙ্কল আঙ্কল ভাব । এই আঙ্কল লোক টা একটু পরে তাকে ফোন করবে, কি কথা বলা যায় এই আঙ্কল লোক টার সাথে? “কেমন আছেন আপনি আঙ্কল?” এটা বললে কেমন হয়? নিজের মনেই হেসে ওঠে সে । একটু লজ্জা লজ্জা ও লাগে । আচ্ছা এই লোক টা কি ওর সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে? অথবা মাঝ রাতে বারান্দায় বসে চা খেতে খেতে চাঁদ দেখবে? হঠা ৎ কোনদিন রিক্সা নিয়ে সারাদিন ঢাকার অলি গলিতে ঘুরে বেড়াবে? আবার ফিক করে নিজের মনেই হেসে ওঠে সে । ক্রিং ক্রিং করে টেলিফোন বেজে ওঠে । ফোন বেজে ওঠার সাথে সাথে নীরা ফোন রিসিভ করার আগেই পাশের ঘর থেকে মা ছুটে এসে ওর পাশের সোফাই বসে মন দিয়ে খবরের কাগজ পড়া শুরু করে দিলেন । নীরা জানে মা এই ছেলের সাথে কি কথা হয় সেটা শোনার জন্যই এসেছেন । যেন কোন উল্টা পাল্টা কথা বলে, নীরা তার মাকে কন্যা দায়গ্রস্থতার আসন্ন মুক্তি থেকে বঞ্ছিত না করতে পারে । নীরার আড়ষ্ট লাগে । মা তাড়া দেন “ তাড়াতাড়ি ফোন টা ধর” । নীরা ফোন টা ধরে ।.........................................................................চলবে
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৩