somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (শেষ পর্ব)

০৯ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (১)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (২)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৩)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৪)
ছেলেবেলা, কৈশোর ও একটি ঝাপসা আয়না! (৫)

(পূর্ববর্তী অংশের পর...)
মহা অন্যায় করে ফেলেছিলাম। কিশোর বয়সে যে অন্যায়ের কোন ক্ষমা নেই-সেরকম কিছু। যেহেতু সারাক্ষণ বইয়ের ভেতর ডুবে থাকি, বাইরের দুনিয়ার হাল-হকিকত তখন আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই খোঁজ করিনি-সেদিনের সেই ছোট্ট মেয়েটা দিনে দিনে কত্ত বড়ো হয়ে গেছে। তাও হয়তো খেয়ালে আসতোনা, যদিনা আমার পাশে আমার বন্ধু বসা থাকত, এবং সে জিগ্যেস না করতো মেয়েটাকে চিনি কিনা। আমি একবার মাত্র দেখেই, বন্ধুকে থোড়াই কেয়ার না করে আবার মন দিয়েছি বইয়ে।
বন্ধু বললোঃ 'মেয়েটাকে চিনিস?'
আমি বই থেকে মুখ না তুলেই বললামঃ না।
-'মেয়েটা দেখতে সুন্দর'।
-'হুম'।
তখন বুঝতে পারিনি, আমারই এই ছোট্ট 'হুম'টিই পরের কয়েকটা বছর এটম বোমার মত ফিউশন পদ্ধতিতে জ্বালাবে আমাকে। আমার জন্য একটা গর্ত খোঁড়া হয়েছে, আর আমি বেকুব সেই গর্তের পাশে গিয়ে নিজ দায়িত্বে দাঁড়িয়েছি। শুধু তাই নয়, 'হুম' বলে তাতে লাফও দিয়েছি। সে যাই হোক, পরেরদিন থেকেই শুরু হয়ে গেল বন্ধুদের স্বেচ্ছাশ্রম। আমরা স্যারের কাছে ব্যাচে প্রাইভেট পড়তাম। বন্ধুরা কিভাবে যেন ঐ মেয়েটির ব্যাচের সাথে আমাদের ব্যাচ ম্যানেজ করে ফেলল। এই ফাঁকে বলে রাখি, ব্যাপারটা কিন্তু আমার কাছে খুব একটা খারাপ লাগছিল না, যদিও মুখে সবসময় একটা ভাব ধরে থাকতাম-যেন খুব বিরক্ত হয়েছি!
এরপর শুধুই ঘটনা প্রবাহ। বন্ধুদের খুনসুটি, আর দৈবক্রমে কিছুদিন পাশাপাশি হেঁটে স্যারের বাসায় যাওয়া-খারাপ লাগতোনা। তখন নচিকেতার গান শুনতাম প্রচুর। ধার করে তার একটা নামও দিয়ে ফেললাম-'নীলাঞ্জনা'। তার স্কুল ছিল ১০.৩০ এ। কিন্তু নচি'র গানে বলা আছে-ন'টায় যেতে হবে; আমি ন'টায়ই যেতাম। সঙ্গে থাকত আমার বন্ধু। এবং অবধারিতভাবেই আমাদের দেখা হতোনা। কিছুক্ষণ বসে থেকে চলে আসতাম। আমার অতিউৎসাহী বন্ধুর মন খারাপ হয়ে যেত। (আমার বন্ধু পরে স্বীকার করেছে যে, ওই সময় তার 'সে'ও স্কুলে যেত, কিন্তু স্কুলবাসের উঁচু জানালা দিয়ে ভেতরে দেখা যায়না বলে ওর মন খারাপ হত। ব্যাটা মীরজাফর!)
দিন যেতে লাগল। একদিন...দুইদিন...তিনদিন...দেড় বছর। এতদিনে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। অনেকবার ভেবেছি বলব বলব; কিন্তু সাহসে কুলায়না। বন্ধুদের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করি, ওদেরও ধৈর্য্যের সীমা ছাড়িয়েছে। আমি মনে মনে বলি,'খুবতো গর্ত খুঁড়েছিলে আমার জন্য। এবার ঠেলা সামলাও! তখনো জানিনা-কি নীল নকশা চলছে আমার বিরুদ্ধে। আমি আছি আপন খেয়ালে!
হঠাৎ একদিন আমার এক বন্ধু তাকে পাকড়াও করলো রাস্তায়। আমার কথা বলল। মেয়েটা শুনলো। কি যেন বলল, তারপর চলে গেল।
আমার বন্ধু আমাকে সেদিনই জানালো তার 'মিশন অসম্পসিবল' এর কথা। এবং আমি সেদিনই প্রথমবারের মত উপলব্ধি করলামঃ প্রপোজ না করেও রিফিউজড হওয়া যায়। বিচিত্র এই দেশ!

আমার বন্ধু কথাগুলো বলেই উধাও হয়ে গেছে। জানি, আগামি এক সপ্তাহ সে আমার মুখোমুখি হবেনা। আর আমি বসে বসে ভাবছি। ভাবছি গত দেড়টা বছর...কত হাসি-ঠাট্টা, কাটানো সময়...সত্যিই কি আমি বন্ধুদেরকে আনন্দ দেবার জন্য বোকা সাজতাম? নাকি সেই অজুহাতে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করতাম! আমি কি সত্যিই কি নীলাঞ্জনাকে চাইনি? আমি বসে রইলাম...

মেয়েটা কিভাবে যেন আমাকে খুঁজে বের করলো। তাকে দেখে চমকে উঠলাম। খুব অস্বস্তি হচ্ছিল তার মুখোমুখি হতে।
সে আমার সামনে বসল। তারপর কথা বলতে লাগল। সে কি বলেছিল-তা আমি ভালো করে শুনতে পাইনি, শুধু এটুকু মনে আছে, তার কথাগুলো শোনার সময় মনে মনে প্রার্থনা করছিলাম ধরণীর দ্বিধা হবার জন্য। প্রাণপণে।
মানুষ এত নির্দয়ও হয়!
মেয়েটা চলে গেল।

চলে গেল, কিন্তু মুছে দিয়ে গেলো কৈশোর আর তারুণ্যের মাঝখানের ভেদ রেখাটা। ওই একটা মূহুর্তেই যেন আমি অনেক বড় হয়ে গেলাম। বসে থাকলাম ধূলোর উপর। অনেকক্ষণ। মাথা নিচু করে আবোলতাবোল ভেবে যাচ্ছি। হয়তো চোখের কোল বেয়ে কিছুটা জলও পড়েছিল ধূলোয়। সেই জলের দ্রবণে, দুঃখ গুলোর সাথে অগোচরে আমার কৈশোরেরাও ছুটি নিল। পেছনে পঁচতে বসল কিছু বেহিসাবী সময়।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। হাত দিয়ে ঝেড়ে ফেললাম প্যান্টের গায়ে লেগে থাকা ধূলো-যেন ঝেড়ে কিছুক্ষণ আগের বৈরী সময়টা তাড়াতে চাচ্ছি। পায়ের অসাড়তা ছাড়তে অন্যদিনের চেয়ে বেশি সময় লাগছে না? লাগুক। তাতে কি?

আমি পা বাড়ালাম।
বন্ধুদেরকে খুঁজছি।
ও-পাড়ার সাথে ক্রিকেট ম্যাচটা জিততেই হবে।
নইলে যে মান থাকে না!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১২ দুপুর ২:৪৭
৩২টি মন্তব্য ৩২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×