লেখকঃ Md Shahinur Rahman Dipu
অজপাড়াগায়ের ছেলে আসিফ ৪ বছর আগে ইংলিশে অনার্স শেষ করেছে।
ঘরে বৃদ্ধ বাবা রোগাক্রান্ত বিছানায় পড়ে আছেন আজ প্রায় ৫ বছর ।
আসিফ পরিবারের বড় ছেলে।
ছোট বোন ১ টা কলেজে ও ছোট ভাই ক্লাস সেভেনে পড়াশোনা করে।
পরিবারে অন্য কোন আয়ের উৎস না থাকায় টিউশনির টাকা দিয়েই আসিফ তার বাবার চিকিৎসা ও ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালায়।
২ বছর আগে আসিফের মা অসুস্থ হয়ে টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
সেই দুঃখ আসিফ আজও ভুলতে পারেনি।
অনেক কষ্ট করে আসিফ পড়াশোনা করেছে একটা চাকরির আশায়।
স্কুল জীবনে বাবাকে টুকিটাকি কৃষি কাজে সহায়তা করতো।
অনেক অভাব অনটনের মধ্যে থাকলেও পড়াশোনা থেকে আসিফ পিছু হটেনি।
মা-বাবার স্বপ্ন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে একটা ভাল চাকরি-বাকরী করবে আর তাতেই তাদের সব অভাব অনটনের ইতি ঘটবে।
এই স্বপ্ন বুকে লালন করে আসিফ ঠিকই পড়াশোনা শেষ করে কিন্তু চাকরি?
অনার্স শেষ করে ৪ বছরে না হলেও ৪০০ টা ইন্টারভিউ দিয়েছে চাকরির আশায়।
প্রতিবারই ইন্টারভিউয়ে লিখিত পরীক্ষায় একশ নাম্বারের মধ্যে ৯০-১০০ নাম্বারই পেয়েছে কিন্তু মৌখিক পরিক্ষায় চাকরির অযোগ্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে! দুঃখিত হয়নি প্রমাণিত করা হয়েছে!
কারণ সেখানে যোগ্যতার প্রমাণ বলতে চাই টাকা নয়তো মা-খালোর প্রয়োজন যেটা আসিফের নেই।
কষ্ট করে জমানো সব টাকা চাকরির এপ্লিকেশনেই শেষ হয়ে গেছে কিন্তু চাকরি কপালে জোটেনি। তাই চাকরির আশা এখন ছেড়েই দিয়েছে।
আচ্ছা একটা ছেলে টিউশনি করে কত টাকাইবা আয় করতে পারে?
ভোর থেকে শুরু করে রাত ১১ টা পর্যন্ত টিউশনি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে বাবার চিকিৎসার খরচ জোটানোই কঠিন তার উপর ভাই বোনের পড়াশোনা ও খাবারের খরচ!
আসিফের বোনেরও বিয়ের বয়স হয়েছে।
সমাজের কড়াকড়ি নিয়ম ২০ এর বেশি বয়স হলে আবার মেয়েদের বিয়ে করতে চায় না কেউ।
ছেলেকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো পিতার তাই অসুস্থ বাবার এখন শেষ ইচ্ছে একমাত্র মেয়েকে যদি একটা ভাল ঘরে বিয়ে দেওয়া যেতো........?
আসিফের বোন দেখতে মুটামুটি সুন্দরী বটে তাই বিয়ের সম্বন্ধ ও আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিন্তু বরপক্ষের চাহিদার কমতি নেই তাই সম্ভব হয় না বোনকে বিয়ে দেওয়া।
যতদিন যাচ্ছে আসিফের বাবার শরীরের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।
সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে যেটুকু চিকিৎসা করা হয় তা আসিফের বাবার জন্য যথেষ্ট নয়।
সামনে আসিফের ছোট ভাই মানিকের পরীক্ষা তাই পরীক্ষার ফি দিতে হবে।
আসিফ তার ভাইকে বললঃ মানিক ঠিকমতো পড়ালেখা করিস আর পরীক্ষার ফি ৪-৫ দিনের মধ্যে যেভাবেই হউক দিবো তোর স্যারকে বলিস।
মানিক মন খারাপ করে বললোঃ ভাইয়া! একটা কথা বলবো?
আসিফঃ বল
মানিকঃ আমাকে একটা হোটেলে ঢুকিয়ে দেও কাজ করবো তাতে তুমার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে!
আসিফঃ কী বললি? ( এই বলে আসিফ জোরে একটা চড় মারলো ছোট ভাই কে)
মানিকঃ কী করবো পড়াশোনা করে?
তুমিতো প্রতিটি পরিক্ষায় ভাল রিজাল্ট করেছো তাইলে আজ তুমি বেকার কেনো?
কেনো আজ তুমায় লুকিয়ে কাদিতে হয় একটা চাকরির জন্য?
কেনো বোনের বিয়ে হয় না?
মা মরেছে এবার বাপও মরবে!
লেখাপড়া করে তাদের জন্য কী ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরেছো?
প্রয়োজন নেই আমার এমন পড়াশোনার! যে পড়াশোনা করে তুমার মতো মেধাবী ছেলেকে আজ চাকরির জন্য ধুকপুকানি খেতে হয়!
নীরবে কাদিতে হয়!
সেই পড়াশোনা না করে আমি হোটেলে কাজ করবো! তুমার কষ্ট একটু হলেও দূর করবো! ( কান্নাভেজা কন্ঠে)
আসিফ ছোট ভাইয়ের কথা শুনে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি শুধু ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বললো- তুই মানুষ হবার জন্য পড়বি চাকরির জন্য নয় পাগলা! এই বলে ভাই তার ভাইকে শান্তনা দিলেও নিজের কাছে শান্তনা খুজে পায়নি আসিফ।
কিছুদিনপর একটা ভাল সম্বন্ধ আসছে বোনের জন্য। বড়লোকের একমাত্র ছেলে।
ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে দেখে কোন যৌতুক চায়নি এবার তাই আসিফ বেশ খুশিই হলো।
এবার অন্তত বোনকে বিয়ে দিয়ে একটু হলেও বাবার মুখে হাসি ফুটানো যাবে।
বিয়ের আনুষঙ্গিক সব কিছু প্রায় ঠিকঠাক।
ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে আংটি পড়িয়ে বিয়ের দিনতারিখ ও ঠিক করে ফেলেছে ।
আসিফ খুশি মনে গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তার বোনের বিয়ের খবর।
বোনের জন্য বেনারসি শাড়ি ও বোনজামাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি সবকিছুই কিনাকাটা শেষ।
আসিফের বোন তিতলিও নতুন এক ঠিকানার স্বপ্ন দেখা শুরু করলো।
আধার ঘরে বুঝি এবার আসবে আলোর মুখ।
বিয়ের আয়োজন যখন প্রায় শেষ তখন বিয়ের কিছুদিন আগে বরপক্ষ থেকে খবর আসলো- বিয়ের দিন বরযাত্রী হিসেবে ৫০০ জন লোক আসবেন।
তাদের এই একটা মাত্র চাহিদা এই ৫০০ জন লোককে ভাল ভাবে আপ্যায়ন করাতে হবে নয়তো বরপক্ষের ইজ্জত থাকবে না।
যেখানে আসিফ নিজের সংসারে ঠিকমতো তিন বেলার খাবার জোগাতে হিমশিম খায় সেখানে ৫০০ মানুষের খাবারের আয়োজন কিভাবে সম্ভব....?
আসিফ কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে অপারগতা শিকার করে বললঃ দেখুন আমি এমনিতেই বেকার ছেলে।
টিউশনি করে কোন রকম বোনকে পড়াশোনা করিয়েছি।
ঘরে বাবাও খুব অসুস্থ মৃত্যু পথযাত্রী প্রায়!
দয়াকরে আপনারা ২০-৩০ জন লোক আসেন আমি আমার সবটুকু দিয়ে হলেও সবাইকে সন্তুষ্ট করবো।
বরের পিতা তখন এক বাক্যে জানিয়ে দিলেন- দুঃখিত আমার ছেলে জলে ভেসে আসেনি।
গরীব দেখেও বিয়েতে রাজি হয়েছি এটাই অনেক তাই বলে আমি আমার আত্বীয়-স্বজনদের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাদ দিবো এটা সম্ভব নয়! এটা আমার ইজ্জতের ব্যাপার সুতরাং আপনার বোনের জন্য অন্য ছেলে দেখুন।
এই বলে ছেলের বাবা চলে গেলেন। আসিফের কাকুতি মিনতি কিছুই শুনলেন না!
এদিকে তিতলি সংবাদ টা শুনে একদম ভেংগে পড়লো। অভাবের সংসারে মেয়ে হয়ে জন্মানো আসলেই বোঝা!
বিয়ে ভাংগার খবর পেয়ে গ্রামের নানান লোকের নানান কথা।
এইসব সহ্য করতে না পেরে তিতলি রাগ করে রাতের আধারে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
আসিফ রাতে বোনকে ঘরে না দেখে সারা রাত খুজাখুজির পর ভোর বেলা দেখতে পায় কাঠাল গাছে রশিতে দুলছে তিতলির নিথর দেহ!
আসিফ কী করবে এখন? কীভাবে জানাবে তার বাবাকে বোনের খবর? এ খবর কী চেপে রাখা যায়?
বোনের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর আসিফের বাবাও অজ্ঞান হয়ে যান৷
সেই জ্ঞান আর ফিরেনি!
একটি বাড়িতে এখন দুই দুইটা তরতাজা নিথর দেহ! সেই বাড়িতেই এখন গ্রামের মানুষের উপচে পড়া ভীড়!
কী করবে এখন আসিফ ও মানিক?
বুকের কষ্ট কতটুকু চাপালে একটি হ্রদয় পাথর হয়? আর সেই পাথর বুকে চেপে পিতা ও বোনের লাশ কাধে নেওয়া যায়?
হ্যাঁ যায়!
আসিফ ও মানিক পেরেছে সেই লাশ দুইটা কাধে নিতে কিন্তু পারেনি এ সমাজ বদলাতে পারেনি বাবা ও বোনের লাশের মতো এই নোংরা সমাজকে কবর দিয়ে আসতে।
তাইতো যখন দুই ভাইয়ের কাধে দুইটি লাশ তখনও এই সমাজ করছে উল্লাস -
"ঘুষ ছাড়া চাকরি নেই "
"যৌতুক ছাড়া মেয়ের বিয়ে নেই"!
অজপাড়াগায়ের ছেলে আসিফ ৪ বছর আগে ইংলিশে অনার্স শেষ করেছে।
ঘরে বৃদ্ধ বাবা রোগাক্রান্ত বিছানায় পড়ে আছেন আজ প্রায় ৫ বছর ।
আসিফ পরিবারের বড় ছেলে।
ছোট বোন ১ টা কলেজে ও ছোট ভাই ক্লাস সেভেনে পড়াশোনা করে।
পরিবারে অন্য কোন আয়ের উৎস না থাকায় টিউশনির টাকা দিয়েই আসিফ তার বাবার চিকিৎসা ও ভাই-বোনের পড়াশোনার খরচ চালায়।
২ বছর আগে আসিফের মা অসুস্থ হয়ে টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন।
সেই দুঃখ আসিফ আজও ভুলতে পারেনি।
অনেক কষ্ট করে আসিফ পড়াশোনা করেছে একটা চাকরির আশায়।
স্কুল জীবনে বাবাকে টুকিটাকি কৃষি কাজে সহায়তা করতো।
অনেক অভাব অনটনের মধ্যে থাকলেও পড়াশোনা থেকে আসিফ পিছু হটেনি।
মা-বাবার স্বপ্ন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে একটা ভাল চাকরি-বাকরী করবে আর তাতেই তাদের সব অভাব অনটনের ইতি ঘটবে।
এই স্বপ্ন বুকে লালন করে আসিফ ঠিকই পড়াশোনা শেষ করে কিন্তু চাকরি?
অনার্স শেষ করে ৪ বছরে না হলেও ৪০০ টা ইন্টারভিউ দিয়েছে চাকরির আশায়।
প্রতিবারই ইন্টারভিউয়ে লিখিত পরীক্ষায় একশ নাম্বারের মধ্যে ৯০-১০০ নাম্বারই পেয়েছে কিন্তু মৌখিক পরিক্ষায় চাকরির অযোগ্য বলেই প্রমাণিত হয়েছে! দুঃখিত হয়নি প্রমাণিত করা হয়েছে!
কারণ সেখানে যোগ্যতার প্রমাণ বলতে চাই টাকা নয়তো মা-খালোর প্রয়োজন যেটা আসিফের নেই।
কষ্ট করে জমানো সব টাকা চাকরির এপ্লিকেশনেই শেষ হয়ে গেছে কিন্তু চাকরি কপালে জোটেনি। তাই চাকরির আশা এখন ছেড়েই দিয়েছে।
আচ্ছা একটা ছেলে টিউশনি করে কত টাকাইবা আয় করতে পারে?
ভোর থেকে শুরু করে রাত ১১ টা পর্যন্ত টিউশনি করে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে বাবার চিকিৎসার খরচ জোটানোই কঠিন তার উপর ভাই বোনের পড়াশোনা ও খাবারের খরচ!
আসিফের বোনেরও বিয়ের বয়স হয়েছে।
সমাজের কড়াকড়ি নিয়ম ২০ এর বেশি বয়স হলে আবার মেয়েদের বিয়ে করতে চায় না কেউ।
ছেলেকে নিয়ে দেখা স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো পিতার তাই অসুস্থ বাবার এখন শেষ ইচ্ছে একমাত্র মেয়েকে যদি একটা ভাল ঘরে বিয়ে দেওয়া যেতো........?
আসিফের বোন দেখতে মুটামুটি সুন্দরী বটে তাই বিয়ের সম্বন্ধ ও আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিন্তু বরপক্ষের চাহিদার কমতি নেই তাই সম্ভব হয় না বোনকে বিয়ে দেওয়া।
যতদিন যাচ্ছে আসিফের বাবার শরীরের অবস্থাও খারাপ হচ্ছে।
সামান্য টিউশনির টাকা দিয়ে যেটুকু চিকিৎসা করা হয় তা আসিফের বাবার জন্য যথেষ্ট নয়।
সামনে আসিফের ছোট ভাই মানিকের পরীক্ষা তাই পরীক্ষার ফি দিতে হবে।
আসিফ তার ভাইকে বললঃ মানিক ঠিকমতো পড়ালেখা করিস আর পরীক্ষার ফি ৪-৫ দিনের মধ্যে যেভাবেই হউক দিবো তোর স্যারকে বলিস।
মানিক মন খারাপ করে বললোঃ ভাইয়া! একটা কথা বলবো?
আসিফঃ বল
মানিকঃ আমাকে একটা হোটেলে ঢুকিয়ে দেও কাজ করবো তাতে তুমার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হবে!
আসিফঃ কী বললি? ( এই বলে আসিফ জোরে একটা চড় মারলো ছোট ভাই কে)
মানিকঃ কী করবো পড়াশোনা করে?
তুমিতো প্রতিটি পরিক্ষায় ভাল রিজাল্ট করেছো তাইলে আজ তুমি বেকার কেনো?
কেনো আজ তুমায় লুকিয়ে কাদিতে হয় একটা চাকরির জন্য?
কেনো বোনের বিয়ে হয় না?
মা মরেছে এবার বাপও মরবে!
লেখাপড়া করে তাদের জন্য কী ভাল চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পেরেছো?
প্রয়োজন নেই আমার এমন পড়াশোনার! যে পড়াশোনা করে তুমার মতো মেধাবী ছেলেকে আজ চাকরির জন্য ধুকপুকানি খেতে হয়!
নীরবে কাদিতে হয়!
সেই পড়াশোনা না করে আমি হোটেলে কাজ করবো! তুমার কষ্ট একটু হলেও দূর করবো! ( কান্নাভেজা কন্ঠে)
আসিফ ছোট ভাইয়ের কথা শুনে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি শুধু ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেদে কেদে বললো- তুই মানুষ হবার জন্য পড়বি চাকরির জন্য নয় পাগলা! এই বলে ভাই তার ভাইকে শান্তনা দিলেও নিজের কাছে শান্তনা খুজে পায়নি আসিফ।
কিছুদিনপর একটা ভাল সম্বন্ধ আসছে বোনের জন্য। বড়লোকের একমাত্র ছেলে।
ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে দেখে কোন যৌতুক চায়নি এবার তাই আসিফ বেশ খুশিই হলো।
এবার অন্তত বোনকে বিয়ে দিয়ে একটু হলেও বাবার মুখে হাসি ফুটানো যাবে।
বিয়ের আনুষঙ্গিক সব কিছু প্রায় ঠিকঠাক।
ছেলে পক্ষ থেকে মেয়েকে আংটি পড়িয়ে বিয়ের দিনতারিখ ও ঠিক করে ফেলেছে ।
আসিফ খুশি মনে গ্রামের সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে তার বোনের বিয়ের খবর।
বোনের জন্য বেনারসি শাড়ি ও বোনজামাইয়ের জন্য পাঞ্জাবি সবকিছুই কিনাকাটা শেষ।
আসিফের বোন তিতলিও নতুন এক ঠিকানার স্বপ্ন দেখা শুরু করলো।
আধার ঘরে বুঝি এবার আসবে আলোর মুখ।
বিয়ের আয়োজন যখন প্রায় শেষ তখন বিয়ের কিছুদিন আগে বরপক্ষ থেকে খবর আসলো- বিয়ের দিন বরযাত্রী হিসেবে ৫০০ জন লোক আসবেন।
তাদের এই একটা মাত্র চাহিদা এই ৫০০ জন লোককে ভাল ভাবে আপ্যায়ন করাতে হবে নয়তো বরপক্ষের ইজ্জত থাকবে না।
যেখানে আসিফ নিজের সংসারে ঠিকমতো তিন বেলার খাবার জোগাতে হিমশিম খায় সেখানে ৫০০ মানুষের খাবারের আয়োজন কিভাবে সম্ভব....?
আসিফ কোন উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে অপারগতা শিকার করে বললঃ দেখুন আমি এমনিতেই বেকার ছেলে।
টিউশনি করে কোন রকম বোনকে পড়াশোনা করিয়েছি।
ঘরে বাবাও খুব অসুস্থ মৃত্যু পথযাত্রী প্রায়!
দয়াকরে আপনারা ২০-৩০ জন লোক আসেন আমি আমার সবটুকু দিয়ে হলেও সবাইকে সন্তুষ্ট করবো।
বরের পিতা তখন এক বাক্যে জানিয়ে দিলেন- দুঃখিত আমার ছেলে জলে ভেসে আসেনি।
গরীব দেখেও বিয়েতে রাজি হয়েছি এটাই অনেক তাই বলে আমি আমার আত্বীয়-স্বজনদের বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বাদ দিবো এটা সম্ভব নয়! এটা আমার ইজ্জতের ব্যাপার সুতরাং আপনার বোনের জন্য অন্য ছেলে দেখুন।
এই বলে ছেলের বাবা চলে গেলেন। আসিফের কাকুতি মিনতি কিছুই শুনলেন না!
এদিকে তিতলি সংবাদ টা শুনে একদম ভেংগে পড়লো। অভাবের সংসারে মেয়ে হয়ে জন্মানো আসলেই বোঝা!
বিয়ে ভাংগার খবর পেয়ে গ্রামের নানান লোকের নানান কথা।
এইসব সহ্য করতে না পেরে তিতলি রাগ করে রাতের আধারে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
আসিফ রাতে বোনকে ঘরে না দেখে সারা রাত খুজাখুজির পর ভোর বেলা দেখতে পায় কাঠাল গাছে রশিতে দুলছে তিতলির নিথর দেহ!
আসিফ কী করবে এখন? কীভাবে জানাবে তার বাবাকে বোনের খবর? এ খবর কী চেপে রাখা যায়?
বোনের মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর আসিফের বাবাও অজ্ঞান হয়ে যান৷
সেই জ্ঞান আর ফিরেনি!
একটি বাড়িতে এখন দুই দুইটা তরতাজা নিথর দেহ! সেই বাড়িতেই এখন গ্রামের মানুষের উপচে পড়া ভীড়!
কী করবে এখন আসিফ ও মানিক?
বুকের কষ্ট কতটুকু চাপালে একটি হ্রদয় পাথর হয়? আর সেই পাথর বুকে চেপে পিতা ও বোনের লাশ কাধে নেওয়া যায়?
হ্যাঁ যায়!
আসিফ ও মানিক পেরেছে সেই লাশ দুইটা কাধে নিতে কিন্তু পারেনি এ সমাজ বদলাতে পারেনি বাবা ও বোনের লাশের মতো এই নোংরা সমাজকে কবর দিয়ে আসতে।
তাইতো যখন দুই ভাইয়ের কাধে দুইটি লাশ তখনও এই সমাজ করছে উল্লাস -
"ঘুষ ছাড়া চাকরি নেই "
"যৌতুক ছাড়া মেয়ের বিয়ে নেই"!
এভাবেই কত যে আঁধারে ফুটে উঠা ফুল একটু আলোর অভাবে প্রতিদিন ঝরে পড়ে কেউ তা জানে না!
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৫৯