মধুমিতাকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমাটা সেরে ফেলার মাস পূর্তি হলেও তার রেশটা এখনো আমার মধ্যে রয়ে গেছে । আর থাকবেইবা না কেন? যে ছেলে হন্নি হয়ে খুঁজে খুঁজেও সারা জীবন, সুন্দরী না হোক অন্তত আধা সুন্দরী গোছের একটা জুলিয়েটকেও পটাতে পারেনি, তার মধুচন্দ্রিমা পরীর মতো সুন্দরী বউ এর সাথে!!! স্বভাবতই খুশির জোয়ারে ভেসে যাওয়ার কথা। আমার ক্ষেত্রেও সেটিই হলো। তবে আমার এই খুশির আমেজ খুব বেশি দিন থাকেনি। বলা ভাল থাকতে দিল না, আমাদের হেঁশেল । মধুমিতা প্রায়ই বলে,
“কি হেঁশেল বানিয়েছো, মনমত রান্না করতে পারি না।”
নাচতে না পারার জন্য উঠোনের দোষের কথা আমি বহুবার শুনেছি। কিন্তু রান্না করতে না পারার জন্য হেঁশেলের দোষ!!! এমন কথা আমি কস্মিন কালেও শুনিনি ।( সম্ভবত পাঠক আপনারাও শোনেননি।) অযুহাতটা যেহেতু সুন্দরী বউ করেছে তাই দোষ স্বীকারটাতো আমাকেই করতে হবে। অবশ্য আমি সেটিই করলাম।
ওর রান্নাবান্নাকে আমি যে চোখেই দেখিনা কেন ঐ রান্না দিয়েই ও পুরষ্কার আদায় করে নিয়েছে। ওর স্বীকৃতিটা এসেছে আমার ছোট কাকুর কাছ থেকে ।এইতো সেদিন কাকুকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে ও নিজ হাতে রেঁধে খাইয়েছিল । কাকুও খুশি হয়ে যাওয়ার সময় ওকে একটা বই উপহার দিয়ে গেছেন। বইয়ের নাম “ হাউ টু কুক”!!!!
মধুমিতার রান্নাবান্না নিয়ে আমার সেরকম অভিযোগ নেই। থাকার কথাও না ।কারন খাবার দাবার নিয়ে আমার অবস্থান অনেকটা 'যা জোটে তাই খাই’ গোছের। তবে আয়নার সামনে ওর লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা ইদানিং আমার কাছে সত্যিই খুব বিরক্তকর ঠেকছে।ওকে তো এসব বলা যায় না, সুন্দরী বউ বলে কথা। তবু একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম,
-আয়নার সামনে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে কি ভাবো?
ওর উত্তরটা কেবল অনঅনুমেয়ই ছিল না বরং ছিল অভাবনীয়।প্রতিবারই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ও নাকি বোঝার চেষ্টা করে কোনভাবে ছবি তুললে ওকে সবথেকে ভাল লাগবে। আমিও ওর ভাবনাটা যে ঠিক এমন ইঙ্গিত করে মাথা নাড়াই!
মধুমিতা বেশ গোছানো একটা মেয়ে। তাই বাসার সব কিছুই ওর সঠিক জায়গায় রাখা চাই ই চাই। তবে সমস্যা হলো প্রয়োজনীয় জিনেসের খোঁজ পড়লে ও সঠিক জায়গাটির কথাই ভুলে যায়। এইতো গত উইক এন্ডে ওকে নিয়ে মুভি দেখতে যাওয়ার কথা ছিল আমার। বের হওয়ার সময় যখন ফ্লাটের চাবির খোঁজ পড়ল তখন চাবি হাওয়া। সবিশেষ কবে চাবি ব্যবহার করেছে, চাবি রাখার সময় ওর শাড়ির রং কি ছিলো, মেকআপ করেছিল কিনা সবই ওর মনে আছে। কেবল ভুলে গেছে চাবিটা কোথায় রেখেছে। ওরও দোষ না, এতো কথা বললে একটা দুঠো কথা ভুলে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়!! ওর কথা বলার অভ্যেসটা এমন হয়েছে যে মাসকারা লাগাণোর সময়ও মুখ খোলা রাখে। যাই হোক শেষে যখন ওর হাতের মুঠোয় চাবিখানা আবিষ্কার করলাম ততক্ষণে মুভি শোর টাইম ওভার!
কোথাও গেলে আমি লক্ষ্য করেছি মধুমিতার হাতে পার্স বা রুমাল অথবা অন্য কিছুনা কিছু একটা থাকবেই । মধুমিতাকে ওগুলোকে কোনদিন ব্যবহার করতে দেখেছি এমন কথা আমি বলতে পারবো না । একদিন ওকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম,
-শুধু শুধু এই পার্স, ব্যাগ ইত্যাদি সাথে করে নিয়ে আসো কেন???
ওর উত্তরটা কেবল অনঅনুমেয়ই ছিল না বরং ছিল অভাবনীয় । প্রতিবারই ও সেগুলো বহন করে এই ভেবে যে কোন না কোন দিন ওগুলো ওর কাজে লাগতে পারে?
মধুমিতার এই সব কিছুই ওর কাছে স্বাভাবিক । আমারও এতে কোন আপত্তি থাকত না যদি অফিস থেকে এসে বিছানায় আয়েস করে একটু সংবাদপত্র পড়তে পারতাম। ওর কাছে সংবাদ পত্র পড়া আর বেকার সময় নষ্ট করা একই কথা । তাছাড়া এই সময় হেলে দুলে আমি নাকি ওর সারাদিনের গোছানো বিছানাটা নোংরা করে ফেলি। আবার বিছানা ছেড়ে আমি যেখানে গিয়ে বসতাম কেন যেন সেইখানটাতেই ওর ঝার দিতে হত। রাগে বলেন আর বাধ্য হয়েই বলেন আমি সংবাদপত্র পড়াই ছেড়ে দিয়েছি। এখন সোফায় বসে টিভিতে খবর দেখি কিন্তু আমার এই কর্মটাও মধুমিতার কমপ্লিনের হাত থেকে রেহাই পায়নি। আমি যে সময়ে খবর দেখি সেই একই সময়ে ওর গোপি আর কিরন মালা দেখতে হবে। সো টিভির রিমোট ধরা নিশিদ্ধ। আমিও ওর আদেশ মান্য করলাম। সুন্দরী বউ বলে কথা, না মেনে নেয়ার কি উপায় আছে??
টিভি দেখা বন্ধ করে দেওয়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কম্পিউটার গেম খেলে সময় কাটাবো । তবে তাতেও মধুমিতার আপত্তি আছে । গেমের শব্দে ওর নাকি মাথা ঘোড়ায়। তাছাড়া বাসায় সারাদিন রান্নাবান্না সহ যাবতীয় কাজ করার পর ঐ শব্দ ওর আয়েশ করে টিভি দেখায় বিঘ্ন ঘটায়। কি আর করা অগ্যতা এটাও ছেড়ে দিলাম । তবে নতুন করে ছেড়ে দেওয়া এক পুরানো বন্ধুকে মানে ধোয়াকে গোপনে আবার বরন করে নিলাম।
পরিশেষঃ
মধুমিতাকে বদলে ফেলার সাহস ও সামর্থ্য যে আমার নেই সেটা আমি ভালো ভাবেই জানি। অগ্যতা আমি নিজেই ওর মতো হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যাতে করে নূন্যতম না হোক অন্তত কিছু মৌলিক অধিকারতো পাওয়া যাবে। তাছাড়া সুন্দরী বউয়ের সাথে থাকতে হলে একটু আধটু মৌলিক অধিকার তো হারাতেই হবে নাকি??
বিলিয়ার রহমান
ঢাকা,
৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ই
ছবি:- নেট
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৫৬