আপনার শৈশবটা কেমন ছিল?? আর আপনিই বা কেমন ছিলেন?? শৈশবে আমি ছিলাম মিথ্যুক, ডানপিটে। তবে আমার শৈশবটা কেটেছে দুর্দান্ত। দিনগুলি ফুরিয়েছে আলোর গতিতে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই যেন সব ফিনিশ। আজ আমার শৈশবের ঝাঁপি খুলে কিছু শৈশব আপনাদের সাথে শেয়ার করব। আপনারাও মিলিয়ে নিতে পারেন আপনাদের শৈশবের দিনগুলোর সাথে।
বিনে পয়সার রেসলিং:-শৈশবে মারামারি কমবেশি সবাই করেছি।আমরা যারা গ্রামে বড় হয়েছি তারা হয়তো একটু বেশিই করেছি। বেশিরভাগ মারামারিই হতো বন্ধুদের সাথে। তবে এই মারামারির একটা অলিখিত নিয়ম ছিল দুইজনে মারামারি করলে বাকিরা সেটা কখনোই থামাবেনা। তাদের কাজ কেবল হাত তালি মেরে যাওয়া। ব্যাপারটা অনেকটা যেন বিনে পয়সায় রেসলিং দেখার মতো। নিজে মার দিলে হাততালিটা উপভোগ করতাম। মারখেলে লজ্জার বদলে নিজেও হাততালি দিয়ে ব্যপারটাকে উড়িয়ে দিতাম।
খেলার নাম ছেচড়ি কাটা:- গ্রামে বড় হয়েছেন আর ছেচড়ি কাটা খেলেননি এমন হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূণ্য। গ্রামের নতুন কাটা পুকুরের সিরি, ঢালু ঢিবির মাটি ভিজিয়ে পিচ্ছিল করে ছেচুড়কাটা খেলাটার মজা ভোলার নয়।
শৈশবে আরো দুটি জনপ্রিয় খেলা ছিল চাড়া ও মার্বেল খেলা। তবে সমস্যা হল এই দুটো খেলাই গুরুজনদের কাছে ছিল নিশিদ্ধ ।একারনে এইখেলাগুলো আমাদের বেশ লুকিয়ে লুকিয়ে খেলতে হত। এই খেলার অপরাধে যে কতবার দৌড়ানি খেয়েছি তার ইয়াত্তা নাই।দাড়িয়াবান্ধা ,ঢ্যাং,কানামাছি ইত্যাদি খেলাগুলোও খেুব খেলতাম।
ব্যঙ্গ নাম:- ছোট সময়ে আমাদের অনেকেরই এক বা একাধিক ব্যঙ্গ নাম ছিল। ব্যঙ্গ নামটা যে আমাদের নিজের নাম নয় সেটা জানার পরও কেউ এ নাম বললেই তার পিছু ছুটতাম অবিরাম। আমার বড় ভাইয়ের ব্যঙ্গ নাম ছিল মালু। মেজো ভাইয়ের বাওয়া। আমার নাম ছিল একাধিক। তবে সেসব বলে নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চাইনা।
কলাগাছের ভেলা:- কলাগাছের ভেলায় চড়েছেন কখনও। বন্ধুরা সারাদিন মিলে বাঁশের কঞ্চি আর কলা গাছ দিয়ে ভেলা বানাতাম। ভেলায় সব বন্ধুদের একত্রে ধরতো না। তাই পালা করে চড়তাম। তবে অধিকাংশ সময়ই নদীর পানিতে প্যান্টের নিচের অংশ ভিজে যেত।
নিজের তৈরি বাড়ি:- শৈশবে আমার গ্রামের প্রায় শিশুরই নিজের তৈরি কুটির থাকতো। কুটিরগুলো কলাপাতা ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো হত। অল্প বাতাসেই বিলীন হয়ে যেত এইসব কুটির।
গ্রামে বড় হওয়ার কারনে শৈশবের ঝাঁপিটা বেশ স্বাস্থ্যবান হয়তো অফুরন্ত। একাকি অলস সময়ে প্রায়শ ঝাঁপি থেকে উকিমারা স্মৃতিগুলো নস্টালজিয়ায় ভোগায়। সবকিছু ভেবে চোখের কোনায় চিকচিক করে ওঠে বিন্দু বিন্দু জল।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৭ ভোর ৬:৫৬