দক্ষিণ-মধ্য ইউরোপে ভূমধ্যসাগরের কোল ঘেঁষে আল্পস পর্বতমালা অবস্থিত। এটি দক্ষিণ ফ্রান্সের সমুদ্র সৈকত (মোনাকো কাছাকাছি) সুইজারল্যান্ড থেকে উত্তর ইতালি এবং অস্ট্রিয়ার মধ্যে এবং স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হারজেগোভিনা, সার্বিয়া এবং মন্টেনিগ্রো-এর মধ্যবর্তী আকারের প্রায় ৭০০ মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত - তারপর আলবেনিয়াতে শেষ হয় অ্যাডরিয়াইট সাগর এর উপকূলে । তবে এর মূল বিস্তর ভূস্বর্গ বলে খ্যাত অপূর্ব সুন্দর দেশ সুইজারল্যান্ডে। আমরা এই সুন্দর দেশ বলেই নয় শুধু আমরা সুইজারল্যান্ডকে জানি আরেকটি নামে বিশ্বের সবচেয়ে কম দুর্নীতিগ্রস্থ অথবা দুর্নীতিমুক্ত দেশ হিসেবে।
উদ্বোধন এর সময় গোটহার্ড টানেল
সৎ মানুষ আর সুন্দর প্রকৃতির দেশ এই ভূপৃষ্ঠে মহান সৃষ্টিকর্তার এক সুন্দর নিদর্শন। সুইজারল্যান্ডের মানুষ যে শুধু সৎ তাই নয়, তাঁরা সভ্য আর কঠোর পরিশ্রমী সেই সাথে মেনে চলে ভয়ানক নিয়মানুবর্তিতা। ৪৮০৭ মিটার উঁচু এই পর্বত সুইজারল্যান্ডের জন্য এক অপার সৌন্দর্য যেমন, তেমনি দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মারাত্মক প্রতিবন্ধকও বটে। তবে সেই প্রতিবন্ধকতা তাঁরা দূর করেছে এক অবিশ্বাস্য স্থাপনা তৈরি করে। আর সেটি হল গোটহার্ড টানেল। ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার গভীরে এই টানেল জাপানের সেইকান এবং ফ্রান্স ও ব্রিটেন এর মধ্য সংযোগকারী ইউরো টানেল বা চ্যানেল টানেল এর চেয়ে অনেক বড়। গোটহার্ড টানেল এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় ট্রেন চলাচল টানেল।
গোটহার্ড টানেল ২.৩ কিলোমিটার গভীরে টানেলের একাংশ।
দীর্ঘ ১৭ বছর অক্লান্ত পরিশ্রম করে ১২ দশমিক ২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক ব্যয় করে এই দীর্ঘ টানেল শেষ করে। আমরা বাঙ্গালীদের জন্য বিস্ময়কর ব্যাপার হল নিদিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক নির্ধারিত সময়ে এই টানেলের দুরূহ কাজ শেষ করেছেন। আরও অবাক হবেন জেনে যে দীর্ঘ ১৭ বছর কাজ করেছে, একাধিকবার সরকার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু প্রকল্পের ব্যয় কিন্তু এক পয়সাও বাড়েনি। নির্ধারিত প্রকল্প ব্যয়ের মধ্য এবং নির্ধারিত সমায়ের মধ্যে তাঁরা এই বৃহৎ কর্মযজ্ঞ শেষ করেছেন গত বছর। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যয় ১০ হাজার ৮শ কোটি থেকে তিন দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে এখন ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকায় নেওয়া হয়েছে অথচ বলতে গেলে এখনও কাজ সেভাবে শুরুই হয়নি। কে জানে কোথায় গিয়ে থামবে!
আল্পস পর্বতমালার কিছু অংশ।
এই টানেল দ্রুতগামী ট্রেন চলাচলের জন্য ডিজাইন করে নির্মাণ করা হয়েছে। ২৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় ট্রেন চলতে পারবে। প্রতিদিন গড়ে ৩২৫ টি যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলতে পারবে। মিনাল থেকে জুরিখ এই দুই গন্তব্যের মধ্যে সময় কমবে এক ঘণ্টার বেশি। সেই হতদরিদ্র কৃষকের মত বলতে হয়, আমাদের ফসলের (টমেটো) দাম নেই, শহরে পণ্য গেলেই ৬০ টাকা কেজি। তো আমাদের সময়ের দাম নেই, পশ্চিমে গেলেই সময়ের অনেক দাম। হ্যাঁ এখানে সময়ের দাম অনেক বেশি। তাই তাঁরা সময় কাজে লাগাতে অসাধ্য সাধন করে। আমাদের অচল ঢাকা শহরে শুধু যানজটে পরে মানুষ কত সময় নষ্ট করছে একবার চিন্তা করা যায়।
গোটহার্ড টানেলের নক্ষশা
ইচ্ছা করলে ঢাকা শহরে পাতাল ট্রেন ব্যবস্থা চালু করতে পারে। টানেল ব্যবস্থার মাধ্যমে এই কাজ করা যেতে পারে। হয়ত অনেকে বলবেন এত টাকা কোথায় পাবে? ১৯৭২-৭৪ পর্যন্ত যে দুর্ভিক্ষ হয়েছিল সেখানেও কিন্তু টাকার অভাব ছিল না। ছিল চরম অব্যবস্থাপনা। রাষ্ট্র ব্যর্থ হয়েছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে। সেখ মুজিব ব্যর্থ হয়েছি তাঁর সোনার খনিকে চোরের খনি হতে বন্ধ করেতে। অর্থাৎ সেই সময়ও টাকার কোন অভাব ছিল না। এখন তো অবশ্যই না। আমাদের প্রায় ৩০ বিলিয়ন বৈদেশিক মুদ্রা রিসার্ভ আছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। আমেরিকা রিজার্ভ ব্যাংক থেকে টাকা চুরি যায় অথচ এই টাকা অলস ফেলে না রেখে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারে।
এই সুন্দর আল্পস পর্বতমালার ২.৩ কিলোমিটার নিচ দিয়ে গোটহার্ড টানেল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ৮:১৪