ট্রেন স্টেশনে এসে থামতেই জাহিদ প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে উঠে দাঁড়াল। শারাফত ভাইয়া কোন বগিতে আছে সে জানেনা। স্টেশনের ঠিক কোন জায়গাটায় ভাইয়া পা রাখবে সেটাও জানেনা। তবে আশার কথা স্টেশনটা খুব বেশি বড় নয়। ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন। পাখির বাসার মতো ক্ষুদ্র। ট্রেন কখনোই এই স্টেশনে পুরোটা আঁটে না। মাথা কিংবা লেজ সবসময় বাইরে থাকে। সুতরাং এই ছোট্ট স্টেশনে ভাইয়াকে খুঁজে পেতে বেশিক্ষণ সময় লাগবে না।
যাত্রীরা নামতে শুরু করেছে। এখন রাত আটটার মতো বাজে। এই অঞ্চলে এটা অনেক রাতই বলা চলে। তাছাড়া শীতের রাত্রি। স্টেশনে লোকজন খুবই কম। যাত্রীরাও হাতেগোনা। স্টেশনের পেছন দিক থেকে অটোচালকদের লাগাতার হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে।
এই পাকশী... এই রূপপুর... বাঘইল... ইপিজেড।
শারাফত ট্রেন থেকে নামল। তার চোখে চশমা। কাঁধে ব্যাগ। গায়ে মেরুন রঙের পাঞ্জাবি। তার উপরে কালো চাদর। হালকা শীত-শীত লাগছে। এই শীত-শীত লাগাটা উত্তরবঙ্গের জন্য অতি স্বাভাবিক। এই শীতভাব কাটানোর জন্য একটা সিগারেট ধরানো যায়, কিন্তু সেটা বোধহয় এখন উচিত হবে না। কারণ ট্রেনে এক দম্পতির সাথে পরিচয় হয়েছিল। তারাও এই স্টেশনে নেমেছে। দম্পতির একটি ফুটফুটে পরীর মতো কন্যা আছে। সেই কন্যাশিশুটি এখন শারাফতের হাত ধরে আছে।
“লেখক চাচ্চু, তুমি কি আমাদের সাথে যাবে?”
মেয়েটির কথায় শারাফত মৃদু হাসল। তবে কিছু বলল না। যাত্রাপথে যাদের সাথে পরিচয় হয়, তারা ঠিক ততক্ষণই অন্তরঙ্গ যতক্ষণ যাত্রাটা চলমান থাকে। যাত্রাশেষে আর কোনো পরিচয় পরিচিতি থাকে না। শারাফত এসব জানে। একজীবনে বহুবার তার এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। এখন আর পথের মানুষের জন্য সে কাতর হয় না।
শিশুমেয়েটির বাবা বললেন, “মেয়ে তো আপনাকে আমাদের সঙ্গে যেতে বলেছে। যাবেন ভাই?”
সাধারণত এধরনের কথা ভদ্রতার খাতিরেই বলা হয়। কিন্তু এই ভদ্রলোক ভদ্রতা রক্ষার জন্য বলেননি। তিনি সত্যিকার অর্থেই বলেছেন। এবং শারাফত যদি এখন যেতে রাজি হয়, তাহলে ভদ্রলোক নিশ্চিত তাকে নিয়ে খুশিমনেই অটোতে উঠে বসবেন।
কিন্তু শারাফত যেতে চায় না। সে চেনা মানুষদের কাছেই অমাবস্যার চাঁদ, অচেনার ঘরে রোজকার সূর্য্য হবে কী করে? শারাফত বলল, “আপনারা তো পাকশীর দিকে যাবেন বলেছিলেন?”
“হ্যাঁ।”
“পাকশী আমি যাব। আমাকে যেতে হবে। সেটা আমার জন্মস্থান। তবে আজ যাব না। অন্যদিন যাব।”
ভদ্রলোক অতি আশ্চর্য্য হয়ে বললেন, “আপনি পাকশীতে জন্মেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“তাহলে এখানে থাকেন না কেন?”
“থাকি না বলেই এখানে আসা হয়। থাকলে আসতাম না। আমরা যেখানে থাকি সেখানে আসি না। আর যেখানে আসি সেখানে থাকি না।”
ভদ্রলোক হেসে বললেন, “লেখকদের নিয়ে এই সমস্যা বুঝলেন? তারা সহজ কথাও ঘুরায়ে-প্যাঁচায়ে কঠিন করে ফেলে। আপনার এই কথাটাও খুব জটিল হয়েছে। আচ্ছা ছাড়ি এসব। আপনি তো এখন আপনার চাচার বাসায় যাবেন তাই না?”
শারাফত মাথা দোলাল। ভদ্রলোককে ট্রেনে সে এই কথা বলেছিল। তিনি সেটা এখনো মনে রেখেছেন।
ভদ্রলোক বললেন, “এখান থেকে যেতে অটো লাগবে না?”
“না। হেঁটেই যাওয়া যাবে। তাছাড়া আমাকে নিতে আসার জন্য আমার ছোটভাই জাহিদের আসার কথা। সম্ভবত সে স্টেশনে এসে বসে আছে। হয়ত আমাকে খুঁজছেও।”
“তবে তো আপনাকে আর আটকে রাখা যায় না। আপনি পাকশী আসলে অবশ্যই আমাকে ফোন করবেন। ভালো থাকবেন ভাই।”
এই বলে ভদ্রলোক মেয়েকে কোলে নিয়ে পিছে যেতে উদ্যত হলেন। এমন সময় তাঁর স্ত্রী বলল, “পাকশী গেলে উনি কাকে ফোন করবেন? তোমার ফোন নাম্বার দিয়েছ?”
ভদ্রলোক জিহ্বা কামড়ে ধরলেন। যেন মারাত্মক একটা ভুল হয়ে গেছে এবং সে ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। কিন্তু শারাফতের মুখে আগের মতই মৃদু হাসি। তবে এই হাসিটা নকল। কেননা ভদ্রলোকের ফোন নাম্বার নেওয়ার কথা তারও মনে ছিল না।
ভদ্রলোক তাঁর একটি পার্সোনাল কার্ড দিয়ে সপরিবারে বিদায় নিলেন। শারাফত স্টেশনের একপাশে সরে আসলো। এখন একটা সিগারেট খাওয়া যেতে পারে। শীতভাবটা বাড়ছে। চাদরের ভেতরে তার শরীর কাঁপছে।
শারাফত সিগারেট ধরাল। তার হাতে এখনো ভদ্রলোকের দেওয়া কার্ডটি রয়ে গেছে। লাইটারের আগুনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে- কামাল অধিকারী, রেলওয়ে বিভাগ, পাকশী। শারাফত চমকে উঠল। ভদ্রলোক ট্রেনেই একবার তাঁর নাম বলেছিলেন- কামাল। তখন তাকে মুসলমান বলেই মনে হয়েছিল। এখন কার্ড দেখে বোঝা যাচ্ছে তিনি হিন্দু। আজব ব্যাপার! একবিংশ শতাব্দীর মানুষের একটা বড় বৈশিষ্ট্য হলো নামের বিভ্রান্তি। এদের এমন নাম হয় যে লিঙ্গ ধর্ম কিছুই বোঝা যায় না। যেমন কাজল, বকুল, শাওন, রবিন ইত্যাদি।
“ভাইয়া আসসালামু আলাইকুম।”
শারাফত পেছনে তাকাল। তার চাচার একমাত্র পুত্র জাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। স্টেশনে তারই আসার কথা ছিল। জাহিদকে দেখে শারাফত বেশ অবাক হলো। জাহিদ তার বাইশ বছরের ছোট। তাকে কাঁধে করে কত ঘুরে বেড়িয়েছে! আজ বহুবছর পর তার সঙ্গে দেখা। জাহিদ বড় হয়ে গেছে। অনেক বড় হয়েছে। শারাফত সিগারেট ফেলে বলল, “ওয়ালাইকুম সালাম। ভালো আছ জাহিদ?”
“হ্যাঁ। ভালো আছি। তুমি কেমন আছ ভাইয়া?”
“ভালো। তুমি একাই আসলে?”
“হ্যাঁ একাই আসলাম। আব্বুও আসতে চাইলো, আমি না করলাম।”
“ভালো করছ।”
“বাসায় চলো ভাইয়া। আর ব্যাগটা আমাকে দাও।”
“ব্যাগ নিতে হবে না। চল তুমি।”
জাহিদ তার বড়ভাইয়ের কথা শুনল না। সে শারাফতের কাছ থেকে ব্যাগ নিয়ে নিজের কাঁধে ঝুলিয়ে দিল। তারপর বলল, “চলো এবার। সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
শারাফতের বাবারা তিন ভাই। সে সবচেয়ে বড়জনের ছেলে। জাহিদ সবচেয়ে ছোটজনের ছেলে। জ্ঞান হবার পর থেকে জাহিদ জানে- শারাফত নামে তার একজন বড়ভাই আছেন। তিনি পাকশীতে জন্ম নিলেও থাকেন কুমিল্লাতে। কারণ তাঁর বাবা অর্থাৎ জাহিদের বড়বাবা খুব ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে কুমিল্লায় চলে গেছেন। কুমিল্লা এবং কুমিল্লার মানুষজনের প্রতি জাহিদের আলাদা রকম টান। কারণ সেখানে তার নানির বাড়ি। অর্থাৎ জাহিদের বাবা তাঁর বড়ভাইয়ের এক শ্যালিকাকে বিয়ে করেছেন।
জাহিদ কাঁধে ব্যাগ নিয়ে আগে-আগে হাঁটছে। শারাফত পেছনে। স্টেশন থেকে নামার মুখে টিকিট কাউন্টারের দিকে চোখ পড়ল। শারাফত নিজের অজান্তেই থমকে দাঁড়াল।
“জাহিদ দাঁড়াও তো একটু।”
জাহিদ হাঁটা বন্ধ করে পেছনে তাকিয়ে বলল, “কী হয়েছে ভাইয়া?”
“একটু আসো তো আমার সাথে।”
জাহিদ দেখল শারাফত ভাইয়া কাউন্টারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তার সামান্য খটকা লাগছে। ভাইয়া তো ট্রেন থেকে নেমেই পড়েছেন। এখন আর কাউন্টারে কাজ কী?
মনে-মনে খটকা লাগলেও জাহিদ মুখে কিছু বলেনি। শারাফত ভাইয়ার পিছুপিছু হেঁটে সে কাউন্টারের সামনে চলে এলো।
কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয়- শারাফত ভাইয়া কাউন্টারের লোকজনদের সাথে কথা বলছেন না। তিনি রেলিঙ ধরে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছেন। আর গভীর মনযোগে আশপাশে তাকিয়ে কী যেন দেখার চেষ্টা করছেন। জাহিদের মনে বড় কৌতূহল জাগল।
“ভাইয়া।”
“হুঁ।”
“এখানে এসে দাঁড়িয়ে আছ যে? শরীর খারাপ লাগছে?”
“না।”
“তাহলে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছ কেন?”
শারাফত এই মরচেধরা রেলিংটার ওপর মৃদু থাবা মেরে বলল, “তুমি যখন খুব ছোট ছিলে তখন তোমাকে নিয়ে আমি একবার এই স্টেশনে এসেছিলাম। তুমি সেদিন রেলিঙের ঠিক এখানটায় উঠে বসেছিলে। তখন তোমার বয়স কত ছিল জান?”
“কত?”
“এই ধর চার বছর হবে। তখন তুমি অনেক দুষ্টু ছিলে।”
জাহিদ সলজ্জিত হয়ে মুচকি হাসলো। মুখে কিছু বলল না।
শারাফতের খানিকটা অস্বস্তি লাগছে। জাহিদ তার রক্তের ভাই, তার আপন ছোটচাচার ছেলে; কিন্তু তারপরও কেন যেন তাকে ঠিক আপন মনে হচ্ছে না। এর কারণটা সহজ। শারাফত বেড়ে উঠেছে কুমিল্লায়, আর জাহিদ পাকশীতে। অঞ্চলগত একটা ফারাক আছে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কারণটি হলো তারা দুইজন দুইজনকে তুমি করে বলছে। শারাফত এতে অভ্যস্ত না। কুমিল্লায় তার ছোটভাই যারা আছে সবাই তাকে আপনি সম্বোধন করে। আর সে সম্বোধন করে তুই। অস্বস্তির প্রধান জায়গাটা এখানেই- সম্বোধনে। তুই করে ডাকার মাঝে যে আপনত্ব আছে, সেটা অন্য দুই সম্বোধনে নেই।
অবশ্য এতে জাহিদকে দোষ দেওয়া চলে না। সে বড়ভাইকে তুমি করে বলে কোনো অন্যায় করছে না। এখানকার সংস্কৃতিই এরকম। গুরুজনদের বেশিরভাগ তুমি করেই বলা হয়।
আর বয়সটাও এখানে কিঞ্চিৎ ম্যাটার অব ফ্যাক্ট। শারাফত যখন বিয়ে করে তখন জাহিদের বয়স চার বছরের কিছু বেশি। বিয়ে উপলক্ষে পাকশী থেকে সবাই কুমিল্লায় গিয়েছিল। শারাফতের স্ত্রী জাহিদকে কোলে নিয়ে ঘরময় ঘুরে বেড়াত। তখন জাহিদ সবাইকে ডেকে বলত- “দেখ দেখ, আমি আমার বউয়ের কোলে উঠিছি।”
বিয়ের পর শারাফত একবার একা এখানে এসেছিল। তখন বাসা ছিল পাকশীতে। এখন সেখান থেকে সরে বাইপাসের কাছাকাছি আসা হয়েছে। সেবার শারাফত একা আসার কারণে জাহিদ কপাল কুচকে রাগ করে বলেছিল, “তোমার সাথে আমি কথা বলব না ভাইয়া। তুমি আমার বউকে নিয়ে আসনি ক্যা?”
ঐ ছোটবেলা থেকেই তুমি বলে অভ্যাস। এখন আর সেটা নিয়ে অস্বস্তিবোধ করার কিছু নেই।
স্টেশন খালি হতে শুরু করেছে। শারাফত চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এটা তার এলাকা নয়। সে এখানে বাস করেনা। অথচ কী অদ্ভুতভাবে স্টেশনটাকে তার খুব আপন মনে হচ্ছে। এটা শুধুমাত্র রেলস্টেশন নয়। এটা শারাফতের কাছে স্মৃতির স্টেশন। এখানে শুধু যাত্রীবাহী রেলগাড়ি থামে না। এখানে তার স্মৃতিবাহী গাড়িও এসে থামে।
পাকশীর সেই পুরনো বাসাটা এখন নেই। পাকশী এলাকাটাও বদলে গিয়েছে। সেখানে গিয়ে আর যথার্থভাবে পুরনো স্মৃতিগুলো হাতড়ানো যাবে না। আগে সবাই একটি বৃত্তের মাঝে আবদ্ধ ছিল। এখন বৃত্ত ভেঙেছে। নতুন বৃত্তের সৃষ্টি হয়েছে। নিজ-নিজ বৃত্তে সবাই আবদ্ধ। সেখানে স্মৃতির কতটুকু স্থান রয়েছে কিংবা জীবনের কতখানি রদবদল হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারবে না। কেননা মানুষ পরিস্থিতির সঙ্গে বদলায়। কিন্তু এই স্টেশনটা মানুষ নয়, পরিস্থিতিও নয়। এটা বদলায়নি। কালের স্বাক্ষ্য দিতে রয়ে গেছে আগের মতোই।
“ভাইয়া।”
শারাফত চমকে উঠে বলল, “হ্যাঁ বলো।”
“চলো এবার। বললাম না সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
শারাফত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “চলো।”
দুই ভাই মিলে বাড়ির পথ ধরল। স্টেশন থেকে নেমে রেললাইনের পাশ দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। রেললাইনটা অনেক উঁচুতে। কিছুদূর এগিয়ে ঢাল বেয়ে সমতলে নামতেই শারাফত হঠাৎ খেয়াল করল- তার হাতে কামাল অধিকারী সাহেবের কার্ডটি আর নেই। সেটা কোথাও পড়ে গেছে।
.
ছোটচাচার বাসায় কয়েকটা দিন খুব ভালোই কাটল। তাকে নিয়ে চাচীর নানা আয়োজন। অবশ্য চাচী তো শুধু তার চাচীই নয়, খালাও বটে। তিনি তার আগমন উপলক্ষে খাওয়া-দাওয়ার জম্পেশ আয়োজন করেছেন। সেই আয়োজন এখনো চলছে। কিন্তু এত আয়োজন শারাফতের ভালো লাগে না। নিজেকে অতিথি বলে মনে হয়। সে এসেছে ছোটচাচার বাড়িতে। তার বাবা কুমিল্লায় চলে না গেলে হয়ত এটা তারও বাড়ি হতো। সেই বাড়িতে নিজেকে অতিথি হিসেবে ভাবতে শারাফতের মনে সায় দেয় না। কিন্তু সত্যি এটাই- সে এখানে কেবলই অতিথি। দুটো দিন থাকার জন্য এসেছে; থেকে চলে যাবে।
ছোটচাচার বয়স হয়েছে। কিন্তু তিনি আগের মতই আছেন। ছোটখাটো শরীরের পাতলা একজন মানুষ। দ্রুত কথা বলার অভ্যাস এখনো আছে। পরিবর্তন বলতে শুধু তাঁর দাড়িতে পাক ধরেছে। শারাফতকে তিনি ছোটবেলা থেকেই আব্বু বলে ডাকেন। শারাফতের স্পষ্ট মনে আছে- শৈশবে ছোটচাচার সাথে সে মিরপুর চিড়িয়াখানায় গিয়েছিল। সেখানে সে হাতি আর ঘোড়ার পিঠে চড়েছিল। ঘোড়ায় চড়ার সময় সে পড়ে যেতে লেগেছিল। ছোটচাচা তাকে শক্ত হাতে ধরে ফেলেছেন।
ছোটচাচার বাড়িতে সময় ভালো কাটলেও শারাফতের মন পড়ে রইলো পাকশীতে। যদিও তার শৈশবের সমস্ত স্মৃতি কুমিল্লার একটি গ্রামীণ অঞ্চলকে ঘিরে। তবু যখন বছরে দুয়েকবার দাদাবাড়ি বেড়াত আসত, তখন এই পাকশীতেই কেটে যেত সময়। বহুল ঐতিহ্য বহনকারী অঞ্চল পাকশী, পাশ ঘেঁষে পদ্মার টান তো রয়েছেই। হার্ডিঞ্জ কিংবা লালন শাহ ব্রিজ আর নদীর ধারের ঝালমুড়ির দোকান অথবা বেলুন-গুলি। রাস্তার ধারে-ধারে দু-তিন'শ বছরের পুরনো বিশাল বৃক্ষ। সবকিছু চোখের সামনে স্পষ্ট ছবি হয়ে ভাসে।
শারাফত ছোটচাচাকে জিজ্ঞেস করল, “পাকশী যাওয়া হয় কাকা?”
ছোটচাচা স্বভাবমত দ্রুত বললেন, “যাওয়া হয়। কিন্তু আগের মত বেশি যাওয়া হয় না। এখন বাবা এখানে শেকড় গেঁড়েছি। এখান থেকে কোথাও তেমন যাওয়া হয় না। মানুষ হচ্ছে গাছের মতো। যেখানেই যাক শেকড় গজাবেই।”
ছোটচাচা ঠিকই বলেছেন। জীবন কোথাও থেমে থাকে না। পুরাতন বসতি ছেড়ে এসে নতুন বসতি গড়লে পুরনোটার আধিপত্য ধীরেধীরে হ্রাস পেতে থাকবে- এটাই স্বাভাবিক। মানুষ অতি দ্রুত অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
শারাফত ঠিক করল আজ সে পাকশী যাবে। এখানে আসার আজ চারদিন হয়ে গেল। অথচ এখনো পাকশী যাওয়া হলো না। এটা অন্যায়। সে মূলত পাকশীর টানেই এখানে এসেছে। ছোটচাচাকে বলতেই তিনি খানিকটা আক্ষেপের সুরে বললেন, “যাও ঘুরে আসো। এখানে এসে মাঝেমাঝে মনে হয় ভুলই করেছি। পাকশীই ভালো ছিল। ওখানে থেকে যেতাম, তাহলে আর ওখানে ঘুরতে যেতে হতো না। কখন যাবে তুমি?”
“বিকালে।”
“যাবার সময় জাহিদকে সঙ্গে নিয়ে যেও। আমার একলোককে কিছু কাগজপত্র দিতে হবে। ওর হাত দিয়ে পাঠাব।”
“আচ্ছা।”
সেদিন বিকেলে শারাফত জাহিদকে নিয়ে পাকশী চলে গেল। বাইপাস থেকে খুব বেশি দূরে নয়। অটোরিকশায় যেতে আধঘন্টা সময় লাগে। অটো এসে থামল হাশেম আলী ইন্সটিটিউটের ঠিক সামনে। শারাফত এখানে নেমে গেল। জাহিদ আরেকটু সামনে যাবে- পাকশী বাজারে। সেখানের কাজ সেরে ফিরে আসবে সে।
শারাফত ধীর পায়ে হেঁটে পাকা রাস্তা থেকে নিচে নেমে গেল। হাতের বাঁপাশে সেজফুপুর দোকান ছিল। যতবারই আসা হতো, ততবারই দাদা-দাদির আগে সেজফুপুর সাথেই দেখা হয়ে যেত। এখন সেখানে অন্যজনের বাসাবাড়ি। শারাফত সামনে এগিয়ে গেল।
ইন্সটিটিউটের সামনে বসার জন্য সিমেন্ট দিয়ে বাঁধাই করা দুটি 'সীট' আছে। শারাফত সীটের ওপর পা তুলে বসল। সামনেই ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট। এই কোর্টে সে শৈশবে ব্যাডমিন্টন খেলত। সেজফুপুর তিনটি মেয়ে। একজন বড়, দু'জন ছোট। তিনজনই ছিল তার ব্যাডমিন্টন খেলার সঙ্গী। মাঝেমধ্যে ছোটচাচাও খেলায় যোগ দিতেন।
সেজফুপুর মেয়েগুলো বড় হয়ে যাওয়ার পর ব্যাডমিন্টন খেলা বন্ধ হয়ে গেল। সেখানে এখন অন্য শিশুরা দৌড়াদৌড়ি করে। শারাফতও ততদিনে বড় হয়ে গেছে। অন্তত সিগারেট খাওয়ার মত বড়। সন্ধ্যার পর সে সীটের উপর বসে সিগারেট খাওয়ার সুযোগ খুঁজত। কিন্তু কখনোই সুযোগ মিলত না। কারণ একটু পরপরই চেনাজানা মানুষজন তার পাশ দিয়ে হেঁটে যেত।
আজ তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার মত চেনা মানুষ নেই। যারা যাচ্ছে সবাই অচেনা। শারাফত নিঃসঙ্কোচে সিগারেট ধরাল। প্রচণ্ডরকম এক স্তব্ধতা এসে ঘিরে ধরল তাকে।
সিগারেট শেষ হলে শারাফত আমতলার মাঠের দিকে চলে গেল। এখানে অবশ্য একই চিত্র। স্কুল-কলেজের ছেলেরা গ্রুপ করে যার-যার মত করে ফুটবল খেলছে। বিশাল মাঠ। কেউ কাউকে বিরক্ত করছে না। খেলাটা একই আছে, কেবল বদলেছে খেলোয়াড়।
এখানে শারাফতের বন্ধু কেউ নেই। তার এই মাঠে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। তবুও এই মাঠ তার পাকশীর স্মৃতির অপরিহার্য অংশ। মাঠজুড়ে খেলোয়াড়দের তোড়জোড়, কিছু দর্শকের হইচইও আছে। তবু শারাফতের মনে হচ্ছে সারা মাঠ ফাঁকা। কেউ নেই এখানে। সব খালি। এক বিরাট শূন্যতা। সীমাহীন নিস্তব্ধতা।
.
বাজারের কাজ শেষ করে জাহিদ ফিরে এসে দেখল শারাফত ভাইয়া মাঠের একপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাইয়ার হাতে সিগারেট। অলস ভঙ্গিতে টান দিচ্ছেন। তিনি নিরল টাইপ মানুষ জাহিদ জানে। কিন্তু এবার তাঁকে একটু বেশিই গম্ভীর দেখা যাচ্ছে।
জাহিদ কাছে যেতেই শারাফত ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কাজ শেষ জাহিদ?”
“হ্যাঁ ভাইয়া, শেষ।”
“চলো তাহলে।”
“এত তাড়াতাড়ি?”
“হুঁ।”
“তোমার বেড়ানো শেষ?”
“পাকশীতে আমার বেড়ানো অনেক আগেই শেষ। তুমি চলো আমার সঙ্গে।”
“কোথায় যাবে?”
শারাফত একটু দম নিয়ে বলল, “কবরস্থানে।”
দুই ভাই মিলে পাকশী রেলওয়ে গোরস্থানে এসে ঢুকল। অতি বিশাল এই গোরস্থান। তার একটি ক্ষুদ্র অংশে সেই মানুষটির কবর। শারাফতের বাবা আর জাহিদের বাবা বড়-ছোট দুই ভাই। মাঝখানে আরেকজন ছিলেন। তিনি চলে গেছেন বহুবছর আগে। তিনি ছিলেন শারাফতের কাছে পাকশীর প্রধান আকর্ষণ। শারাফত তাঁকে নিজহাতে কবরে নামিয়েছে। সেইসাথে মাটিচাপা দিয়েছে তার পাকশীর প্রধান আকর্ষণ।
মেজচাচার কবরের কোনো নামফলক নেই। কোনো চিহ্নও নেই। ঠিক কোন জায়গাটায় কবর দেয়া হয়েছে বোঝার উপায় নেই। তবে গোরস্থানের সরু ইটের রাস্তাটার পাশে কবর ছিল এটা মনে আছে। শারাফত সেই রাস্তাটায় এসে দাঁড়াল। মেজচাচার একটি কবর সে মনে-মনে ধরে নিয়েছে। গা ছমছম করছে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কাকা কবর থেকে বেরিয়ে এসে বলবেন, আব্বু কেমন আছ।
মেজচাচা যখন মারা যায় জাহিদ তখন খুবই ছোট। সম্ভবত দেড় বছর হবে বয়স। সে তাঁকে বাবা ডাকত। বাবার কোনো স্মৃতি তার মনে আছে কি-না কে জানে! শারাফত বলল, “কাকার কথা তোমার মনে আছে জাহিদ?”
জাহিদ দু'পাশে মাথা নাড়িয়ে বলল, “না। তবে আব্বু বলেছে আমি নাকি বাবার জন্য পাগল ছিলাম। বাবা কোলে নিলে আমার নাকি কান্না বন্ধ হয়ে যেত।”
“শুধু তোমার কান্না নয়, কাকা কোলে নিলে পৃথিবীর সব শিশুই কান্না বন্ধ করতে বাধ্য। উনাকে অপছন্দ করে এমন মানুষ পাকশীতে নেই। কাকা ইপিজেডে চাকরি করতেন। তার সহকর্মীদের অনেকেই ছিল চাইনিজ। সেই চাইনিজরাও কাকার মৃত্যুতে চোখের পানি ফেলেছে। তবে তাঁকে শিশুরাই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করত। একদিনের ঘটনা বলি শোনো।”
জাহিদ শারাফত ভাইয়ার কথায় মন দিল।
“কাকা মারা যাওয়ার পরের কথা। তোমার তখন আড়াই-তিন বছর বয়স। আমি পাকশীতে বেড়াতে এসেছি। তুমি সারাক্ষণ আমার চারপাশে ঘুরঘুর করতে। আমার মাঝেমাঝে বিরক্ত লাগত। কারণ তুমি আশেপাশে থাকলে আমি সিগারেট খেতে পারি না। তোমার সামনে খেলে ঝুঁকি আছে- যদি ছোটকাকাকে বলে দাও। এইজন্য একদিন তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য বললাম, আমার পিছে-পিছে এসো না। আমি তোমার বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছি। তোমায় দেখলে বাবা খুব রাগ করবেন। তুমি বললে, বাবা তো কবরে পঁচে হাড্ডি হয়ে গেছে। আমি তখন তোমাকে কিছুই বলতে পারিনি। কিন্তু তুমি কান্না শুরু করেছ। তুমি বাবার কবরে যাবেই যাবে। ছোটবেলায় তোমার প্রচণ্ড জেদ ছিল। না যাওয়া পর্যন্ত তোমার কান্না বন্ধ হবে না। দাদু, ফুপু, তোমার আম্মু কেউ তোমার কান্না বন্ধ করতে পারেনি। শেষমেশ আমি দাদার সাইকেল বের করলাম।”
শারাফত ভাইয়া থামলেন। জাহিদ অবাক হয়ে দেখল ভাইয়ার চোখে পানি এসে গেছে। তার নিজেরও কান্না পাচ্ছে। আবার লজ্জাও করছে। ভাইয়ার সামনে কেঁদে ফেললে তার খুবই লজ্জা লাগবে। এদিকে সে ঘটনাটা শোনার লোভও সামলাতে পারছে না।
“তারপর কী হলো ভাইয়া?”
“তুমি তখন এতই ছোট যে সাইকেলে শক্ত হয়ে বসতে পারতে না। আমি তোমায় একহাতে কোলে নিয়ে আরেকহাতে সাইকেলের হ্যাণ্ড ধরে কবরস্থানে চলে গেছি। কাকার কবরের সামনে তুমি-আমি একসঙ্গে দাঁড়ালাম। তুমি আমার আঙুল ধরে দাঁড়িয়ে ছিলে। আমি তোমায় আমার মুখে-মুখে সূরা পড়িয়েছি, দোয়া পড়িয়েছি। একসঙ্গে কাকার জন্য হাত তুলে দোয়া করেছি।”
এবার জাহিদের চোখ ছলছল করে উঠল। সে চোখ নামিয়ে ফেলল। পাছে শারাফত ভাইয়া তার অশ্রুসজল চোখ দেখে ফেলে।
“জাহিদ।”
“হ্যাঁ ভাইয়া।”
“তুমি তো মাদরাসায় পড়েছ, তাই না?”
“হ্যাঁ ভাইয়া।”
“তাহলে আজ তুমি দোয়া পড়ো। আমি তোমার সঙ্গে শামিল হই।”
জাহিদ কিছু না বলে হাত তুলে মোনাজাত ধরল। দোয়া করার সময় তার চোখ থেকে গলগল করে পানি বেরিয়ে এলো। কিন্তু এবার আর তার লজ্জা লাগল না। মোনাজাতের কান্নায় লজ্জা নেই।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কবর জিয়ারত শেষে গোরস্থান থেকে বেরিয়ে দুই ভাই পাকশী থেকে আবার বাইপাসে ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু পথিমধ্যেই খুব আকস্মিকভাবে ইপিজেড গেটের মুখে অটোস্ট্যাণ্ডে কামাল অধিকারী সাহেবের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়। তিনি প্রথমে মনক্ষুন্ন হলেন পাকশী এসেও শারাফত তাঁকে ফোন করেনি বলে। শারাফত তাঁকে সত্যিটাই বলল, “আপনার কার্ডটি হারিয়ে ফেলেছি ভাই। এইজন্য ফোন করা হয়নি।”
এই কথার পর কামাল সাহেব আর অভিযোগ করেননি। তিনি শারাফতকে একপ্রকার টেনে নিয়ে যান টি-স্টলে। জাহিদও তাদের সঙ্গে স্টলে গিয়েছে। কিন্তু সে সঙ্গত কারণেই তাদের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রেখে চলছে। বড়দের সাথে একসঙ্গে বসে চা খেতে তার ইচ্ছে করে না।
চায়ের সঙ্গে সিগারেট খাওয়া শারাফতের পুরনো অভ্যাস। সে অভ্যাসের দাসত্ব করে চলেছে। কামাল সাহেব সিগারেট খান না। তিনি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি পাকশীর ঠিক কোথায় জন্মেছিলেন মনে আছে?”
শারাফত বলল, “কী একটা পাড়া ছিল নাম, মনে পড়ছে না। এখন সেটা ইপিজেডের ভিতরে ঢুকে গেছে।”
“ও আচ্ছা। তা পাকশী কেমন দেখলেন আজ? যদিও আগের মতো নেই। অনেক বদলে গেছে।”
শারাফত সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে বলল, “পাকশী তো আমার কাছে সেদিনই বদলে গেছে যেদিন আমার কাকা পাকশী ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি সাধারণের ভেতর এক অসাধারণ মানুষ ছিলেন। পাকশী জানেনা সে কী হারালো। পাকশীতে আর কখনো আমার কাকার পায়ের চিহ্ন পড়বে না- এটা পাকশীর এক বিরাট ব্যর্থতা।”
কামাল সাহেব হকচকিয়ে গেলেন। শারাফত আচমকা অপ্রাসঙ্গিক ভাবে এই কথাগুলো বলে বসবে- এর জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।
.
শারাফত ছোটচাচার বাড়িতে আরও দু'দিন থাকল। তারপর তার ফেরার পালা। বাইপাস থেকে সকাল নয়টার আগে ট্রেনে উঠতে হবে। ছোটচাচা তাকে এগিয়ে দেবার জন্য স্টেশনে আসতে চেয়েছিলেন। সে মানা করেছে। তাকে এগিয়ে দিতে কারোর আসতে হবে না।
কাকা মারা যাবার পর বাইপাস স্টেশন থেকে শারাফত যতবারই ট্রেনে উঠেছে, ততবারই তার মন খারাপ হয়েছে। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। কাকা বেঁচে থাকাকালীন তিনিই সবসময় স্টেশনে এসে তাকে ট্রেনে তুলে দিতেন। আজ সেই ট্রেনও আছে, স্টেশনও আছে; শুধু সেই তুলে দেবার মানুষটা নেই। তুলে দেবার একজন লোক বিদায় নিয়েছেন। বাকি যে একজন আছেন, তিনি থাকুক। তিনি তুলে দিতে না আসুক। কেননা তিনিও যদি চলে যান তাহলে শারাফত একসাথে দুইজনকে বাইপাস স্টেশনে ট্রেন ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত আজীবন খুঁজতে থাকবে। বাইপাস এতটাও বড় স্টেশন নয় যে দুইজন মানুষের স্মৃতির ভার বইতে সক্ষম হবে।
ট্রেন চলছে। দরজার কাছে বসে আছে শারাফত। হাতে যথারীতি সিগারেট। চোখে সামান্য পানি। পাকশীর যেই জায়গাটায় সে সেজফুপুর মেয়েদের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলত, সেই জায়গাটাতেই কাকার খাটিয়া রাখা হয়েছিল। শারাফত গিয়ে খাটিয়ার পাশে দাঁড়াতেই তার হাঁটু ভেঙে এসেছিল। দাঁড়ানোর ক্ষমতা হারিয়েছিল কিছুক্ষণের জন্য। সেই জায়গাটি তবে তার প্রচণ্ডরকম স্তব্ধতার কারণ হবে না কেন?
পাকশীর যেই মাঠে স্কুল-কলেজের ছেলেরা ক্রিকেট ফুটবল খেলে, সেই মাঠেই কাকার জানাজা পড়ানো হয়েছিল। জানাজা পড়িয়েছিলেন স্বয়ং ছোটচাচা। সেই মাঠে হাজার খেলোয়ার হাজার দর্শক থাকলেও আজীবন শারাফতের কাছে সেটা শূন্য তেপান্তর। একটা খালি মাঠ। বিরাট শূন্যতার মাঠ।
শারাফত লেখক মানুষ। তার কল্পনাশক্তি ভালো। তবে তার ডায়েরি লেখার অভ্যাস নেই। সে মনে-মনে একটা ডায়েরি কল্পনা করে নিল। সেখানে সে কল্পনার কলম দিয়ে লিখল, “আপনাদের সাথে আমার রক্তের টান। আপনাদের প্রতি আমার রাগ আছে, ভালোবাসা আছে। কিন্তু সবচাইতে বেশি যা আছে তা অভিমান। আপনারা সেটা কখনো টের পাননি। আর কখনো পাবেনও না। আমি অভিমান দেখিয়ে বেড়ানোর মানুষ না।”
.
.
লেখক : বিবাগী শাকিল
(২১/০৬/২০২২)
মক্কা, সৌদি আরব।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৫৮