somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোটা সংস্কার আন্দোলনের চরিত্র হননের বহুমুখী অপচেষ্টা

২৪ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ইংরেজি Defamation শব্দটাকে উন্নত বিশ্বে একটা সিরিয়াস অফেন্স হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটা একই সঙ্গে দেওয়ানী এবং ফৌজদারী অপরাধ। আমাদের দেশের সরকার অবশ্য আইন কানুন প্রণয়নের ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বকেই অনুসরণ করে, তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিজস্ব জংলী বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করে। বর্তমানের কোটা সংস্কার আন্দোলন বা সংক্ষেপে কোটা আন্দোলন এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরন।

কোটা আন্দোলন নিয়ে তোলপাড় দেশে; সারা বিশ্বই কম-বেশী এটা নিয়ে তাদের উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেছে। বর্তমান জেনারেশান, যেটা Gen Z নামে দুনিয়াব্যাপী পরিচিত, তাদেরকে বাংলাদেশে আমরা অনেকেই ব্যঙ্গ করে এতোদিন বলেছি..........ফেইসবুক, প্রশ্নফাস, টিকটক জেনারেশান। এদের বুদ্ধিবৃত্তি, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু, দেশপ্রেম ইত্যাদি নিয়ে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন তুলেছি। কিন্তু এরা আজ দেখিয়ে দিয়েছে যে, এরা অকুতোভয়; এরাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। এরা স্বৈরাচারের অনাচারের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছে। এদের বেশীরভাগই সরকারী চাকুরীর চাইতে বেসরকারী চাকুরীর বা বিদেশে স্থায়ী হওয়ার পক্ষপাতি। তারপরেও এরা কোটা আন্দোলন করছে, কারন এরা অনুধাবন করেছে কোটা নামের বৈষম্যকে। দেখেছে স্বৈরাচারী সরকার এই কোটাকে ব্যবহার করছে একটা তাবেদারী প্রশাসন গড়ে তোলার কাজে। যার ফলে আজ আমরা দেখছি, প্রতিটা বাহিনীর প্রধান বা শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা, আমলারা আওয়ামী লীগের দলীয় ভাষায় কথা বলছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদেরকে দেশদ্রোহী, নাশকতাকারী বলছে আর ছাত্রলীগ-যুবলীগের কর্মকান্ড নিয়ে মুখে কুলুপ এটে রেখেছে।

এই আন্দোলনে শহীদ হয়ে যাওয়া রংপুরের আবু সাঈদ তার ফেইসবুক ওয়ালে লিখে রেখেছিল, ''যতোদিন বেচে আছেন, মেরুদন্ড নিয়ে বাচুন''। আরেক শহীদ ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের ছাত্র ১৭ বছরের ফারহান ফাইয়াজ রাতুল। তার ফেইসবুক ওয়ালে লেখা, ''One day you'll leave this life behind, so live a life you'll remember''. কি গভীর এদের জীবন-দর্শন!!! এদেরকে দেখে বোঝা যায়?

সরকার গেস্টাপো কায়দায় এখন এদের, এদের আন্দোলনের চরিত্র হননে নেমেছে। আন্দোলনকারী ছাত্রদেরকে শুরুতেই উস্কে দিয়েছিল রাজাকার বলে। সেনাবাহিনী প্রধান, আনসারের মহাপরিচালক আওয়ামী সুরেই কথা বলছে, কারন এদের আছে সরাসরি আওয়ামী কানেকশান। তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাত বলেছে, ছাত্ররা নাকি নেশা করে আন্দোলনে নামে। যার হিরো আলমের সাথে জেতার মুরোদ নাই, সে আসে ছাত্রদের নিয়ে আবোল-তাবোল কথা বলতে!! কত্তোবড় ফাউল!!! দেখেন, সরকার একবার বলছে ছাত্ররা ডেটা সেন্টার পুড়িয়ে দিয়েছে; আবার বলেছে, ছাত্ররা সাবমেরিন কেবল কেটে দিয়েছে, ফলে দেশ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। পলক বলেছিল, মেরামতের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিক হলেই ইন্টারনেট আবার চালু হবে। আরে......সব তো ঠিকই ছিল রে। নিজেরা বন্ধ করে আবার নিজেরাই খুলেছো। এই হলো অবস্থা!!! প্রমাণ দেখেন।



সরকার নেট আংশিক খুলে দিয়েছে। এখন আস্তে আস্তে বহুকিছুই সামনে আসবে।

এতো গেলো সরকারের ক্রিয়াকর্ম। এই ব্লগে ওপার বাংলার এক পোষা হনুমানের বাচ্চা আছে। মোদির পোষা। সেও নেমেছে আন্দোলনকারীদের চরিত্র হননে। আন্দোলনকারীরা নাকি কেউ কেউ জঙ্গী। বাংলায় একটা বাগধারা আছে, ''চালুন সুইকে বলে, তোর পাছায় ফুটা''। এই হনুমানের বাচ্চার পাছায় শত শত ফুটা, তার কোন খবর নাই, সে এসেছে সুইয়ের একটা ফুটার হিসাব নিতে!!! অবশ্য মোদির পদলেহি এক চেলার কাছ থেকে এই ধরনের মিথ্যাচার আর উগ্রতাই আশা করা যায়।

এদিকে এপার বাংলার, অর্থাৎ বাংলাদেশের কিছু বনিতা-হীন আবাল বৃদ্ধ আর কতিপয় আওয়ামী দালালও কম যায় না। এরাও সক্রিয় আছে, তাদের উপর অর্পিত মহান দায়িত্ব পুরোদমে পালন করছে। এরা কোটা আন্দোলনকে লোটা আন্দোলন, বিএনপি, জামাত-শিবিরের নাশকতা, দেশে অরাজকতা সৃষ্টিকারী ইত্যাদি উপাধীতে ভূষিত করছে। দালালী করতে করতে এদের বিবেক, মানবতা, চৈতন্য কিংবা মানবিক বুদ্ধিবৃত্তি..........কিছুই আর কাজ করছে না। এরা পরিণত হয়েছে মানুষরুপী এক ধরনের জানোয়ারে!!! এই জানোয়াররা জানে না, সবকিছুরই একটা শেষ আছে।

আন্দোলনরত ছাত্রদের বলছি, আমরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা দেশে এক স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। অনেক ত্যাগের পর জয়ীও হয়েছিলাম। সেই স্বৈরাচার শেষ পর্যন্ত কার্ফ্যু দিয়েও শেষ রক্ষা করতে পারে নাই। তোমাদের জয়ও সুনিশ্চিত। হতাশ হবে না, আমাদের ঐকান্তিক দোয়া থাকবে তোমাদের জন্য।

কোটা দিয়ে করবো কি? আমার ভাই ফিরবে কি?
তোর কোটা তুই নে, শহীদ ভাইদের ফিরিয়ে দে।


শিরোনামের ছবি ''আজকের পত্রিকা''র সৌজন্যে। পিস্তল লোড করছে একজন হেলমেট বাহিনীর সদস্য। আজকের এই চেতনা-প্রেমিকই আগামীর ভবিষ্যত।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×