প্রিয় আবদুর রহমান, আমাদের
ক্ষমা করে দিও.....
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’
ইউনিটের
ভর্তি পরীক্ষায় আবারও প্রথম
হয়েছে একজন মাদ্রাসার ছাত্র।
নাম
আবদুর রহমান। প্রথম হতে তাকে ৪২
হাজার শিক্ষার্থীকে পিছন
ফেলতে হয়েছে। এদের
একটি উল্লেখযোগ্য অংশ
এসএসসি ও
এইচএসসিতে জিপিএ গোল্ডেন
ফাইভ
বা ফাইভ পাওয়া। যাদের
মধ্যে নটরডেম, ভিকারুন্নেসা নূন,
রাজউক মডেল কলেজ, হলিক্রস,
আইডিয়াল কলেজ, সকল ক্যাডেট
কলেজ,
সকল ক্যান্টনমেন্ট কলেজ সহ
নামী দামী কলেজসমূহের
শিক্ষার্থীরা আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভর্তি পরীক্ষার সবচেয়ে কঠিন
অংশ
ইংরেজি। অংশগ্রহণকারীদের ৯০
শতাংশ ফেল করেছে। এর মধ্যে শুধু
ইংরেজিতে ফেল করেছে ২২
হাজার।
তাদের মধ্যে উল্লেখিত
নামী দামী কলেজের
শিক্ষার্থীরাও
আছে।
আবদুর রহমান
ইংরেজিতে ভালো করেছে।
৩০-এ
পেয়েছে ২৮.৫০। সম্ভবত
ইংরেজিতে প্রাপ্ত
এটা সর্বোচ্চ
নম্বর।
এরপরও
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে পড়তে পারবে না আবদুর
রহমান।
পড়তে পারবে না বাংলা,
সাংবাদিকতা, আন্তর্জাতিক
সম্পর্ক
বা এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ
আরো বিষয়সমূহে। দোষ
সে মাদ্রাসার
ছাত্র। কর্তৃপক্ষ যুক্তি দাড়
করিয়েছেন
মাদ্রাসার
ছাত্ররা উচ্চমাধ্যমিক
পর্যায়ে বাংলা ও
ইংরেজি বিষয়ে ২০০
নম্বর পড়ে নাই। পড়েছে ১০০ নম্বর।
সিলেবাসে কোন বিষয়ে কত
নম্বর
থাকবে এইটা মাদ্রাসার
ছাত্ররা ঠিক
করে না, ঠিক করে রাষ্ট্র। আর
রাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের
কারনে বলি হতে হবে মাদ্রাসার
শিক্ষার্থীদের ?
মেধা থাকা সত্ত্বেও ?
আমি জীবনে কোন
পর্যায়ে মাদ্রাসায়
পড়ি নাই। স্কুল, কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। এর পরও
আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্ত অন্যায়। এই
অবিচারের প্রতিবাদ করা মানুষ
হিসাবে আমাদের দায়।
বাংলাদেশ সংবিধানের সপ্তম
তফসিলে সংযোজিত
‘স্বাধীনতার
ঘোষণাপত্রে’
বাংলাদেশকে স্বাধীন
করার উদ্দেশ্য
হিসাবে লেখা হয়েছে, “
বাংলাদেশের জনগণের জন্য
সাম্য,
মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক
সুবিচার
নিশ্চিত করণার্থে, সার্বভৌম
গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের
প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করলাম”।
অনুচ্ছেদ-২৭ এ বলা হচ্ছে, “ সকল
নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান
এবং আইনে সমান আশ্রয়লাভের
অধিকারী”। অনুচ্ছেদ- ২৮ (৩) এ
বলা হয়েছে, “ কেবল ধর্ম,
গোষ্ঠী, বর্ণ,
নারী পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের
কারণে জনসাধারণের কোন
বিনোদন
বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের
কিংবা কোন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠ
ানে ভর্তির বিষয়ে কোন
নাগরিককে কোনরূপ অক্ষমতা,
বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের
অধীন
করা যাইবে না”। অনুচ্ছেদ-২৭ ও ২৮
মৌলিক অধিকার।
আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত কেবল
অমানবিক
নয়, সংবিধান ও মৌলিক
অধিকার
পরিপন্থী।
মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থা ও
সিলেবাসের সংস্কার
নিয়ে উদ্যোগ ও
আলোচনা হতে পারে।
ত্রুটি থাকলে নেয়া যেতে পারে সংশোধনের
পদক্ষেপও। কিন্তু প্রচলিত শিক্ষার
পাশাপাশি ধর্মীয়
শিক্ষা গ্রহণের
ব্যাপারে পারিবারিক আগ্রহের
কারণে অনেক
মেধাবী শিক্ষার্থী মাদ্রাসায়
পড়ে।
মাদ্রাসায় পড়া সত্ত্বেও তাদের
একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্কুল
কলেজে পড়ুয়া অনেকের
চেয়ে মেধাবী ও
যোগ্য। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের
ভর্তি পরীক্ষা এবং অনার্স ও
মাস্টার্সের
ফলাফলে তা পরিস্কারভাবে প্রমাণিত।
মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও
একজন
শিক্ষার্থীকে তার পছন্দের বিষয়
পড়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত
করা কি মানবিক?
এতবড় একটা অন্যায় হচ্ছে, অথচ অন্য
অনেক তুচ্ছ বিষয়ে অতি সোচ্চা
বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়, সুশীল
সমাজ,
গণমাধ্যম, মানবাধিকারকর্মী
রা এ
বিষয়ে নীরব।
কেন????????
প্রিয় আবদুর রহমান, আমাদের
ক্ষমা করে দিও... . .
-ফেসবুক থেকে