আজ আমার ত্রিশা। যখন ছোট ছিলাম অনেক কিছুতে বিধি-নিষেধ ছিল, গাইতে মানা, বেশী দূরে যাইতে মানা, একা একা হাসেতে মানা, বেশী কিছু করতে মানা, মেয়ে মানুষ ধরতে মানা, একটাতেই কেবল মানা ছিল না-পড়তে; অবশ্য সেটা নিজে থেকেই বাদ দিয়েছিলাম। নিজেকে মেধাবী মনে করেছিলাম কিন্তু ভুলেই গিয়েছিলাম স্কুলজীবনের অধিকাংশ সময় আমাকে কান ধরে দাড়িয়ে থাকতে হয়েছে!
আপনি মেধবী হোন বা না হোন আমাদের মধ্যেবিত্তদের বেঁচে থাকার প্রয়োজনে সপ্ন দেখতে হয়। কখন যে সপ্ন দেখাটা অভ্যাসে পরিনত হয় তা ঠিক সময়ে বোঝা যায় না। তাই অভ্যাস গত কারনে একটা কিছু হওয়ার সপ্নে বিভোর ছিলাম আর সেটাই এখন দুঃসপ্নের মতো ঝেকে ধরেছে আমাকে, বেড়োতে দিচ্ছে না। এদিকে বয়সের সাথে বাড়ছে দায়িত্ববোধ, পল্লা দিয়ে বাড়ছে বেঁচে থাকার সরঞ্জামের দাম, এর মধ্যে আবার বৃথা সপ্ন দেখার অপরাধবোধ নিয়ে কাটাতে হবে সারাজীবন। দহন কাল শুরু হয়েছে।
এপিজে আব্দুল কালাম বলেছেন, “যে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারে না, সে অদক্ষ”। আমি হয়ত তাই। বয়স নির্দিষ্ট ছিল, সঠিক সময়ে গন্তব্য ঠিক করতে পারিনি তাই পৌছানো হলো না। নিয়তিতে আমার তেমন বিশ্বাস ছিল না ইদানিং বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, গন্তব্য নিয়তির হাতে দিয়ে দিয়েছি, আর কতো? আমি আমার বন্ধুদের কাছে অনেক কৃতজ্ঞ তারা এই কঠিন সময়ে অনেক সহযোগীতা করেছে, তবে বন্ধুরা আমাকে ভালোবাসে না করুনা করে তা ঠিক বুঝতে পারি না। বোধ শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। হয়ত করুনাই করে, আজকের এই সফল পরিপাটি কর্পোরেট সমাজে অদক্ষ লোককে কে ভালোবাসে বলেন।
আমার এলাকার ডাকপিয়ন কোনদিনই বাসায় এসে চিঠি-পত্র দেয়নি, বিভিন্ন দোকানে দিত, সেখান গিয়ে মাঝে মধ্যে দেখে আসা লাগত কোন চিঠি আছে কিনা, কোন কোন সময় অন্য কারোর ঠিকানায় দিয়ে আসত, অনেকবার বাড়ী চিনিয়ে দিয়েছি কাজ হয়নি, মজার বিষয় ইদানিং সে আমাকে চিনতে পেরেছে নাম দেখেই ঠিক ঠিকানায় চলে আসছে আর ঠিক তখনই তাকে বলতে হবে আর আসতে হবে না, মেয়াদ শেষ। পৃথিবীতে আমার বয়স ত্রিশ পূর্ন হলো আজ, পৃথিবীর বাইরে কতো কে জানে, আর কতো দিন আছে তাও কে জানে। আমাদের গড় আয়ু বেড়েছে, কর্মদক্ষতা বেড়েছে, বেড়েছে চাকুরির থেকে অবসরের মেয়াদ, শুধু বাড়েনি চাকুরিতে ঢোকার বয়স। কোটা মুক্ত হাজার, লক্ষ বাঙ্গালীর সপ্ন থেমে যাবে ত্রিশেই। অন্যদিকে বিশেষ কোটাভুক্তরা কোটা সুবিধা ও বয়সের সুবিধা দুটোই পাবে।
আমার মতো ভাবুক লোকগুলো আর কিছুদিন একটা কিছু হবে ভেবে কাটালেই কি ক্ষতি হতো, অবসরের তো একটা সময় আছে, ভবনার মধ্যে এভাবে দাড়ি টানা ঠিক হয়নি। যাই হোক ত্রিশুল মার্কা ত্রিশ পূর্ন হলো আজ। বিধাতাকে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ধন্যবাদ। শুভ জন্মদিন………ত্রিশা……………..
এবার বুঝেছি সখা, এ খেলা কেবলই খেলা–
মানবজীবন লয়ে এ কেবলই অবহেলা।।
তোমারে নহিলে আর ঘুচিবে না হাহাকার–
কী দিয়ে ভুলায়ে রাখো, কী দিয়ে কাটাও বেলা।।
বৃথা হাসে রবিশশী, বৃথা আসে দিবানিশি–
সহসা পরান কাঁদে শূন্য হেরি দিশি দিশি।
তোমারে খুঁজিতে এসে কী লয়ে রয়েছি শেষে–
ফিরি গো কিসের লাগি এ অসীম মহামেলা।।
কবিতার কৃতজ্ঞতাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মে, ২০১৬ ভোর ৪:৩২