রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামটা শুনলেই যে ছবিটা চোখে ভাসে তা হল মুখে লম্বা সাদা দাড়ি, এলোমেলো আলখেল্লা পরিহিত একজন মানুষ। আমারও তাই হত। তবে সুখের বিষয় বলেন আর দুঃখের বিষয় বলেন এখন আর ওই ছবিটা চোখে ভাসে না। এখন দেখি সুদর্শন এক যুবককে। যখন প্রথম তার লেখা পড়ি তখন থেকে এই অবস্থা।
আমি রবীন্দ্রনাথের যে বইটা জীবনে প্রথম পড়েছিলাম তার নাম ছিল নৌকাডুবি। তখন আমি আমদের গ্রমের বাড়িতে। টিভি আছে চ্যানেল নাই, মানুষ আছে কথা বলার মত লোক নাই। মহা সমস্যা। তখন খেয়াল করলাম, বাড়িতে একটা বিশাল আলমারি। বই আর বই। বেছে বেছে নৌকাডুবি কেন নিয়েছিলাম বলতে পারবো না। কিন্তু বইটা একটানে পড়েছিলাম। পড়ে কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এই সময়টুকুতে মনেহয় আমার মনের ক্যানভাসে রবীন্দ্রনাথ মানুষ্টার চেহারা বদলে গিয়েছিল। ৩০ বছর কমে গেল তার বয়স। আমি জানি তা আর বাড়বে না।
এই মানুষটার প্রতি অন্যরকম শ্রদ্ধা অনুভব করি। তাকে নিয়ে কেউ কিছু বললে মাথা ঠিক থাকে না।
কিছু ঘটনা উল্লেখ করি। আমার এক সিনিয়র ভাই। একদিন দেখি উনি রবীন্দ্রনাথ নিয়ে কিছু আলোচনা(!) চালাচ্ছেন ছোট ভাইদের সাথে। বিষয় রবীন্দ্রনাথের সাথে তার ভাবীর সম্পর্ক। কিছু বলতে পেরেছিলাম না সেদিন সিনিয়র ভাই বলে। সিনিয়ররাই যদি ছোটদের এইসব ভ্রান্তি শিক্ষা দেই তো আমরা যাব কই?
আমি রবীন্দ্রনাথের জীবনী সম্পর্কিত যতগুলো বই পড়েছি কোথাউ কাদম্বরী-রবীন্দ্রনাথের মধ্যে অনৈতিক কোন সম্পর্কের উল্লেখ পাইনি। দেবর ভাবির সম্পর্কে হাসি-তামাসা, রোমান্স থাকবেই। তাদেরও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। নিঃসঙ্গ মানুষ কারও সহচর্য পেলে সম্পর্কটা একটু গভীর হয়। তাই হয়েছিল।
রবীন্দ্রনাথের বিয়ে নিয়েও শত গুজব। মৃণালীনি দেবিকে তিনি পছন্দ করতেন না। তকে জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মৃণালীনির সহচর্য তিনি পছন্দ করতেন না ইত্যাদি। এটা ঠিক রবীন্দ্রনাথ হতাশ হয়েছিলেন ৯ বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করতে হবে শুনে, যে কিনা তার ভাগ্নির সমবয়সী। কিন্তু তিনি কোন প্রতিবাদ করেছিলেন না। আনন্দের সাথে তিনি বিয়ের পিড়িতে বসেছিলেন। একজন লেখকের সংসার যেমন হওয়ার কথা তার চেয়ে মোটেও ব্যতিক্রম ছিল না রবীন্দ্রনাথের সংসার।
কিছু মানুষ আছে বিভ্রান্তি ছড়াতেই এদের মজা। মুর্খের মত বড়গলায় কথা বলে জ্ঞান জাহির করতে চায় এরা। রবীন্দ্রনাথের তো গুজবের শেষ নাই।
গুজব আছে রবীন্দ্রনাথ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরধীতা করেছিলেন। ১৯১২ সালের ২৮শে মার্চ কলিকাতা গড়ের মাঠে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবাদে নাকি এক বিশাল জনসভার আয়োজন করা হয়। অথচ মজার বিষয় ঐ তারিখে রবীন্দ্রনাথ কোলকাতাতেই ছিলেন না। আরও মজার বিষয় বিশ্ববিদ্যলয় প্রতিষ্ঠার মাত্র পাঁচ বছর পরে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনেই তিনি বিপুলভাবে সংবর্ধিত হন।
বিতর্কের কথা বলতে শুরু করলে শেষ হবে না। তাই আর কথা বাড়াচ্ছি না। শুধু এই মহান কবিকে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে শেষ করছি।

