গাজেন্দ্র বার্মার গাওয়া এম্পটিনেসএর "তুনে মেরে
জানা" গান শুনিয়া আমার জৈনক বন্ধু প্রেমিক হইতে
উঠিয়া-পড়িয়া লাগিল। তাহার
প্রেমভাবের উদয় হওয়া দেখিয়া বন্ধুমহল বড্ড চিন্তিত
হইয়া পড়িয়াছিল। তাহার কথা কম-বেশি আমরা সবাই
মান্য করিতাম অতঃপর তাহার এমন মর্জিতে আমরা
লড়িয়া বসি। একসময় তাহার এ যন্ত্রণা আমরা ভালোই
উপভোগ করিতে লাগিলাম। এরপর হইতে খুজিয়া খুজিয়া
প্রেমকাহিনীওয়ালা সিনেমাগুলি
সংগ্রহ করিয়া তাহাকে দিতাম এবং তাহার মধ্যে
প্রেমভাবের
তীব্রতা বাড়াইতাম। আমাদেরকে আবার ইহার কারণে
পুরুষ্কৃতি করা হতো।
.
ভাবনা ধীরে ধীরে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে লাগিলো।
যাহাকে নিয়া এ মমহা জগ্গের আয়োজন, সেই মধ্যমনিই
বা কে হহবে..??
অর্থাৎ, বন্ধুর মনে প্রেমাভাবের অভ্যুদয় ঘটিয়াছে
ভালো কথা। কিন্তু, তাহার গার্লফ্রেন্ড কিংবা
বান্ধবীই তো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অতঃপর এক অলস
বিকেলে জনৈক বন্ধু কোথাথেকে দৌড়াইয়া আসিয়া
মজমার মধ্যে হাস-ফাস করিতে করিতে অস্থির হইয়া
পড়িলো। তাহার এ অবস্থা দেখিয়া আমরা বারংবার
পিছনে তাঁকাইতেছিলাম। কারণ, সকলে ভাবতেছিলাম
কলোনির একমাত্র শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের বড় আদরের
পোষা "ভুলু" আবার পেছনে পড়েনি তো...??
.
অবশেষে, বন্ধু আমার শান্ত হইয়া যা বলিল তাতে সবাই
জায়গায় চিৎপটাং। কলোনির "চাপাতি সুমন"-এর
একমাত্র বোন ময়দা সুন্দরীরে দেখিয়া আমার বন্ধু
মনঃস্থির করিয়াছে "প্রেম সে করবেই, তা যে হোক না
কেন! তাও আবার ময়দা সুন্দরীরে। "
ললনা সুন্দরী,সুঠাম দেহের
অধিকারী একখানা পছন্দদ হইছে বলে তৃপ্তির ছায়া
দেখা যাইতেছে বন্ধুর মনে! ললনা কলেজের সেকেন্ড
ইয়ারে পড়ে, দেখিতে অনেকটা মডেল
জমিলা খাতুনের মতন লাগে। বন্ধু আমার তাহাকে
প্রপোজ
করিতে সাহস পাইতেছিলোনা।একদিন দুঃখ
ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এসে আমাদের সাহায্য চাইলো।
প্রথম কথাতেই সবাই একযোগে নাখোজঁ করে দিলাম
প্রস্তাবখানা। একে তো ডনের বোন, দ্বিতীয়ত একবছর
সিনিয়র, তৃতীয় ময়দা সুন্দরী যার পেছনে অন্তত এখনো
পাঁচটে উঁকুনের মত লেপ্টে আছে।
.
প্রায় এক সপ্তাহ পর শুনিলাম বন্ধু আমার দেবদাস হইয়া
যাইতেছে। এখন তার এহেন পরিস্থিতি আমাদের
বন্ধুমহলের প্রত্যেকের হৃদয় কাড়লো। হাজার হোক, বন্ধু
আমাগো কত বিরানি খাওয়াইতো, সাথে আবার
পলিটিক্যাল চাও চলতো। অথচ, তার এহেন
পরিস্থিতিতে আমরা আগামুনা...!!!
.
মোড়ে বইসা রইসি, দূর থেকে দেখলাম তরুণী তাহার
উত্তাল নিতম্ব নাচাইতে নাচাইতে আসিতেছে। হঠাৎ
এক গগজ দূরে পাড়ার নয়া পাতি মাস্তান 'কালা চাম'
তাহার দিকে কুদৃষ্টিতে তাঁকাইয়া বাঁশের শুকনো কঞ্চি
চাবাইতেছে।
অতঃপর আচমকা দেখি তিনি রাস্তায় পড়িয়া আছেন,
কপালে ফিনকি দিয়া রক্ত বের হইতাছে। সামনে
চাপাতি সুমন....!!!!
এ বখাটেকের এমন রামধোলাই
দেয়া দেখে আমার বন্ধু পুরা জায়গা থেকে চম্পট!! বন্ধু
আমার অবশ্য বেশ ভিতু প্রকৃতির!
বন্ধুকে আমাদের বন্ধুমহলের অনেকেই "হাউ টু প্রপোজ এ
গার্ল" বিষয়ে বেশ
কয়েকটা বিখ্যাত তত্ত্ব দিতে সমর্থ হইলেও
ভিতু হইবার কারনে ঐ তরুনীকে প্রপোজ করিতে
পারিলোনা।তবে মাঝে মাঝে, অলস বিকেলে বাসার
ছাদে যখন তরুণী একা একা তাহার বক্ষ প্রশস্থ করিয়া
দূষিত বায়ু আহরণ করারর চেষ্টা করিতো তখন বন্ধুকে
তাহার চোখে চোখে বুঝাইয়া
দিতে বলার পরামর্শ দেয়া হইছিলো ,"আমি তুমাকে
ভালবাসি,তুমার
লগে প্রেম করিতে চাই"! এমনিভাবে চলতেছিলো হঠাৎ ই একদিন ঐ
তরুণীর এক বান্ধবী আমাদের পথ আটকাইয়া বন্ধুর হাতে
একখানা চিরকুট দিল! বন্ধু তো চিরকুট পাইয়া ঘামতে
ঘামতে শেষ! বুকের ভেতরে তাহার তখনকার কম্পাঙ্কে
যদি আশে-পাশের কোন একটা রানা
প্লাজাকে কাঁপিতে দেয়া হয়,আমি নিশ্চিত ছিলাম
ততখনাৎ
সেটা ভাঙিয়া পড়িতো!!একখানা অনিশ্চয়তার মধ্যেই
বন্ধু আমার চিরকুটখানা খুলিলো!লেখা পড়িয়া তো
বন্ধু না আমরা সবাই অবাক! টিনের চালে কাক, আমরা
তো অবাক- এমন টাইপ অনুভূতি সবার মাঝে বিরাজ
করিতেছে। এই সুযোগে আমরা চাম দিয়া বিকালের
নাস্তার সহিত ট্রিটটাও নিয়া নিলাম। কন্যা নাকি
আমার বন্ধুরে ভালোবাসে!!
.
বন্ধুরে আর পায় কে? হঠাৎ তাহার গুম হওয়া নিয়া আমরা
চিন্তায় পড়িয়া গেলাম। সেদিনের পর থেকে তার
চাঁদবদন মুখখানা উধাও হইয়া গেছিলো। হঠাৎ একদিন
বন্ধুর ফোন, বন্ধুর সাথে নাকি আজ মাইয়্যা দেখা করতে
চায়। বন্ধু আমারে জিগায়, এখন প্রেম করিতে গিয়া
"শাহরুখীয় দর্শন নিবে নাকি ইমরান হাশমীর
দর্শন নিবে তাহা চিন্তা করে কেমন যেন
লজ্জ্বা পাইতেছিলো সে!"তুম পাস আয়ে,,আশিক
বানায়া আপনে,তেরা হোনে লাগা "-গানগুলো
বারবার শুনতেছিলো বেচারা !
.
যাক বেচারা সেদিন কাউকে না জানিয়ে রওনা হলো।
বন্দুমহলের আমরা কিন্তু বন্ধুর পিছু ছাড়ি নাই। দেখলাম
তেল আর পানি একসাথ কইরা বন্ধু আমার চুল স্পাইক
করছে। সজারুও মনে হয় লজ্জা পাইবো হেতের স্পাইক
দেইখা। দেখলাম হাতে রিস্টব্যান্ড গলায় চেইন..!!! তখন
আমার মনে পড়লো হাতে রিস্টব্যান্ড লাগালেই অসি
বোলার জনসন কিংবা গলায় চেইন লাগালেই "জন সিনা"
হওন যায়না।
দেখতে দেখতে বন্ধু রিক্সায় উইঠা বসলো, বারবার
মাইয়্যাগো মতন মোবাইলের স্ক্রিনে চেহেরা
দেখতাছিলো।
আমরা তো মহা টাস্কিত, এতক্ষণে বন্ধু আমাগো কাউরে
একবারো ফোন দেওনের প্রয়োজনবোধ করলোনা।
.
অবশেষে দেখলাম বন্ধু রিক্সা থেকে নাইম্মা বুক
ফুলাইয়া সামনে আগাইয়্যা যাইতেছে। একটু দূরে
দেখলাম বন্ধুর ভাই খারাইয়া সিগারেট ফুঁকে। বন্ধুরে কল
দিলাম, "দোস্ত", কেস তেলে-জলে মিলে একসাথ।
বাঁচতে চাইলে ভাগ...!!
উল্টা একটা থাবড়া দিবো কইয়া পরম বিরক্তিকর সুরে
ফোনটা কাইট্টা দিলো।
একটু পরে দেখলাম হঠাৎ মাইয়্যার চিৎকার,
"ভ্যাইয়া......"
আমরা যে যার মত চম্পট। পরে শুনলাম জনৈক বন্ধুরে
নাকি হেতের বউ,হুমুন্দি আর হুমুন্দির বন্ধুরা মিলা সস্
বানাইছিলো। এর পরের একসপ্তাহরর ঘটনা বরই দুঃখের।
.
জ্বর আর অসুখে বন্ধু একদম দেবদাসের চেয়ে কোন অংশে
কম হয় নাই। সেই থেকে তার প্রেম প্রেম অনুভব ছাড়লো।
.
এদিকে,
বন্ধুর এ অবস্থা দেইখা আরেকজন সাফল্যের আসায় একই
পথে হাঁটলেন। প্রথম দিনেই চিরুনি চক্ষু দিয়া
বাইছা বাইছা দুইজনকে তুইলা আনলেন কোচিং থেকে।
এইবার আর এ ব্যাক্তি রিস্কে গেলেন
না ডাইরেক্ট "কাউন্ট্রি শট"।কিন্তু এ কি লীলাখেলা....
কোচিং এর ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে স্যার জিগাইলেন
সবার হবি কি কি। হায় হায়!
প্রেমিকা যুগলের একজনের হবি নাকি তার শশুর
শাশুড়িকে সেবা করা! বন্ধুর কোচিং এর প্রথম দিনেই এ
কথা শুইনা
দ্বিখণ্ডিত হৃদয় এইবার চার টুকরা হইল।
.
তাও আশায় বুক বাধলো। যাক একজন গেছে আরেকজন
আছে।
আরেকজনতো আছে। এর পিছে লাইগা থাকলো আঠার
মত।
নোট লাগলে ফটোকপি কইরা দিতো আগ বাড়াইয়া।
কিন্তু, আমাগো লাইগা এর এক টাকাও বের হইতোনা,
আফসুস..!!!
.
স্বপ্রত্যয় ইশটাইলে হাসাইয়া কয়দিনেই ভাব জমাইয়া
ফেললো এ বলদায়। একদিন কোচিংএ আসে নাই কইন্যা।
আহা তাহার
সেকি বিরহ। কেন আসেনাই! পুরো বিকালডা
জ্বালাইয়া ফেলছিলো বান্দায়। জিদ্দের চোটে মন
চাইছিল পোলার প্যান্ট খুইল্লা পোলার ব্যাকসাইডে
ছিঁড়া জুতা দিয়া ইচ্ছামতো '"জুতা থেরাপি" দিই।
.
পরেরদিন আবার ঘটলো আরেক কাহিনী। বন্ধু আমার
হঠাৎ আমাগো সবাইরে বিকালে মদনা ভাইয়ের
দোকানে নাস্তা করাইতেসে...!!
সবাই একজন আরেকজনের দিকে তাঁকাইতেছি বারবার।
হালার মতলব ভালোনা, বিষ খাওয়াইয়া মাইরাই
ফেলবো নাকি...??
খাওয়ার ফাঁকে আসতে আসতে কারণ
জিগাইলাম। আল্লাহ এইডা শোনোনের আগে আমার
কাছে হেডফোন পাঠাইলা কেন..!! হায় ভগবান কয় কি এই
বলদায়! কোচিংএ আজকে মাইয়্যাডা আইতেই নাকি এই
বলদ জিগাইতেছিলো কাল আসো নাই যে। মাইয়্যা
নাকি কয়, ভাইয়া
জানেন আমার পাঁচ মাসের বেবিটা খাট থেকে পরে
গিয়েছিল। এই অবস্থায় আসি কি করে বলেন! শুইনা
তো আমার এ দোস্তের হৃদয় এইবার আট টুকরা হইয়া গেছে।
আড়চোখে দেখলাম বন্ধুর চোখে জ্বল......
.
আহা সেই থেকে ভাবলাম, "ডেটিং আর প্রেম সে তো
রেডিমেট জিনিষ, আসতেও টাইম নেয়না যাইতেও না"।
আমার তখন প্রেম তৃষ্ঞার্ত মনে বাঁজিয়া উঠিলো সেই
মর্মবাক্য।
.
জনৈক এক কবি বলেছিলেন, যারা ঘর পায় তারা নাকি
কবিতা হারায়। আমি কখনই নিজেকে কবি বা লেখক
বলে স্বীকার করি না। আমি জানি সে যোগ্যতা আমার
নেই
বা সে দৃষ্টতা দেখানোও আমার পক্ষে মানানসই না।
নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা, দর্শন- যা কিছু এ পর্যন্ত
দেখেছি বা আবিষ্কার করেছি তা ই খাতা কলমে বা
মোবাইলের বুকে আঙুল চালিয়ে তৈরি করি বর্ণ শব্দের
ব্যঞ্জন। কেউ কেউ বলেন, ভালো লিখো তো। কেউ
বলেন, যত্তোসব! আমি কবি হতে আসি নি। তবে ভালো
মানুষ হতে এসেছি। ভালো মানুষ হয়ে মানুষকে
ভালোবাসতে এসেছি, বিনিময়ে ভালোবাসা পেলেই
আমি নিজেকে ধন্য মনে করব। জানি না এক্ষেত্রেও
আমি কতটা সফল হতে পারব! আসলে আমার অন্ধকারময়
জীবনে কোন সাফল্যের বা জয়ের ইতিহাস নেই।
.
------------
অন্ধকার আকাশ
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:৪৯