-- মা...মা দুইতা পাঁচ তাকার নোট দাও না
-- কি করবে... টাকা দিয়ে..?(কিঞ্চিৎ রেগে)
-- বল কিনবো, হারিয়ে ফেলছি ঐতা
-- সেদিন না কিনে দিলেন তোমার বাবা
-- অ্যা...অ্যা...
-- আচ্ছা যাও, (দশ টাকার একটা নোট দিয়ে)
-- না..না...আমাকে পাঁচ টাকার দুইতা নোট দিতে হবে, একটা কেনো দিলে...ভ্যাঁ.....ভ্যাঁ
.
এভাবেই নাকি ছোট্টবেলায় মা'র কাছে বায়না ধরতেম। সেদিন পাশের বাড়ির আন্টিকে বলছে কিন্তু খেয়াল করলাম বলার সময় মা'র অশ্রুসজল চোখের কোণে মুক্তোদানার মত জ্বলজ্বল করছে। কখনো বাবার কাছে কিছু আবদার করতাম না,বাবা খুব বদমেজাজি ছিলেন।
সেই ছেলেবেলা থেকে আজ এতটুকুন পর্যন্ত পুরোটা সময় আগলে রেখেছেন। পরীক্ষার সময় আমার চেয়ে তিনিই যেন বেশি চিন্তিত থাকতেন। সবসময় প্রশ্নের উপর আর আদেশের উপর চলতে হতো। আজ পর্যন্ত মনে হয় অতটুকুনের ব্যাতিক্রম হয় নি...
.
একবার সমবয়সীদের সাথে সাইকেল শিখতে গিয়ে সদ্য কিনে দেয়া জিন্সের শার্ট ছিড়ে পায়ের "হাটুঁর কাপ" পর্যন্ত ছিলে গিয়েছিলো। সেদিনও মা' দীর্ঘক্ষণ মুখ লুকিয়ে কেঁদেছিলো সারাদিন কিছু মুখেও নেয়নি,সর্বক্ষণ আমার সেবায় ছিলো। আমার প্রতিটা জ্বরের রাত্রিতে একমাত্র পাশে পেয়েছি নির্ঘুম বিনিদ্র রজনী কাটানো আমার "মা" কে। কখনোই একা ছাড়েননি, সবসময় হাত ধরে রাখতেন তিনি খুব ভয় পেতেন আমাকে নিয়ে পাছে যদি হারিয়ে যাই,যেটার ব্যাতিক্রম এখনো হয়না। মাঝে মাঝে মনে করে খুব হাসি পায় আবার জিদও উঠতো।
.
"মা যে আমার সাত আকাশের তারা
মা'কে ঘিরেই আমার সকল সুখ
মায়ের আঁচল ফুলের সুবাস মাখা
সেই আঁচলে লুকাই আমার মুখ
মাকে পেলেই আমি আত্মহারা।
.
মা যে আমার লাল সবুজের ছবি
মাকে ঘিরেই আমার সপ্ন যতো
মা যে আমার চির আশির্বাদ
তার কথাতে মধু অবিরত
মায়ের কথা লিখবো বলে আজ হয়েছি আমি"।
.
সেই ছোট থেকে আজ এতবড় হয়েছি পুরোটা কৃতিত্বই মা-বাবা। কোনদিন কোন কাজ করাতেন যদি ব্যাথা পাই...!!! ইঞ্জিনিয়ারিং এক্সাম দেয়ার আগে যতরাত আমি জেগেছি তার চেয়েও বেশি রাত জেগে থেকেছে আমার মমতাময়ী "মা"। একটু ঘুমের ভাব এলেই বলতেন, চা করে দিবো, হরলিক্স খাবে একটু...?
কখনো যদি কারো সাথে ঝামেলা হতো কিংবা মন খারাপ হয় কিভাবে যেন বুঝে ফেলেন, পরক্ষণেই বলেন কি হয়েছে বাবা..?
.
সাধারণত কয়েকদিন আগে সায়েন্সফিকশন বইয়ের জন্য MPSZ® গ্রুপে একটা গল্প দিয়েছিলাম বইমেলার জন্য। খুব চিন্তায় আছি গল্পটা সিলেক্ট হবে কিনা...?মা সেদিন হঠাৎ কাছে ডেকে জিঙ্গেস করলেন, খুব চিন্তায় আছো মনে হয়...!!! আমি আশ্চর্যান্বিত হলাম এই এতটুকুন ব্যাপারেও কিভাবে বুঝে নিলেন তিনি। কখনো মিথ্যে বলে বাঁচতে পারিনি, দু'একবার বলার চেষ্টাও করেছিলাম কিন্তু বারবারই ধরা পড়ে গেছি...তাই এখন সত্যটাই বলে দিই।
.
কখনো কারো "মা" নেই শুনলেই বুকটা শূণ্যতায় ভরে উঠে। আসলে মা ছাড়া কোনকিছুই কল্পনা করা যায়না। "মা" যে একজন মানুষের অর্ধাংশ। "অর্ধাংশ" ছাড়া যেমন কোনকিছু পরিপূর্ণ নয়, তেমনি "মা" ছাড়াও কেউ কোনদিনই পরিপূর্ণতার দাবিদার হতে পারেনা। "মা" নামটা যে কতটা মমত্ববোধের, যে "মা"ডাক শোনেনি কিংবা ডাকার মত সৌভাগ্য হয়নি সেসব দুর্ভাগারাই কেবল অনুভব করতে জানে।
.
পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষের সফলতার পেছনে যে একজন নারীর অংশীদার রয়েছে,সেটা তেমনি আমার ক্ষেত্রেও আমার "মা"। মায়ের কথা মনে পড়তেই চোখের সামনে ভেসে উঠে স্বর্গীয় এক প্রশান্তি। স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠে স্নেহ,আদর আর মমতার এক রঙিন মুহূর্ত। অকৃত্তিম এ ভালবাসা আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়না। মায়ের তুলনা শুধুই 'মা'। সত্যিকার অর্থে, মায়ের মত করে আর কেউ ভালবাসতে পারেনা। এমন নিঃস্বার্থ ভালবাসা পৃথিবীর বুকে কেবলমাত্র একজনই দিতে জানেন তিনি হলেন "মা"। সব মানুষের জীবনে সুখে-দুঃখে এই ব্যক্তিটিই একমাত্র পাশে থাকেন তিনি হলেন "মা"। নিজের জীবনের সব বিসর্জন দিয়ে সন্তানের জন্য সবকিছুই করতে পারেন তিনি। এ পর্যন্ত যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন এর পেছনে মায়ের অবদানই বেশি। আমি বলবো,একেবারে ছোটবেলা থেকেই মাকে অনুসরণ করে আসছি। তাঁর আদর্শেই আমি অনুপ্রাণিত । আমার মাকে অনুসরণ করার কারণেই আমি আজ ভাগ্য উন্নয়নের পথে।আমি ছোট বড় যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে মায়ের ওপর নির্ভর করেছি। তিনি সবসময় আমাকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সাহায্য করেছেন।
.
মায়ের চোখে যেমন তার শিশুটি সবসময়ই লক্ষীসোণা-মানিক তেমনি মায়ের আদর স্নেহ ভালবাসায় প্রতিটি সন্তানই থাকে পরম আনন্দে। নারীর টান বলে কথা। মা সবার জন্যই এক পরম সুখস্মৃতি। মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রতিটি মুহূর্তের। প্রত্যেকের মাঝে অটুট থাকুক সারাজীবন মায়ের জন্য ভালবাসা।
.
"মা", বেঁচে থাকতে কতদিন, কতবার তাঁকে আদর করেছি আমরা? কতবার বলেছি ‘মা, তোমায় ভালোবাসি’? জীবনচক্রের ঘূর্ণন শুরু হয় সেই জন্মলগ্ন থেকে৷ এরপর ছোটবেলা কাটিয়ে উঠে কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব, বার্ধক্য, আর সবশেষে অনিবার্য মৃত্যু৷ এই ধ্রুব সত্য শুধু আপনার-আমার নয়, সবার জন্য৷ তাই দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দিন৷ যতদিন ‘মা’ বেঁচে আছেন, ততদিন, প্রতিটি দিন পালন করুন ‘মা দিবস’ হিসেবে....!!
.
"রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সগীরা"
-----
অন্ধকার আকাশ্
------
#অভ্র
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ১:০৬