~ লাশটা কার ।
~ মানুষের । পুরুষ মানুষ ।
~ আমি কি বলেছি কুকুরের লাশ ।
~ জানেন যখন তখন জিজ্ঞেস করছেন কেন ।
~ না , মানে এর পরিচয় জানেন কি না ?
~ না জানি না । এইটা আমার আত্মীয় লাগে না । তাই চিনি না ।
বড় রাস্তার ধারে একটা লাশ পড়ে আছে । অল্প বয়সি ছেলের লাশ । বয়স হবে হয়তো বিষ একুশ । মুখে রক্ত লেগে আছে । হাতের একটা আঙ্গুল কাঁটা । কাঁটা গায়গায় রক্ত জমাট বেঁধে আছে । লাশটি প্রথম দেখে রতন । সে সকালে দুধ বিক্রি করতে বাজারে যাচ্ছিলো । আজকে দুধ কম হয়েছে । তাই তার মেজাজ খারাপ । শীতে মধ্যে গরু কম দুধ দেয় কি না এই নিয়ে সে চিন্তিত । চিন্তা করতে করতে সে এই লাশ দেখতে পায় । প্রথমে ভেবেছিল কোন মাতাল শুয়ে আছে । তার ইচ্ছা ছিল কাছে গিয়ে একটা লাত্থি দিবে । সে ভাত খেতে পায় না , আর এরা মদ খেয়ে রাস্তায় পড়ে থাকে । এদের লাথি দেয়া কর্তব্য । সে কর্তব্য পালন করতে এসে দেখে একটা মরা মানুষ পড়ে আছে । কমবয়সী একটা ছেলের লাশ । মুখে রক্ত লেগে আছে তাই চেহারা বোঝা যাচ্ছে না ।
রতনের চিৎকারে লোক জড়ো হয়েছে । লোকের মধ্যমণি হিসেবে আছে সে । কেউকেটা ভাব নিয়ে সে অন্যদের ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছে । লাশ আবিস্কারের এই ঘটনায় সে নায়ক হয়ে গেছে । এর মধ্যে তার দুধ বিক্রি হয়ে গেছে । দাম বেশি পেয়েছে । ৭০ টাকা লিটার । চিন্তার সময় মানুষ দামাদামি করে না । এখন খুবই চিন্তার সময় । লাশের পরিচয় বের করা মহা চিন্তার ব্যাপার ।
~ কে মেরেছে বলে ধারণা করছেন রতন ভাই ।
~ অবশ্যই মানুষ মেরেছে । এখন তো আর বাঘ নাই , বাঘ তো আর এই মানুষ মারে নাই । মানুষই মানুষ মেরেছে ।
~ সত্য কথা । সেই মানুষটা কে ?
~ এইটা রহস্য । রহস্য উদ্ধার করবে পুলিশ । এইটা আমার কাজ না । এইটা পুলিশের কাজ । আমি করলে হবে অকাজ । তবে পুলিশ যদি মেরে থাতে তবে রহস্য রহস্যই থাকবে ।
~ আপনার কি বিবেচনা ?
~ আমার কোন বিবেচনা নাই ।
বেলা বেড়ে গেছে । লাশ থেকে গন্ধ বের হয়েছে । লাশের চারদিকে মাছি ওড়াউড়ি করছে । রতন খুবই ক্লান্ত । লাশের বর্ণনা দেয়া কষ্টের কাজ । এই কাজ করতে গিয়ে তার ক্ষুধা লেগেছে । তার উপর লাশের গন্ধ তার অপছন্দ । ক্ষুধা পেটে গন্ধ তীব্র লাগে । বমি বমি ভাব হয় । পুলিশ এসে গেছে । এখন তার না থাকলেও চলবে ।
ঘটনা ২
~ ভাই ঘুমান না কি ?
রতন বিরক্ত হয়ে তাকায় । লাশ দেখে আসার পর থেকে সে বমি করছে । শরীর ক্লান্ত । আজ রাতে সে বারান্দায় শুয়েছে । বমি করতে বার বার উঠতে হচ্ছে তাই আর ঘরে যায় নি । ঝিমুনি আসছিলো , এর মধ্যে তাকে এই কথা জিজ্ঞেস করার কোন মানে হয় । মানুষ দিনের দিনে আহাম্মক হয়ে যাচ্ছে । সব সময় প্রশ্ন করতেই থাকে ।
~ ভাই ঘুমান নাই ।
~ দেখেন না ঘুমাই কি না ?
~ প্রথমে বুঝি নাই । এখন বুঝলাম ।
~ বুঝেছেন যখন তখন যান । আমি ঘুমাবো ।
~ আচ্ছা ভাই আপনি ঘুমান । আমি আপনার পাশে বসে থাকি ।
~ বসে থাকবেন মানে । আপনি বাড়ি যান । আমার এইখানে বসে থাকবেন কেন ?
~ আমার বাড়ি নাই ভাই । এখনো ঠিক হয় নি । তাই বুঝতে পারছি না কোন বাড়িতে যাবো ।
~ খুলে বলেন । রহস্য করবেন না । এখন মাথা পরিষ্কার নাই । রহস্য ভালো লাগেব না ।
~ ভাই আমার এখনো কবর হয় নি । এই জন্য বললাম বাড়ি ঠিক হয় নাই ।
~ কবর হয় নি মানে কি ? আপনি তো মরেন নাই । কবর হবে কি করে ।
~ অবশ্যই মরেছি ভাই । গত রাতে কয়েকজন লোক আমাকে এটা গাড়ীতে করে তুলে নিয়ে যায় । চোখ বন্ধ ছিল তাই গাড়ীর রং দেখি নাই । তবে গাড়ি ঠাণ্ডা ছিল । এসি গাড়ি । এর পরে আর কিছু মনে নাই ।
~ এইসব কি বলেন । ভাই আমার শরীর খারাপ । তার উপর খারাপ গন্ধ পাচ্ছি । বমি বমি করছে । আপনি রহস্য করবেন না । এখন বাড়ি যান ।
~ ভাই আমি সত্যি বলতেছি । আজ সকালে আপনি আমার লাশ দেখেছেন । এই দেখেন আমার একটা আঙ্গুল নাই । কাঁটা আঙ্গুল থেকে রক্ত পড়ছে ।
রতন গন্ধে বমি করে ফেলে । মনে হচ্ছে পেটের লারি ভুঁড়ি বের হয়ে আসবে । সে গলা চেপে তা আটকে রেখেছে । তার বমি হতেই থাকে । তার পাশের মানুষটি এখনো যাই নি । মানুষটার আঙ্গুল থেকে রক্ত পড়ছে ।