~ স্যার পানির পিপাসা লাগছে ।
~ এইখানে পানি নাই । পিপাসা দমায় রাখ । কিছুক্ষণ পর ওপারে চলে যাবি । তখন ভাগ্য ভাল থাকলে যমযমের পানি পান করিস ।
~ স্যার পানির পিপাসা লাগছে ।
~ ঐ হারামজাদা চুপ থাক । চড় দিয়ে মুত্র খাওয়াই দিমু ।
মামুন চুপ হয়ে যায় । সে মুত্র খেতে চায় না । সকাল থেকে সে অনেক কিছু খেয়েছে । পুলিশের পক্ষে যা কিছু খাওয়ানো সম্ভব সব কিছুই খেয়েছে । এখন পর্যন্ত দুইবার বমি করেছে । মুখে বমির গন্ধ লেগে আছে । আজ সকালে মামুন কে পুলিশ ধরে থানায় নিয়ে আসে । মামুন এখন পর্যন্ত জানে না তার কি অপরাধ । একবার গিজ্ঞেস করেছিলো । কেউ উত্তর দেয় নি ।
~ স্যার আর কতো দূর ?
~ চলেই আসছি । চিন্তা করিস না । যা বলা হয়েছে তাই করবি । একটা দৌড়ানি দিবি । পালাইতে পারলে ভালো , না পারলেও সমস্যা নাই । এক মিনিটে কাজ খতম । ওপারে গিয়ে ফল মূল খাবি।
~ স্যার আপনারা কি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাকে মেরেই ফেলবেন ?
~ হুম । সিদ্ধান্ত ফাইনাল । এখন হবে বাস্তবায়ন । চিন্তা করিস না কাল বড় করে খবর হবে । তোর ছবি ছাপা হবে । শিরোনাম হবে ধর্ষণের আসামি কানা মানিক অস্ত্র উদ্ধার করতে গিয়ে পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে । তার পিঠে তিনটা গুলি লেগেছে ।
~ কানা মানিক আমার নাম না । আমার নাম মামুন । ইন্টার পড়ি । আমার বাবার নাম আব্দুল গফুর । স্যার আমি তো এর কিছুই করি নি ।
~ কেন তুই পুরুষ না ? ধর্ষণ করতে পারিস না । না কি কোচি খোকা । ধর্ষণ শিখাইতে হবে ?
এই কথা বলে ওসি নাজিম হাসতে থাকে । তার খুবই আনন্দ হচ্ছে । গত তিন দিন ধরে মিডিয়া তার ঘুম হারাম করে দিয়েছে । তার এলাকায় তিনটা ধর্ষণ হয়েছে । পুলিশ অন্ধ না কি ? এইগুলা দেখে না । না কি ঘুষ খায় আর ঘুমায় । আজ সে দেখাবে পুলিশ ঘুষ খাওয়া আর ঘুমানো বাদেও কাজ করে । ধর্ষণকারীকে ধরে অস্ত্র উদ্ধার করে । খবরটা ছাপা হলে এলাহি কাণ্ড হবে । তার প্রোমোশন নিশ্চিত । ধর্ষণকারীকে সে পালাতে দেয় নি । গুলি করে মেরেছে । সরকার কি গুলি খেতে দেয় না কি , অপরাধীদের দমন করতে দেয় । সে অপরাধীদের দমন করছে ।
গাড়ি বড় রাস্তার ধারে একটা গাছের নিচে এসে থামে । চারদিকে অন্ধকার । যায়গাটা ফাঁকা । আশপাশে বাড়ি ঘর নেই । নাজিম ওসি মামুন কে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে আসে ।
~ কি রে ভয় লাগে ?
~ স্যার আমাকে কি মেরেই ফেলবেন ।
~ এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত তাই ।
~ আপনি তো জানেন আমি কানা মানিক না ।
~ এইটা বড় কথা না । যা দৌড়ানি দে । পালাতে পারলে বেঁচে গেলি । না হলে ইন্না লিল্লাহ ।
মামুন মানুষের নিষ্ঠুরতায় অবাক হয় । এতো সহজে কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে । সে সিদ্ধান্ত নেয় দোড় দিবে না । তাকে যদি মেরে ফেলে তবে এখানেই মারুক । মামুন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । নাজিম ওসি তার রিভালভার এর গুলি চেক করে । তার চোখ হায়নাদের মতন চক চক করছে । মামুন এই চোখ দেখে ভয় পায় । মানুষের চোখ এতো ভয়ঙ্কর হয় ?
পর পর তিনটা গুলির শব্দ হয় । আশপাশের গাছ থেকে পাখি উড়ে যায় । রাতের শব্দ বহু দূর পর্যন্ত যায় ।
এক ঘণ্টা পরের ঘটনা ঃ
নাজিম ওসি গাড়ীতে বসে আছে । তার স্ত্রী সালমা ফোন করেছে । সে আনন্দিত হয় । খুব ভালো সময়ে ফোন করেছে । তার স্ত্রীর সময় জ্ঞান ভালো ।
~ বউ কেমন আছো ? একটা সুখবর আছে ।
~ ওগো সর্বনাশ হয়ে গেছে । সন্ধ্যার পর থেকে মিনি কে খুঁজে পাচ্ছি না ।
সালমা কাঁদতে শুরু করে । সে খুবই ভয় পেয়েছে । শহরে যে হারে মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে । যদি তার মিনির কিছু হয় । নাজিম ওসিরও গলা শুকিয়ে গেছে । পানির পিপাসা লেগেছে । সালমা এই সব কি বলে । মিনির খোঁজ পাবে না কেন ? পানি না এনে আজ সে বড়ই ভুল করেছে । পানির পিপাসায় তার বুক ফেটে যাচ্ছে ।
পুনশ্চ ঃ পরদিন সকালে রিপোর্ট বের হয় এবার ওসির মেয়ে ধর্ষিত । তবে কি আমরা কেউ নিরাপদ নই । প্রথম পাতায় ছাপা হয় ।
পেছনের পাতায় আরেকটা খবর ছিল । মামুন নামের এক ছেলে কে কে বা কারা গুলি করে রাস্তার ধারে ফেলে রেখেছিলো । ছেলেটার বয়স ১৯ বছর , গায়ের রং ফর্সা ।