মাহাবুব সাহেব খেতে বসেছেন । মেঝেতে খাবার সাজানো হয়েছে । খাবারের আয়োজন সামান্য । ঘন করে রান্না করা সোনা মুগের ডাল , আলুর ভাজি আর চিকন চালের ভাত । ভাতের উপর এক চামচ ঘি হলে ভালো হোতো । বাড়িতে ঘি নেই । মাহাবুব সাহেবের ছোট মেয়ে রিনি ঘি খেতে পছন্দ করতো । তাই বাড়িতে সব সময় ঘি এনে রাখা হোতো । এখন রিনি নেই । তাই এই নিয়ম আর মানা হয় না ।
মাহাবুব সাহেব খুব আগ্রহ নিয়ে খাবার মুখে দিলেন । খাদ্য আল্লাহর নেয়ামত । আগ্রহ করে খেতে হয় । খাবার ভালো হয়েছে । ভাজিতে একটু লবন বেশি হয়েছে , তবে ভাতের সাথে ঠিকি লাগছে । মাহাবুব সাহেব খাবার শেষ করতে পারলেন না । দরাজায় কেউ এসেছে । বেল বাজাচ্ছে । বাসায় তিনি একা থাকেন । বিপত্নীক মানুষ । কাউকে যে বলবেন " যাউ দরোজা খুলে দিয়ে আসো" সেই উপায়ও নেই । দরোজা তাকেই খুলতে হবে । তিনি দরোজা খুলতে গেলেন ।
~ ভালো আছেন ।
~ কাকে চান ?
~ কাউকেই চাই না । এমনি এলাম । আপনি কেমন আছেন ?
~ আমি ভালো আছি । আপনার পরিচয় বলেন । অযথা কথা বলতে ভালো লাগছে না ।
~ আপনার বাসায় আলো নেই ? অন্ধকার কেন ?
~ এখন রাত , এই জন্য অন্ধকার । বেশি আলো আমার পছন্দ না । কই আপনার পরিচয় বললেন না ?
~ চাচা আমি মারুফ । রিনির বন্ধু ।
মাহাবুব সাহেব একটু ক্লান্ত বোধ করলেন । মারুফ নামটা তার চেনা । রিনি অনেকবার এই ছেলের নাম বলেছে। তিনি এই ছেলের সাথে কথা বলতে চান না ।
~ চাচা আমি ভেতরে আসি । বাইরে খুব ঠাণ্ডা ।
মাহাবুব সাহেব কিছু বললেন না । পথ ছেড়ে দিলেন ।
মারুফ খুব চেনা মানুষের মতন ঘরে ঢুকলো । মাহাবুব সাহেব আগের মতন গিয়ে খেতে বসলেন । খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেছে । তিনি ঠাণ্ডা ভাত মুখে দিয়ে মুখটা বিকৃত করলেন ।
~ চাচা খাবার কি ঠাণ্ডা হয়ে গেছে ?
~ হুম। তুমি কেন এসেছো ?
~ আপনি কেমন আছেন এইটা জানতে এসেছি ।
~ বললাম তো ভালো আছি ।
~ জানি আপনি ভালো আছেন । আরও একটা কারনে এসেছি ।
~ কি কারন ?
~ এখন বলবো না । আপনি খাবার খেয়ে নেন । তার পর বলবো । খাবার খাওয়ার সময় কথা বলতে হয় না । আল্লাহ্ নারাজ হয় ।
মাহাবুব সাহেব কথা বাড়ালেন না । তিনি খাবার খেতে লাগলেন । ঠাণ্ডা ভাতে ভাজির লবন বেশি লাগছে । তিনি বেশি লবন খেতে পারেন না । তাই না খেয়ে উঠে পড়লেন ।
~ চাচা খাওয়া শেষ ।
~ হুম শেষ । এবার বল কি বলবে ?
~ চাচা আপনার জন্য একটা পান এনেছি । রিনি বলতো আপনি পান পছন্দ করেন । জর্দা দেয়া পান । হাকিম পুরির জর্দা ।
মাহাবুব সাহেব পান মুখে দিলেন । আগে রিনি পান বানিয়ে দিত । এখন রিনি নেই । মারা গেছে । তাই তার পান খাওয়া হয় না । পান খাওয়া বিশাল আয়োজনের ব্যাপার । তার এতো আয়োজন ভালো লাগে না ।
~ চাচা পান কেমন ? মিষ্টি আছে তো ? জর্দার পরিমান বোধয় একটু বেশি হয়েছে তাই না ?
~ হুম , ভালো । এখন বল কেন এসেছো ?
~ ক্ষুদ্র একটা কাজে এসেছি ।
~ ক্ষুদ্র কাজটা কি ?
~ আপনাকে শাস্তি দিতে এসেছি ।
~ তার মানে ।
~ চাচা আমি তো বাংলা ভাষায় কথা বললাম আপনি বোঝেন নি ?
~ এই কথার মানে কি ? ফাজলামো করার যায়গা পাও না ।
~ চাচা ফাজলামো না । সত্যি কথা বললাম ।
~ কেন কেন ? আমি কি করেছি ।
মাহাবুব সাহেব খুবই ভয় পেয়েছেন । এই ছেলের চোখ জলজল করছে । অল্প আলোয় ভয়ঙ্কর প্রাণীর মতন লাগছে ।
~ চাচা আপনি কি জানেন আপনি খুবই খারাপ লোক । আপনি আপনার একমাত্র মেয়েকে খুন করেছেন।এই কারনে আপনার শাস্তি হওয়া উচিৎ ।
মাহাবুব সাহেবের গলা শুকিয়ে যাচ্ছে । তিনি চোখে ঝাপসা দেখছেন । মনে হচ্ছে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাবেন । চার দিকে অন্ধকার হয়ে আসছে । তার খুব পানির পিপাসা লেগেছে । এই ছেলে জানলো কি করে তিনি রিনি কে খুন করেছেন । এই ছেলে মিথ্যা বলছে । সে কিচ্ছু জানে না ।
~ চাচা পানির পিপাসা লাগে ।
~ হুম লাগে ।
~ চাচা চারদিকে অন্ধকার হয়ে আসছে ?
~ হুম । সব এতো অন্ধকার হয়ে আসছে কেন ?
~ আপনার শাস্তি শুরু হয়েছে চাচা । আপনার পানে পাফারফিশের বিষ মেশানো ছিল । এইটা খেলে মানুষ অন্ততও একদিনের জন্য অচেতন হয়ে যায় । বেঁচে থাকার কোন লক্ষণ থাকে না । অন্যরা ভাববে আপনার মৃত্যু হয়েছে । আপনাকে কবর দিবে । একদিন পর যখন আপনার চেতনা আসবে তখন আপনি কবরে । দেখবেন কবরের যন্ত্রণা কেমন । চারদিকে অন্ধকার । চাচা অনেক কথা বলে ফেলেছি । এখন আমি যাই । আপনাকে কবর দেয়ার আয়োজন করতে হবে । কাফনের কাপড় কেমন দিবো চাচা ? দামি না কমদামি ?
মাহাবুব সাহেব কিছুই শুনতে পাচ্ছেন না । তার চারদিকের অন্ধকার গভীর হচ্ছে । গভীর অন্ধকারে তিনি হারিয়ে যাচ্ছেন ।