~ মাগো শরীরে এতো জ্বলন কেন ?
~ কই জ্বলে গো বাপ ?
~ সারা শরীরে জ্বলন গো মা । মুখে জ্বলন বেশি । জাহান্নামের জ্বলন গো মা ।
~ বাপ আমার । নিশ্চিন্ত থাকো । জ্বলন কমবে । ডাক্তার সাহেব ঔষধ দিয়েছে । তুমি একটু সবুর করো আব্বা । আল্লাহ্ তালা সবুর কারিরে বড়ই পছন্দ করেন ।
~মাগো ডাক্তার মানুষটা খুবই ভালো । তাই না মা । মা আমি সুস্থ হইলে তাঁরে একদিন আমার লেগুনায় চড়াবো । বিনা ভাড়ায় । দুপর বেলায় নান্না মিয়ার মোরগ পোলাও খাওয়াবো । এই খানা বড়ই সুন্দর । বড়ই সুবাস । মা ডাক্তার সাহেব আমার সাথে যাবে না ?
~ অবশ্যই যাবে বাপ । তুমি সবুর করো । আজ তোমাকে দেখতে আসলেই তাকে সংবাদ দিবো ।
~ অবশ্যই বলবে মা । আচ্ছা মা আমি তো সবুর করলাম । জ্বলন তো কমে না মা। মুখের জ্বলন বেশি গো মা ।
~ বাপ আমার এইটুকু সবুর করলে হয় না কি ?সবুর অধিক পরিমানে করতে হয় । আমাদের নবী সাহেব ও সবুর করতেন । দীর্ঘ সবুর ।
~ আচ্ছা মা আমি মরে গেলে নবী সাহেব কে দেখতে পাবো ? বড়ই ইচ্ছা তাকে দেখার।
~ অবশ্যই পাবে বাপ । তাঁর সাথে বসে জান্নাতের খানা খাবে । এই খানা বড়ই সুস্বাদু ।
~ মা আমি কি মরে যাচ্ছি ? এতো কষ্ট হচ্ছে কেন গো মা ।
আমেনা বেগম আর কথা বলতে পারলেন না । তাঁর গলা ধরে এল । গলায় যেন কেউ পাথর বেঁধে দিয়েছে । তাঁর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো । গরম পানি । চোখের পানি গরম হয় তা তিনি জানতেন না । তাঁর একমাত্র ছেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিট এ ভর্তি । ডাক্তার বলছে আশা কম । তিনি কম আশা নিয়ে ছেলের পাশে বসে আছেন । আয়তাল কুরছি পড়ছেন । আল্লাহ্ যদি একটু দয়া করেন ।
~ মা চুপ কেন ।
~ কিছু না গো বাপ । এমনি চুপ ।
~ বল না মা আমি বাঁচবো তো ?
~ হ বাপ তুমি বাচবে । আমরা তোমার বিবাহ দিবো । লাল বউ ঘরে আনব । তোমরা আনন্দে সংসার করবে ।
~ মা তুই কি যে বলিস না । বউ আবার লাল হয় না কি ?
~ হয় গো বাপ । লাল শাড়ি পরা বউকে লাল বউ বলে ।
~ ও মা তুই এখন চুপ থাক । নার্স আপারে একবার ডাক না মা । আমার যে খুব জ্বলতেছে ।
~ বাপ নার্স আসতেছে । তুমি একটু সবুর করো । জ্বলন কমবে ।
~ ও মা আমাকে বাচা না । আমার জ্বলন একটু কমা না ।
~ আল্লাহ্ আল্লাহ্ করো বাপ । সবুর করো ।
~ মারে আমি কি মরে যাচ্ছি ?
একমাস পরের কথা । নতুন সরকার হয়েছে । প্রধানমন্ত্রী সুন্দর গাড়ি করে শাহবাগ দিয়ে যাচ্ছেন । কঠোর নিরাপত্তা বেবস্থা । রাস্তা দিয়ে পিঁপড়া হাঁটার ও সুযোগ নেই । হাঁটলেই পুলিশ পা দিয়ে লাথি দিবে । হটাত একটা পাগলী প্রধানমন্ত্রী গাড়ীর সামনে লাফ দিয়ে পড়ল । পড়েই চিৎকার । “আমার শরীরে আগুন দে , আগুন দে । কাঁচা মাংস , পুড়ায় দে । “ পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেলো । প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি ও চলে গেলো । হাজার হোক তাঁর নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে । পরদিন পত্রিকা থেকে জানা গেলো প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহরে হামলাকারী পাগলির নাম আমেনা বেগম । ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বার্ন ইউনিট এর গেটে তাকে দেখা যায় । দারোয়ান তাকে ঢুকতে দেয় না । সে দাঁড়িয়ে থাকে । পোড়া রুগি দেখলেই বলে “ আগুন দে আগুন দে , কাঁচা মাংস জালায় দে । “