( ২৫ অক্টোবর নিয়ে লেখা , অনুগল্প । রাজনৈতিক এই অস্থিরতার সময় সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছেন। তাদেরকে যারা হত্যা করছে সেই হত্যাকারীদের প্রতি উৎসর্গ করলাম । )
আব্দুর রহমানের মন আজ খুবই ভালো । এইটা দেখে তার নাতনী মিঠা খাতুনের মন খারাপ । মিঠা খাতুন নাম তার নানার দেয়া । মিঠাই তার নানার খুবই পছন্দের খাদ্য । মিঠা খাতুন জানে তার নানার মন ভালো হলে কোদাল ধার দিতে বসে । যে সে বসা না , একেবারে আয়োজন করে বসে । মাঝে মাঝে হাসে । আবার বড় শ্বাস ন্যায় । হাসি মুখ করে বলে " আহারে আহারে কি ব্যারাম কি ব্যারাম । এখন মানুষ মরবো । তাগোর ঘর লাগব । "
মিঠা চিন্তা করে মানুষটা কেমন জানি । ব্যারামে মানুষ মরবে এইটা কি কেউ হাসি মুখে বলে ? মিঠা চিন্তিত মুখে বলে " ও নানা কউ না কিসের ব্যারাম ? নানা গো কউ না ?"
তার নানা হাসে । রহস্যময় হাসি । মিঠার ভয় লাগে । সে এই মানুষটারে চেনে না । অচেনা মানুষের অচেনা হাসি । ভিতু মিঠা গুটিসুটি মেরে বসে থাকে । অজানা ব্যারাম যেন তাকেও ধরতে আসছে । ভয় তার চোখে মুখে ।
আজো আব্দুর রহমান কোদাল ধার দিতে বসেছে । কোদাল যতো ধারালো হবে কাজ তত জোরে হবে । কোন থামা নাই । তার জীবন কদালের সাথা বাধা । কোদাল বন্ধ তো জীবন বন্ধ । তার কাজ গোর খোঁড়া । যতো গোর খুঁড়বে তত টাকা । প্রতি গোর বাবদ ৫০০ টাকা। এখন টাকার দাম নাই । তাতে কি । চকচকে ৫০০ টাকার নোট দেখাও আনন্দের ঘটনা ।
কাল সেই আনন্দের দিন । সারাদিন তাকে বেস্ত থাকতে হবে । ২৫ অক্টোবর সকাল থেকে আব্দুর রাহমান মহা বেস্ত মানুষ । কারো ডাক সোনার সময় নাই । পথে মারা মারি হবে । গুলি চলবে । দা কুড়াল চলবে । লগি বৈঠা চলবে । মানুষ মরবে । লাশ বেশি হলে বিপদ । লাশ গোপন করতে হবে । তাই গোপনে দাফন । স্বাধীনতার বহু আগ থেকে এই কাজ হচ্ছে । আব্দুর রহমান এই কাজ করে ৪০ বছর ধরে । কতো গোর সে খুঁড়ছে । ৩ হাত মাটির গর্ত । মানুষের শেষ ঠিকানা ।
কালকে হাতে কাঁচা টাকা আসবে ।এই চিন্তা করেই আব্দুর রহমান আনন্দিত । নাতনীর সাথে কথা বলে ।
~কি রে বেটি মুখ অন্ধকার কেন ?
~তুমি ব্যারাম ব্যারাম করো কেন ? এই কথা সুনলে ভয় লাগে । ভয়ে মুখ অন্ধকার । আচ্ছা নানা কিসের ব্যারাম ? এইটা কোন মানুষের হয় ?
~দেশের ব্যারাম রে বেটি । দেশের ব্যারাম । কালকে সেই ব্যারাম বাড়বো । মানুষ মরবো । তাই ব্যারাম ব্যারাম করি ।
~দেশের ব্যারাম কি গো নানা ?
~বড়ই কঠিন প্রশ্ন করলা রে বেটি । আমিও বুঝি না । অত বুইঝা কাম নাই । যারা বোঝে তারা লাশ দিয়া যায়। আমি তাগোর ঘর খুড়ি । খুঁড়ন আমার কাজ । বোঝোন হইলো আমার অকাজ । অকাজে ভাত নাই ।
মিঠা ভাবে । যারা বোঝে তারা লাশ পাঠায় । এইটা কেমন কথা । কেউ কি কারো লাশ এমন করে পাঠাতে পারে । ব্যারাম হলে চিকিৎসা হবে । চিকিৎসা না করেই মানুষ মারে । গোর দেয় । এইটা কেমন বিবেচনা । মিঠা খাতুনের ছোট মাথা সমঝদার মানুষের কাজ কর্ম বুঝতে পারে না । রহস্যময় ঠেকে । সে ভীত চোখে নানার কাজ দেখে । তার নানা আব্দুর রহমান মাঝে মাঝে হাসে । আবার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । মাঝে মাঝে শোণা যায় " আহারে ব্যারাম "।