ফেলানি খাতুন তোর এই কাপুরুষ ভাইটি গল্পটি তোর উদ্দশে উৎসর্গ করলো .........
দোয়েল আজ খুব চিন্তিত । পাখিরা চিন্তা করবেনা এমন তো কোন কথা নাই । পাখিদেরও মাথা আছে । সেখানে ঘিলু আছে । ঘিলু বাংলা শব্দ । ইংরেজি হল ব্রেইন । এই ব্রেইন চিন্তা করে । দোয়েল একটা গাছের উপর বসে চিন্তা করছে । গাছটি অনেক বড় । এটা বাংলাদেশের ভেতরে পড়েছে । এর ঠিক সামনে একটা কাঁটা তারের বেড়া । ওপারে ভারত । দোয়েল অবশ্য এতো কিছু বোঝে না । ওপারে তার পরিবার গেছে । তার পরিবার দিনে একবার ওপার না গিয়ে থাকতে পারে না । মা বাবার বাড়ি । না দেখলে রাতে ঘুম আসে না । গভীর রাতে ডাকা ডাকি করে । দোয়েল পাখির রাতে ডাকার নিয়ম নেই । এইটা অশুভ কাজ । পাখি ডাকাডাকি করবে দিনের বেলা । ভোর বেলা ডাকাডাকি করা উত্তম । রাত হল শান্তির সময় । আজ অনেক ক্ষণ হল , কিন্তু তার পরিবারের দেখা নাই । এই কারনে চিন্তা হচ্ছে ।
~ওপারে গিয়ে কি দেখে আসব না কি ? কোন বিপদ হয় নি তো ? যা দিন কাল পড়েছে । বিপদ তো হতেই পারে ।
দোয়েল সিদ্ধান্ত নেয় সন্ধ্যার আগে তার পরিবার না ফিরলে সে একবার ওপার যাবে । সন্ধ্যায় পাখিদের বের হওয়ার নিয়ম নেই । পক্ষী জগতের নিয়ম খুবই কঠিন । ভাঙ্গলে বিপদ হয় । তার পরও তাকে নিয়ম ভাঙতে হবে ।
দোয়েল কে আর ওপার যেতে হল না । তার পরিবার বাসায় ফিরেছে । বড় গাছের উপরে তাদের ছোট একটা বাসা। পরিবার না থাকলে খাঁ খাঁ করে । এখন ঘর আনন্দে থই থই করছে । পরিবার হল ঘরের মানান । তা মানব কূলই হোক আর পক্ষী কূলই হোক ।
দোয়েল আনন্দ গোপন করে । গলা ভারি করে বলে " এইটা তোমার কেমন বিবেচনা । এতো দেরি করে ঘরে ফিরলা । আমি তোমার উপর বিরক্ত । "
~ আমি কি আর ইচ্ছা করে দেরি করেছি না কি ?
~ কেন কি হয়েছে ?
~ আর বল না গো , আমি তো সময় মতন ই বের হয়েছিলাম । ঐ যে বড় বট গাছটা আছে না , চিনতে পারলে না । তারের বেড়ার পাশে ওর বড় শেকড় আছে । আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে বসতাম। তো ওখানে এসে কিছু ক্ষণ আরাম করতে বসলাম । খানিক ক্ষণ পর সে কি এক শব্দ হল ।
~ কেন ? কিসের শব্দ ?
~ জানি না । তবে বিরাট শব্দ । কিছু সময় তো আমি সুনতেই পাই নি । পরে যখন একটু ঠিক হলাম তখন দেখি একটা মেয়ে কাটা তারের উপর ঝুলছে । মেয়েটা খানিক ক্ষণ চিৎকার করলো । পরে আর একটা শব্দ । আগের থেকেও বিরাট । এইবার মেয়েটা চুপ । কোন কথা নাই । বেড়ার সাথে ঝুলতে থাকলো । আহারে , মেয়েটার মুখতায় কতো যে মায়া ।
~ কি যে বল তুমি । তুমি বোধয় ভুল দেখেছো । ওখানে মানুষ ঝুলবে কেন ? মানুষে মানুষে কতো প্রেম । একজন আরেক জনের বিপদে সাহায্য করে । আবার এই বেড়ার ধারে তো মানুষরা হাটা চলা করে । পাহারা দেয় । ওরা কি দেখে নি ? ওরা কি ঐ মেয়েটা কে ঝুলে থাকতে দেয় না কি ? তুমি ভুল দেখেছো । মার বাড়িতে বেশি খেয়ে ফেলেছ বোধয় ।
~ এই ঠাট্টা করবা না । আমি বেশি কিছু খাই নি । শুধু কিছু খুদ খেয়েছি । এই খেলে বুঝি কেউ বেশি দেখে? আমি ঠিকি দেখেছি । ওখানে একটা মেয়ে ঝুলে আছে । মেয়ের গা দিয়ে রক্ত পড়ে । লাল রক্ত । মেয়েটার মুখে কি যে মায়া । আহারে । আমি তো এতো ক্ষণ বসে ছিলাম । মেয়েটা ঝুলে ছিল । কেউ নামাতে এল না । তাই তো আমার দেরি হল । তোমার বিশ্বাস না হয় আমার সাথে চলো দেখে আসবে ।
এই ঘটনা দোয়েলের বিশ্বাস হতে চায় না । তার বউ বোধয় বানিয়ে বলেছে । গল্প বানানোতে সে গভীর আনন্দ পায় । পরে এই নিয়ে হাসা হাসি করে । ঘটনা একবার দেখে আশা উচিৎ । সে বউকে বলে "চলো যাই । দেখে আসি । সত্যি না হলে তোমার সাথে কথা বন্ধ । এইটা তোমার শাস্তি ।"
দোয়েল ও তার পরিবার বড় বট গাছের উপর গিয়ে বসলো । দোয়েল ঘটনা যাচাই করতে গেছে । কিন্তু গিয়ে দেখে ওখানে কিছুই নাই । কোন মানুষ ঝুলছে না । সে বউ এর দিকে রাগত চোখে তাকায় । বউ তাকে মিথ্যা বলেছে । পক্ষীকুলে মিথ্যা বলার নিয়ম নাই । তার বউ নিয়ম ভেঙ্গেছে । খুবই অন্যায় কাজ ।
পরিবারের উপর এখন রাগ করা তার কর্তব্য ।
~ আমার মনে হয় মানুষটাকে নিয়ে গেছে । তুমি কাছে গেলে রক্তের দাগ দেখতে পাবে । ওগো তুমি কিন্তু আবার কাছে যেয়ো না । বলা যায় না কি থেকে কি হয় ।
দোয়েল যে করেই হোক ঘটনা যাচাই করবে । মানুষ মানুষকে মারবে আবার তা বেড়ায় ঝুলায় রাখবে এইটা কেমন কথা । এটা নিশ্চয় মিথ্যা কথা । তার পরিবার মিথ্যা বলেছে । কাছে গেলেই প্রমান হয়ে যাবে । কোন রক্তের দাগ পাবে না । মানুষের দোষ সে বিশ্বাস করতে পারে না । এরা কতো গুনি প্রাণী । মনে কতো দরদ।
দোয়েল একটা উড়াল দেয় । এক উড়ালে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যায় । বেড়ায় রক্ত আছে কি না দেখার দরকার ।
~ এই তুমি কোথায় যাচ্ছ । যেয়ো না , যেয়ো না । বিপদ হতে পারে । মানুষ ভালো না গো ।"
দোয়েলের পরিবার চিৎকার করতে থাকে ।
ততক্ষণে দোয়েল বেড়ার উপর গিয়ে বসেছে ।
হটাৎ একটা বিকট শব্দ হয় । দোয়েলের পরিবার কিছুসময়ের জন্য কিচ্ছু সুনতে পায় না । একটু ঠিক হয়ে দোয়েলের দিকে তাকায় । তখন দেখে দোয়েল কাঁটা তারের বেড়ার সাথে ঝুলছে । ঠিক সেখানে যেখানে মেয়েটি ঝুলছিল । দোয়েলের শরীর থেকে রক্ত পড়ছে । লাল রক্ত ।