somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্প " কাঁটাতার "

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেলানি খাতুন তোর এই কাপুরুষ ভাইটি গল্পটি তোর উদ্দশে উৎসর্গ করলো .........


দোয়েল আজ খুব চিন্তিত । পাখিরা চিন্তা করবেনা এমন তো কোন কথা নাই । পাখিদেরও মাথা আছে । সেখানে ঘিলু আছে । ঘিলু বাংলা শব্দ । ইংরেজি হল ব্রেইন । এই ব্রেইন চিন্তা করে । দোয়েল একটা গাছের উপর বসে চিন্তা করছে । গাছটি অনেক বড় । এটা বাংলাদেশের ভেতরে পড়েছে । এর ঠিক সামনে একটা কাঁটা তারের বেড়া । ওপারে ভারত । দোয়েল অবশ্য এতো কিছু বোঝে না । ওপারে তার পরিবার গেছে । তার পরিবার দিনে একবার ওপার না গিয়ে থাকতে পারে না । মা বাবার বাড়ি । না দেখলে রাতে ঘুম আসে না । গভীর রাতে ডাকা ডাকি করে । দোয়েল পাখির রাতে ডাকার নিয়ম নেই । এইটা অশুভ কাজ । পাখি ডাকাডাকি করবে দিনের বেলা । ভোর বেলা ডাকাডাকি করা উত্তম । রাত হল শান্তির সময় । আজ অনেক ক্ষণ হল , কিন্তু তার পরিবারের দেখা নাই । এই কারনে চিন্তা হচ্ছে ।

~ওপারে গিয়ে কি দেখে আসব না কি ? কোন বিপদ হয় নি তো ? যা দিন কাল পড়েছে । বিপদ তো হতেই পারে ।
দোয়েল সিদ্ধান্ত নেয় সন্ধ্যার আগে তার পরিবার না ফিরলে সে একবার ওপার যাবে । সন্ধ্যায় পাখিদের বের হওয়ার নিয়ম নেই । পক্ষী জগতের নিয়ম খুবই কঠিন । ভাঙ্গলে বিপদ হয় । তার পরও তাকে নিয়ম ভাঙতে হবে ।
দোয়েল কে আর ওপার যেতে হল না । তার পরিবার বাসায় ফিরেছে । বড় গাছের উপরে তাদের ছোট একটা বাসা। পরিবার না থাকলে খাঁ খাঁ করে । এখন ঘর আনন্দে থই থই করছে । পরিবার হল ঘরের মানান । তা মানব কূলই হোক আর পক্ষী কূলই হোক ।
দোয়েল আনন্দ গোপন করে । গলা ভারি করে বলে " এইটা তোমার কেমন বিবেচনা । এতো দেরি করে ঘরে ফিরলা । আমি তোমার উপর বিরক্ত । "

~ আমি কি আর ইচ্ছা করে দেরি করেছি না কি ?
~ কেন কি হয়েছে ?
~ আর বল না গো , আমি তো সময় মতন ই বের হয়েছিলাম । ঐ যে বড় বট গাছটা আছে না , চিনতে পারলে না । তারের বেড়ার পাশে ওর বড় শেকড় আছে । আমরা মাঝে মাঝে গিয়ে বসতাম। তো ওখানে এসে কিছু ক্ষণ আরাম করতে বসলাম । খানিক ক্ষণ পর সে কি এক শব্দ হল ।
~ কেন ? কিসের শব্দ ?
~ জানি না । তবে বিরাট শব্দ । কিছু সময় তো আমি সুনতেই পাই নি । পরে যখন একটু ঠিক হলাম তখন দেখি একটা মেয়ে কাটা তারের উপর ঝুলছে । মেয়েটা খানিক ক্ষণ চিৎকার করলো । পরে আর একটা শব্দ । আগের থেকেও বিরাট । এইবার মেয়েটা চুপ । কোন কথা নাই । বেড়ার সাথে ঝুলতে থাকলো । আহারে , মেয়েটার মুখতায় কতো যে মায়া ।
~ কি যে বল তুমি । তুমি বোধয় ভুল দেখেছো । ওখানে মানুষ ঝুলবে কেন ? মানুষে মানুষে কতো প্রেম । একজন আরেক জনের বিপদে সাহায্য করে । আবার এই বেড়ার ধারে তো মানুষরা হাটা চলা করে । পাহারা দেয় । ওরা কি দেখে নি ? ওরা কি ঐ মেয়েটা কে ঝুলে থাকতে দেয় না কি ? তুমি ভুল দেখেছো । মার বাড়িতে বেশি খেয়ে ফেলেছ বোধয় ।
~ এই ঠাট্টা করবা না । আমি বেশি কিছু খাই নি । শুধু কিছু খুদ খেয়েছি । এই খেলে বুঝি কেউ বেশি দেখে? আমি ঠিকি দেখেছি । ওখানে একটা মেয়ে ঝুলে আছে । মেয়ের গা দিয়ে রক্ত পড়ে । লাল রক্ত । মেয়েটার মুখে কি যে মায়া । আহারে । আমি তো এতো ক্ষণ বসে ছিলাম । মেয়েটা ঝুলে ছিল । কেউ নামাতে এল না । তাই তো আমার দেরি হল । তোমার বিশ্বাস না হয় আমার সাথে চলো দেখে আসবে ।

এই ঘটনা দোয়েলের বিশ্বাস হতে চায় না । তার বউ বোধয় বানিয়ে বলেছে । গল্প বানানোতে সে গভীর আনন্দ পায় । পরে এই নিয়ে হাসা হাসি করে । ঘটনা একবার দেখে আশা উচিৎ । সে বউকে বলে "চলো যাই । দেখে আসি । সত্যি না হলে তোমার সাথে কথা বন্ধ । এইটা তোমার শাস্তি ।"

দোয়েল ও তার পরিবার বড় বট গাছের উপর গিয়ে বসলো । দোয়েল ঘটনা যাচাই করতে গেছে । কিন্তু গিয়ে দেখে ওখানে কিছুই নাই । কোন মানুষ ঝুলছে না । সে বউ এর দিকে রাগত চোখে তাকায় । বউ তাকে মিথ্যা বলেছে । পক্ষীকুলে মিথ্যা বলার নিয়ম নাই । তার বউ নিয়ম ভেঙ্গেছে । খুবই অন্যায় কাজ ।
পরিবারের উপর এখন রাগ করা তার কর্তব্য ।
~ আমার মনে হয় মানুষটাকে নিয়ে গেছে । তুমি কাছে গেলে রক্তের দাগ দেখতে পাবে । ওগো তুমি কিন্তু আবার কাছে যেয়ো না । বলা যায় না কি থেকে কি হয় ।

দোয়েল যে করেই হোক ঘটনা যাচাই করবে । মানুষ মানুষকে মারবে আবার তা বেড়ায় ঝুলায় রাখবে এইটা কেমন কথা । এটা নিশ্চয় মিথ্যা কথা । তার পরিবার মিথ্যা বলেছে । কাছে গেলেই প্রমান হয়ে যাবে । কোন রক্তের দাগ পাবে না । মানুষের দোষ সে বিশ্বাস করতে পারে না । এরা কতো গুনি প্রাণী । মনে কতো দরদ।

দোয়েল একটা উড়াল দেয় । এক উড়ালে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে যায় । বেড়ায় রক্ত আছে কি না দেখার দরকার ।
~ এই তুমি কোথায় যাচ্ছ । যেয়ো না , যেয়ো না । বিপদ হতে পারে । মানুষ ভালো না গো ।"
দোয়েলের পরিবার চিৎকার করতে থাকে ।
ততক্ষণে দোয়েল বেড়ার উপর গিয়ে বসেছে ।
হটাৎ একটা বিকট শব্দ হয় । দোয়েলের পরিবার কিছুসময়ের জন্য কিচ্ছু সুনতে পায় না । একটু ঠিক হয়ে দোয়েলের দিকে তাকায় । তখন দেখে দোয়েল কাঁটা তারের বেড়ার সাথে ঝুলছে । ঠিক সেখানে যেখানে মেয়েটি ঝুলছিল । দোয়েলের শরীর থেকে রক্ত পড়ছে । লাল রক্ত ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×