ঘূণপোকা আর ছাড়পোকাদের চলাচল শুনি ; ওরা অবসাদের মতন আসছে ;
আমি নিজেকে দেউলিয়া-পরবর্তী অবস্থায় জন্য প্রস্তুত করে নেই ;
আমার টেবিলের কাঠ থেকে পড়ছে ক্ষত আর ক্ষতির গুড়ো ,
একমাত্র নিশ্চিত সত্যি তথা আমার শরীরের প্রতিটি শিরায়
পরজীবিরা গড়ছে দালান ; বীজাণুর কবলে মগজ মরতে থাকে ;
আমি উদবাস্তু বস্তিবাসীর মতন কেবলি দৃশ্য দেখি ;
উড়ালসেতুর নক্সা বাস্তবায়নে মাঝরাতে হয়েছে জড়ো ক্রেন , বুলডোজার ;
আঁধারে চকচক করে হেসে ওঠে করাতের ধারালো হাসি এবং
আততায়ীর মতন মানুষেরা নির্মম টান দেয় চেইনশো এর লিভারে ;
বিনিদ্র চোখে বৃক্ষপ্রেমীরা রাস্তার দু ধারে সবুজের গণহত্যা দেখতে থাকে ;
বট , মেহগনি , সাইকাস , তাল প্রভৃতির অভিন্ন পতন শব্দে পৃথিবী কম্পিত হয় ;
নগর কর্মকর্তারা সিমেন্ট আর ইটের স্তুপ দিয়ে ঢেকে ফেলে উদ্ভিদহীন হাহাকার ;
আমি উল্লাসিত নই ; আমি শোকার্ত নই ; আমি কিরূপ ?
সযত্নে লালিত আনন্দ আর পুলকেরা করবেই প্রতারণা ;
নিরিবিলি ঘরের প্রেমময় কোণে বুকে জড়িয়ে ধরে ব্রা হতে ছুড়ি বের করে
হৃদয়কে এফোঁড়-ওফোঁড় করে রিজেক্টেড কাচামালের মতন ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবেই ;
তবু আনন্দ , আশা , স্বপ্ন আর প্রতিশ্রুতি জীবনের জন্য অপরিহার্য নয় ;
বিষাদ , হতাশা , দুঃস্বপ্ন আর বেঈমানি দিয়েও বেশ সাজানো যায়
শূন্য জীবনের ঘর ; কংক্রিটের খোপগুলো বেশ সহজেই ভরে দেয়া যায়
কালো দেবতার অক্ষয় আশীর্বাদে ; তাই আমার যাবতীয় আত্মা যায় যদি চলে
পরজীবি আর ক্ষয়কারীর বেনামী দখলে এবং তৈরি হয় অসৃষ্টির ভাগাড় তবে
অসুখের সাথে নতুন সংসার করে হওয়া যাবে সুখী ; এই আশায় এই হতাশায়
আমি কৌতূহল ভরে প্রেয়সীর আকাঙ্খায় চরমতম ক্ষতিকে আহ্বান করি ;
মূলত পৃথিবীত এখন কোথাও আর নিখাদ বেদনা আর বিষাদ যায় না পাওয়া ;
নিঃসঙ্গের বিবর্ণ বিষাদ , লক্ষ্য - চেষ্টা - উদ্যমের মরণে জন্মানো হলুদ হতাশা
ক্ষণিকের অস্বস্তি , খন্ডকালীন অশ্রু আর নাটকীয় হাহাকার ছাড়া কিছু কি দেয় চিরস্থায়ী ?
অসুখের প্রবল পীড়নে নির্বাণের চরমতম সুখ কি দেয় এই দ্বিতীয় শ্রেণীর অপদেবতাগণ ?
একই দুঃস্বপ্ন দেখে দেখে আমি ক্লান্ত অসার ; হাসিতে ফেটে উঠি মাঝে মাঝে ঘুমের মাঝে
কথিত প্রেতাত্মাদের মনে হয় আনকোরা চার্লি চ্যাপ্লিন ; অন্ধকারে বিনোদন দেয় ভাঁড় ;
মানুষ এই বন্ধ্যা সময়ে ভুলে গেছে বেঈমানির নিপুণ শিল্প ; কথার উচ্চারণেই ,
মুখের হাসিতেই আর প্রতিশ্রুতির দলিলেই যদি বুঝে নেয়া যায় বেঈমানি
তবে প্রাপ্ত বেদনা হয়ে যায় সূর্যাস্তের মতন স্বাভাবিক ও ফক্কিকার ;
প্রকৃত অবস্থা এই যে , ঈশ্বর এই জমিনে আর খুজেন না কোনো বান্দা
শয়তান এই জমিনে আর খুজে না কোনো অধম অনুসারী!
জীবন যেন জীবনের সবচেয়ে বড় অসুখ।
নগরীতে এখন কোনো পাখি নেই ; কোনো বৃক্ষ নেই ; কোনো জলাধার নেই
কোনো পুষ্পোদ্যান নেই ; নেই কোনো কুকুর অথবা বিড়াল ধূসর রাস্তায় ;
ইট সুড়কিতে এখানে কোনো তেলাপোকা , ইদুর অথবা বেজি থাকে না লুকিয়ে ;
আনন্দঘন মূহুর্তে এবং বিষাদগর্ভ পরিস্থিতিতে মানুষেরা না হাসে না করে বিলাপ ;
দুই চোখের কালো উপড়ে নিয়ে সেখানে অন্তহীন কংক্রিট ভরে নাগরিকগণ
আধুনিক গৌতম বুদ্ধের মতন ধ্যানে হেটে চলে নির্বিকার ; ম্যাপজুড়ে ছেড়া স্নায়ুর তার ;
এমন সময়ে যখন কেউ বৃক্ষের জন্য কাদে না , না কাদে উড়ালসেতুর জন্য
এমন সময় যখন সবাই পেয়ে গেছে নির্বাণ ; সবাই বুঝে গেছে যা বুঝবার ;
আমি একমাত্র মানুষ হিসেবে এখনো জেগে আছি ;
আমি এখনো রাত হলে বেদনা অনুভর করি ; বেদনাহীন বেদনা
আমি এখনো রাতহলে আনন্দ অনুভর করি ; আনন্দহীন আনন্দ ;
এই ভেজাল আর দুই নম্বরের দুনিয়া ছেড়ে তাই এইখানে আসলাম ;
নগরের এই ঘর থেকেই সবাই পাচ্ছে নির্বাণ ; এইখানেই প্রলয়পল্লি ;
এই ক্ষয়িষ্ণু লাল আলোর ঘরের শীতল মেঝেতে স্তম্ভসম হাই হিল পরে
চরম ক্ষতি আর ধ্বংসের উপমা হয়ে ক্যাটওয়াল্ক করে পরম ডাকিনী ;
রক্তাভ উজ্জ্বল ঠোটে বিনাশ আর বর্ণহীন চোখে প্রলয় খেলা করে ;
তূরীয় দেহবল্লরী ঘিরে চতুর্দিকে ওড়ায় আর ঘোরায় নির্বাণের চাবুক ;
ওড়নার সাথে গ্রীবাতে ঝুলে হাস্যোজ্জ্বল আর শোকার্ত দুই মানুষের মুন্ডু ;
মুহর্তেই চুলের সর্পিল বিনুনি খসে পড়ে শুরু হয় অগ্নি উদগীরণ ;
দুর্ভিক্ষপীড়িতের মতন মানুষেরা সেই আগুনে লাফ দিতে থাকে ;
আমার চোখের সামনে দেখি জীবনগুলো কাবাবের মতন ঝলসে ওঠে
দেখি জীবনের আগুনগুলো এই কালীর আগুনে ক্রমে ক্রমে যায় নিভে
ক্ষয়কারী পচা জীবনের বিনাশে ঘর ভরে যায় নির্বাণের ধূসর ছাইয়ে ;
সময় নষ্ট না করে আমিও আমার বুক পেতে দেই ডাকিনীর পায়ের নিচে ;
চাবুকের মাংসল দাতে একে একে খসে পড়তে থাকে আমার মনুষ্যত্বের সিল ;
টের পাই শৈশব থেকে প্রৌঢ় অবধি জ্বলা অপচয়কারী জীবনের আগুন
ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে ; আমি প্রলয়োল্লাসে দেবীর প্রতি করি মন্ত্র পাঠঃ
হে প্রলয়া , এই পোড়োজমিন থেকে আমাদের তুমি উপড়ে ফেলো
হে নির্দয়া , আমাদের অনুভূতি জ্বালা চোখ তুমি উপড়ে ফেলো
হে বিনাশী , আমাদের চোখে তুমি পুরে দাও আত্মাহীন ধূসর ছাই
হে ঘূর্ণী , আমাদের শিখাতে ফু দিয়ে দান করো নির্বাণ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:২৩