এমন একটি সময়ের কথা ভাবা যাক যখন একজন সাধারণ মানুষের সে নিজে ছাড়া আর কেউ নেই, কিছু নেই। সর্বপ্রথম যে অভাববোধ দ্বারা সে তাড়িত হবে তা হল ক্ষুধা। ক্ষুধা নিবৃত হলে সে বস্ত্রের অভাববোধ করবে। অতঃপর বাসস্থান... ইত্যাদি। ক্ষুধা নিবারণের জন্য তার অর্থের প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীতে একজন মানুষ যা চায় তা হল ক্ষুধা নিবারণের সমপরিমাণ টাকা। তারপর সে বস্ত্র ও বাসস্থান সংস্থানের জন্য আরও কিছু টাকা চায়। তারপর সে নানা চাহিদা মিটাতে আরও টাকা চায়। ধরা যাক তার সমস্ত চাহিদা ক্রমান্বয়ে পূর্ণ হবে। তাহলে সে চাইবে তার দেশের প্রথম ধনী হতে। তারপর চাইবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ধনী হতে। ধরা যাক তার এই চাহিদাও পূর্ণ হল। অর্থাৎ সে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী। এখন সে চাইবে ক্ষমতা। পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে সে শাসন করতে চাইবে, যেন সবাই তার কথামত চলে। সমস্ত মানুষ যেন তার অধীনস্থ থাকে, তার সামনে মাথা নিচু করে থাকে। ধরা যাক এই অসীম ক্ষমতা এবং তথাকথিত শ্রদ্ধাও সে অর্জন করল।
(উল্লেখিত ক্রম যাই হোক, মানুষের সমস্ত চাহিদা পূরণ হলে মানুষ এই শ্রেণীতে পৌঁছুতে চাইবে।)
তারপর কি সে থেমে যাবে? তার কি আর কোন আভাববোধের তারণা থাকবেনা?
কিছু সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকের মতে, এই সময়ের মধ্যে আত্মহত্যার ইচ্ছা জন্ম নিতে পারে। তারা এও বলে থাকেন যে তথাকথিত সব প্রাপ্তিতে মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে।
ভিন্নমতঃ কোন একটা অভাবের পূর্ণতা আরেকটা নতুন অভাববোধের স্থান তৈরী করে যায়। আর তাই আমার মনে হয়, এই মানুষটির মনে তখন ভালোবাসার চাহিদা দেখা দিবে। সে চাইবে এক এক করে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ তাকে ভালোবাসুক (An endless desire)। চাহিদা ও তা পূরণের প্রচেষ্টাই আমাদের উৎসাহ জোগায় জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে। আমৃত্যু এই চাহিদা পূরণের জন্য সে পথ চলবে। প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে তথাকথিত অভাববোধ না থাকা মানুষেরা কেন আত্মহত্যা করে?
কারণ তারা মানুষের ভালোবাসা পাবার রাস্তাটা খুজে পায়না। আর খুঁজে না পাওয়া রাস্তার অভাববোধই তাকে আত্মহত্যার দিকে ধাবিত করে। তাহলে কি মানুষের ভালোবাসা পাওয়াটা অত্যন্ত কঠিন? এটা একটা আপেক্ষিক বিষয়। কিন্তু ধ্রুব সত্যি হল- মানুষকে ভালোবাসলেই তার ভালোবাসা পাওয়া যায়। মানুষকে ভালোবাসা খুব কঠিন কি? রোজত আট দশজনকে ভালোবাসছি, আর দুজনকে ভালোবাসাতে পারব না? তারপর আরও দুজন…