সদ্য আঠারো হবার বিপুল তেজ নিয়ে যখন আমি প্রথম বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পা রাখি তখন আমার পকেটে ছিলো বাপের টাকা পুড়ানো একদলা ডলার আর মাথার মাঝে ছিলো বাংলাদেশের শহরে জান বাঁচিয়ে ঘোরার অভিজ্ঞতা পোড়ানো একদলা ফিচলা বুদ্ধি। কাজেই এয়ারপোর্টে নেমেই প্রথম যে ইতালিয়ান ভদ্রলোকের বাসার বেইজমেন্টে আমি উঠেছিলাম-সেটা কিছুদিনের মাঝেই আমার মাথায় মগজপোকার জন্ম দিলো। চোখের সামনে প্রতিমাসে সাড়েসাতশ টাকা পুড়ে যাওয়া দেখে সহ্য হচ্ছিলো না আর তারচেয়ে বেশি সহ্য হচ্ছিলোনা প্রত্যেকবার বাবা মায়ের হাজারতম ফোন ধরবার জন্য হাজারতম বার রুমের পশ্চিম কোনায় পেন্সিল দিয়ে মার্ক করা জায়গাটায় মাথা চেপে ধরে রেখে ফোনের নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করা। কেনো আমি সামান্যতম মাথা নাড়ালেই ফোন কেটে যায় আর কেনো আমেরিকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষের সংখ্যা কম বলে মোবাইল কম্পানিগুলো কম কম করে-দূরে দূরে করে টাওয়ার বসায় আর কেনো আমি এমন একটা গ্রাম টাইপের জায়গায় বাসা নিয়েছি যেখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে মানুষের সংখ্যা কম ইত্যাদি বাবা মা মার্কা প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে আমি স্বেচ্ছায় ফোন কেটে দিয়ে এমন ভাব করা শুরু করলাম যে নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য ফোন কেটে গিয়েছে।
বাংলাদেশের থেকে আমেরিকায় সন্তানকে পড়তে পাঠিয়ে দিয়ে প্রত্যেক বাঙালি বাবা মা হঠাৎ করে কোটিপতি হয়ে যান। তারা এমন ভাব করা শুরু করেন যেন তাদের টাকাপয়সার কোন অন্ত নেই আর দুনিয়ার যাবতীয় সমস্যার সমাধান তাদের টাকা দিয়ে করে ফেলা যায়। যে বাবা আগে চা খাওয়ার জন্যে বিশ টাকা চাইলে বেশি বেশি চা খাওয়ার অপকারিতার উপর একটা পেপার কাটিং বের করে জোরে জোরে পড়তে বলতো, সেই বাবা এখন বলা শুরু করে-আসলে তুই কমদামি সিম ব্যবহার করিস বলে নেটওয়ার্ক খারাপ, না? তোর অর্পিতা দিদি পরের মাসে যাচ্ছে-আমি কিছু টাকা পাঠায়ে দেই সাথে। তুই একটা ভালো সিম কিনে নে। আর যেই ছেলেটা আগে পেপার কাটিং পড়া শুনতে শুনতে বাবা ঘুমিয়ে পড়লে বাবার পকেট থেকে বিশটাকার বদলে দুইশ টাকা বের করে নিতো, সে এখন বলে-এতো টাকা টাকা করো কেনো বাপি? আমার কাছে এখনো অনেক টাকা আছে। এতো টাকা দিয়ে আমি কি করবো? টাকার দরকার নাই।
কথাগুলো বলার সময় তার মনে হয় যেন তাকে পড়ানোর খরচের জন্য তার পরিবারের বাকি সব সদস্যের একটা করে কিডনি বেচা লেগেছে। বাবার মুখের আমিরি আর সন্তানের মুখের গরিবীর মাঝখানের কোন একটা ধোঁয়াটে জায়গায় মধ্যবিত্ত পরিবারটির বিত্তের সত্যতা লুকিয়ে থাকে। জায়গাটি যে ঠিক কোথায়, সেটা বাবাও জানে না, ছেলেও জানে না।
তবে আর কিছু জানুক না জানুক-বাঙ্গালি বাবা মা প্রশ্ন করে করে ছেলেপুলেকে ক্লান্ত করে দিতে জানে। সেই জ্ঞান আর প্রত্যেক সকালের পনেরো মিনিট পাহাড় বেয়ে দৌড়-আধাঘন্টা বাস-একঘন্টা মেট্রোরেল-আর পনের মিনিট আবার পাহাড় বেয়ে দৌড়ে এক রাউন্ড ট্রিপে বারো ডলার পুড়িয়ে ইউনিভার্সিটি পৌঁছানোর ক্লান্তির একটা কম্বিনেশন থেকে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে আমার বাসা বদলাতে হবে।
ততদিনে আনাড়ি আমেরিকান হাসলার হবার কারণে আমেরিকা আমার টাকাপয়সার বেশ খানিকটা বের করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের উচিত ছোটখাট একটা বাসা খুজে বের করা, যেটা ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি আর ভাড়া কম। কিন্তু আমার মস্তিষ্ক তো আর সুস্থ মস্তিষ্ক না, আমার মস্তিষ্ক হলো বাঙালি মস্তিষ্ক। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি ইউনিভার্সিটি থেকে আরো দূরে গিয়ে আমার বোন আর বোনজামাইয়ের এপার্টমেন্টে আস্ত একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করে বসে থাকবো। আমার ফিচলা বুদ্ধি ছিলো এই যে, এক বেডরুমের বাসার বেডরুমে আমি থেকে বাকি ডাইনিং রুম লিভিং রুমকে বেডরুম বানিয়ে দিয়ে সেগুলো এমনভাবে ভাড়া দিয়ে দেবো যাতে করে এপার্টমেন্টের ভাড়া উঠে যায় আর আমাকে ভার্চুয়ালি কোন ভাড়া দিতে না হয়।
কিন্তু সত্যিকারের দুনিয়া আমার ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডের মতন এতো পারফেক্ট না। বাসা ভাড়া করতে গিয়ে শোনা গেলো যে আমার কোন চালচুলো নেই বলে আমার মোটা অংকের একটা ডিপোজিট দিতে হবে। সেই ডিপোজিট দিতে গেলে আমার অবশিষ্ট টাকার থেকে আর শিষ্ট পরিমান থাকা অবশিষ্ট থাকবে না। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষের উচিত ছিলো সাথে সাথে মিশন ক্যানসেল করে ঘরে ফিরে আসা। কাজেই আমি মোটা অংকের ডিপোজিট দিয়ে বাসাটা ভাড়া করে ফেললাম।
ভাড়ার দিনগণনা শুরু হলো মাসের মাঝখান থেকে। আমি এতো উত্তেজিত হয়ে পড়লাম যে রাতে আর ঘুমাতে পারলাম না। কাজেই রাতের মাঝখানে ইতালিয়ান ভাড়াটিয়া আংকেল এলেক্সকে ঘুম থেকে তুলে ব্যাগবোচকা ঘাড়ে কাধে নিয়ে উবার ডেকে একরাতের মাঝে বাসা পালটিয়ে ফেললাম।
এপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে বিপুল বিক্রমে দরজা খুলেই কোন যুদ্ধজয় টাইপের কবিতা আবৃত্তি করবো সেইটা ভেবে চাবি ঘুরাতেই কট করে চাবিটা ভেঙ্গে দরজার মধ্যে আটকে গেলো। আমি আমার পর্বতসম ব্যাগবোচকা নিয়ে বোকার মতন দরজার বাইরে তাকিয়ে আবিস্কার করলাম যে শালার আমেরিকান চাবি প্লাস্টিকের চেয়েও হালকা।
এপার্টমেন্টওয়ালাদের ফোন করে তাদের চাবিওয়ালা আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম নিজের ভাড়া করা সাতশ স্কয়ারফুটের বাসার দরজার সাথে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে।
যখনই আমি তীব্র দুর্দশার মাঝে পড়ি আর আমার মনে হয় যে এই অবস্থা থেকে আমার কোন নিস্তার নেই তখনই আমি আমার লেখা কুহক গল্পটা পড়ি। গল্পটা পড়তে গেলে মনে হয়-এমন একটা গল্প যে লিখতে পারে, তার কোন সমস্যা হবেনা। কোন না কোন একটা উপায় সে বেরই করে ফেলবে। কাজেই আমি ব্যাগের থেকে 'সন্তান' বের করে কুহক পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে মনে হলো, নলিনী বাবুর কুহুর মতন আমারও একজন কাল্পনিক প্রেমিকা থাকলে মন্দ হতো না। এমন সময়ে আমার সাথে ঠান্ডা মেঝের ওপর বসে হাত চেপে ধরে বলবে-কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না? আমরা দুইজন একসাথে সব ঠিক করে ফেলবো।
কিছুক্ষণের মাঝেই দেখা গেলো একজন প্রখর সুন্দরী আমার কাঁধে মাথা রেখে বসে আছে। তার টানা টানা পটলচেরা চোখ, তীব্র নাক আর মাখনের মতন নরম শরীর। সে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ভেজা ভেজা চোখে বললো,কিচ্ছু হবে না, সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না? যতক্ষণ আমরা দুইজন একসাথে সব ঠিক করে ফেলবো।
লেখালেখি করলে কিচ্ছু পাওয়া যায়না-কিন্তু যেমন ইচ্ছা তেমন করে নিজের জীবনের গল্প লিখে ফেলা যায়। আর কয়জনই বা পারে এরকম?
মাঝরাতে ঘুমভেঙ্গে এসে চাবিওয়ালা গজগজ করতে করতে দরজা খুলে দিলো। আর দরজার ভেতর আমার রাজ্য। একটা কিচেন, একটা বিরাট লিভিংরুম, একটা ছোট্ট ডাইনিং আর একচিলতে বারান্দা। আহারে! কি সুন্দর ঘর আমার।
শোবার ঘরে এসে এক এক করে সব ব্যাগবোচকা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে রাখলাম। শোবার মতন কোন খাট পালং নেই। ব্যাগের থেকে লাল কম্বল আর গোলাপী কম্বল বের করলো কুহু। বিছিয়ে দিলো মেঝের কার্পেটের ওপর। কি মনে করে একঝাঁক মরিচবাতি কিনেছিলো সে। লালগোলাপী কম্বলের চারপাশে সাজিয়ে দিলো। ব্যাস! কুহুর মতন কল্পনা যার ঘরে আছে-তার এরচেয়ে বেশি আর কি লাগে?
মেঝের থেকে ঠান্ডা ওঠা শুরু করলো রাতের বেলা। আমি বউকে জাপটে ধরে রাখলাম। আমি বললাম, কুহু, তুমি কি বুঝতে পারছো যে আমাদের কাছে পরের মাসের ভাড়া দেবার মতন পয়সা নেই? ভাড়াটিয়া না পেলে যে আমাদের পরের মাসেই বাসা থেকে বের করে দেবে?
কুহু বললো, কিচ্ছু হবেনা। তুমি তার আগেই ভাড়াটিয়া খুজে বের করে ফেলতে পারবে। আমি জানি।
ততদিনেই আমি ছ্যাচা খেয়ে কিছুটা শিখেছিলাম যে কল্পনার জগতে আমি যতই রাজা হইনা কেনো-বাস্তবতার জগতে প্রত্যেক নাগরিকই দাস। কাজেই আমি দুনিয়ার যত যায়গায় বিজ্ঞাপন দেয়া যায়-ততো জায়গায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বসে থাকলাম।
দুনিয়ার মানুষ কল দিতে থাকলো। আমি তাদের বাসা দেখাতে থাকলাম। কিন্তু কেউই কিছু ফাইনাল করেনা। অনেকে অনেক আশ্বাস দেয় ঠিকই-কিন্তু আমার তাদের উপর বিশ্বাস আর হয়না।
পরের মাসের ভাড়া দেয়ার তারিখ দোরগোড়ায় নিয়ে আমি যখন বিশ্বাসী ভাড়াটিয়া খুঁজে বের করার জন্য জান পানি করে ফেলছিলাম তখন আমার জানে একটু পানি দিলেন এক বাংলাদেশী বড়ভাই। তিনি ভাড়া করলেন আমার ডাইনিং রুম-রুমের উপরে ঝাড়বাতি-পাশে লম্বা জানালা দিয়ে ফেয়ারফ্যাক্সের আকাশ দেখা যায়-রুমের ভাড়া আমি বললাম পাঁচশো টাকা। পাঁচশো টাকা একা দিতে কষ্ট হয়ে যাবে বলে এক ভারতীয় সহপাঠীকে নিয়ে তিনি রুমটাতে উঠলেন। রুমের সামনে ভারী পর্দা টানিয়ে দেয়া হলো। দুইটা পর্দার মাঝে ডাক্ট টেপ মেরে দিলাম যাতে করে মাঝখান দিয়ে দেখা না যায়। হোম ডিপো থেকে বিশাল সাইজের কার্ডবোর্ড কিনে ঘেষটে ঘেষটে ঘরে টেনে এনে হাতুড়ি পেরেক দিয়ে আটকাতে গিয়ে দেখি কার্ডবোর্ডের পলকা দেয়ালে পেরেক ধরেনা। স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে গুতায়ে গুতায়ে স্ক্রু ঢুকিয়ে একটা কার্ডবোর্ডের দেয়াল দাড়া করানো হলো।
রিমেল ভাই উঠতে উঠতে জায়গাটা একটা রুমের মতই হয়ে গেলো।
আলমারি হাড়িপাতিল চেয়ার আর ল্যাপটপ নিয়ে রিমেল ভাই উঠলেন। প্রত্যেকদিন সকালে আধাঘন্টা ধরে সাজুগুজু করে তিনি অফিসে যান। ততক্ষণ আমরা সবাই বিভিন্ন জটিল যোগাসনে বসে বাসার একমাত্র বাথরুমের বাইরে লাইন দিয়ে সকালবেলার চাপ আটকে রাখি। দেখা হলেই তিনি মিষ্টি করে হেসে বলেন-কি অবস্থা ভাই?ভালো আছেন।
আমি বলি এইতো ভাই, ভালোই। চাকরিবাকরি খুজতেসি।
চাকরিবাকরি খুজতেসেন, আপনার স্কুলের ইন্টারন্যাশনাল অফিসে গিয়ে দেখেন সিপিটি পান কিনা। সিপিটি পাইলে বাইরে কাজ করতে পারবেন। একটা কম্পানিতে সিপিটিতে ঢুকে যাইতে পারলে পরে সিটিজেনশিপে কাজে দিবে। কি জানি পড়তেসেন আপনি?
ভাই পলিটিকাল সায়েন্স।
ও আচ্ছা। দেখেন আইটি রিলেটেড কিছু কোর্স নিতে পারেন নাকি। তাইলে আইটি কম্পানিতে চাকরি নিতে পারবেন। ওরা অনেক সময় স্পন্সর করে। সিটিজেনশীপ পাইতে সুবিধা হয়। এইগুলা খেয়াল রাখবেন। এই দেশে চলতে গেলে ভিতরের সব খবর রাখতে হয়।
ও আচ্ছা। আমি আসলে ভাই ভাড়াটা নিতে আসছি। আজকে তিন তারিখ।
ভাই, পাচ তারিখে না সার্কেল টাওয়ারের ভাড়া দেয়ার ডেডলাইন। জানিতো ভাই আমি, আমিতো ভাই ভিতরের খবর রাখি। আরেকদিন পরে দেই।
এই একদিনে তিনি কি এমন অর্থকরী কাজ করে অর্থকড়ি আয় করে উড়িয়ে ফেলতেন আমার জানা নেই। তবু মাসের চতুর্থ দিন ভাড়া তিনি ঠিকই দিতেন। ভালোই নির্ঝঞ্ঝাট। আমি তাকে নিয়ে মোটামুটি সুখেই ছিলাম কারণ বাকি রুমমেটদের অর্ধেকের কাছে ভাড়া চাইলে এমন একটা ভাব করতো রাজলক্ষীর মোড়ে রিকশা থামিয়ে ছুরি ধরে তাদেরকে যা আছে তাই বের করে দিতে বলেছি আর বাকি অর্ধেক এমন ভাব করতো যেন সেই কিয়দক্ষণের জন্য তারা গান্ধীর বান্দর হয়ে গেছে-কিছু দেখেনা,কিছু শোনেনা আর কিচ্ছু বলেনা। সেই তুলনায় আমার বাঙালি ভাই যথেষ্টই বিবর্তিত ছিলেন।
কিন্তু এই বিবর্তন তাকে যে জটিল সংকেতাবলির মাধ্যমে স্বপ্রাজাতির ভিন্ন প্রানীর সাথে যোগাযোগ করার ক্ষমতা প্রদান করেছে-সেটা নিয়ে তার রুমমেট বেশিদিন সুখে থাকতে পারলো না।
বাংলাদেশি হিসেবে 'ভিতরের খবর রাখা' যেহেতু তার জাতীয় দায়িত্বের মাঝে পড়ে, তাই তিনি সারারাত জেগে বাংলার বহু মানুষের ভিতরের খবর আহরণ করতেন আর তাদের বারবার বলতেন-শুন, যা দরকার আমাকে বলবি, আমি এখানের সব ভিতরের খবর রাখি।
ভারতীয় রুমমেট বাংলা জানতোনা। তার সাথে থেকে থেকে ভাঙা ভাঙা বাংলা শিখে বললো- ভাই, আব নেহি-কালকে বাত করেন। হাম ঘুমা রেহে হে। কিন্তু বাঙালি রুমমেট আরো হিন্দিতে আরো ভালো। বাংলায় তাকে ঘুমাতে দেয়ার অনুরোধ করলে তিনি হিন্দিতে ঝাড়ি দেন- যাব তুমারা কোই বাসা নেহি থা, মেনে তুমকো বাসা খুঁজে দিয়া। তুম বহুত অকৃতজ্ঞ হ্যায়।
হিন্দি বাংলা কোনকিছুতেই নিজের ঘুমাতে চাওয়ার অকৃতজ্ঞতা খুজে না পেয়ে ভারতীয় রুমমেট আমার কাছে এসে ইংরেজিতে কমপ্লেইন করলো। রয়, প্লিজ টেল হিম টু স্টপ টকিং ইন দ্য নাইট। আই হ্যাভ ক্লাস নেক্সট ডে এন্ড আই ক্যাননট স্লিপ।
আমি তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম যে আমি তাদের দুইজনের থেকেই সাইজে আর বয়সে ছোট কাজেই তাদের ডমেস্টিক প্রবলেমের মাঝে আমি ইন্টারফেয়ার করলে ডমেস্টিক ভায়লেন্স ঘটে যেতে পারে।
পাভান ভাই ফিরে যান। পরের মাসে আবার আসেন। রয়, হি ইজ টকিং স্টিল নাউ। ইট ইজ থ্রী ও ক্লক। এন্ড ইউ ক্যান হিয়ার হিম ফ্রম হিয়ার, নো?
আমি 'হিয়ার হিম,নো?' উক্তির সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে বুঝলাম ভলিউমের কারণ কি। উনি বাংলাদেশের কোন একজন ললনার রাগ ভাঙ্গানোর চেষ্টা করছেন। কোন এক অদ্ভুত কারণে আমরা বাঙ্গালিরা মেয়েদের রাগ ভাঙ্গানোর দরকার পড়লে তাদের উপর আরো রেগে বসে থাকি। আমাদের মাথায় কেউ এই ধারণা ঢুকিয়েছে যে মাইনাসে মাইনাসে রাগ পানি হয়। অথবা আমাদের পৌরুষ নিয়ে আমরা আমাদের সহচরীর মনের বেদনার থেকে বেশি শংকা বিরাজ করে।
আমি তাকে ডেকে পরদিন সকালে বললাম-ভাই, রাতের বেলায় কথা না বললে হয় না? বলতে হইলে হলওয়েতে গিয়ে বলেন ভাই।
কেন? পাভান আপনাকে কিছু বলসে?
হ্যাঁ ভাই। আগেও বলসে, ওনার আসলেই সমস্যা হচ্ছে।
ওর ব্যাপারে আর কি বলবো ভাই? মানুষের নামে বদনাম করা তো ঠিক না। কিন্তু ওর বুঝছেন-অনেক পাখা গজাইসে। প্রথম প্রথম যখন এখানে আসছে, তখন কিছু চিনতোনা, জানতোনা। এখন সব চিনসে জানসে তো-তাই বেশি বুঝ বাড়সে। হি থিংকস হি ইজ ভেরি ভেরি ক্লেভার নাও। বাট হোয়েন হি ফার্স্ট কাম হি হ্যাভ নো হোম। নাউ হি ইজ ভেরি ওভারস্মার্ট! হি ইজ থিংকিং হি হ্যাস বিকাম এ ভেরি বিগ পারসন। আই নেভার সি সামওয়ান সো আনগ্রেটফুল।
যে আনগ্রেটফুল মানুষকে শোনানোর জন্য রিমেল ভাই ভাষণের ভাষা এবং ভলিউম পরিবর্তন করলেন কিছুদিনের মাঝেই সে আসলেই রাতে ঘুমাতে চাওয়ার গর্হিত অপরাধের জন্য খানিকটা ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে জলপাই শাখা হিসেবে রিমেল ভাইয়ের জন্মদিন পালনের বুদ্ধি বের করলো। ফেসবুক থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি বের করে একদিন রাতে নিজে কেক টেক কিনে এনে বাড়ির সবাইকে তিনি তাদের ছোট্ট রুমে জড়ো করলেন। বাসার পাঁচজন মানুষ একসাথে প্রথমবারের মতন সবাইকে দেখলো। পাঁচ ভাষার পাঁচ বর্ণের মানুষ বিপুল বিস্ময়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আড়াইশো টাকার সস্তা এই ফ্ল্যাটবাসায় বসে সবাই তারা আমেরিকান ড্রীম খুজে বেড়াচ্ছে-খুজে বেড়াচ্ছে-আর রোজ ক্লান্ত হয়ে, হতাশ হয়ে ঘরে ফিরছে। ঘরে ফিরেই তারা কোনমতে শরীরটাকে বিছানায় ফেলে দিয়ে রাত পার করে দেয়-কোনদিন টেরও পায়না, যে একই ছাদের নিচে নিশ্বাসের দূরত্বে আরও এতোগুলো মানুষ নিশ্বাস নিচ্ছে। অনেক অনেকদিন কারো সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা না বলতে বলতে তারা বিনা প্রয়োজনে কথা বলার বিষয় খুজে পায়না। ছোট্ট ঘরটাতে একটা অস্বস্তিকর নিস্বব্ধতা নেমে আসে।
রিমেল ভাই ঘর ঢুকলেন সাড়ে বারোটায়। ক্লান্ত হয়ে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে তিনি তার শার্টটা অর্ধেক খুলে ফেলেছিলেন। ঘরে ঢুকেই এতোগুলো মানুষকে একসাথে দেখে তিনি শরীর ঢাকবেন নাকি চিতকার দেবেন বুঝে পেলেন না। তার আগেই আমরা চিতকার দিলাম-হ্যাপি বার্থডে হ্যাপি বার্থডে-হ্যাপি বার্থডে টু ইউ।
রিমেল ভাই কিছু না বলে উলটো ঘুরে দ্রুতপদে বাথরুমে চলে গেলেন।
আমরা সবাই ভান করলাম যে আমরা কেউ রিমেল ভাইয়ের চোখের কোনে অশ্রু জমতে দেখিনি। আমরা সবাই ভান করলাম রিমেল ভাই বাইরে থেকে এসে নিয়মমাফিক হাতমুখ ধুতেই বাথরুমে গেছেন। আমরা মিনিমাম ওয়েজ আর্নার ছেলেপুলে-নিয়মের বাইরে কান্না করবার নিয়ম আমাদের নেই।
রিমেল ভাই বাথরুম থেকে বের হলেন- বের হয়ে ঘরে ঢুকে বললেন- আই এম সো হ্যাপি টুডে। আই ওয়াজ নেভার সো হ্যাপি ইন মাই লাইফ। আই ওয়ান্ট টু ইট ইউ গাইজ, আই ওয়ান্ট টু ইট ইউ অল। হোয়েন আর ইউ গাইজ ফ্রী?
রিমেল ভাইয়ের ইংরেজি শুনে শুনে অভ্যস্ত ঘরের তিন দক্ষিণ এশীয় ঠিকই বুঝে নিলাম যে উনি আসলে আমাদেরকে খাওয়ার না, আমাদেরকে খাওয়ানোর প্রস্তাব দিচ্ছেন। শুধু আমেরিকান এলিয়ট কিম্ভুত চোখে তাকিয়ে রইলো আর রীতিমতো ভয়ার্ত দুইটা কাশি দিয়ে এক্সকিউজ মি বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো।
রিমেল ভাই বললেন, সিরিয়াসলি গাইজ। আই ওয়ান্ট টু ইট ইউ গাইজ। লেটস গো টু আইহপ দিস থার্সডে। থার্সডে পে হাফ অফ দেতা হে স্টুডেন্ট কো লিয়ে আইডি কার্ড দেখানো পড়তা হ্যায়।
এলিয়ট রুম থেকে বের হয়ে যাওয়াতে রিমেল ভাই এইবার স্বচ্ছন্দে হিন্দিতে কথা বলা শুরু করলেন। রুমের বাকি দুইজন-আফনান ভাই আর পাভান ভাই নিজেরা গল্প করা শুরু করতেই অবশ্য তিনি আমার সাথে ফিরে এলেন চিরচেনা বাংলায়- বুঝছেন ভাই-গতবছর এই সময়ে খুব কষ্টে ছিলাম। কাউকে চিনতাম না, বাংলাদেশ থেকে প্রথম আসছি। বাবা মায়ের কথা মনে পড়ে খালি। অনেক বিপদে ছিলাম। হেল্প করারও কেউ ছিলোনা। সেইখান থেকে আজকে যে এখানে এতোদূর আসতে পারসি-সেইটা ভাবতেও অবাক লাগে। এখন আমি অন্য মানুষকেও হেল্প করতে পারি-অবশ্য সবাই হেল্পের সমান প্রতিদান দেয় না..
ভাই, আজকে বাদ দেন। আজকে আপনার বার্থডে সেলিব্রেট করি।
রিমেল ভাই সেইদিনের মতন বাদ দিলেন। কিন্তু বেশিদিন আর ঘটনা বাদ থাকলো না। মাঝেমাঝেই আমি রাতে ঘরে ফিরে শুনতাম, হয় তিনি পাভান ভাইকে হিন্দিতে ভাষণ দিচ্ছেন অথবা টেলিফোনে কাউকে বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন। মাঝখানে বেচারা পাভান ভাইয়ের অবস্থা কেরোসিন। অন্য কোথায় যেতেও পারছেন না। এই শহরে রাতের ঘুমের চেয়ে এক্সট্রা একশোটা ডলার অনেক বেশি দরকারি।
এইরকমই এক রাতে পাভান ভাই ঘরে ফিরে শুনলেন যে ভেতরে হিমেল ভাই কথা বলছেন। তাই তিনি আর ঘরে ঢুকলেন না। সরাসরি আফনান ভাইয়ের ঘরে গিয়ে তাকে ডেকে এনে রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করা শুরু করলেন। এক পর্যায়ে তিনি বললেন, দেখ, ভো হিমেল আভি ভি ফোনপে বাত কার রাহা হে। চাল ছোড়, আজ কিসকি বারি হ্যায় বে?
এরপর ঘরের মাঝে যেটা হলো সেটা রীতিমতো রোজ কেয়ামত। রিমেল ভাই ঘরের থেকে তুমুল বেগে বের হয়ে এসে তিন ভাষায় যত গালাগালি জানেন, সব একসাথে করা শুরু করলো। প্রথম প্রথম খেয়াল রেখেছিলেন যাতে অন্য ভাষার গালিগুলো কিছুটা ভদ্র আর বাংলার গুলো জয় বাংলা মার্কা হয়, কিন্তু আস্তে আস্তে সেই বাধাও থাকলো না।
আমি তখন আমার ঘর বসে আলজেরিয়ার সিভিল আনরেস্ট নিয়ে পেপার লিখছিলাম। কিন্তু ঘরের আনরেস্ট এতোই আনসিভিল হয়ে উঠতে লাগলো যে আমার ওঠা লাগলো। উঠে আমি ওই ঘরে যেতেই মোটামুটি রিমেল ভাই জয়বাংলা গালি দেয়ার আরো স্বাধীনতা পেয়ে গেলেন। আমি বললাম, ভাই, আস্তে আস্তে। থামেন, এরপর বলেন কি হইসে।
দেখাগেলো যে যখন পাভান ভাই বলছিলো, আজ কিসকি বারি.. হিমেল ভাই তখন শুনেছেন আজ উসকি মাকি...যেটা ওনার হিন্দি ভাষায় জানা কয়েকটি জয়হিন্দ গালির মধ্যে একটা।
কাজেই উনিও ওনার গালি জ্ঞান জাহির করতে লেগেছেন। অন্যান্য বক্তব্যের মাঝে দুধকলা দিয়ে কালসাপ পোষা হ্যায়, লাইফ মে অর কিসিকো হেল্প নেহি করেঙ্গা, দিস ইস হোয়াট হ্যাপেন হোয়েন ইউ হেল্প আদারস, ভাই জীবনে আর কাউকে হেল্প করবো না-ইত্যাদি শোনা গেলো।
কাজেই রিমেল ভাই সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি পত্রপাঠ বাসা থেকে বিদেয় হবেন। আমি বললাম-ভাই পত্র এতো সহজে আসে না-পত্রের রঙ সবুজ আর তার উপর আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্টদের ছবি থাকে। মাসের ভাড়া দিয়ে বিদায় হন। তবে এতো সহজে বুঝ মানলে তো তার জাতীয়তা থাকে না-তাই রিমেল ভাই আমাকে আইনি প্যাচের মাঝে ফেললেন। বাসা ভাড়া নেবার সময়ে উনি আড়াইশো টাকা ডিপোজিট দিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম যদি উনি ছয়মাসের আগে বাসা ছাড়েন, তাইলে ওই টাকা ফেরত পাবেন না, যাতে করে উনি বাসা ছাড়তে না চান। আরও বলেছিলাম যে যদি ছয়মাস পার হয়ে যায়, তাইলে ওই আড়াইশো টাকা হবে শেষমাসের ভাড়া আর বাসা ছাড়ার একমাস আগে জানাতে হবে। প্রথমত তিনি দাবি করলেন যে আড়াইশো টাকা তাকে ফেরত দেয়া হোক-আমি বললাম আমার কাছে যদি এক্সট্রা আড়াইশো টাকা থাকতোই তাইলে তো আর এইটা এমেরিকা হইতো না। কাজেই তিনি বললেন ঠিক আছে। আমি একমাস বেশি থাকবো ভাড়া দিবোনা।
আমার রাজি হওয়া ছাড়া উপায় ছিলো না। কিছুটা ধারকর্জ করে আমি তার ভাড়াটা নিজে পোষালাম। পরের মাস শুরু হতেই পুরো বাসাজুড়ে একটা গোপন উৎসব শুরু হলো। সবাই এমন একটা ইউটোপিয়ান বাসার কথা ভাবতে শুরু করলো যেখানে সবাই সকালবেলা বাথরুম করতে পারে, কাউকে ব্রাশ ব্যাগে করে নিয়ে রওনা দিতে হয় না, কাউকে অফিসের বাথরুমে গিয়ে টাই বাধতে হয়না! ঘুমের মাঝে কাউকে কাউকে 'উফ! যাও বাথরুম। তুমি ভারী দুষ্টু'-জাতীয় কথাবার্তা বলতে শোনা গেলেও খুব আশ্চর্যের ব্যাপার হতো না।
মাস পার হতে থাকলো। ক্রেইগসলিস্টে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভাড়াটিয়া পাওয়া গেলো। রিমেল ভাইয়ের বিদায়ের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকলো। রিমেল ভাইয়ের রুমের অংশে আফনান ভাই ঘাঁটি পাতার প্রস্তুতি নিতে থাকলেন। পাভান ভাই রাতজেগে জেগে রাতে ঘুমানোর স্বপ্ন দেখতে থাকলেন। সে এক অত্যন্ত আনন্দের গল্প।
অবশেষে সেই দিন এলো। রিমেল ভাই তার জগদ্দল পাথরের মতন ভারী আলমারী ঘর থেকে টেনে বের করা শুরু করলেন। আমরা সবাই আনন্দে ডগমগ। হচ্ছে, এটা সত্যিই হচ্ছে। আমাদের মনে হলো আমরা ব্যালকনি থেকে দাঁড়িয়ে আনন্দে চিৎকার দেই-ফ্রী এট লাস্ট, ফ্রী এট লাস্ট।
রিমেল ভাইয়ের মতন ঝামেলাবাজ পাবলিক এতো শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের রেখে চলে গেলেন আমাদের মুক্ত করে দিয়ে-আমাদের রীতিমত আনন্দে চোখে পানি চলে আসে।
আজ সোমবার। রিমেল ভাই বাসা ছাড়বার পরে প্রথম কর্মদিবস। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আমি যোগব্যয়াম না করেই বাথরুমে ঢুকতে পেলাম। আহ! এ কি শান্তি। একেই কি বলে স্বাধীনতা? এই কি তবে মুক্তি? এই কি তবে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য?
চোখের সামনে জীবন লাল-নীল-গোলাপী হয়ে যায়। জীবনে কোনদিন নিজেকে এতো নির্ভার লেগেছে, মনে পড়েনা।
কাজ শেষ-এবার পরিস্কার হবার পালা। আমেরিকানরা শুকনোভাবে পরিস্কার হয়, তাদের কাছে হাতের ভেজানো ঘেন্নাকর। আমরা ভেজাভাবে পরিস্কার হই, কারণ আমাদের কাছে হাত ভেজা থাকবার চেয়ে অন্য কোন জায়গা ভেজা থাকা অনেক বেশি বেশি ঘেন্নাকর।
কাজেই বাসায় আসার পরপরই আমরা সবাই চাঁদা তুলে একটা বদনা কিনেছিলাম। ভার্জিনিয়ার অন্যপ্রান্তের বাংলা মুদির দোকান বাংলাবাজার থেকে কেনা বাংলা আরএফএল বদনা। সাত ডলারের সেই বদনা আমাদের সাড়ে সাত মাস দেখে শুনে রেখেছে। সেই বদনা আজ আর তার যথাস্থানে নেই।
আমার হঠাৎ করে মনে পড়লো বাসা ছাড়বার সময় রিমেল ভাই হুট করে বাথরুমে গিয়ে হাত পেছনে করে কি জানি নিয়ে গেলেন। আমি ভেবেছিলাম সেটা তার কোন ব্যক্তিগত জিনিস। কিন্তু আসলে সেটা ছিলো আমাদের সবার ব্যক্তিগত জিনিস-আমাদের প্রাণপ্রিয় তুষারবর্ণ তীব্রচঞ্চুবান আরএফএলের বদনা।
রাগে দুঃখে আমি হতবাক হয়ে যাই। দারুণ আবেগে আমি টুথব্রাশ-পেস্ট হোল্ডার হিসেবে ব্যবহার করা গ্লাসটাকে খালি করতে থাকি। গ্লাসটা ছোট-একবারে হয় না। বার বার আমার চটচটে শরীর নিয়ে উঠে পানি ভরতে হয়। মাথার ভেতর আমার বারবার ঘুরতে থাকে হিমেল ভাইয়ের বিখ্যাত বানী- আমি সব ভিতরের খবর রাখি! আমি সব ভিতরের খবর রাখি! আমি সব ভিতরের খবর রাখি!
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১৬ দুপুর ২:৫৭