somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এখন আর কারো সেই দিনের কথা মনে নেই

১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক অনেক কাল আগের কথা, এখন আর কারো সেই দিনের কথা মনে নেই।
একদেশে একটা ট্রেন এক্সিডেন্ট হলো, ট্রেন এক্সিডেন্টে অনেক অনেক মানুষ মরে গেলো।
মানুষ খুব অদ্ভুত প্রাণী, যতদিন তারা বেঁচে থাকে ততদিন কে কেমনভাবে বেঁচে থাকলো তাই নিয়ে কারো মাথা ঘামানো নেই=অথচ,মরে গেলেই সবার মাথা খারাপ হয়ে যায়।
মাথা খারাপ মানুষগুলো উপড়ে পড়া ট্রেনের পাড়ে এসে দাঁড়ালো। উপড়ে পড়া ট্রেনের নিচে মরা মানুষের লাশ। মানুষের মাথা, মানুষের দেহ থেতলে একাকার। মানুষ মাথার বদলে মাথা চায়, লাশের বদলে লাশ চায়।
তখন রেলওয়ে মন্ত্রনালয় নামের কিছু ছিলো না বাংলাদেশে। ছিলো এক পিস যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর কাছে খবর গেলো-মানুষ মরে গেছে। কি করা যায়?
তদন্ত কমিটি করো-খুজে বের করো দোষ কার।
তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো-কমিটির সদস্য তিনজন। তিনজন বড় বড় অফিসার। একজন হ্যানোপ্রধান আরেকজন ত্যানোপ্রধান আরেকজন কেনো যে প্রধান, কেউ জানে না।
তিন সদস্যের দল গঠন দেখে পত্রিকা বললো কিছু একটা হচ্ছে। মানুষ বললো কিছু একটা হচ্ছে-ও আচ্ছা, যাক কিছু একটা হবে। ততদিনে কোন একজন পপতারকা তার চুল কেটে ফেলেছেন। পপতারকা কেন চুল কাটলেন-এই চিন্তায় দেশ বিচলিত হলো। ট্রেনের নিচে যারা কুচলিত হয়েছিলো তাদের কথা সবাই ভুলেই গেলো। তাদের লাশ পরিস্কার হলো-তাদের ভাঙ্গা ঘরে নতুন মানুষ ঘর বাধলো। দেখে বোঝারই উপায় নেই যে এখানে আগে অন্য মানুষ ছিলো। বাংলাদেশের শালার এই এক সুবিধা-মানুষ মেরে কখনো মানুষের অভাব করা যাবে না। দুই কোটি মারলে পরের বছর তিনকোটি জন্মায়-মৃত্যু এখানে বরং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের কার্যকর পদ্ধতি।
তিন সদস্যের দলকে তবু পত্রিকাওলারা তং করতে লাগলো। তাদেরও তো পাতা ভরতে হবে-শুধু বিনোদন আর ক্রিড়ার পাতা দিয়ে তো পত্রিকা লং এনাফ হয় না।
যোগাযোগমন্ত্রী বড় ভালো-বলে কই তদন্ত কমিটি, তদন্ত করে কি পেলে। হ্যানোপ্রধান=তুমি বলো-মানুষ কেনো মরে?
সেতো মানুষ ঘুমাতে থাকলে একটু বেশি বয়স হলেই মরে।
না, না সেতো জানি, কিন্তু ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে মানুষ কেনো মরে?
কারণ ট্রেন অনেক ভারী।
ও আচ্ছা, ভালো ভালো, দারুণ অগ্রগতি। কিন্তু ট্রেনের তো রেললাইনে থাকার কথা-রেললাইনের তো ঢুলে মানুষের উপর পড়ার কথা না-ঢুলে পড়লো কেনো?
কারণ ঘুম পেয়েছিলো।
কার, ট্রেনের? বাহ! বাংগালী ট্রেনের দেখি বাঙালি আদবকেতা-কাজের মাঝে ঘুমে ঢলে পড়ে!
আরে নাহ-ট্রেন না। ট্রেনের ড্রাইভার চা খেয়েছিলো, চায়ের মাঝে মেশানো ছিলো ওপিয়ামাস আফিঙ্গাস নামের ভয়াবহ ড্রাগ। সেইজন্য ঢুলে পড়েছিলো সে-আর তার সাথে ঢুলে পড়েছিলো ট্রেন।
ও আচ্ছা, বজ্জাত ড্রাইভার। ওরে ধরে মেরে দাও।
দিয়েছে তো স্যার। অলরেডি। ওইটাই সবার আগে মরেছে। ঘুমের মাঝে মরেছে-শান্তির মৃত্যু।
শান্তিতে মরে তো শালা আমাদের শান্তির পান্তি মেরে দিয়েছে। এখন কাকে মুরগা বানানো যায় বলো দেখি।কার দোষ খুজে বের করো পিলিজ লাগে।
কার আর দোষ দিবো বলেন, দোষ যার, তারেই দেই। ট্রেনে থাকার কথা ছিলো কিজানি একটা যন্ত্র, যেই যন্ত্রে আধাঘণ্টা পরপর গুতা না দিলে ট্রেন অটোমেটিক থেমে যাওয়ার কথা। সেই যন্ত্র এই ট্রেনে লাগানো হয়নাই। তাই এই ট্রেন ঘুমানো ড্রাইভারের গুতা না খেয়েও থামেনাই।
ও আচ্ছা আচ্ছা, তাইলে যার গুতামেশিন কেনার কথা ছিলো তারে মেরে দাও।
দেন তাইলে মেরে। গুতামেশিন কেনার কথা ছিলো কেনো-যে-প্রধান এর। কিন্তু সে না কিনে সেই টাকা খায়া দিসে। দেন কেনো-যে-প্রধানরে মেরে।
মন্ত্রী তখন ঠান্ডা গলায় বলে, কি যে বলো না হ্যানোপ্রধান-জাস্ট কিডিং এলওএল, কেনো যে প্রধানকে কিছু বইলো না। সে তো নাদান বাচ্ছা-সবসে আচ্ছা।
ওমা কি বলেন-আপনি না এইমাত্র বললেন যার দোষ দেয়া যায় তারে দোষ দিয়ে দেবেন-তাইলে এখন কথা ঘুরান কেন।
কেন ঘুরাই জানলে তুমি এখন আমার কথায় ঘুরতা না আর আমি তোমার তিনভাগের একভাগ পড়াশুনা করে তোমারে ঘুরাইতাম না। বেক্কলামি বন্ধ কর-অন্য কোন বেআক্কেলরে ধরো-যার ঘাড়ে দোষ দেয়া যায়। দোষ যাতে সে খুশিমনে নেয়-কোন প্যাঁ পো না করে। প্যাঁ পোঁ আমি পছন্দ করিনা। পারলে একটা মাইনরিটি ধইরো। ওই শালারা প্যাঁ পোঁ কম করে। গভমেন্ট চাকরি পাইসে এই খুশিতেই তারা আত্মহারা। আর ওদের চৌদ্দগুষ্টির ভোট এম্নিতেও কেনা আছে।

যে লোকটাকে সাসপেন্ড করা হলো সেই লোকটা সারাজীবন একটা টাকাও ঘুষ খায়নাই। সোজা পথে চলেছে। কারো সাতে পাঁচে পড়তো না। সবসময় আদর্শকে নিজের ঢাল হিসেবে নিয়ে পথ চলতো।

লোকটা এখনো তার ছেলেকে বলে-প্রয়োজন হলে ঘুষ খাবি, মিথ্যা কথা বলবি। নীতি আদর্শের কোন দরকার নাই। যখন যেটা প্রয়োজন তখন সেটা করতে হবে। দুনিয়া যদি বাঁকা হয় তাহলে তোরও বাঁকা হয়ে চলতে হবে-নাইলে দুনিয়া তোরে ধরে বাঁকা করে দেবে।
বলার সময় লোকটার চোখ চিরে জল বের হয়ে আসতে চায়।

ভাগ্যিস ছেলেটা তীব্র প্রজন্মে জন্মেছিলো-তাই সে অদৃশ্য সেই চোখের জল দেখতে পায়। তাই সে এখনো এই চোখের জলগুলো মুছতে দেশে ফেরত যেতে চায়-যেখানে তাকে সবাই মিলে বাঁকিয়ে দেবে সেখানে ফেরত যেতে চায়। যেখানে তাকে কেউ কোনদিন মেনে নেবেনা-সেখানে ফেরত যেতে চায়। যেখানে সবাই তাকে ঘৃণা করবে সেখানে ফেরত যেতে চায়।
সেই অদৃশ্য চোখের জলের মায়ার সে এখনও ঘৃণায় ভরা লোকগুলোকে ভালোবাসে। তীব্র ঘৃণার পেছনের তীব্র অভিমান দেখে। তীব্র অভিমানের পেছনের তীব্র বঞ্চনা দেখে। তীব্র বঞ্চনার পেছনে তীব্র হাহাকার দেখে।
বাংলাদেশে অনেক মানুষ-কয়েকটা মরলে কিছু আসে যায়না। আমি মরলেও খুব একটা আসে যায়না। আমি নাইলে মরেই যাই। আর কেউনা কেউ আমার জায়গা নিয়ে নেবে-নিয়ে আমার আদ্ধেক করা কাজ শেষ করবে। বাংলাদেশে কখনও কারো জায়গা খালি থাকেনা।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১০
৪৫৬ বার পঠিত
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

১. ১৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

বিজন রয় বলেছেন: মনে থাকবে কি করে?

++++

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরুর রচনা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৬

একজন সাধারণ পাঠক হলেও দেশী-বিদেশী আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের তালিকা বেশ দীর্ঘ! বনফুল, যার আসল নাম- বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। শখের বশে তিনি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
বলাই চাঁদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয় জামাত!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আমির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাঁঝের মায়া

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮


সেদিন সন্ধ্যায় ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ অচেনা একটা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ফোন এলো। “হ্যালো, কে?” আমি জিগ্যেস করলাম। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ অস্পষ্টভাবে কী যেন বলছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলিয়েন স্বীকৃতি না দেয়ার কারন

লিখেছেন সরকার পায়েল, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

এলিয়েন বলতে আমরা বুঝি অতি প্রাকৃত শক্তি সম্পন্ন জীব l যাদের শারীরিক সক্ষমতা মানুষ হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন l রক্ত মাংসের জীব থেকে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি l রক্ত মাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজী মুক্ত সামু!!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২







মনপুরা মুভিতে একটা ডায়ালগ ছিলো যে, গাজী বেটারে তুমি চিনো না, বেশি ফাল পাইরো না। এদিকে ব্লগের গাজীকে সবাই চিনে, যারা লাফালাফি করে তারা ব্যবস্থা নেয়,গাজী কিছু করতে পারে না,ব্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×