somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আর মায়ের গল্প

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার আর মায়ের গল্প
আমি যখন ক্লাস এইটে পড়ি, তখন একবার আমার মা আমাকে জুতা দিয়ে মেরেছিলেন। যেহেতু আমার মা বাট্টু এবং গোলগাল, তিনি সবসময় বেশ হিলওয়ালা জুতা পরতেন যাতে তাকে কম গোলগাল লাগানো না গেলেও কম বাট্টু লাগানো যায়।
আমার এলোমেলো মায়ের সেই অল্প একটু স্টাইল সেন্স আমার জন্য খুব একটা স্টাইলিশ হয়নি। আমি হিলজুতোর বাড়ি খেয়ে কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছিলাম ভয়াবহ আতংক নিয়ে। সেই আতঙ্ক আমার আজও মনে পড়ে। কাঁচা ঘুম ভেঙ্গে জেগে এই আতংকে মানুষের হার্ট এটাক হতেই পারে। আমার হার্ট নিতান্ত শক্ত বলে আমি আর আমার মা সেযাত্রা বেঁচে গিয়েছিলাম। আমরা এতো সৌভাগ্যবান না হলে আমি আর আমার মায়ের গল্পও আজকে জাতীয় শিরোনাম হতে পারতো।
এই তীব্র শাস্তির কারণ হলো পরীক্ষা সামনে নিয়ে আমি ঘুমাচ্ছিলাম। বাংলাদেশের যেকোন স্কুলছাত্রের কাছে এটা সদাসত্য ব্যাপার। সবসময় ফার্স্ট টার্ম সেকেন্ড টার্ম থার্ড টার্ম অথবা আরো চমৎকার পরিস্থিতিতে কোন একটা পরীক্ষা থাকে। তো সেই পরীক্ষা সামনে রেখে আমি ঘুমাচ্ছিলাম, বাকিদের মতন পড়াশুনা না করে। আমার হৃদয়হীনা মা সেইজন্য আমাকে কাঁচা ঘুমের মাঝে জুতা দিয়ে পিটিয়েছিলেন।
আমার মায়ের মতন বাজে মা আর হয়না, তাইনা?
নিশ্চয়ই আমার মা একজন সাইকোপ্যাথ, সোশিওপ্যাথ বা কোন একটা বিরাট মানসিক রোগে আক্রান্ত-সোজা বাংলায় পাগল। এরকম মায়েদেরকে সবার ঘৃণা করা উচিত।
আসলে ব্যাপারটা সেরকম না। আমার মা আর সব মায়ের মতই ভয়াবহ মমতাময়ী। আমার বাসায় আমার কোন বন্ধু,বড়ভাই, ছোটভাই এলে আমার মা আদর করে, আর যেকোন মায়ের মতই। আমি আমেরিকা চলে আসার পরে আমার মাও টানা দুই সপ্তাহ কান্না করেছে। আমি আমেরিকা চলে আসার পরে প্রথম ছয় মাস টানা নিজের ঘরের থেকে বসে 'উপল,উপল!' করে ডাক দিতো, এই আশায় যে আমি উত্তর দেবো।
আর যেকোন মায়ের মতই আমার মা-ও আমার জন্য আমার পছন্দের খাবার রান্না হলে না খেয়ে থাকে। আর যেকোন মায়ের মত আমার মাও কোনদিন ঈশ্বরের কাছে আমার ভালো ছাড়া নিজের ভালোর প্রার্থনা করেনি।
তারপরও আমার মা আমাকে প্রায় মেরে ফেলেছিলো। আমার মা আমাদের সমাজবিচ্যুত মস্তিষ্কবিকৃত কোন অর্ধদানব নন। তীব্র মমতাময়ীদের একজন। সেই তীব্র মমতাময়ী কেন এই কাজটি করেছিলেন সেই গল্পটি কি জানেন? নাকি জানবার আগেই আমার মা-কে নিয়ে একটি মতামত দিয়ে বসে থাকবেন?
আমার মা এমন একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন যে পরিবারে তিনজন কন্যাসন্তান। ছেলে না হওয়ার কারণে তিনটি কন্যাসন্তানের পরে একটা পুত্রসন্তান নেয়া হয়-আর 'চারপুত্র কন্যার মাঝে একটা মেয়ে কম হলেও চলে'-এই যুক্তিতে আমার মাকে মামার বাড়িতে রেখে আসা হয়, কারণ আমার মা শান্তশিষ্ট। রেখে চলে আসার সময় বেশি হইচই করেনাই।
সেই পরিবারে আমার মা বেশ ভালোভাবে মিলেমিশে গিয়েছিলো। সে কখনো খুব একটা সপ্রতিভ ছিলোনা-বোতলকে বলতো বতোল, আইসক্রিমকে বলতো আসক্রিম, বাচ্চা হাতির মতন শরীর বলে খেলাধুলায়ও খুব ভালো ছিলোনা। আর সবার মতন ততো বেশি 'চালু' ছিলোনা বলতে সবাই তাকে বলতো-তার এন্টেনা খাটো।
তাই এন্টেনা খাটোওয়ালা খাটো মেয়েটা সারাদিন দরজা বন্ধ করে পড়ালেখা করতো। এই একটা জিনিসই সে ভালো পারতো। ক্লাসে তার রোল নাম্বার কখনো এক দুইয়ের নিচে নামেনি। কোন বইয়ের কোন পাতায় কি আছে সে মুখস্ত বলে দিতে পারতো। মাথায় অংক জিনিসটা ভাল করে ঢুকতোনা বলে সে অংক বইয়ের মেডিজি ধরে পুরোটা মুখস্ত করে ফেললো, বইয়ের যেখান থেকেই অংক আসুক না কেনো, সে দুই মিনিটে লিখে দিতে পারতো। বইয়ের বাইরে থেকে অংক আসলে অবশ্য পারতো না, তার অবশ্য দরকারও পড়েনি। এই ভয়াবহ শিক্ষাশ্রম দিয়ে আমার মা মেট্রিক পরীক্ষায় অংকে যে নাম্বার পেলো, সেটা আমার বাবার নাম্বারের চেয়েও বেশি। আর আমার বাবাকে গ্রামের লোকে ডাকতো অংকের জাহাজ বলে।
অবশ্য অংকের জাহাজ সাহেবের সাথে আমার মায়ের তখনও পরিচয় হয়নি। পরিচয় যখন হলো তখন আমার মা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছে। বাবা এসেছে রেলওয়ের বড় ইঞ্জিনিয়ার, মেয়ে দেখতে। বাবা মা দারুণ খুশি, মামার বাড়িতে রেখে মেয়ে পড়ানো স্বার্থক হয়েছে-মেয়ে আর্টস থেকে মেট্রিকে ফার্স্টক্লাস, ইণ্টারে সেকেন্ড ক্লাস, সেইসময়ের জন্য তুলকালাম। আজকাল বিয়ের বাজারে মেয়েদের পড়ালেখা একটা দারুন ব্যাপার।
আমার বাবার সাথে মায়ের বিয়ে হয়ে গেল। মা চলে এলো শ্বশুরবাড়িতে।
বেশকিছুদিন পরে মা আবার পড়ালেখা শুরু করলো বটে, তবে এবার বিএ পাশকোর্স। এখানে পাশ করার জন্য কোর্স করা লাগে না, বছরান্তে টাকা দিয়ে পরীক্ষা দিতে বসে গেলেই হয়। মার যখন পাশকোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা তার কিছুদিন আগে আমার বড়বোনের জন্ম। বড়বোনের নাম দেয়া হলো স্বাগতা দেবদত্তা। স্বাগতা দেবদত্তাকে বাড়িতে রেখে মা তার দূর সম্পর্কের ভাইয়ের থেকে ক্লাসনোট নিয়ে আগের রাতে পড়াশুনা করে পাশকোর্সে পরীক্ষা দিতে গেলো।
পরীক্ষা দিয়ে সে পেলো সেকেন্ড ক্লাস। সেটা আমার মা এতোদিন জানতো না। কয়েকদিন আগে মাত্র সার্টিফিকেট খুলে দেখেছে, তার আগে পর্যন্ত ধারণা ছিলো সেকেন্ড ক্লাস পেয়েছে।
তারপর অনেক অনেক পরে সে এমএ কোর্সেও ভর্তি হলো-ততদিনে স্বাগতা দেবদত্তার ছোটবোন মালবিকা দ্বিপান্বিতা জন্মে গেছে। মাস্টার্সের জন্য মা-কে বেছে দেয়া হলো ইতিহাস, মায়ের একদম পছন্দ ছিলোনা-ইচ্ছা ছিলো সাইকোলজি বা ইকোনমিকস। কিন্তু ইতিহাস সহজ, নোট পড়ে পাস করা যায়, ক্লাস করা লাগেনা। ঘরে দুইবাচ্চা রেখে, পেটে এই অধমকে ধরে ক্লাস করে মাস্টার্স সাজেনা।
স্বাগতা দেবদত্তা বিএ পাশকোর্সে সেকেন্ড ক্লাস পাইয়েছিলো, আমি অনুপম দেবাশীষ আরও বড় ক্ষতি করে দিলাম। আমার হাগু ধুয়ে,খাইয়ে দাইয়ে মামার বাড়িতে রেখে মা মাস্টার্স পরীক্ষা দিতে গেলো-পেলো থার্ড ক্লাস। আমার মা ইতিহাসে মাস্টার্স পাশ।
সেই ইতিহাসে মাস্টার্স কাজে লাগিয়ে আমার মা ঘরে বসে ভাত রাঁধে।
আর ভাতের খুন্তি তুলে আমাকে শাসায়, এবার পরীক্ষায় ভালো নাম্বার না পালি দেখিস আমি কি করি! ঘরের বারি গিয়ে দেখতো, তোর বয়েসের কোন ছ'ল দিনে কয় ঘন্টা পড়ে, আর তুই কয় ঘন্টা পড়িস। আমি তোর সমান থাকতি দিনে আট ঘন্টা পড়তাম, জোরে জোরে শব্দ করে। পড়তি বসলি এলাকার লোকে টের পাতো-বলতো ওই শোন, রীতা পড়তি বসিছে।
পরদিন সকালে আমার বাবা অফিসে যাবার আগে মা-র ওপর চেঁচামেচি করলো। অফিসে ঝামেলা হলেই বাবা মায়ের ওপর চেঁচামেচি করেন। চেঁচামেচির এক পর্যায়ে বাবা প্রতিবারের মতো এবারও বললেন- ছেলেমেয়ে সব কই? সব ঘুমাচ্ছে? ছেলেটার দুইদিন পরে পরীক্ষা, ছেলে এখন না পড়ে ঘুমাচ্ছে কেনো? সব তোমার থেকে দেখে দেখে শিখিসে! মা সারাদিন পড়ে পড়ে ঘুমালি ছ’লমেয়ে কেমন করে ঠিক থাকবে। আমি চলে যাচ্ছি এখন অফিসে, যাও তুমি এখন ঘুমাতি যাও। তুমি খালি ঘুমাও, আর সংসার এইদিকে উচ্ছন্নে যাক।
আমার মা সারারাত ঘুমাতে পারেনা। জেগে জেগে শিল্পকর্ম করে- কাঁথা সেলাই করে, সিরামিকের মূর্তি বানায়, ডিমের খোসা দিয়ে ম্যুরাল বানায়। তার ঘুম আসে ফজরের আযান শুনে। বাবা অফিসে যাবার সময় তাড়াহুড়া করে ঘুম থেকে উঠে বাবাকে খেতে দেয়-তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
কিন্তু আজ বাবা অফিসে যাবার পরে মা ঘুমায় না। মা চিৎকার করে কাঁদা শুরু করে। একসময় আমার ঘরের সামনে এসে কান্না করতে শুরু করে। সারাদিনরাত কান্না শুনতে শুনতে আমার আর এখন কিছু এসে যায়না। আমি দরজা বন্ধ করে একটু ঘুমিয়ে শান্তি পাবার চেষ্টা করি। আমার মা চায়না আমি দরজা বন্ধ করে রাখি কারণ তাহলে বাপি আরও বেশি বকাঝকা করে। তাই মা ঘরের ছিটকিনি খুলিয়ে ফেলেছিলো। আমি দারুণ কারিগরি দিয়ে চার পাঁচটা পেরেক দিয়ে তবু ছিটকিনি বানিয়ে দরজা আটকে রেখেছি।
মায়ের বেপোরোয়া ধাক্কার কাছে আমার কারিগরি বেশিক্ষণ টিকলো না। ঢড়াম করে দরজা ভেঙ্গে খুলে গেল।
চ্যাপ্টার আট, পৃষ্ঠা নাম্বার সাতানব্বই, শক্তির সৃষ্টি নেই, বিনাশ নেই, শক্তি এক রূপ থেকে অন্য রূপে রূপান্তরিত হয় মাত্র।
মায়ের ভেতরে অনেক শক্তি, সেই ব্যবহার না হয়ে জমে জমে অনেক উঁচু হয়েছে। উচ্চতার কারনে বিভব শক্তি বেড়েছে, চ্যাপ্টার নয় পৃষ্টা একশো সতেরো। সেই প্রবল শক্তি আমার উপর আছড়ে পড়ে। আমি তীব্র আতঙ্ক নিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠি।
মায়ের হাত তখনো চলছে। আমি দুইহাতে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। লাভ হয়না-আমার মায়ের অনেক শক্তি-সেই শক্তি নষ্ট হয়ে যায়নি, রূপ পরিবর্তন করেছে মাত্র।
চ্যাপ্টার আট পৃষ্টা সাতানব্বই-শক্তির অবিনাশবাদিতা সূত্র।

(যারা গল্পটি পড়তে চান, এই অংশ উপেক্ষা করুন। সরাসরি পরের অংশে চলে যান। এটুকু গল্প নয়-এটুকু বাস্তব।)
রাজধানীর বনশ্রীতে দুই শিশু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‍্যাবের কাছে এমন এক অবিশ্বাস্য স্বীকারোক্তি দিলেন মা জেসমিন। র‌্যাব জানায়, দুই শিশু নুসরাত জাহান অরণী (১২) ও আলভী আমানকে (৬) তাদের মা মাহফুজা মালেক জেসমিনই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
...র‍্যাব জেসমিনকে কেন নিজের সন্তানদের হত্যা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছি। একটি কলেজে দুই বছর শিক্ষকতাও করেছি। আমার মনে হয়েছে ওরা বড় হয়ে ভালো কিছু করতে পারবে না। তাই আমার সন্তানদের আমিই মেরে ফেলেছি। (খায়ের, ২০১৬)
Children are always in a vulnerable situation in the society because of their age, observes Laila Khondokar, director of Child Protection of Save the Children.
"Physically they are weaker than the adults and are dependent on them ... You would think twice before hitting an adult but you can get away with doing that to a child."Parents often vent the stress they face at work or in everyday life on their children, which is not right, she says. "The main problem is that we often see the children as our property, not as human beings," Laila adds. (Hossain and Khan, 2016)
গত চার বছরে ১ হাজার ৮৫ জন শিশু হত্যার শিকার, আর এ বছরের প্রথম দুই মাসেই ৪৯ জন! এ যোগফল কেবল থানায় আসা ঘটনার।
...ডিসেম্বর মাসে নীলফামারীর এক মা দুই শিশুকন্যাকে হত্যা করে নিজেকেও শেষ করেছেন। ভোরবেলা স্বামী বাইরে থেকে এসে দেখেন, দুটি শিশুকন্যা মেঝেয় নিথর শুয়ে আর মা ঝুলছে কড়িকাঠ থেকে। তার কিছুদিন পরই কুষ্টিয়ায় এক যুবক প্রতিবেশী কলেজছাত্রকে হত্যা করে নিজের প্রাণও নিয়েছেন। অপরকে শিকার করে এঁরা নিজেদেরও রেহাই দিতে পারেননি। তাহলে বিচার হবে কার? ১ ফেব্রুয়ারি সকালে রমনার বেইলি রোডের একটি বাসার চারতলা থেকে সদ্য ভূমিষ্ঠ নবজাতককে ফেলে দেয় শিশুটির মা গৃহকর্মী বিউটি। ২৪ দিন লড়াই করে সে-ও চলে গেছে জীবনের পরপারে।
সমাজ সমতলে কিছু একটা ঘটছে যা জীবনবিরোধী, যা সুস্থ নয়। যখন মা বা বাবা কিংবা নিকটাত্মীয়রা শিশুসন্তানকে হত্যা করে তার ব্যাখ্যা সরল চিন্তা দিয়ে হওয়ার নয়। প্রতিকার বের করা তো আরও পরের কথা। ঘটনাগুলোর ধরন বলে, এগুলো গড়পড়তা অপরাধমূলক হত্যা নয়। অনেক সময় ঘাতক ও নিহত উভয়ই জীবন দিয়ে কোনো না কোনো দুঃসহ যন্ত্রণার ইতি টানছেন। হিংসা, অসহায়ত্ব, হঠাৎ জেগে ওঠা রাগ এবং স্বার্থ থেকে হত্যা হচ্ছে। এগুলো একধরনের সামাজিক হত্যাকাণ্ড, যার কার্যকারণ ও প্রকাশ হয়তো বিচিত্র। কিন্তু এগুলোর মধ্যে আমাদের সময়ের গনগনে সামাজিক সহিংসতার আঁচ পাওয়া যায়।
... বাংলাদেশ একটা রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্র দুখানেই। পাশাপাশি যে ধরনের বাছবিচারহীন ‘উন্নয়ন’ চলছে, যেভাবে একদিকে লোভ অন্যদিকে বৈষম্য বাড়ছে, যেভাবে জনগণের স্বাধীন জীবন ও চিন্তার অধিকার সংকুচিত হচ্ছে, যেভাবে পরিবার-বন্ধুত্বে ফাটল জাগছে, এসবের নিশ্চয়ই খারাপ প্রতিক্রিয়া আছে। উন্নতি নামক মরীচিকার পেছনে ছুটছি সবাই। উন্নতির বাসনায় শিশুদের ওপর বাড়ানো হচ্ছে পড়ালেখার চাপ। অথচ মেলামেশা ও আনন্দ-বিনোদনের সুস্থ সুযোগ কত কম। প্রায়ই ঢাকার পথেঘাটে একা একা কথা বলা, অদৃশ্য কারও সঙ্গে ঝগড়া করতে থাকা মানুষ দেখি। বেশভূষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্তই হবেন তাঁরা। এগুলো সমাজ-মনস্তত্ত্বে অস্থিরতার প্রকাশ নয়? দেশে মনের অসুখে ভুগতে থাকা লোকের সংখ্যাও ধাঁইধাঁই করে বাড়ছে। (ওয়াসিফ, ২০১৬)
টেলিফোনে যখন মাহাফুজার রহমানের সঙ্গে কথা বলি, তখন তাঁকে আত্মপ্রত্যয়ী মনে হলো। তিনি একজন প্রতিবন্ধী। শৈশব থেকে তাঁর একটি হাত অকেজো। তিনি এক হাতেই দৈনন্দিন কাজকর্ম ও পড়াশোনা করে এসেছেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ পেয়েছেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে দ্বিতীয় বিভাগ। এরপর চাকরির পরীক্ষায় পাস করেও চূড়ান্ত নিয়োগ না হওয়ায় নিজের সব কটি মূল সনদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে ফিরিয়ে দিতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন। প্রশাসনিকভাবে রীতিসম্মত না হলেও মানবিক কারণে তাঁর আবেদনপত্রের সঙ্গে ওই সনদগুলো জমা নেওয়া হয় বলে প্রথম আলোর খবরে বলা হয়।
...মাহাফুজারের ঘটনাটি আমাদের ‘বেকার’ শিক্ষাব্যবস্থার করুণ চিত্রই তুলে ধরে। তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পাননি। কেননা, কর্তৃপক্ষ প্রতিবন্ধী কোটা পূরণকে গুরুত্ব দেয়নি এবং তাঁকে উপেক্ষা করেছে। কিন্তু হাজার হাজার সাধারণ উচ্চশিক্ষিত তরুণ একটি চাকরির জন্য বছরের পর বছর জুতোর সুকতলি ক্ষয় করছেন, তাঁদেরও কোনো সান্ত্বনা নেই। এই রাষ্ট্র, এই শিক্ষাব্যবস্থা অমিত সম্ভাবনাময় তরুণদের প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখিয়ে আসছে। শিক্ষার অর্থ নিজেকে ও সমাজকে যোগ্য করে তোলা। যে শিক্ষা ব্যক্তি বা সমাজের কোনো কাজে আসছে না, সেই শিক্ষা নিয়ে কী লাভ? শিক্ষার নামে আর কত বেকার তৈরি করব আমরা? সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাজারের চাহিদার সঙ্গে শিক্ষাব্যবস্থা সংগতিপূর্ণ না হওয়ায় দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রতিবছরই উচ্চশিক্ষা নিয়ে শ্রমবাজারে আসা শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেক বেকার থাকছেন অথবা যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পাচ্ছেন না।
ব্রিটিশ সাময়িকী ইকোনমিস্ট-এর ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের ৪৭ শতাংশ স্নাতকই বেকার। ভারতে এ হার ৩৩ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশের বেশি, পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ এবং শ্রীলঙ্কায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। এই প্রতিবেদন দুই বছর আগের। বর্তমানে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা আরও বেশি। বিশ্বব্যাংক মনে করে, বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এর ওপর এখন প্রতিবছর নতুন করে ১৩ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে যোগ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন (আইএলও) বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রায় তিন কোটি। বেকারত্ব বাড়ছে এমন ২০টি দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১২তম।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২০১২ সালের এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ‘বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করে। কিন্তু কাজ পায় মাত্র সাত লাখ। বেকারদের মধ্যে উচ্চশিক্ষিত, অর্থাৎ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যাঁরা শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন, তাঁরাও আছেন।’ একদিকে দেশে উচ্চশিক্ষার হার বাড়ছে, অন্যদিকে বাড়ছে বেকারত্ব। এর কারণ আমরা যে শিক্ষা দিচ্ছি সেটি কাজের নয়। দ্বিতীয়ত, দেশের উন্নয়নের জন্য যে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন, সেটি আমরা দিতে পারছি না। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট যাকে বলেছে ‘হাই ইউনিভার্সিটি এনরোলমেন্ট, লো গ্র্যাজুয়েট এমপ্লয়মেন্ট’। ঊর্ধ্বমুখী উচ্চশিক্ষা, নিম্নমুখী কর্মসংস্থান। ২০০৪-১১ সালে বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষায় যুক্ত হওয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের উচ্চশিক্ষায় যুক্ত হওয়ার হার ২০০৪ সালে ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১১ সালে হয়েছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে নারীশিক্ষা। কিন্তু সেই অনুযায়ী শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বাড়েনি।
পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক কাঠামোয় তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষিজাত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জাহাজ নির্মাণ এবং তৈরি পোশাক খাত, পর্যটন ও পর্যটনসেবা, হালকা কারিগরি নির্মাণ খাতকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এসব খাতের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষায় শিক্ষিত যথাযথ কারিগরি দক্ষতাসম্পন্ন (বিশেষায়িত ও সাধারণ) কর্মীর প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্র সেই অভাব পূরণে সচেষ্ট না থেকে এমন সব বিষয়ে উচ্চশিক্ষা দিচ্ছে, শ্রমবাজারে যার কোনো চাহিদা নেই। স্বাধীনতার পর গেল শতকের সত্তর ও আশির দশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই দেশের আনাচকানাচে বিদ্যালয় ও কলেজ করার হিড়িক পড়ে এবং বাছবিচারহীনভাবে এগুলো এমপিওভুক্ত হয়ে যায়। এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও তা জাতীয় উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখছে, সেটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে প্রায় আড়াই লাখ পদ শূন্য থাকলেও পূরণের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি বিসিএস পরীক্ষা দিয়েও মেধাবী তরুণদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। সম্প্রতি ৩৭তম বিসিএসের পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও ৩৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণরা এখনো নিয়োগ পাননি। ফলে বেকারত্ব, বিশেষ করে শিক্ষিত বেকারত্বের বিষয়টি বিস্ফোরণোন্মুখ অবস্থায় এসে ঠেকেছে। দেশে কর্মসংস্থান নেই। তাই তরুণেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু বিদেশেও শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে পড়ছে। এই যে প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছেন, তাঁদের প্রতি কি রাষ্ট্রের কোনোই দায়িত্ব নেই? (হোসেন,২০১৬)
There are now at least 72 government officials at the rank of secretary or equivalent (including eight senior secretaries), 382 additional secretaries or equivalent and 888 joint secretaries or equivalent. Many of the newly promoted moved up in grade without having any new assignment.
...From 1972 to 1982, the number of secretaries and additional secretaries was held to a reasonable level, consistent with the requirement of government and expansion of government functions. But then began an onward rush to promotions to create a politically pliable bureaucracy and accommodate ever increasing intakes in the civil services that were mostly ill-planned.
...Bureaucracies grow because work and personnel expand to consume the available resources. According to a research, in hierarchical organisations, personnel are promoted up to the point when their incompetence becomes manifest. Ironically, the more incompetent the bureaucracy becomes, the more is the need for people to manage work, thus leading to more promotions. That is why we have a disproportionately higher number of people at the top to the point that they virtually have nothing to manage. (Chowdhury, 2016)

(গল্প)
আমি যখন ক্লাস টেনে পড়ি তখন আমার বাবা মা আমাকে নিয়ে বিশেষ চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাদের চিন্তার ব্যাপারটি হলো এই যে, ক্লাসে আমার রোল এক থেকে চারে নেমে এসেছে। দীর্ঘ তিন নাকি চার বছর ধরে আমার ক্লাসে রোল নম্বর ছিলো এক। আমার এক থেকে চারে অধঃপতনকে আমার আশেপাশের সবাই এতোদিন ধরে সতর্ক করে আসা আমার ‘নষ্ট হয়ে যাওয়া’র চূড়ান্ত ধাপ বলে গন্য করলেন। টিচাররা আমার মা-কে ডেকে বকাবকি করলেন, এর মা তার মারা আমার নামে বিভিন্ন কথাবার্তা শুনালেন-এমনকি স্কুলের সামনে যে দোকানদার-তিনিও আমার সম্বন্ধে বিস্তারিত রিপোর্ট দাখিল করলেন। আমি ক্লাস করি না, আমি স্যারের কোচিং এ যাইনা, আমি টাংকির উপর বসে আড্ডা দেই, সংগঠনের নামে দলবাজি করি, আমি সারাদিন দোকানে বসে থাকি, আমি সিগারেট খাই, আমি মেয়েদের সাথে বেশি ঘোরাঘুরি করি-ইত্যাদি।
স্কুলে আমি আসলেই ক্লাস করতাম না। যে তিন-চারবছর আমার রোল এক ছিলো, সেই তিন-চারবছরও করতাম না। কারণ আমার ক্লাস বিশেষ একটা ভালো লাগতো না।স্কুলে ঢুকলেও বেশিক্ষণ ভেতরে থাকতাম না। কিছু নির্দিষ্ট ক্লাস আমার ভালো লাগতো, আর অনেকগুলো ক্লাস ভালো লাগতো না। বিএনসিসি ভবনের উপর দিয়ে টপকায়ে স্কুল থেকে বের হয়ে যেতাম। আমার কাছে এটাকে কখনো স্কুল পালানো মনে হয়নাই-স্কুল নামক অপ্রয়োজনীয় বস্তু থেকে নিজেকে মুক্তি দেয়ার মহান দায়িত্ব পালন করার মতন একটা ব্যাপার মনে হয়েছে। পরীক্ষা আমার কাছে সহজ ছিলো। পরীক্ষার আগের এক-দুই সপ্তাহ পড়ে আমি পরীক্ষায় ভালো করে ফেলতাম। কাজেই আমার রোল ছিলো এক।
তখনও আমি সারাদিন দোকানে বসে থাকতাম। দোকানে বসে যে আমি সবসময় অপ্রয়োজনীয় কাজ করতাম,তা নয়। নিজের কাছে যেটা প্রয়োজনীয় মনে হতো সেটা করতাম। আমার আশেপাশে একটা অসাধারণ প্রজন্ম ছিলো। অসাধারণ তীব্র মেধাবী তীব্র স্বেচ্ছাচারী তীব্র সাহসী একটা প্রজন্ম। মুখের কথায় তারা দুনিয়া এইদিক থেকে ওইদিক করে দিতে পারে, এইরকম একটা প্রজন্ম। সেরকম একটা প্রজন্মকে সাথে নিয়ে আমি স্কুলের বাইরে একটা স্কুল গড়েছিলাম। আমরা নিজেরা নিজেদের শেখাতাম-যা শিখতে ইচ্ছে হতো,তাই শেখাতাম।
অনেক দিন এমন গিয়েছে যখন আমি এবং আমরা আলাউদ্দীন ভাইয়ের দোকানে বসে ম্যাথ অলিম্পিয়াডের অংক করেছি। অনেক দিন গিয়েছে যখন আমি স্কুলের বাইরে টাংকির উপরে বসে সমাজ রাজনীতি অর্থনীতি নিয়ে বন্ধুসমাজের সাথে তুমুল তর্ক করেছি। অনেক এমন দিন গিয়েছে যখন আমরা স্কুলের বালুর মাঠে বসে গান লিখেছি। অনেক এমন দিন গিয়েছে যখন আমরা কলেজ বিল্ডিং এর চিপায় দাঁড়িয়ে বিতর্কের প্র্যাকটিস করেছি। আমার এমন অনেক অনেক দিন মনে আছে যখন আমরা বাকিদের থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে একজন আরেকজনের কাছে পড়াও বুঝে নিয়েছি।
অনেকের কাছে হয়তো মনে হবে এর সবই বাড়িয়ে বলা-এতোগুলো বাচ্চা ছেলে একসাথে হয়ে কখনই আজেবাজে কাজ ছাড়া কাজের কাজ করতে পারেনা।
তাদের কথাই সবাই বিশ্বাস করবে কিন্তু আমি তাদের কথা বিশ্বাস করবো না-কারণ সেই আড্ডা থেকে বের হয়েই আমদের ছেলেপেলেরা দুনিয়ার যাবতীয় অলিম্পিয়াড জিতে ফিরেছিলো, সেই আড্ডা থেকে বের হয়েই আমাদের ছেলেপুলেরা বিতর্ক উৎসব জিতে ফিরেছিলো, সেই আড্ডা থেকে বের হয়েই আমাদের ছেলেপুলেদের একজন আজকে এই গল্পটা লিখছে।
সেই আড্ডা থেকে আমার কোনদিন পড়াশোনার কোন ক্ষতি হয়নাই-বরং সেই আড্ডার থেকেই আমার যত কার্যকর পড়াশোনা হতো। আমার উদ্ভাবনী ক্ষমতার পড়াশোনা হতো। ক্লাসের মধ্যের পড়াশোনা আমাকে অনেক ছোট করে দিতো-আমাকে বলতো আমি ক্লাস নাইন সাইন্স সি এর ছাত্র। আমি পৃথিবীর ছাত্র হতে চেয়েছিলাম। সেই তীব্র প্রজন্মের সবাই একেকজন পৃথিবীর ছাত্র হতে চেয়েছিলাম।
আমি এবং আমরা ক্লাসে যেতাম পরীক্ষার ঠিক পরে। যখন খাতা দিতো। সবার পরীক্ষার নাম্বার টালি করে করে খাতায় রাফিদ আর সালেহীন ছক বানাতো। একেকজন ফার্স্ট সেকেন্ড কনটেস্টেন্টের একেকটা খাতা দিতো আর সাথে সাথে একাউন্টেন্টরা হিসাব করে বের করে ফেলতো কার ফার্স্ট হবার সম্ভাবনা কতটুকু। সে কি উত্তেজনা!
একেকজন টিচার খাতার বোঁচকা নিয়ে লম্বা করিডোর দিয়ে হেঁটে আসতেন আর পুরো করিডোরের এইমাথা থেকে ওইমাথা পর্যন্ত উত্তেজনা। কোন সেকশনে ঢোকে স্যার, কোন সেকশনে ঢোকেন ম্যাডাম। আমরা সবাই ইতোমধ্যে জানতাম কোন সাবজেক্টের খাতা কে কেটেছে। একেক স্যারের বাসায় পড়তো একেকজন। তারা খবর ভাসিয়ে আনতো। এইসব খবর ভাসিয়ে আনা তখন বিরাট কৃতিত্বের ব্যাপার।
ক্লাসে স্যার আসতেন, আর একটা একটা করে নাম ডাকতেন। ছেলেপুলে হাতে খাতা পেয়ে সাথে সাথে ভাঁজ করে লুকিয়ে ফেলে। আর কাউকে নাম্বার দেখতে দেবেনা। কম নাম্বার হলে একদন পেছনের বেঞ্চে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়বে। কেউ কেউ হেড ডাউন করে ফেলবে। তাদের শরীরটা একটু পরপর কেঁপে উঠবে। ফার্স্ট সেকেন্ড একাউন্টেন্টরা তাদের নাম কেটে দেবে লিস্টের থেকে-আর বাকিরা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে, যাক, একটা টেনশন গেলো।
আর যদি কারো নাম্বার ভালো হয় সে একটু মাঝের দিকে গিয়ে দাঁড়িয়ে ইতিউতি করে সবার দিকে দেখবে। আর মুখ নাড়িয়ে তার হিসাবখাতায় তার আশেপাশের জনদেরকে বলবে-তুই কতো? তুই কতো?
অনিচ্ছাস্বত্তে উত্তর আসবে ৮৮, তুই?
এদিকে তখন লেখা হয়ে গেছে। উত্তর আসে না। আবার প্রশ্ন-বলনা ব্যাডা, তুই কতো?
বেশি না দোস্ত, ৯২।
আমি কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তির পরের থেকে আমি এই নাম্বার গোনাগুনি খেলার মাঝে ছিলাম না। আমার রোল ছিলো পঞ্চাশের পরে। কাজেই ফার্স্ট সেকেন্ড গুনে আমার কোন লাভ ছিলোনা। আমার ফার্স্ট সেকেন্ড হবার ইচ্ছাও ছিলোনা।
কিন্তু আমার মায়ের খুব ইচ্ছা ছিলো যে আমি দশের মধ্যে ঢুকি। আমাদের পাশের বাসার শুদ্ধ ভাইয়া কলেজিয়েট স্কুলে দশের মাঝে রোল ছিলো। তার মা আমার মা-কে প্রায়ই বলতো, বুঝলেন বৌদি, কলেজিয়েট স্কুলের দশের মাঝে থাকা মানে সারা বাংলাদেশের একশোর মধ্যে থাকা।
একবার না, দুইবার না, একশোবার মহিলা এই কথা বলতো-এক ঘন্টায়। পরের ঘন্টায় আবার গোড়ার থেকে গণনা শুরু করতো। যতক্ষণ তার ছেলের রোলের মহত্ব বর্ননা না করতো-ততক্ষণ তার ছেলের মহত্ব বর্ণনা করতে লাগলো। জানেন বৌদি, আমার শুদ্ধ কি পাগল! বাসার টিচারকে একদম ছাড়েনা-দুই ঘন্টার চেয়ে এক মিনিট কম পড়ালে ক্যাঁক করে ধরে। বলে, দুই ঘন্টার টাকা দেয়া হয়েছে-দুই ঘন্টা পড়ায়ে যাবেন।
আমার জন্য হোম টিউটর রাখা হলো। আমার এক ঘন্টায় পড়া হয়ে যায়-তারপর আমার বাসার স্যার কিছুক্ষণ ইতিউতি করে-আমি কিছুক্ষণ ইতিউতি করি। দুইঘন্টার কম পড়া হলে শুদ্ধ স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করা হবেনা। মা তখন আমাকেও ছাড়বে না, আমার স্যারকেও ছাড়বে না। দুইজনের কাছেই শুদ্ধ ভাইয়া মহত্ত্বের গুনগান করা শুরু করবে। সেইজন্য হলেও রীতিমত পরিশ্রম করে আমি দুইঘন্টা পড়া শুরু করলাম।
শুদ্ধ স্ট্যান্ডার্ড কাজে দিলো, ক্লাস ফাইভের কোন একটা মডেল টেস্টে জানি আমি একাউন্টেন্টদের হিসাব উলটাপালটা করে দিয়ে আন্ডারডগ হিসেবে ফার্স্ট হয়ে গেলাম। আন্টিসমাজ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি- আমার মা তখন বললো, এইটা তো একটা মডেল টেস্ট, টার্ম পরীক্ষাই আসল ব্যাপার। তারপর আমি টার্ম পরীক্ষায় ফার্স্ট হলাম, আন্টিসমাজ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি-আমার মা বললো, এইটা তো শুধু একটা টার্ম পরীক্ষা, ফাইনাল পরীক্ষাই আসল ব্যাপার। তারপর আমি ফাইনাল পরীক্ষায় ফার্স্ট হলাম,আন্টিসমাজ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি-আমার মা বললো এক বছর ফার্স্ট হওয়া কোন ব্যাপার না, এক নাম্বার রোল ধরে রাখাই আসল ব্যাপার। রোল অর্জনের চেয়ে রোল রক্ষা করা কঠিন। আমি সিজার হয়ে গেলাম, অর্জন করা রোল রক্ষা করলাম। আন্টি সমাজ এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি বললো-সিজার সবাই হইতে পারে, তুমি আলেক্সান্ডার দ্য গ্রেট হও। এক সেকশন না, ছয় সেকশন মিলে ফার্স্ট হও। আমি বললাম হিচা মারি তোর আলেকজান্ডারের কোয়ালে-আমার জীবন এইদিক দিয়ে পার হই যারগুই।
কপালে হিচা খেয়ে আলেকজান্ডার রুষ্ঠ হলেন-তার অভিশাপে আমার রোল এক থেকে চারে নেমে আসলো।
আমার মনে আছে সেইবার ইংরেজি খাতা কাটায় কোন একটা উলটাপালটা হয়েছিলো আর আমি গভীর রাতে আমার বন্ধুসমাজকে নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে শাহেদ স্যারের কাছে গিয়েছিলাম ন্যায়বিচারের জন্য। আমি ন্যায়বিচার পাইনি। শুধু ভেজা পশ্চাৎদেশ নিয়ে শাহেদ স্যারের বাসার সোফায় বসে সোফা ভেজানোর আনন্দ পেয়েছি।
তবে আমি নিজে এই র‍্যাংক অবনতি নিয়ে খুব একটা বিচলিত ছিলাম না। ততদিনে আমার ভেতর পাকনামি গোত্রীয় পাগলামি শুরু হয়েছিলো। এই ব্যাপারে বিশেষ র‍্যাংক একাউন্টেন্ট সুলতানুস সালেহীনের সাথে আমার একবার কথোপকথন আমার আজও মনে পড়ে। আমি তাকে নিম্নোক্ত বিশেষ বানী দিয়েছিলামঃ
‘তুই ক্লাসে সেকশনে ফার্স্ট হ, ক্লাসে ফার্স্ট হ, মর্নিং ডে মিলে ফার্স্ট হ-তোর কথা টিচাররা বড়জোর দুই তিন বছর মনে রাখবে। আমি এমন কিছু একটা করতে চাই যাতে করে আমার কথা এই স্কুল দশ-বারো বছর মনে রাখে।’
আহা!
এই মহান আদর্শ বুকে নিয়ে আমি ফেসবুকে গ্রুপ খুললাম-র‍্যাংকিং ব্যবস্থা নিপাত যাক। আমি বললাম ছেলেপুলেদের পড়াশুনার মান তো লেটার গ্রেড দিয়েই মেপে ফেলা যায়, র‍্যাংক করারা দরকার কি?
তখন ফেসবুকের মধ্যযুগ-আমার আন্দোলন ফ্লপ খেলো। বরং বেশি ফেসবুক নির্ভরতা আমার অধঃপতনের কারণ হিসেবে দাড়া করানো হলো।
একটা র‍্যাংকের পতন আমার পুরো আদর্শ, পুরো ভাবমূর্তি, পুরো সুনাম সবকিছুকে এইদিক থেকে ওইদিক করে দিলো।
আগে সাররা বলতো, দেখসো, অনুপমের মত হও। কতোকিছু করে,তবু রোলটা ঠিক রাখসে।
একটা পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ামাত্রই স্যাররা জুনিয়রদের বলা শুরু করলো, এখন ভালয় ভালয় ঠিক হই যা। নাইলে অনুপইম্যার মতন হবে যে!
যে দোকানদারকে আমাকে বাকি দিতো, সে আমাকে এবার ফাঁকি দিলো।
আগে সে বলতো, অনুপম পোলাটা কতো ভালো। আমি চিনিতো,আমার দোকানে আসে। কতো ভদ্র ব্যবহার।
এবার সে বলা শুরু করলো, অনুপইম্যা একটা বেয়াদপ পোলা যে আস্তা! সারাদিন দোকানে বসে থাকলে আর পতিক্কিত পতিক্কিত করলে কি আর পড়ালেখা হবে?
‘পতিক্কিত পতিক্কিত করলে কি আর পড়ালেখা হবে?’-ব্যাপারটা একটা জাতীয় স্লোগান হয়ে গেলো। সারাদিন এই কথা শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপালা। আমি যাবো তো যাবো, এতোদিনের সাধে গড়ে তোলা সংগঠন পথিকৃতের পেছনে লাগার কি আছে?
বাসায়ও শুরু হলো-পড়াশোনা করবা কেন? যাও, পথিক্কিত করে বেড়াও গিয়ে। পড়াশোনা করে তো কিছু হবেনা-পরে তোমার বিতর্কের বড়োভাইদের মতন ফটকাবাজি করে টাকা কামাইও।
শুধু গালিগালাজ না, পথিকৃতের সব ছেলেপুলেকে ডেকে আমার মা ফর্মাল প্রেস ব্রিফিঙ মতোও দেয়া শুরু করলো- শোনো বাবারা। এসএসসি পরীক্ষা চলে আসছে। এখন তোমরা পথিকৃৎ টথিকৃত এগুলা বাদ দাও। ডিবেট মিবেট পরে কইরো। ডিবেট মিবেট করে কি তোমরা চাকরি পাবা, নাকি পথিকৃৎ উৎসব করে তোমাদের জীবনে কি কোন লাভ হবে?
আমাদের মধ্যে থেপু সবসময় ঘাউড়া বলে বিখ্যাত। কোন বক্তব্যকে সে মাটিতে পড়তে দেয়না। এইটাকেও দিলোনা-সে বললো, কেন আন্টি, ব্যবসা করতে গেলে বা কর্পোরেট কম্পানিতে চাকরি করতে গেলে আমাদের এই স্কিলগুলা কাজে দিবে অনেক।
সেইযে ইফতুকে(থেপুর ডাকনাম) নিয়ে মার বিখ্যাত থ্রেট শুরু হলো, সেটা ভাঙ্গা ক্যাসেটের মতন বাজতেই থাকলো, বাজতেই থাকলো বাজতেই থাকলোঃ
কি করবা তুমি? পড়ালেখা তো কিছু করনা। শেষে গিয়ে তোমার বন্ধু ইপতুর মতন বলবা-কম্পানিতে চাকরি করবো। ওই তো হবে তোমাদের দিয়ে। ছি ছি ছি! কলেজিয়েট স্কুলের ছেলে-তার স্বপ্ন হলো কম্পানিতে চাকরি নেয়া-ছি! তোদের লজ্জা করেনা।
আমাকে বাসায় তখন যে স্যারটি পড়াতেন তিনি আমার বড়ভাইয়ের মতন ছিলেন। তিনি আসলে আমার বড়ভাই-ই ছিলেন।
আমার টেস্ট পরীক্ষার রেসাল্ট দেয়ার পরে আমি তাকে যে এসএমেস টা পাঠিয়েছিলাম সেটা এরকম-
Sir, I am in great danger. Please save me from my mother.
I promise I will become good from now.
আমার স্যার আমার টেক্সট পড়ার পরে আমার মায়ের সাথে গিয়ে কথা বলেছিলো-আমার বড়দিদির সাথে কথা বলেছিলো। আমার মায়ের একবছরের সাইকোলজিক পড়াশোনার কসম করে আমার বড়োবোন আমার মাকে বোঝালো যে আমি ক্লিনিকালি ডিপ্রেসড। আমাকে ডাক্তার দেখানো হলো। সাইকায়াট্রিস্ট-মনের ডাক্তার। তিনি আমাকে ওষুধ দিলেন আর আরও অনেক অনেক ধরণের সাহায্য করলেন। তখন আমার দিনের পর দিন টানা ঘুম হতো-ঘুম থেকে উঠতে পারতাম না। চাইলেও পারতাম না। চোখ খুলে রাখতে পারতাম না। যতক্ষণ জেগে থাকতাম ঘুমের ঘোরে থাকতাম। পড়তে পারতাম না। ডাক্তার আমাকে ওষুধ দিলেন।
আমি এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছিলাম। বৃত্তিও পেয়েছিলাম। তার সাথে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম।
তীব্র মেধাবী তীব্র সম্ভাবনাময় প্রজন্মের একজন আমি খুব তুবড়ে যাওয়ার থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলাম। কারণ আমার পরীর মতন একটা বোন-বোঝার মতন একটা মা-বাবা আর একদল অসাধারণ বন্ধুবান্ধব ছিলো।
কিন্তু সেটা ছিলো তীব্র মোচড়কলের আড়মোড়া ভাঙ্গার পর্যায় মাত্র। সত্যিকাররের মোচড় তখনও পথে।
সবাই বলতো, বড়ভাই, টিচাররা-ভর্তি পরীক্ষাটাই মেইন।
আমি আর পারবো না বলে চিৎকার দিয়ে বাঁচার পথ খুঁজলাম। এসএটি দিলাম। এপ্লাই করলাম বিদেশী ইউনিভার্সিটিতে। চান্স হলো, ফুল স্কলারশীপ হলো, আমি বেঁচে গেলাম।
আরেকটা ছেলে মরে গেলো। সে পালাতে পারেনি। এইচএসসি পরীক্ষার একটা পরীক্ষা খারাপ হয়েছিলো তার। এই দুঃখে সে আত্মহত্যা করলো। সে মরে গেলো।
তারপর আরো অনেক অনেক ছেলেমেয়ে-ঝাকে ঝাকে মরে গেলো। ঝাঝরা হয়ে গেলো। আমার তীব্র প্রজন্মের মতন আরো অনেক অনেকগুলো তীব্র প্রজন্মের ছেলেপেলের উপর ব্রাশফায়ার হলো। একে একে তাদের মৃতদেহ মাটিতে পড়লো। তাদের মৃতদেহ দিয়ে গড়ে তোলা হলো একটা দেয়াল। দেয়াল দিয়ে থাকে থাকে গড়ে তোলা হলো একটা বিরাট ইমারত-ইমারতের নাম
স্বৈর-আমলাতান্ত্রিক বাংলাদেশ।
পাদটিকাঃ আমি আমার বন্ধু তাওহীদুল আনোয়ারকে বলেছিলাম তার ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা চ্যাপ্টার লিখে দিতে। সে লিখে দেয়নাই। শুধু একটা গুরুত্বপুর্ণ তথ্য দিয়েছে।
আমাদের মধ্যে যারা সত্যিকারের ভালো ছাত্র তারা নাকি এরমধ্যে লুকিয়ে চুরিয়ে আজকের বিশ্ব পড়া শুরু করেছে। থার্ড ইয়ারের ভাইয়ারা এখন সারাদিন লাইব্রেরীতে পড়ে থাকে। সামনে বিসিএস। এইটাই আসল পরীক্ষা। এইটায় পার হয়ে গেলেই লাইফ সেট! আর চিন্তা নাই।

ওই ছেলেটা মরলো কারণ
ওই ছেলেটা বাঁচতো না
ওই ছেলেটা বাঁচলে পরে
ওই ছেলেটা বাঁচতো না
ওই ছেলেটার গলায় দড়ি
ওই ছেলেকে মারলো কে?
ওই ছেলেটা বাঁচলে পরে
ওই ছেলেকে ছাড়তো কে?
ওই ছেলেটা থাকলে বেঁচে
ওই ছেলেটা মরতো রোজ;
তাই ছেলেটার গলায় দড়ি
ওই ছেলেটা তাই নিখোঁজ।
ওই ছেলেটা মরলো কারণ
ওই ছেলেটা বাঁচতো না
ওই ছেলেটা বাঁচলে পরে
ওই ছেলেটা বাঁচতো না।

(যারা গল্পটি পড়তে চান, এই অংশ উপেক্ষা করুন। সরাসরি পরের অংশে চলে যান। এটুকু গল্প নয়-এটুকু বাস্তব।)
...সর্বোত্তম তোতাপাখিটি বাছাই করা নয়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত তথ্যের যৌক্তিক বিশ্লেষণে সক্ষম শ্রেষ্ঠ চৌকস শিক্ষার্থীটিকে খুঁজে বের করা। ভাবতে শেখেনি, শুধু মুখস্থ করে উগরে দিতে শিখেছে—চোখকান বন্ধ করে এমন প্রার্থীদের নির্বাচিত করা হলে শিক্ষা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন ও দেশরক্ষা—রাষ্ট্রের এই চতুরঙ্গের কোথাও গুণগত কোনো পরিবর্তন আসবে না আরও বহু প্রজন্মে। হয়তো এই ভুলটাই আমরা করে আসছি। সুদক্ষ ও মননশীল আশরাফুল মাখলুকাতের বদলে অকার্যকর পরীক্ষার জাল পেতে ধরে আনছি ঝাঁকে ঝাঁকে ময়না-তোতা। আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের যাবতীয় দুরারোগ্য ব্যাধির মূলেও হয়তো আছে এই করুণ তোতাকাহিনি। (ভট্টাচার্য্য, ২০১৫)
এতদঞ্চলে উচ্চশিক্ষার চাহিদা বাড়ার আরও কারণ হচ্ছে স্কুলপড়ুয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে অহেতুক বিরূপ ধারণা, দ্রুত বর্ধনশীল মধ্যবিত্ত শ্রেণি এবং কৃষি খাতের তুলনায় শিল্প ও সেবা খাতের উন্নতি। চাহিদার তুলনায় আর্থিক অসংগতিই কি উচ্চশিক্ষায় ধস নামার একমাত্র কারণ? তা নয়। বরং উচ্চশিক্ষাই হতে পারে আর্থিক সচ্ছলতা লাভের কার্যকর ও টেকসই হাতিয়ার। সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নিলে সীমিত সামর্থ্য নিয়েই সরকারগুলো উচ্চশিক্ষাকে ইগলটনের ভাষায় ‘জীবন’ দান করতে না পারলেও লাভজনক করতে পারে। একটি দেশের সরকার যদি গবেষণায় বিনিয়োগ করে, সে দেশের অর্থনীতি চাঙা হতে সময় লাগে না। রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টে ১ শতাংশ অগ্রগতি হলে উৎপাদন বাড়ে ০.০৫ থেকে ০.১৫ শতাংশ। ওইসিডি (অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) দেশগুলোর অভিজ্ঞতা আরও চমকপ্রদ। সেখানে উচ্চশিক্ষায় প্রতিটি ডলারের বিনিয়োগ সুদে-আসলে ফেরত এসেছে। সেখানকার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষিত মানুষের উপার্জনে পার্থক্য হয় প্রায় ২৫ থেকে ১১৯ শতাংশ। যদি কোনো দেশের নাগরিকেরা এক বছর বেশি পড়ার সুযোগ পায়, সে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৩ থেকে ৬ শতাংশ বেড়ে যায়। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, কেবল প্রাথমিক ও মাধ্যমিক গ্র্যাজুয়েট দিয়ে আর আধুনিক অর্থনীতিকে সামলানো সম্ভব নয়।
আর কিউএস র্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ৫০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভারতের চারটি আইআইটি এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি’ স্থান পেয়েছে। অন্য দেশগুলোর সব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান খুবই হতাশাজনক। সরকারগুলোর (ভারত ছাড়া) পক্ষ থেকে এই হতাশাজনক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও বেসরকারি খাত এগিয়ে আসছে। তৈরি হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর উচ্চবিত্ত, এমনকি মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ছেলেমেয়েরা চলে যাচ্ছে বাইরে। যেমন ২০১১-১২ সালের হিসাব অনুযায়ী, ভারত থেকে ৫৯ হাজার, বাংলাদেশ থেকে ২ হাজার ৪১, নেপাল থেকে ২ হাজার ৮২২, পাকিস্তান থেকে ১ হাজার ৯০০ এবং শ্রীলঙ্কা থেকে ১ হাজার ৪১২ জন পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্র কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে গেছে। (ফারুক, ২০১৫)
The mainstream educational system in the Southern Asian country of Bangladesh has been socially engineered to create a class of bureaucrats that could feed the large engine of the overdeveloped bureaucracy left over by the British when they left the Indian Subcontinent along with the area that is now Bangladesh. A traditional society rushing into rapid industrialization, the country is yet to develop a mentality where people are ready to take a risk and start a business of their own, creating a society that fears diverse career paths and pressurizes the young ones to follow ‘safe’ career paths that the others have followed. Though, the number of industrialists and entrepreneurs is increasing, the society still favors low risk jobs like that of a doctor or an Engineer where the income is ‘secured for life’.
The social pressure is nothing short of a widespread mania. What stems and abets this mania is the educational system that provides a set schedule for all of the students of a given class with a set number of choices. There is no choice for a student to take one subject instead of the other and therefore all of them are stuck with subjects that the school assigned to them. Therefore, many students that may do well in the subjects they like better, fails to perform up to expectation and the performance drops as the students reach a higher class and the subjects become specialized and narrower. When a student reaches ninth grade, they have to choose between one of three divisions available, science, commerce or humanities. It is not an option to study some subjects from natural science and some subjects of social science together. There is, however, a generalized version of natural sciences available to the students of humanities division and a general version of social sciences available to the students of science division but is hardly enough to build up an effective foundations for a college major. Therefore, the major that a student can choose in college is effectively determined, if not narrowed down to a handful once he/she reaches ninth grade. And even the selection of science, commerce or humanities division is most of the times not up to the choice of a student. Most schools assign divisions to their students according to their academic performance in the earlier class which is determined solely by their exam scores. Therefore a good student who may perform poorly in that specific exam for some reason and may get stuck in a division that they don’t like. This case is very common, many students get stuck in a division they don’t like and most of them fail to even realize which division they like the most because certainly they are not old enough to decide on a vital fact like that at the age of twelve/thirteen. They just go with the flow and the flow is choosing science. So most well performing students take science regardless of their interests. The students that take commerce or humanities are thereby labeled less talented. Many times, less attention is paid to them and less resources are allocated for them. Society treats them as a failure and they have to answer for their failure to get into the science division for the rest of their school life.
Secondly, there are four standardized tests administered by the government throughout the twelve years of schooling period of a student. These standardized tests are mostly unnecessary spending of resources because the certificates that a student will achieve from these examinations does not amount to anything. A person with a PSC certificate(one provided after completion of fifth grade) will qualify for the same job as a person with no educational qualification whatsoever. The case is almost the same for JSC(eighth grade completion) and SSC(tenth grade completion). The HSC(twelfth grade completion) certificate does hold some value in the job sector but mostly is ignored or used as a subsidiary indicator by admission officers of colleges. The primary purposes that these certification examinations serve are twofold and both of them are malicious. Firstly, they enforce a strict national curriculum with little space for individual schools to diversify and innovate. There is always a new standardized test every two years, therefore the schools spend all of their time preparing students for the exams and very little or no time for subjects outside of the test topics. Most schools do not include co curricular activities such as music, debate, sports, gym in their curriculum and if a student partakes in this kind of activity, he/she is scorned upon, sometimes formally and sometimes informally by the school authority, family, neighbors and the overall society as wasting their time.
Thirdly, the deadliest fault of the Bangladeshi educational system that is the crux of the socially engineered depression in Bangladesh is the college admission process. The process relies heavily on an admission test for most institutions that does not value any qualities of a student that goes beyond their academic achievement in the one-time test taken once a year for two-three hours. The HSC examination, considered the national indicator of achievement by the education board is nothing but a margin that the colleges use to define eligibility to apply for admission to that college. Therefore there is a significant spike in the suicide rate just after the HSC result gets published because not performing well in the exam might mean not getting a chance to take the admission test of a specific college.
A Bangladeshi University counselor’s comment on the topic is as follows:
“Whenever the Bangladesh secondary school examination result is out, almost every year you will see that there are a few students who failed the exam and attempt suicide, [...]They become obsessive about failure and, if they fail, they can’t overcome [it].”(Ganepola, 2015)
The problem goes beyond suicide. The problems persists with the students that do not commit suicide. They lose their self worth and enthusiasm for doing anything innovative. They face a social bullying by everybody they know and they lose hope for their life. They succumb into a life of mediocrity and persistent agony. Many show signs of depressive behavior and most fail to get out of the depression. (Roy, 2016)
Possibility of Human Development in the Third World: Original Analysis
Defining human development as the achievement of the basic needs for the majority of the citizen of a given country, I believe that there is a significant possibility of human development in the third world. The achievement of human development is possible if the following stages are observed by a third world society:
Stage 1: Widespread education: Among the basic needs, education must be emphasized as the first step towards development. Education can be the most powerful tool against the traditional economic system and the circular lifestyle of the people of the third world as observed by the modernizationists. Education should be widespread, free and career-oriented. Much emphasis must be put into making a) a trained labor force b) a trained class of entrepreneurs and c) a trained class of researchers. The trained labors will be eligible for a higher pay automatically granted by new businesses launched by a growing class of entrepreneurs. Researcher would invent new technologies and methods to create improvements for the industry and help create new revenue generating industries for the economy. The education must be restructured so that it is not purposefully structured to create a class of bureaucrats but a class of risk taking innovators and entrepreneurs. All other education must be seen as redundant. (Roy,2016)
হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে বা খানা আয় ও ব্যয় জরিপ মোতাবেক এ দেশের আয়বৈষম্য পরিমাপক গিনি সহগ ২০০৫ সালে শূন্য দশমিক ৪৬৭ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল এবং ২০১০ সালের একই জরিপে ওই সহগ শূন্য দশমিক ৪৬৫-এ রয়ে গেছে। তার মানে ওই পাঁচ বছরে আয়বৈষম্য আর না বাড়লেও কমানো যায়নি। (২০১৫ সালের হাউসহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভের ফল এখনো পাওয়া যায়নি)। কোনো দেশের গিনি সহগ শূন্য দশমিক ৫ অতিক্রম করলে ওই দেশকে ‘উচ্চ আয়বৈষম্যের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। আমরা তার কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। ২০১০ সালের উপাত্ত মোতাবেক এ দেশের ১০ শতাংশ ধনী ব্যক্তি দেশের ১০ শতাংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১৮ গুণ বেশি আয় ও সম্পদের মালিক।
….বৈষম্যমূলক শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য খাতের বাজারীকরণ হলো আয়বৈষম্য বৃদ্ধির সবচেয়ে ক্ষতিকর ব্যবস্থা। বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের পর এই দুটো ব্যবস্থাকেই এগিয়ে নিয়ে গেছে সরকারগুলো। তৃতীয় ডাইমেনশনটি হলো ব্যাংকিং ব্যবস্থা এবং চতুর্থটি হলো সরকারি রাজস্ব ও ব্যয় ব্যবস্থা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে সরকারি ব্যয়কে জিডিপির ১ দশমিক ৭৭ শতাংশে নামানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। স্বাস্থ্য খাতের সরকারি ব্যয়ও জিডিপির শূন্য দশমিক ৭ শতাংশে নেমে গেছে। আর এ দেশের দারিদ্র্য সৃষ্টির সবচেয়ে বড় যে কারখানা সে কৃষি খাতেও সরকারি ব্যয় বরাদ্দ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে! (ইসলাম,২০১৬)
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে, ব্যাংক খাতে সব ধরনের সুদ হারই ১০ বছর আগের তুলনায় এখন সর্বনিম্ন।’
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশে এখন ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা মোট আমানতের পরিমাণ ৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৩ কোটি টাকা। আর ব্যাংক এখন পর্যন্ত দিয়েছে ৭ লাখ ৯১ হাজার ৫৯১ কোটি টাকার ঋণ। গত এক বছরে ব্যাংকগুলোতে আমানত বৃদ্ধির হার ১৩ শতাংশ আর ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৯ শতাংশ। অর্থাৎ সরকার আমানতের হার কমালেও সাধারণ মানুষের বিকল্প না থাকায় ব্যাংকেই অর্থ রাখছে। অথচ বেসরকারি খাত বিনিয়োগে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।
সুদ হার খানিকটা কমলেও বিনিয়োগ আকৃষ্ট হচ্ছে না কেন—জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘সুদের নিম্ন হারই যথেষ্ট নয়। বিনিয়োগের জন্য বিদ্যমান অন্য প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর না হলে সুদের হার কমলেই বিনিয়োগ বাড়বে না।’ তবে তিনি এ-ও বলেন, আজকে সুদের হার কমলে কালকেই বিনিয়োগ বেড়ে যাবে না, বরং ভবিষ্যতে বাড়বে। (প্রথম আলো, ২০১৬)

(গল্প)
আমার আর আট ঘন্টার মাঝে একটা পেপার জমা দেবার ডেডলাইন। লিখতে হবে তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়ন সম্ভব কি না। আমাকে পাঁচটা বই পড়ে এরপর একটা সিদ্ধান্ত জমা দিতে হবে। পাঁচটা বইয়ের মাঝে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে একটাই কথা- তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়ন প্রায় অসম্ভব। তবু আমি থিসিসে লিখেছি-তৃতীয় বিশ্বে উন্নয়ন সম্ভব। কারণ আমার তৃতীয় বিশ্বের সংজ্ঞার মাঝে বাংলাদেশ পড়ে। বাংলাদেশে এখনও অনেক ছেলেপেলে রয়ে গেছে যারা আমার সাথে সাথে একটা তীব্র প্রজন্মে বড় হয়েছে-এই তীব্র প্রজন্মের ছেলেপেলেরা উন্নয়ন করে ফেলতে পারবে। সিঙ্গাপুর পেরেছে, মালয়েশিয়া পেরেছে, জাপান পেরেছে, দক্ষিণ কোরিয়া পেরেছে-বাংলাদেশও পারবে।
আমি এই গল্পটা লেখবার আগে আমার মা-কে ফোন করেছিলাম। মাকে ফোন করে বললাম- মা আমি এরকম একটা জিনিস লিখবো। তোমাকে নিয়ে খুব পচা কথাবার্তা লিখবো। তোমার কি কোন সমস্যা আছে?
মা বললো, না। সমস্যা নেই। কিন্তু তুই হঠাৎ করে এইসব লিখতিসিস কেন? তোর না পরীক্ষা?
আমি লিখতিসি কারণ আমার দেশ আমাকে তিনবার তিনটা বৃত্তি দিসে। সারাজীবন স্কুলে পড়ার জন্য আমার খরচের অধিকাংশ আমার দেশ আমাকে দিসে। সেটা আমাকে না দিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া যাইতো, যার এই সাহায্যটা বেশি দরকার-যে আমার চেয়ে বেশি অস্বচ্ছল। কিন্তু তাও আমাকে দিসে এই বিশ্বাসে যে আমি সেই সুযোগটা কাজে লাগায়ে দশজনকে সাহায্য করবো মা। আমি হয়তো দেশ ছেড়ে চলে আসছি, দশজনকে সাহায্য করতে পারবো না। কিন্তু হয়তো কোন দশজন আমার লেখাটা পড়বে। হয়তো সেই দশজন আর দশজনকে বাসায় গিয়ে পড়াবে, তখন হয়তো তাদেরকে একটু একটু শিখাবে। তখন হয়তো আমরা একটু একটু করে আগাবো।
আচ্ছা, যারা বাসায় গিয়ে পড়ায় তারা কি শিখাবে? তোকে শোভন যেটা শিখাইতো সেটা?
নাহ! শোভন স্যার তো আমাকে কখনো পলিটিকাল সায়েন্স পড়তে শিখায়নাই। বরং সারাজীবন গালি দিসে কেন এইসব পাগলামি করি। কিন্তু তুমি যখন আমার সমস্যা বুঝোনাই তখন তোমাকে স্যার আমার সমস্যা বুঝাইসে মা। ওই সময়ে তুমি না বুঝলে আমি ওইসময়েই মরে যাইতাম। তুমি আমার কথা হয়তো বিশ্বাস করতে পারতানা তখনো, কারণ আমি ছোট ছিলাম। কিন্তু শোভন স্যার আমার কথা বুঝতো,বিশ্বাস করতো কারণ স্যার আমার বয়সের কাছাকাছি ছিলো। জেনারেশন গ্যাপ ছিলোনা। আর তুমি স্যারের কথা বুঝতা কারণ তুমি স্যারকে বিশ্বাস করতা। তুমি কি জানো, আমি যে কয়টা ছেলেমেয়েকে পড়াই এদের বাবা মা আমাকে কতো বিশ্বাস করে? আমার তখন নিজের উপর খুব রাগ হয় মা। আমি যাদের এখানে পড়াচ্ছি, এদের কথা শোনার লোকের অভাব নাই। এদের ইস্কুলে টাকা দিয়ে লোক রাখা আছে এই কাজ করার জন্য। আমাদের নাই। আমাদের টিচাররা আমাদের পারসোনালি চিনেনা। কিন্তু আমরা যে বড়ভাইদের সাথে থাকি, বড় আপুদের সাথে থাকি, তারা আমাদের চিনে। তারা আমাদের বুঝে। তারা যদি আমাদের কথাটুকু তোমাদের পর্যন্ত পৌঁছায় দেয়-তাহলেই হয়।
---কি তোদের কথা? তোর কথা তো আমি বুঝিসিলাম। তোর কথা কি মানুষ বুঝবে? মানুষ তোরে ধরে ঠ্যাঙ্গানি দিবে না তো বাবা?
---বুঝবে মা। তুমি ভুলে যাচ্ছো আমরা টাংকির উপরে বসে থাকা বখা ছেলেমেয়ে। আমরা দোকানে দোকানে আড্ডা দেয়া বখা ছেলেমেয়ে। আমরা হাত ধরে মাইলের পর মাইল হাটা বখা ছেলেমেয়ে । আমরা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো বখা ছেলেমেয়ে। এই ছেলেমেয়েগুলা পথিকৃৎ থেকে, জাগরনী থেকে, ওজভা থেকে, অগ্রগ্রাহী থেকে, রিফ্লেকটিভ টিনস থেকে আরও অনেক অনেক অনেক ছোটবড় অর্গানাইজেশনে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো ছেলে। এরা জানে কি করতে হবে। এরা সব ঠিক করে ফেলতে পারবে। এরা জানে যে মানুষের কতো শক্তি-মানুষকে ইচ্ছামতন সবকিছু করতে দিলে মানুষ কতোকিছু করতে পারে। এরা একসাথে হয়ে শহর কাঁপায়ে দেয় মা-এরা একসাথে হয়ে জীবন বাঁচায়ে ফেলে। আমি জানি, এরা পারবে। এরা কনসার্টে গান গাইতে গাইতে পারবে, এরা মিছিলে স্লোগান দিতে দিতে পারবে, এরা টিউশনি করাইতে করাইতে পারবে, এরা আড্ডা দিতে দিতে পারবে।
---পারবে তো বুঝলাম-কিন্তু কি পারবে? কি করবে ওরা?
---যা ইচ্ছা তাই, মা। যা ইচ্ছা তাই। যেটা ইচ্ছা করে সেইটা। খালি ইচ্ছাকে দমাবে না। রিস্ক নিবে, ফেইল করবে, আবার রিস্ক নিবে মা। নিজেরা উদ্যোক্তা হবে, নিজেরা কম্পানি বানাবে-বানায়ে টাকার ধরা খাবে। লস করবে, ফেইল করবে, আবার চেষ্টা করবে। এরা চাকরি করবে না মা-এরা চাকরি দিবে। বাংলাদেশের মানুষ দেশের বাইরে অমানুষের মতন খেটে টাকা দেশে পাঠাচ্ছে মা-এই টাকা বিনিয়োগ হচ্ছেনা, ব্যাংকে পড়ে থাকতেসে। আর ছেলেপেলেরা বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢুকে সেই গ্যাড়াকলে পড়ে যাচ্ছে যেই গ্যাড়াকল একটা নতুন কাজ শুরু করতে গেলে একশোটা ক্যাচাল লাগায়। কিন্তু দেইখো-আমরা একটা তীব্র প্রজন্ম নিয়ে বড়ো হইসি। আমরা মায়ের গালি খেয়ে, বাপের ঝাটা খেয়ে স্বপ্ন দেখসি। আমরা স্কুল পালায়ে স্কুল বানাইসি মা, আমরা গ্যাড়াকল থেকে বের হয়ে আসবো। আমরা নতুন তরুণ হবো মা। দেইখো, আমরা সবাই আমলা হবো না। আমরা সবাই আমি দুর্নীতি করিনা,বাকিরা কি করে আমি জানিনা বলে চোখ বন্ধ করে থাকবো না। আমরা বাংলাদেশের লাখ লাখ শিক্ষিত বেকারকে চাকরি দিবো। বাংলাদেশের সব টাকা একদল মানুষের হাতে চলে যাইতে দিবো না। সেই একদল মানুষের চাকর হয়ে থাকবো না। আমরা প্রত্যেকে এক একটা ইন্ডাস্ট্রি হবো মা। আমি যেইটা বানাইতে পারবো না, সেইটা ইফতু বানাবে, যেইটা ইফতু বানাইতে পারবে না সেটা রাফিদ বানাবে, যেটা রাফিদ বানাইতে পারবে না সেটা দীপ্র বানাবে। আর যদি আমরা কেউ বানাইতে না পারি তাহলে আমাদের জুনিয়ররা বানাবে। আমরা সারা শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে যাবো যাতে ওদের এই বানানোর সাহসে কোন আঁচড় না লাগে। ওদের স্বপ্ন পুষে রাখবো মা। আমরা যুবক বয়সে শিক্ষক হইসি মা, আমরা নিজেরা নিজেদের আগেও পড়াইসি, এখনও পড়াইতে জানি। স্কুলের কলেজের টিচাররা জানে বাস্তবের পড়াশুনা আর আমরা জানি স্বপ্নের পড়াশুনা। আমরা মিলে বাস্তবকে স্বপ্ন বানায়ে ফেলবো-দেইখো।
----উপল...এই উপল...উপল…
----কি মা?
----এমনি, ডাকতিসিলাম রে বাবা। দেখতিসিলাম যে তুই ডাক শুনিস কি না। এখন কয়টা বাজে…
----এখন রাত আড়াইটা বাজে মা...আমি যাই, আমার সারারাত লিখতে হবে।
---আচ্ছা বাবা, যা। লিখে তোর বাপিকে পাঠাস। আমি পড়বো। তোর লেখা পড়তে আমার খুব গর্ব লাগে বাবা।
---আমি জানি মা। সবসময় জানতাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৩
৪৫৬ বার পঠিত
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরুর রচনা.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৬

একজন সাধারণ পাঠক হলেও দেশী-বিদেশী আমার প্রিয় লেখক সাহিত্যিকদের তালিকা বেশ দীর্ঘ! বনফুল, যার আসল নাম- বলাই চাঁদ মুখোপাধ্যায়। শখের বশে তিনি কথাসাহিত্যিক, নাট্যকার ও কবি। পেশায় চিকিৎসক ছিলেন।
বলাই চাঁদ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন রাজনৈতিক দলকে খারিজ বা সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে নয় জামাত!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৫


কোনো রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের নেই বলে জানিয়েছেন দলটির আমির আমির ডা. শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকাকে দেওয়া এক... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাঁঝের মায়া

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮


সেদিন সন্ধ্যায় ল্যাপটপে কাজ করছিলাম। হঠাৎ অচেনা একটা নম্বর থেকে আমার মোবাইলে ফোন এলো। “হ্যালো, কে?” আমি জিগ্যেস করলাম। ওপাশ থেকে নারীকণ্ঠ অস্পষ্টভাবে কী যেন বলছিল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলিয়েন স্বীকৃতি না দেয়ার কারন

লিখেছেন সরকার পায়েল, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:১৯

এলিয়েন বলতে আমরা বুঝি অতি প্রাকৃত শক্তি সম্পন্ন জীব l যাদের শারীরিক সক্ষমতা মানুষ হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন l রক্ত মাংসের জীব থেকে ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি l রক্ত মাংস... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজী মুক্ত সামু!!

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২২ শে নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২







মনপুরা মুভিতে একটা ডায়ালগ ছিলো যে, গাজী বেটারে তুমি চিনো না, বেশি ফাল পাইরো না। এদিকে ব্লগের গাজীকে সবাই চিনে, যারা লাফালাফি করে তারা ব্যবস্থা নেয়,গাজী কিছু করতে পারে না,ব্যান... ...বাকিটুকু পড়ুন

×