মানুষ হিসাবে আমাদের ভেবে দেখা দরকার আমরা কি দ্রুত ধ্বংসের দিকে ধাবিত হব? কারণ আজ সমকামিতা নামক অপযৌনচারকে দেশীয় মুক্তমনা ও তার আশেকবৃন্দ সাত রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দেশে আইনত বৈধতা নিয়ে যেভাবে উকালতি শুরু করেছে তাতে মনে হচ্ছে আইয়ামে জাহেলিয়া আরেকবার আসন্ন।
সমকামিতা কি? এক কথায় বলতে গেলে সমকামিতা একটি বিকৃত মানসিকতার যৌনচার, এমন বিকৃত যৌনচার যে আজ পর্যন্ত এমন বিকৃত রুচি কোন পশুর মধ্যেও দেখা যায় নি। যেখানে পুরুষের সঙ্গে পুরুষের কিংবা নারীর সঙ্গে নারীর যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে। বিকৃত এই কুরুচি কোন জানোয়ারের মধ্যে পাওয়া না গেল্ওে আজ কথিত মুক্তমনাদের মধ্যে দেখা যায়, এটাই নাকি বিজ্ঞানমনস্কতা। হাস্যকর নয় কি?
বিকৃত এই হীন মানসিকতাকে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমা সহ অনেক দেশ আইনত বৈধতা দিয়ে কুরুচীর পরিচয় দিয়েছে আগেই। এটা তাদের পাশবিক সভ্যতার আধুনিক সংস্করন। কিন্তু ধন্যবাদ বাংলাদেশ সরকার কে যারা সমলিঙ্গের বিয়েকে ফৌজদারি অপরাধ হিসাবে গণ্য করে এবং এই ধারা বিলোপে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সুপারিশ নাকচ করে দিয়েছে এই বলে যে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের সঙ্গে জাতিসংঘের সুপারিশ সঙ্গতিপূর্ণ নয় যা ৭ অক্টোবর ২০১৩ তে দেশের বিভিন্ন দৈনিকে এসেছিল।
সমকামিতা শুধু ইসলামে নয়, অন্যান্য সমাজ ও ধর্মেও নিষিদ্ধ ও অত্যন্ত বিকৃত রুচীর পরিচয় হিসাবে দেখে থাকে। পোপ বেনেডিক্ট সমকামী বিয়ে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, এ ধরনের বিয়ে হচ্ছে স্বাধীনতার যথেচ্ছাচার ও পরিবার পদ্ধতির ভবিষ্যতের জন্য মারাতœক হুমকি (আমাদের সময়, ০৫/০৬/২০০৫)।
আমাদের বোধগম্য নয়, জাতিসংঘ কীভাবে সমলিঙ্গের বিয়েতে বৈধতা দেয়ার পক্ষে উকালতি করতে পারে তাউ আবার শতকরা ৯০ ভাগ মুসলিমের দেশ বাংলাদেশে। ভাবতে অবাক লাগে পশ্চিমা বিশ্ব আসলে কী চায়। এটি যে ইসলাম ধর্মের আদর্শের বিপরীত তা নয়, গোটা বিশ্বমানবতার সহজাত মানবীয় আদর্শেরও বিপরীত।
কেবল একজন মুসিলম হিসাবে নয়, একজন মানুষ হিসেবেও কথিত দেশীয় বিজ্ঞানী মুক্তমনা ও পশ্চিমা বিশ্ব,জাতিসংঘের এ তৎপরতায় আমরা ভীষন হতাশ, আসলে কথিত মুক্তমনারা যা চাই তার তাদের ভাষায় কোন যুক্তি হয় না। বলেন সেই পুরুষকে একটা সন্তান জন্ম দিতে যে পুরুষ অপর পুরুষের সাথে যৌনচারে লিপ্ত হয়, বলেন সে মহিলাকে একটা সন্তান জন্ম দিতে যে মহিলা অপর মহিলার সাতে যৌনচারে লিপ্ত হয়। মানবতা আর প্রকৃত মনুষ্যত্ব’র ক্ষেত্রে আজকের মুক্তমনা ও পশ্চিমা বিশ্ব’র ভূমিকা কতখানি ইতিবাচক কিংবা আদৌ ইতিবাচক কিনা তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই হিসাব রাখেন। বাংলাদেশের মত একটি দেশে সমকামিতা নামক যৌনচার চালু করতে পারলে দেশীয় বিজ্ঞানী ও পশ্চিমা বিশ্ব হয়ত গোটা মনুষ্যত্বকে তলে তলে ধ্বংস করতে আর কিছু করতে হবে না।
বস্তুত যা কিছু সুন্দর, কল্যাণকর ও ভালো তা সবই ইসলাম তথা মানবতা গ্রহণ করে। পাশাপাশি অসুন্দর, অকল্যাণকর ও অস্বাভাবিক প্রত্যেকটি বিষয় ইসলাম প্রত্যাখ্যান করে। মনুষত্ব হারালেই কেবল একজন মানুষ সমকামিতাকে স্বীকার করতে পারে। সামাজিক শৃঙ্খলা হারালেই কেবল একটি সমাজ সমকামিতাকে সমর্থন করতে পারে। স্বাভাবিক মানবীয় সৌন্দর্যবোধ যে সমাজ লালন করে সে সমাজে সমকামিতার কোন স্থান নেই।
আমরা দেখি কওমে লুত বা নবী লুত (আঃ) এর সম্প্রদায়ের মধ্যে এই ঘৃণ্য অপরাধটি প্রসার লাভ করেছিল বলে আল্লাহ তাদের এ অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে উত্তপ্ত প্রস্তর বর্ষণ করে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন-(সুরা হুদঃ ৮২-৮৩)। কিন্তু কিছু মানুষ সমকামিতাকে মানবাধিকার বলে নিজেই নিজের ধংশ হয়তো আবার ডেকে আনছে। আল কোরআন লুত সম্প্রদায়ের এ জঘন্য আচরণ উল্লেখ করে বিশ্বমানবতাকে তা থেকে বাস্তব শিক্ষা গ্রহনের আহবান জানাচ্ছে।
তাই দেখা যাচ্ছে যে, কেউ যদি এই সমকামিতা নামক অপকর্মে লিপ্ত তাহলে সে জাতি না দুনিয়ার না আখিরাতের, পরিনাম শুধু ধ্বংসপ্রাপ্ত। দুঃখের বিষয় এই নির্লজ্জ যৌনাচার আজ মুক্তমনারা বৈধাতা দানের জন্য উকালতি শুরু করেছে আর এর পূর্ণ সহযোগিতা করছে পশ্চিমা বিশ্ব, জাতিসংঘ। ভাবুনতো পুরুষ পুরুষে ও নারী নারীর মধ্যেই বিয়ে প্রকৃতিবিরুদ্ধ এই সেচ্ছাচারী আয়োজন, একে আবার বিয়ে নামে অভিহিত করে মনুষ্যবিস্তারের অবলম্বন ও পরম পবিত্রতার প্রতীক বিয়েকেও কলুষিত করার পাঁয়তারা নয় কি??
বিয়ে তো হয় পুরুষ ও নারীর মধ্যে। পুরুষের সঙ্গে পুরুষের কিংবা নারীর সঙ্গে নারীর যৌন সম্পর্ককে কোনোভাবেই বিয়ে নামে অখ্যায়িত করা যায় না। আর যে একে বিয়ে নাম দেয় তাকে আমি পাগল না হয় ছাগল মনে করি। মানুষ তার সমাজ লালিত, প্রকৃতি পরিবেশিত ও ধর্মসংস্কৃতি নির্দেশিত সহজাত নীতিনৈতিকতাকে বিসর্জন নিদে সর্বগ্রাসী বস্তুবাদী মানসিকতার প্রতিফলন সমকামিতাকে গ্রহণ করতে পারে না।
মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সব যুগেই বিকৃত মানসিকতার ও অস্বাভাবিক আচরণের কিছু মানুষ ছিল এবং তারা তাদের বিকৃত মানসিকতার চরিতার্থও করেছে সময়-সুযোগ মতো কিন্তু বর্তমান কলের বিস্ময় হচ্ছে বিকৃত মানসিকতার এ জঘন্য আচরণকে সভ্যতার ধংশকারী মুক্তমনারা স্বাভাবিক আচরণ হিসেবে গণ্য করছে এবং যারা আজ নৈতিকতাকে তিলে তিলে ধারণ করছেন তাদের ওরা কোণঠাসা করে চলেছে। ভাবখানা এমনয় যে, নৈতিকতা ও মানবিকতাকে আঁকড়ে ধরা বিশুদ্ধচিত্তের মানুষই যেন কথিত মুক্তমনাদের কাছে অপরাধী। সমকামিতা অস্বীকারকারীরা নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী। সমকামিতা নাকি মানবাধিকারের পার্ট। এরুপ পার্ট আর মানবঅধিকারকে দুর থেকে বাই বাই করি আমরা।
তাই যেটা দেশের সংস্কৃতির সাথে মাননসই নয় এরুপ অপসংস্কৃতি থেকে মাইল দুরে থাকার পাশাপাশি দেশের কর্তাগনের কাছে সমকামিতা বৈধতা প্রসঙ্গে মুক্তমনা, পশ্চিমা বিশ্বের উকালতিকে বারবার অস্বীকার করে দেশের সংবিধানে একে আজীবনের জন্য আইনত নিষিদ্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৩