চালনী হতে খেলে বিয়ে ঘুরেঃ
অনেক সময় দেখা যায়, কারো জন্য বধু নির্ধারণে বিলম্ব হলে ছেলেকে এ বলে দোষারোপ করা হয়, “মনে হয় চালনী হতে কিছু খেয়েছে, না হয় তোমার বিয়ে ঠিক হচ্ছে না কেন”। আবার অনেকে সন্তানদেরকে চালনী হতে কিছু খেতে দেখলে বলে “ওখান থেকে কিছু খেওনা বিয়ে ঘুরবে”। আসলে চালনী হতে কিছু খেলে বা আহার করলে বিয়ে ঘুরার বা বিলম্ব হওয়ার কারণ হতে পারে না। ইসলামে উক্তিটির কোন যুক্তি বা দলিল নেই। তবে যত্রতত্র হতে আহার না করে নিয়ম মত আহার করা ভাল তাতে সন্ধেহ নেয়।
চুল কাটার পর গোসল না সেরে ঘরে ঢুকলে ইদুর বেড়ে যায়ঃ
এ প্রবাদটি মহিলাদের আমদানীকৃত হলেও একেবারে অমূলক নয়। পুরুষরা অনেকটা বিশ্বাস করে না। এতে পুরুষ-মহিলার বাক বিতন্ডা খুব জমে। আসলে চুল কাটলে বা মাথা মুন্ডালে নাপাক হয় না বা অজুও ভাঙ্গেনা। তবে আত্মতৃপ্তির জন্য গোসল করা ভাল। কিন্তু তাই বলে চুল কাটার পর গোসল না সেরে ঘরে ঢুকলে ইদুর বেড়ে যাওয়ার কথা ভিত্তিহীন যার কোন যুক্তিই হয় না।
দরজায় বসে কিছু খেলে ঋণী হয়ঃ
এই কথাটিও আমাদের মা-বোনদের মধ্যে ব্যাপকহারে প্রচলিত যার কোন ভিত্তি নেয়। মানুষ তখনি ঋণী হয় যখন তার প্রয়োজনে অন্যের কাছে কিছু ধার নেয়, দরজায় বসে খেলে নয়। তবে হ্যা খাবার যত্রতত্র না খেয়ে খাওয়ার স্থানে খাবার খাওয়া আদর্শের পরিচায়নক।
চন্দ্র বা সুর্য গ্রহনে কিছু না খাওয়াঃ
চন্দ্র বা সূর্য গ্রহণে কিছু খাওয়া হারামের চেয়েও বেশি মনে করে অনেকেই। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের জন্য কড়া নিষেধ। খেলে নাকি অন্তঃসত্তা পঙ্গু হয়ে যাবে। অথচ মানুষ ঐ সময়েও কত অনাচার ও ব্যভিচার মূলক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। তখন পঙ্গু বা ক্ষতি হবার ফতোয়া মোটেই কেউ দেয় না। আসলে এসব কথার কোন দলীল বা যুক্তি নেই।এসব অন্ধ বিশ্বাস পরিহার করাই শ্রেয়।
বাম চোখ কাঁপলে মুছিবত আসেঃ
অধিকাংশ সময় দেখা যায় কারো বাম চোখ কাঁপলে মহিলারা বলে যে তোর সামনে বিপদ সাবধানে থাকিস।এই অন্ধ বিশ্বাসটাও সমাজে ব্যপক প্রচারিত যার কোন যুক্তিই নেই।বাম চোখ কেঁপে উঠা দুর্বলতা বা অন্য কোন রোগের উপসর্গ বলে বুঝতে হবে যা চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণ্য। রোগ জাতীয় কোন মুছিবত ধরা যেতে পারে। তবে প্রাকৃতিক কোন মুছিবত আসার ধারণা করা সম্পুর্ণ অমূলক ও ভিত্তিহীন।
হাতের পাত চুলকালে টাকা আসেঃ
এটিও সে ধরনের একটি অর্থহীন প্রবাদ মাত্র। যা দুই চার জন বসে ফালতু আড্ডাবাজী করার সময় এগুলো বলা হয়। ধর্ম বা জ্ঞান-বিজ্ঞানে এর কোন ভিত্তি নেই। খেয়াল কুরন এভাবে যদি হত তাহলে যাদের হাতে খস পাচড়া চুলকানী রোগ আছে তাদের আজ সম্পদের পাহাড় হয়ে থাকতো নয় কি?
দোলনায় বাচ্চা উঠানোর সময় সবার মাথায় তৈল দেয়াঃ
কোন কোন এলাকায় দেখা যায় বাচ্চাকে দোলনায় উঠানোর সময় উপস্থিত সকলেরই মাথায় তেল দেওয়া হয়। প্রশ্ন করা হয় কেন দেওয়া হচ্ছে উত্তার পাওয়া যায় সেই বাপ দাদার আমল থেকে চলে আসছে। এখন বলেন এর কোন যৌক্তিকতা আছে? তবে হ্যা মাথায় তেল দেওয়া ভাল। তবে বাচ্চাকে দোলনায় উঠাতে বিশেষ করে তেল দেওয়া একটি কুসংস্কার মাত্র। এগুলো অপসংস্কৃতি যা বর্জন করা উচিৎ।
তিন পুত্রের জননী দেখে কোন কাজে গেলে অমঙ্গল হয়ঃ
এটা নারী জাতির উপর একটি কলঙ্কলেপন করার ন্যায় নামান্তর। তিন ছেলের মাকে দেখে কেউ কাজে গেলে এবং সেখানে কোন সমস্যা হলে তার জন্য তিন ছেলের মাকে দায়ী করে। এতে নারী বা মায়ের কি দোষ? আছে কি এর কোন যুক্তি? এসব কুসংস্কার অপসংস্কৃতিকে হিমাগারে পাঠানো উচিত।
খালি কলসী দেখলে অমঙ্গল হয়ঃ
ঘর থেকে বের হতে খালি কলসী দেখলে অনেকেই আর কাজে যায় না। কারণ, এতে নাকি অমঙ্গল হয়। আমাদের সমাজে হিন্দুদের মধ্যে এর প্রচলণ বেশি প্রলক্ষিত হয়। এটাও একটি কুসংস্কার যার কোন ভিত্তি নেই।
রাত্রে আঙ্গুল ফুটালে গরীব হয়ঃ
কথাটি আজও আমাদের সমাজে ব্যাপকহারে প্রচলিত আছে। ব্যথা বেদনা ও অলসতা দুরী করণের মানসে অনেকেই আঙ্গুল ফুটায় তবে যত্রতত্র আঙ্গুল ফুটানো সাধারণত অভদ্রতারই নামান্তর। কিন্তু তাই বলে বিনা যুক্তি আর বিনা প্রমানে গরীব হয়ে যাওয়ার কথাটি যে সম্পুর্ণ ভিত্তিহীন তাতে কোন সন্ধেহ নেই।
মাটিতে আঁকা আঁকি করলে কর্জ বাড়েঃ
মাটিতে শিশুদের আঁকা আঁকি করতে দেখে অনেকে এই বলে শাসন করে যে ওঠ কর্জ বাড়াবী নাকি। আজব কথা আমার জানা মতে কর্জ বাড়ে নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে কিছু নিলে যা পড়ে শোধ করতে বিলম্ব হয় এভাবে কর্জ বাড়তে থাকে। তাই বলে মাটিতে আঁকা আঁকি করলে কর্জ বাড়ে কথাটি বলা কুসংস্কার মাত্র। তবে হ্যা অযথা মাটিতে আঁকা আঁকি করা ভাল নয়।
গর্ভধারণকারী নারী মৃত. বাপকে দেখতে পারবে নাঃ
এটাও নারীর উপর চাপিয়ে দেওয়া একটি অন্যায়। মেয়ে যদি গর্ভবতী হয় এমন সময় মেয়ের বাপ মারা গেলে তাকে বাপের মুখ দেখতে দেওয়া হয় না এই বলে যে গর্ভে থাকা বাচ্চাও নাকি মৃত জন্ম হবে। এটা নিছক কুসংস্কার যার কোন ধর্মীয় কিংবা যৌক্তিক ভিত্তি হতেই পারে না।
এরুপ আরও অনেক অনেক কুসংস্কার আজও আমাদের গ্রাম বাংলায় দেখা যায় যার কোন ভিত্তি নেই। এসবের উপর বিশ্বাস বা পালনে কষ্ট আর কষ্ট ছাড়া আর কিছু আশা করা যায় না। তাই গ্রাম বাংলার মা-বোন সহ সবাইকে এসব কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে