somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রয়োজন নিজস্ব শাসনব্যবস্থা

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৮৬১ সালের ব্রিটিশ আইন এখনো বলবৎ, যে আইন দিয়ে পাকিস্তান আমাদের শাসন করেছে সে আইনেই স্বাধীন বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে, এটা জনগণের জন্য 'এক ধরনের পরাধীনতা'।

ব্রিটিশরা শাসন- শোষনের উদ্দেশ্যে ১৮৬১ সালে যেসব আইন করেছিলো তা আজো বহাল আছে।

নবম জাতীয় সংসদকালে গঠিত আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বলেছে, 'ব্রিটিশরা এ দেশ শাসনের উদ্দেশ্যে ১৮৬১ সালে যেসব আইন করেছিলো তা দিয়েই কাজ চালানো হচ্ছে'।

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান, সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক বলেছেন, '১৮৬১ সালে ব্রিটিশরা এ দেশ শাসন করার জন্য যেসব আইন করেছিলো তা দিয়ে আজকের বাংলাদেশ চলতে পারে না' (দৈনিক ইত্তেফাক, ৩০ জুলাই ২০১৩)।

সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দেশের পুরোনো আইন ও বিধিব্যবস্থার অকার্যকারিতার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

বাংলাদেশে প্রচলিত আইনের সংখ্যা ১২ (বারো) শতাধিক। এর প্রায় সবই ব্রিটিশ আমলে প্রণীত। পাকিস্তান আমলেও এসব আইনের পরিবর্তন করা হয়নি। এসব আইনই হলো ঔপনিবেশিক আইন। এ ধরনের আইন দিয়ে বিদেশি শক্তিরা তাদের উপনিবেশিক (অধীনস্ত দেশ) পরিচালনা করে থাকে; তার নামই পরাধীনতা। এ ধরনের আইন ও বিধিমালা দিয়েই ব্রিটিশ- পাকিস্তানিরা আমাদের শাসন, শোষন ও নির্যাতন করতো। এ আইন ও বিধি দিয়েই তারা আমাদেরকে পরাধীন করে রাখার পাকা ব্যবস্থা করেছিলো।

পরাধীন আমলের আইন-কানুন বিধি-ব্যবস্থা পরিবর্তনের জন্য বাঙালিরা স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছে দীর্ঘকাল ধরে; যা নয় (৯) মাসব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। এ সময়ে ৩০লাখ বাঙালি শহীদ হয় এবং ২ লাখ মা- বোনের মান- সম্ভ্রম নষ্ট হয়। অবশেষে বাঙালিরা স্বাধীন হয়। বিশ্বের বুকে সৃষ্টি হয় নতুন রাষ্ট্র যার নাম 'বাংলাদেশ'।

স্বাধীনতার পর মাত্র কয়েকদিন 'প্রবাসী সরকার' এর নেতৃত্বে দেশ পরিচালনা করে। কিন্তু, বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের জেল থেকে ফিরে এসে ব্রিটিশ-পাকিস্তানিদের নির্যাতন শোষনের হাতিয়ার আইন-কানুন বজায় রেখেই বাংলাদেশ শাসন শুরু করলেন। যা বাঙালি ও বিশ্ববাসীর কাছে ছিলো বিস্ময়কর ঘটনা। এরপর থেকে জিয়া, এরশাদ, খালেদা- হাসিনা সকলে একইভাবে ঐসব ঔপনিবেশিক আইনের মাধ্যমে দেশ শাসন করেছে এবং এখনো করছে। কার্যত যা হলো স্বাধীনতার ৪৭ বছর ধরে 'পাকিস্তান' শব্দ বদলিয়ে সে জায়গায় কেবল 'বাংলাদেশ' শব্দ বসিয়ে দেশ পরিচালিত হয়ে আসছে। ফল যা দাড়ালো তা হচ্ছে, আমাদের দেশটা নামে 'স্বাধীন বাংলাদেশ', কিন্তু আইন-কানুনে 'পাকিস্তান'।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট রাজনৈতিক তাত্বিক সিরাজুল আলম খান বলেছেন, "যে আইন ও বিধির দ্বারা বিদেশি শাসকেরা শাসন করে সে আইন ও বিধিকে বদলিয়ে নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই স্বাধীনতার মূলকথা। বিদেশি শাসক বদলিয়ে দেশীয় শাসকদের ক্ষমতায় বসিয়ে ঔপনিবেশিক আমলের রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও শাসনব্যবস্থা দিয়ে দেশ পরিচালনা করা জনগণের 'এক ধরনের পরাধীনতা'; যাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় 'অভ্যন্তরীন পরাধীনতা' (internal colonialism)"।

দেড়'শ/দু'শ বছরের পুরনো আইন-কানুন জন্ম দিয়ে চলেছে অপরাজনীতি ও অপ্রয়োজনীয় প্রশাসন। যার কুফল বয়ে বেড়াতে হচ্ছে দেশের গোটা জনগোষ্ঠীকে। নির্বাচন ও ভোটের নাম দিয়ে নির্বাচিত হচ্ছে দুর্নীতিবাজ, ব্যবসায়ী, মাস্তান, এমনকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি ও মানবতাবিরোধী অপরাধীরাও। যার ফলে সংসদ রাতারাতি পরিণত হয়েছে বিত্তবান এবং অযোগ্যদের ক্লাবে। 'নারীর ক্ষমতায়ন'- এর বিষয়টি শুধু মুখে মুখে। শাসনব্যবস্থায় নারীর 'অধিকার', 'ক্ষমতা' ও 'কর্তৃত্ব' নেহায়েত সামান্যই। ঐসব পুরোনো, অচল ও ঔপনিবেশিক আইন-কানুন ও বিধি-ব্যবস্থার কারনে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডসহ চিন্তা ও মননে গড়ে উঠতে পারেনি মহৎ কোণ দৃষ্টিভঙ্গি। জ্ঞান-চর্চায়, বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশে, নান্দনিক বিষয়ে উদ্যোগ এবং উদ্ভাবনী শক্তি প্রসারের উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারনে গোটা সমাজ আজ ব্যাধিগ্রস্ত। ব্যতিক্রম যে একেবারে নেই তা নয়। 'বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র', 'গ্রামীন ব্যাংক', 'ব্র্যাক', 'গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র'র মতো হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেই ব্যতিক্রমের মধ্যে পড়ে।

গত ৪৭ বছর ধরে সামরিক ও বড় রাজনৈতিক দলসমূহ পুরোনো আইন দিয়ে 'টিয়ে পাখি'র মুখে শোনানো বুলির মতো যেভাবে দেশ পরিচালনা করে আসছে, তা এক এক ধরনের বোঝা। তাদের এই 'পাপের বোঝা' আর বয়ে বেড়ানো যায় না। ব্রিটিশ-পাকিস্তানি নির্যাতন ও শোষনমূলক আইন-কানুন জরুরিভিত্তিতে সংস্কার করে এই 'পরাধীনতা' থেকে বেরিয়ে এসে আধূনিক তথ্য প্রযুক্তি সমৃদ্ধ 'বাংলাদেশ' বিনির্মান প্রয়োজন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৫২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×